
আজ ৬ সেপ্টেম্বর । বাংলা চলচ্চিত্রের নবজাগরণ এর নায়ক
সালমান শাহ্‘র ষোল তম মৃত্যুবার্ষিকী.। যে সালমান হুট করে এসে কোটি মানুষের মন জয় করে হুট করেই কাঁদিয়ে চলে গেলেন কোন এক অভিমানে ।
সালমান শাহ ১৯৭১ সালে সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর রাশি ছিল বৃশ্চিক। তাঁর পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তাঁর মুল নাম চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে এসে হয়ে যান 'সালমান শাহ'। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায় । যে বাড়ির নাম এখন 'সালমান শাহ হাউস' । নানার মুলবাড়ি ছিল মৌলভিবাজারে। সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ বিয়ে করেন, এবং তাঁর স্ত্রীর নাম সামিরা।

১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় কথার কথা নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হত। এর কোন একটি পর্বে 'নামটি ছিল তার অপূর্ব' নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফের সংকেতের স্বকন্ঠে গাওয়া এই গান এবং মিউজিক ভিডিও দুটোই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত। একজন সম্ভাবনাময় সদ্য তরুন তার পরিবারের নানারকমের ঝামেলার কারনে মাদকাসক্ত হয়ে মারা যায়, এই ছিল গানটার থিম। গানের প্রধান চরিত্র অপূর্বর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমেই সালমান শাহ মিডিয়াতে প্রথম আলোচিত হন। তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন। মিউজিক ভিডিওটি জনপ্রিয়তা পেলেও নিয়মিত টিভিতে না আসার কারনে দর্শক আস্তে আস্তে ইমনকে ভুলে যায়। আরও কয়েক বছর পর অবশ্য তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় পাথর সময় নাটকে একটি ছোট চরিত্রে এবং কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন।
■ এক নজরে সালমান শাহ
● আসল নাম : চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন
● জন্ম : ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, রবিবার
● বাবা : কমর উদ্দিন চৌধুরী
● মা : নীলা চৌধুরী
● স্ত্রী : সামিরা
● উচ্চতা : ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি
● রাশি : বৃশ্চিক
● প্রথম চলচ্চিত্র : কেয়ামত থেকে কেয়ামত
● শেষ ছবি : বুকের ভেতর আগুন
● প্রথম নায়িকা : মৌসুমী
● সর্বাধিক ছবির নায়িকা : শাবনূর (১৪টি)
● মোট ছবি : ২৭টি
● বিজ্ঞাপনচিত্র : মিল্ক ভিটা, জাগুরার, কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা।
● ধারাবাহিক নাটক : পাথর সময়, ইতিকথা
● একক নাটক : আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী।
● মৃত্যু : ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬, শুক্রবার
■ সালমান শাহ অভিনীত ছবির তালিকা:
ছবির নাম :: ছবি মুক্তির তারিখ ::
● কেয়ামত থেকে কেয়ামত - ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ
● তুমি আমার - ১৯৯৪ সালের ২২ মে
● অন্তরে অন্তরে - ১৯৯৪ সালের ১০ জুন
● সুজন সখী - ১৯৯৪ সালের ১২ আগস্ট
