আছিস ক্যামন তোরা ? আমি ভালো নেই। ক্লাসে স্যার পড়ানোর সময় কানে হেডফোন গুজে গান শুনতে শুনতে বই পড়াটা মিস করি খুব আজকাল। অফিসে বড্ড ঝামেলা। একটুও মজা নাই। বেশি বোরিং লাগলে ওয়ামরুমে গিয়ে বসে থাকি। বসে বসে টেম্পল রান খেলি। এখানে প্রক্সি দেবার জন্যে আমার আশিকের মতন বন্ধু নেই। সেই যে পরীক্ষার সময় টেবিলে প্রায় ছয়টা চ্যাপ্টার লিখে ফেলেছিলাম আমি সেই টেবিলটা আমার চাই। আমার অফিসের টেবিল একদম ফকফকা। ইশ্ না জানি কোন জুনিয়র ভাই সেই টেবিলে বসে পরীক্ষা দিয়ে আমার গুনকীর্তন করছে এখন ! আমি আর মশা(নাম বলা যাবেনা ! ) যে ফিন্যান্সের মেয়েটাকে একইসাথে মন দিয়েছলাম তাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করল আজ। আহা, অযথাই মন উচাটন হয়।
দোস্তরা, অফিসের ক্যান্টিনটা ভালো। দামও কম। পুরাই শেরশাহের আমল ! কিন্তু ক্লাস শেষে একটা ভেলপুরি টানাটানি করে পাঁচজন মিলে খাওয়ার যে আনন্দ সেটা পাইনারে একদমই। সকাল সকাল সূর্যসেন হলের বেলের শরবতের মতন লিকুইড খিচুরীও যদি কেউ খেতে দেয় এখন, তোরা পাশে থাকলে ঠিক ঠিক সেটা আমি খেয়ে ফেলবো দেখিস!
প্রেজেন্টেশনের আগের দিন রাশেদকে ফোন দেওয়াটা মিস করি খুব। ‘দোস্ত, তুই’ই সব করে ফেললি ক্যান ! আমাকে বলতি। সব কাজ করে দিতাম। আচ্ছা যা, নেক্সট টাইম।’ গ্র“প লিডারকে এই কথা বলার পর তার মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে করে রে। বাথরুমে গিয়ে অধূমপায়ী আমি তোদের সিগারেটের ধোয়ার স্বাদ কতদিন যে নেইনা ! ও শোন, আফ**( নাম বলা নিষেধ !) ম্যামকে স্বপ্ন দেখলাম অইদিন। স্বপ্নে তার পারফিউমের ঘ্রান পেলাম। কি আশ্চর্য সারাদিন সে ঘ্রান আমার মাথার ভেতর ছিলো।
পকেটে টাকা নাই তাও সবাই মিলে বিএফসিতে যাওয়ার প্লান আর আগের মতন করার সাহস নাই আমার। এই অফিস লাইফে আমি বড্ড ভীতু। ঝাড়ি,টারি খাই। মুখ বুজে সহ্য করি।
ও ভুলেই গেছি শোন, সিয়ামাত তোর ডিএসএলআর টা কই? কেউ ছবি তোলেনা এখন আর। নতুন চশমার ফ্রেম নিলাম। ভাব নিয়ে যে একটা ছবি তুলবো সে সুযোগ কই? তুহিন আর ফুজায়েল অনেকদিন মালাই চা খাওয়ায় না। লম্বু জিরাফ মেহেদিও বলেনা, সকাল থেকে পাঁচটা মধুবন টোস্ট ছাড়া আর কিছুই খাই নাই দোস্ত। চল খেয়ে নেই। ওহে, লেট লতিফ রাব্বি রেকিট এ চাকরি পাওয়ার খাবারটা কি কোলকাতায় গিয়ে তোমার ভাই নায়ক তাপস পালের সাথেই খাবো?
আলামিন,মিনহাজ,সাইফুল,রিয়াদ,রকিব,আকাশ,ইফতেখার,মনির,শাহাদাত,জন্ডিস মেহেদি তোদের মিস করছি খুব। তার চেয়েও বেশি মিস করছি তোদের নিয়ে ক্লাসে বসে আশিকের আঁকা নোংরা ছবিগুলো। অই বিপস্ ‘অষ্ট ব্যাঞ্জনে’ কবে যাবো? খাওয়াতো পাওনা ছিলো একটা।
বাই দ্যা ওয়ে, এখন ঘুমাবো। কাল সকালে আবার ছুটতে হবে। জীবনটা হঠাৎ করেই কঠিন হয়ে গেলো। এমন তো ছিলোনা সবকিছু। এমন তো হবে ভাবিনি আগে।
কোন ব্যাটা জানি বলেছিলো, ইশ্কুল, কলেজের পর আর কোন বন্ধু হয়না। যা হয় তা হল সহপাঠী। ভুল। কঠিন ভুল। যদি না হতো, তবে তোরা কি? তোদের যে অনেক লাভ য়্যু করি তা এখন বুঝতেছি। শোন, আমি ভাবতাম ব্যাকবেঞ্চারের আমরা খুব খারাপ। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল ছিলো। এই যে, মানুষের ভীড়ে এসে দেখি এখন আমরাই সবচেয়ে ভালো ছেলে। এখন বুঝি ব্যাকবেঞ্চাররা, খারাপ ছাত্ররাই (রোল নাম্বার ১ রাশেদ আর ডিন্স অ্যাওয়ার্ড বিপস্ বাদে ) সত্যিকারের ভালো ছেলে। ভালো মানুষ।
আজ ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। ওখানকার বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে সে যে কি দারুন লাগে ! বন্ধুরা, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছ্ ে। আমি আবার ছাত্র হতে চাই। আরও একশত বছর ছাত্র থাকতে চাই। ম্যানেজ করনা পিলিজ্ । দোহাই লাগে এই কিঙ্কর বাচ্চাটাকে বাঁচা। বাঁচা।
ইতি
কিঙ্কর আহ্সান
মার্কেটিঙ ১৪ তম ব্যাচ
রোল- ২৫১, সেকশান- ‘এ’
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৫২