বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই মার্কিনীরা এই দেশের চিরশত্রু। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সেক্রটারী ছিলেন হেনরী কিসিঞ্জার নামের এক নির্দয় অমানবিক কূটনীতিক, যার পররাষ্ট্রনীতি ছিল বরাবরই শীতল ও ক্রূর প্রকৃতির। এ কারণে কোথাও গণহত্যা বা মানবিক বিপর্যয়ের অভিযোগ এলে তার প্রতিক্রিয়া হতো—‘এটি মানবিক বিষয়। এর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কোনো সম্পর্ক নেই’। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের গণহত্যাকে সমর্থন করে স্বাধীন বাংলাদেশেও তার পরিচয় এক নিন্দিত চরিত্রের। পর্যবেক্ষকদের মতে, মুখে ‘পাকিস্তানের পূর্ব অংশের গোলযোগটি দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে উড়িয়ে দিলেও বাঙালির স্বাধীনতার যুদ্ধটিকে কিসিঞ্জার দেখছিলেন শুধু স্নায়ুযুদ্ধের অংশ হিসেবে। এ কারণে পূর্ববঙ্গে গণহত্যার যাবতীয় প্রমাণ হাতে পাওয়া সত্ত্বেও তা উপেক্ষাই শুধুই করেননি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে মার্কিনীদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন।কিন্তু মাথা নত করেনি বাংলাদেশ।শক্তিধর রাষ্ট্রের বিরোধীতা সত্বেও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।সেই মর্ম বেদনায় যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশকে খাদ্য সহায়তা না দিয়ে কিসিঞ্জার 'বটমলেস বাস্কেট' বা 'তলাবিহীন ঝুড়ি' উপমা দিয়েছিল। বাংলাদেশ আজ অর্থনীতিতে শুধু উন্নতিই করেনি,দূর্যোগে মার্কিনীদের সহায়তা দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে।
আবারও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়।মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে হেনরী কিসিঞ্জার মতই এক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমন ঘটে যার নাম হিলারি ক্লিনটন।দুজনের নামের আদ্যক্ষরের অদ্ভুদ মিলতো ছিলই, চরিত্রেও। উইকিলিকস হিলারির ব্যক্তিগত ও নির্বাচনী ৫০ হাজার ইমেইল প্রকাশ করার পর হিলারির অসততা, দুনীতিপরায়ণ মনোভাব, মিথ্যাচার ও রাজনৈতিক দ্বিচারিতা জনসম্মুখে উঠে আসে। মধ্যপ্রাচ্য আইএসের উত্থান, ঘুষ নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি, নির্বাচনী অনুদান, মেইল ধ্বংস বিষয়ে এফবিআইকে মিথ্যাচার সহ নানাবিধ বিতর্কিত কাজে হিলাররি ভূমিকা। নারীর প্রতি অশালীনতা, পুতিন ইস্যু, অভিবাসন বিষয়ে হিলারীর রাজনৈতিক দ্বিচারিতা। হিলারির ইমেইল বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। নির্বাচনী ইমেইলে জানা যায়, ডেমোক্র্যাটদের প্রাইমারি বিতর্কে হিলারিকে কী কী প্রশ্ন করা হবে, তাও আগে থেকেই হিলারিকে জানিয়ে দেওয়া হত। উইকিলিকস থেকে জানা যায় ড. ইউনূস হিলারির নির্বাচনী ফান্ডে কয়েক লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেও ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করা হয়। দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করেছিল বিশ্বব্যাংক মূলত হিলারী ক্লিনটনের পরামর্শে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঘন ঘন বাংলাদেশে সফরে আসেন। সমস্ত ষড়যন্ত্র ও চাপ উপেক্ষা করেই ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু হবে। তিনি এটাও বলেন, ‘কোনও দুর্নীতি করা হয়নি। দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের সামনে মাথা নত করবে না বাংলাদেশ’।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে, চিরশত্রু মার্কিন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীও জীবিত, তাদের সম্মুখে সগর্বে দাড়িয়ে বাংলাদেশ ও পদ্মা সেতু বলছে, আমরা মাথা নত করবো না। জয় বাংলা।।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২২ দুপুর ২:০৮