● বিক্ষোভ - ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর
● স্নেহ - ১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর
● প্রেমযুদ্ধ - ১৯৯৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর
● কন্যাদান - ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
● দেনমোহর - ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
● স্বপ্নের ঠিকানা - ১৯৯৫ সালের ১১ মে
● আঞ্জুমান - ১৯৯৫ সালের ১৮ আগস্ট
● মহামিলন - ১৯৯৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর
● আশা ভালোবাসা - ১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর
● বিচার হবে- ১৯৯৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি
● এই ঘর এই সংসার - ১৯৯৬ সালের ৫ এপ্রিল
● প্রিয়জন - ১৯৯৬ সালের ১৪ জুন
● তোমাকে চাই - ১৯৯৬ সালের ২১ জুন
● স্বপ্নের পৃথিবী - ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই
● সত্যের মৃত্যু নেই - ১৯৯৬ সালের ৪ অক্টোবর
● জীবন সংসার - ১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবর
● মায়ের অধিকার - ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর
● চাওয়া থেকে পাওয়া - ১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর
● প্রেম পিয়াসী - ১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল
● স্বপ্নের নায়ক - ১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই
● শুধু তুমি - ১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই
● আনন্দ অশ্রু - ১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট
● বুকের ভেতর আগুন - ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর
১৯৯৩ সালে নতুন মুখের সন্ধানের সেরা প্রাপ্তি ছিল 'চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন ' যাকে সবাই 'সালমান শাহ' নামে আমরা চিনি। সালমান অভিনীত সুপারডুপারহিট ছবিগুলো হলো - ১) সোহানুর রহমান সোহান এর কেয়ামত থেকে কেয়ামত ঃ ১৯৯৩ সালের ঈদুল ফিতরের ছবিগুলোর মাঝে মুক্তি পায় সোহানুর রহমান সোহান এর রেকর্ড পরিমান ব্যবসাসফল ছবি ' কেয়ামত থেকে কেয়ামত' যা ছিল ভারতের আমির -জুহির 'কেয়ামত সে কেয়ামত' ছবির বাংলা সংস্করন বা রিমেক। 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবিতে সোহান নবাগত ২ তরুন তরুণীকে নিয়ে কাজ করে ১০০% সফল হয়েছিলেন। যে ছবিটি ছিল তজাম্মেল হক বকুল এর 'বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না' ছবির পর রেকর্ড করা ব্যবসা সফল ছবি যা দেখতে সারা বাংলার সব মানুষ হলে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। প্রথমবার যে সকল হলে ছবিটি মুক্তি পায় তাঁর অধিকাংশ হলেই পুরো ৪ সপ্তাহ হাউসফুল ব্যবসা করে অর্থাৎ সিনেমা হল মালিকরা ছবিটি পুরো ১ মাস প্রদর্শন করতে বাধ্য হয়। ছবির গান সবগুলো ছিল সুপারহিট। এই ছবির পর সালমান কে আর কখনও সোহানের ছবিতে পাওয়া যায়নি কিন্তু মৌসুমিকে একাধিকবার সোহানের ছবিতে কাজ করতে দেখা গেছে।
২) শিবলি সাদিক পরিচালিত 'অন্তরে অন্তরে' ঃ 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবির সুপারহিট সালমান মৌসুমির ২য় সুপারহিট ছবি শিবলি সাদিক এর 'অন্তরে অন্তরে'। 'অন্তরে অন্তরে ' ছবির আলম খানের গানগুলো ছিল সেই সময়ের রেডিও ও টেলিভিশনের ছায়াছবির গানের মধ্য তুমুল জনপ্রিয় গান। ছবিটি পারিবারিক ও রোমান্টিক প্রেমের ছবি। শিবলি সাদিক মুলত সামাজিক অ্যাকশন ও পারিবারিক গল্পের ছবির এক নিপুন কারিগর। সেই সময় শিবলি সাদিক এর নামটা বক্স অফিসে আলাদা সমীহ জাগানিয়া একটি নাম। যে ছবির পরিচালকের নাম শিবলি সাদিক থাকে সেই ছবি প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে যেতো। কারন শিবলির ছবির দর্শক তখনও ঘরে ঘরে ছিল। শিবলি সাদিক একবারে নতুন কিন্তু বক্স অফিসে তোলপাড় করা জুটি 'সালমান - মৌসুমি' কে নিয়ে এমন দুর্দান্ত একটি গল্পের ছবি বানালেন আর সাথে শিবলির বন্ধু সঙ্গীত পরিচালক আলম খানের মিষ্টি সুরের গান ছবিতে দিয়ে দিলেন যার ফলাফল সালমান - মৌসুমি জুটির টানা ২ য় সুপারহিট ছবি। প্রথম ছবির পিতা পুত্র অর্থাৎ রাজীব - সালমান এবার আলাদা রাজীব এই ছবিতে মৌসুমির পিতা যিনি একজন জমিদারের বিশ্বস্ত প্রজা ও গরীব জেলে। আর সালমান জমিদার বাড়ীর বিদেশ ফেরত নাতী।
টানা ২ য় সুপারডুপারহিট ছবি উপহার দিলেন সালমান শাহ ।
৩) তুমি আমার ঃ- 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ও 'অন্তরে অন্তরে' ছায়াছবি দুটি সুপারহিট হওয়ার সুবাদে সালমান- মৌসুমি জুটির চাহিদা আকাশতুঙ্গে। ঠিক এমন সময়ই কি এক অজানা কারনে সালমান - মৌসুমি আর জুটি বাঁধতে রাজী হননি। তাঁরা দুজনেই নিজেদের চেনাতে সিদ্ধান্ত নিলেন যে আর একসঙ্গে কোন ছবিতে অভিনয় করবেন না যা পরবর্তীতে মাত্র আরও ২ টি ছবি ছাড়া দুজনের দেখা একসঙ্গে দর্শকরা পায়নি। ফলে পরিচালকগন বেশ বিপাকে পড়ে যান ,কারন ঐ সময় মৌসুমি ছাড়া প্রতিষ্ঠিত সব অভিনেত্রীই ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে সালমানের সিনিয়র যারা তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। বিশেষ করে চম্পা ও দিতি। এদের সাথে জুটি করেও লাভ হবেনা। সালমান হয়ে পড়েন মৌসুমি বিহীন একা।

ঠিক তখনই প্রয়াত অভিনেতা ও পরিচালক জহিরুল হক সিদ্ধান্ত নেন যে ইন্ডাস্ট্রির আরেক নতুন মুখ 'শাবনুর'কে নিয়ে সালমান এর সাথে ছবি বানাবেন। উল্লেখ্য শাবনুর এর প্রথম ছবি প্রয়াত এহতেশাম এর 'চাঁদনী রাতে' ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পরে যার বিপরীতে ছিলেন আরেক নবাগত নায়ক 'সাব্বির'। 'চাঁদনী রাতে' ছবিটি আমি ও আমার বন্ধুরা অর্ধেক দেখে হল থেকে বের হয়ে আসি ভালো না লাগার কারনে। তখন শাবনুর স্কুল পড়ুয়া একজন অভিনেত্রী যার মাঝে কিশোরীপনা স্পষ্ট লক্ষণীয় ছিল। যাই হোক, সালমান প্রথমেই রাজী হয়ে গেলেন কিন্তু আপত্তি ছিল প্রযোজকের যার দায়িত্ব নিলেন পরিচালক জহিরুল হক। তিনি প্রযোজককে আশস্থ করলেন যে ছবিটি ব্যবসা সফল হবেই।
প্রবীণ পরিচালকের সাথে নবীন সালমান ও শাবনুর এর এটাই প্রথম কাজ। ছবিটি ছিল পুরোটাই রোমান্টিক ছবি যেখানে সালমান বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা কাপর চোপড়, গাড়ী ইত্যাদি ব্যবহার করে নিজেকে একজন ধনির ছেলে হিসেবে শাবনুর এর সামনে তুলে ধরেন যা পরবর্তীতে প্রকাশ পায় সম্পূর্ণ মিথ্যে ও অভিনয়। আসলে সালমান ধনী পরিবারের সন্তান নয় যা নিয়ে কাহিনীতে ব্যাপক গণ্ডগোল লাগিয়ে দেন বুদ্ধিমান ও অভিজ্ঞ পরিচালক জহিরুল হক। ফলাফল আরও টানা ৩ য় ও মৌসুমি বিহীন ১ম সুপারডুপার হিট ছবি উপহার দিলেন সালমান ।
''
৪) মোহাম্মদ হান্নান এর 'বিক্ষোভ' ঃ তিন তিনটি রোমান্টিক / প্রেমের ছবির পর এই প্রথমবার দর্শকরা নতুন এক সালমান কে দেখলো । যে সালমান নিজের ক্রেজ তৈরি করেছিলেন রোমান্টিক ছবির নায়ক হিসেবে সেই সালমান এবার এলেন অ্যাকশন ছবির নায়ক হয়ে। পরিচালক মোহাম্মদ হান্নান তিন সুপারহিট রোমান্টিক ছবির নায়ক সালমান কে নিয়ে তৈরি করেন বাংলাদেশের অন্ধকার ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ 'বিক্ষোভ' ছবিটি। যার মধ্য দিয়ে কিভাবে মেধাবী ছাত্রদের রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন সেই সত্যিকারের চিত্রটি পরিচালক সাহসের সাথে ফুটিয়ে তোলেন এ যেন আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মম সত্যিকারের চিত্র।
ছবির নায়িকা সেই আগের 'তুমি আমার' খ্যাত শাবনুরকেই বেছে নিলেন কারন মৌসুমি সালমান বিরোধ এবং মৌসুমির সাথে ইতিমধ্যে দর্শকরা অন্য একজনকে গ্রহন করে নিয়েছে তাই পরিচালক হান্নান কোন ঝুঁকি না নিয়েই শাবনুরকে সালমান এর বিপরীতে নিয়েই শুরু করেন 'বিক্ষোভ' ছবিটি। ছবির প্রযোজনা সংস্থা বি.এম ফিল্মস এর এটি ছিল প্রথম ছবি যা নিবেদন করেছিলেন আলেয়া বেগম ও সালেহা রাব্বি। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরদিন টানা ২ দিনের হরতালের কারনে থাকে দর্শকশুন্য তারপর যথারীতি সালমান ঝড়ে হলগুলো 'হাউসফুল' হয়ে ছবি প্রদর্শন করতে থাকে। টিকেটের চড়া মূল্য এবং আবারো হল কাউনটারে দর্শকদের ধস্তাধস্তি ও মারামারি। তবুও ছবির ব্যবসায় কোন আচর পড়েনি।
৫) শফি বিক্রমপুরীর 'দেনমোহর' ঃ ছবিটি ছিল 'যমুনা ফিল্মস' এর প্রযোজনায় ও 'বন্ধন বানীচিত্র'এর পরিবেশনায় নির্মিত ছবি। প্রথম ছবি যেটি ৯৩ এর রোজার ঈদে মুক্তি পেয়েছিল এবং যেখানে রাজীব - আহমেদ শরীফ এর শত্রুতার প্রতিশোধের জেদ ছিল ঠিক ২ বছর পর একই সময়ে একই মুক্তি পাওয়া ও মুল চরিত্র গুলো একই ধরনের হওয়াতে দর্শক ভেবেছিল হয়তো 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবির মতোই কোন বিয়োগাত্মক প্রেম কাহিনী নির্ভর ছবি 'দেনমোহর'। এখানে গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে পরিচালকের কৌশলের প্রশংসা করতেই হয়। ছবির কাহিনীর ধরন, পাত্রপাত্রী নির্বাচন , মৌলিক গান , মুক্তির সময় ও বিজ্ঞাপনের ধরন সব ,মিলিয়ে পরিচালক একটি কৌশল অবলম্বন করেছেন । বাংলাদেশ বেতারে ছবির নিয়মিত ১০ মিনিটের বিজ্ঞাপনে পরিচালক বারবার সালমান - মৌসুমির প্রেম ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব কে উপস্থাপন এবং কাহিনীর সমাপ্তি সম্পর্কে দর্শকদের অন্ধকারে রাখার চেষ্টা পুরোটাই সফল।
উপরের ছবিগুলো ছাড়াও সালমান এর জীবিতবস্থায় সুপারডুপার হিট ছবিগুলো হলো ৬) এম এ খালেক এর 'স্বপ্নের ঠিকানা' ৭) মতিন রহমান এর 'তোমাকে চাই' ৮) এম এম সরকার পরিচালিত 'চাওয়া থেকে পাওয়া' ৯) দিলীপ সোম পরিচালিত 'মহামিলন' এবং ১০) বাদল খন্দকার পরিচালিত ' স্বপ্নের পৃথিবী
সালমান এর মৃত্যু / অপমৃত্যু ঃ

১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় 'প্রেমপিয়াসী' ছবির ডাবিং করতে যান সালমান শাহ। সেখানে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন নায়িকা শাবনূর। কিছুক্ষণ পর সালমান তাঁর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরীকে ফোন করে বলেন, তাঁর স্ত্রী সামিরাকে নিয়ে এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে আসার জন্য। শ্বশুরের সঙ্গে সাউন্ড কমপ্লেক্সে এসে সামিরা দেখতে পান সালমান ও শাবনূর ঘনিষ্ঠভাবে খুনসুটি করছে। সালমান প্রায়ই এ ধরনের খুনসুটি করতেন। সামিরাকে উত্তেজিত করে তুলতেন। কিছুক্ষণ পর কমর উদ্দিন চলে গেলে সামিরাও দ্রুত গাড়িতে ওঠেন। অবস্থা খারাপ দেখে একই গাড়িতে ওঠেন সালমান শাহ ও চিত্র পরিচালক বাদল খন্দকার। সালমানের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেন সামিরা। তাঁকে বোঝাতে থাকেন বাদল। বেরিয়ে যাওয়ার সময় সালমান এফডিসির প্রধান ফটকের সামনে নেমে আড্ডা দেন, যা এর আগে কখনো করেননি।রাত ১১টার দিকে নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্কাটন প্লাজার বি-১১ নম্বর ফ্ল্যাটে পেঁৗছে দিয়ে বিদায় নেন বাদল খন্দকার। সামিরাও তখন ঘরে। সাড়ে ১১টার দিকে সালমান বেডরুমে গিয়ে টিভি দেখেন। তখনো তাঁদের মধ্যে কথা বন্ধ। ১২টার দিকে সালমানের মোবাইলে একটি ফোন আসে। তিনি বাথরুমে গিয়ে কথা বলে বেরিয়ে টিভি বন্ধ করে অডিও ক্যাসেট ছাড়েন। এ সময় আরো একটি ফোন আসে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। উত্তেজিত হয়ে সালমান মোবাইল ফোনসেটটি ভেঙে ফেলেন। ক্ষুব্ধ সামিরা ব্যাগ গুছিয়ে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে ফুফুর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। সালমানের পিএ আবুল ইন্টারকমে দারোয়ানকে গেট না খুলতে নিষেধ করেন। সামিরা ফিরে এলে সালমান তাঁকে ফুফুর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ৬ সেপ্টেম্বর সকালে 'তুমি শুধু তুমি' ছবির শুটিংয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সালমান ঘুমাতে থাকেন। বাজারে পাঠানো হয় তাঁর দেহরক্ষী দেলোয়ারকে। এ সময় কমর উদ্দিন তাঁর ছেলের ফ্ল্যাটে আসেন। সালমানকে বলেন, মা, ভাই ও তাঁকে নিয়ে সিলেটে যাবেন। এ সময় সিদ্দিক নামের এক প্রযোজকও আসেন। কমর উদ্দিন ও সিদ্দিক চলে যাওয়ার পর সামিরা তাঁর বেডরুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল ১১টার দিকে সালমান ঘুম থেকে উঠে দুই কাজের মেয়ের একজনকে ডেকে চা ও পানি খান। কিছুক্ষণ পর ড্রেসিংরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা লক করে দেন। ঢোকার আগে আবুলকে বলে যান, আমাকে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে। সাড়ে ১১টার দিকে আবুল সামিরাকে জাগিয়ে বলেন, অনেকক্ষণ আগে ড্রেসিংরুমে ঢুকলেও তাঁর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সামিরা দরজার ডুপ্লিকেট চাবি খুঁজতে থাকেন। পৌনে ১২টায় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে আবুল ও সামিরা ড্রেসিং রুমের দরজা খুলে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছেন সালমান। সামিরা ও দুই কাজের মেয়ে সালমানকে উঁচু করে ধরেন। পাশের বাসার কাজের মেয়ে দড়ি কেটে সালমানকে নামিয়ে আনেন। দড়িটি ছিল ব্যায়ামের যন্ত্র থেকে বের করা। সালমান ফ্যান পর্যন্ত ওঠেন ঘরে থাকা একটি কাঠের মই দিয়ে। নামানোর পর পাশের বাসার কাজের মেয়েটি বলে, 'শরীর এখনো গরম। উনি মরেননি।' তখন মাথায় ও গায়ে তেল মালিশ করা হয়। এ সময় মে ফেয়ার বিউটি পার্লার থেকে সামিরার বান্ধবী রুবি এসে শুশ্রূষায় অংশ নেন। হাউজিং কমপ্লেক্সের ম্যানেজারও আসেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চলচ্চিত্রের প্রোডাকশন ম্যানেজার সেলিম এসে সালমান শাহকে মরার মতো পড়ে থাকতে দেখে সালমানের বাবা কমর উদ্দিনকে খবর দেন। খবর পেয়ে কমর উদ্দিন, সালমানের মা নীলা চৌধুরী, ভাই শাহরান ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। তাঁরা গিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য লিফট দিয়ে নামাতে যান। এ সময় লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১৫ মিনিট দেরি হয়। পরে তাঁকে নামিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী রমনা থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে মা নীলা চৌধুরী সালমানের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। এই পর্যায়ে পুরো ব্যাপারটি খুবই নোংরা পর্যায়ে চলে যায়। নীলা চৌধুরী অভিযোগ করেন, সামিরার সাথে বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এবং এ দু'জন মিলে সালমানকে হত্যা করেছে। সামিয়া পালটা অভিযোগ করেন যে নীলা চৌধুরীই আজিজ ভাই সহ অনেক পুরুষকে তার বাড়িতে নিয়ে আসত এবং এটা নিয়ে সালমান ও তার বাবা নীলার উপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন। এছাড়া সামিরা পুরো ঘটনার জন্য সালমান-শাবনুরের প্রেমকেও দায়ী করে।
২০০১ থেকে সালমান শাহ এর মা নীলা চৌধুরীর সাথে আমার পরিচয় ঘটে যার এবং নীলা আপার কাছে যাওয়া আসার
কারনে ধীরে ধীরে আপার বেশ স্নেহভাজন হয়ে উঠি। ফলে খুব কাছ থেকে সালমান শাহ ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা পাই। প্রায় সময় তখন আফসোস করতাম 'ইশ যদি সালমান বেঁচে থাকতো এই সময় তাহলে কাছ থেকে তাকেও দেখার সুযোগ হতো'। সালমান এর ধানমণ্ডি বাসভবনেও গিয়েছিলাম। সেখানে সালমান এর ব্যবহৃত সকল আসবাবপত্র ,কাপড় চোপড় সহ তাঁর শৌখিনতা সম্পর্কেও একটা ধারনা পেয়েছিলাম। তিন বছরে পরিবারটির সাথে মেলামেশায় যা বুঝলাম সেটা হলো সালমান এর মৃত্যু কোন আত্মহত্যা ছিল না সেটা পুরো স্পষ্ট। এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড যা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই এবং এই হত্যার পেছনে সালমান এর খুব কাছের মানুষ জড়িত এবং আগে থেকে কেউ কেউ কিছুটা টেরও পেয়েছিল। কিন্তু কোন এক অজানা রহস্য সেই হত্যাটা আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠিত করা হলো এবং এই হত্যার কোন কুল কিনারা আজ পর্যন্ত হয়নি যার পেছনে সালমান এর কোন এক আপনজনসহ বাহিরের চিহ্নিত শত্রু জড়িত ছিল। এই হত্যার বিচার আজো হয়নি এবং হয়তো আগামিতেও হবে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।।
মাত্র তিনবছরের ক্যারিয়ারে প্রয়াত সালমান যে সকল খ্যাতিমান ও গুণী পরিচালকদের ছবিতে কাজ করেছিলেন তাদের নাম ও ছবির তালিকা - সোহানুর রহমান সোহান (কেয়ামত থেকে কেয়ামত), শিবলি সাদিক - (অন্তরে অন্তরে, আনন্দ অশ্রু ও মায়ের অধিকার), জহিরুল হক ( তুমি আমার ও সুজন সখী), গাজী মাজহারুল আনোয়ার (স্নেহ), শফি বিক্রম্পুরি ( দেনমোহর), দিলিপ সোম (মহামিলন), এম এম সরকার (চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেম পিয়াসি), বাদল খন্দকার ( স্বপ্নের পৃথিবী), হাফিজউদ্দিন ( আঞ্জুমান), দেলোয়ার জাহান ঝনটু ( কন্যাদান) , মালেক আফসারি ( এই ঘর এই সংসার), এম এ খালেক ( স্বপ্নের পৃথিবী), জীবন রহমান (প্রেমযুদ্ধ), মোহাম্মদ হান্নান (বিক্ষোভ), মোহাম্মদ হোসেন (প্রিয়জন), মতিন রহমান (তোমাকে চাই) ,শাহ আলম কিরন ( বিচার হবে), জাকির হোসেন রাজু ( জীবন সংসার) তমিজ উদ্দিন রিজভী (আশা ভালোবাসা) ।।
যে সকল গুণী ও খ্যাতিমান পরিচালকদের সাথে কাজ করতে পারেননি বা করার সুযোগ হয়নি তাঁরা হলেন - কামাল আহমেদ, এ জে মিন্টু, দেওয়ান নজরুল, মোতালেব হোসেন, দিলীপ বিশ্বাস, রায়হান মুজিব, ফজল আহমেদ বেনজীর , কাজী হায়াত, শহিদুল ইসলাম খোকন, মোস্তফা আনোয়ার, চাষি নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, আবুল খায়ের বুলবুল, অশোক ঘোষ, নাদিম মাহমুদ, সিদ্দিক জামাল নানটু, ইস্পাহানি আরিফ জাহান, নূর হোসেন বলাই, মমতাজুর রহমান আকবর, সৈয়দ হারুন, আওকাত হোসেন, মনোয়ার খোকন, উত্তম আকাশ, ওয়াকিল আহমেদ, বেলাল আহমেদ, এফ আই মানিক, আজিজুর রহমান বুলি, শেখ নজরুল ইসলাম, আলমগীর কুমকুম ।।
যাদের ছবি করতে পারেনি উনাদের যদি একটি করে ছবি সালমান জীবিত অবস্থায় উপহার দিয়ে যেতে পারতো তাহলে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আরও কিছু কালজয়ী ছবি দর্শকরা পেতো। এই আফসোস রয়ে যাবে সালমান ভক্তদের চিরকাল।
**** সালমান শাহ এর মৃত্যু বার্ষিকীতে সামুর শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে যদি আমার এই পোস্টটি সটীকী পোস্টে স্থান না পায় তাহলে বুঝে সহজেই বুঝে নিবেন এর পেছনে সামু ব্লগের কুখ্যাত, জনপ্রিয় লুলসম্রাট, গণ্যমান্য , জঘন্য ও আমার কাছের প্রিয় এক ব্লগার চেয়ারম্যান ০০৭ এর কোন বিশেষ চক্রান্ত আছে। কারন ২ দিন আগেই উনি আমার একটি পোস্টে স্বীকার করেছিলেন মডু নাকি উনার প্রিয় একটি বন্ধু


একটি RaDiO bg24 এর নিবেদন।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:০৫