খুব কি মন্দ হতো এমন জ্বলে পুরে ক্ষাদ হয়ে আগুন হয়ে যেতে পারলে . . . . . . . এসো এসো হে বন্ধু, মরণ আমার ভালই লাগে! . . . . . . জীবন যখন বিষাদের কাঁটা হয়ে গলায় ঝুলে থাকে তখন কি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে ইচ্ছে করে না এই জিবনের চেয়ে কি মৃত্যুই শ্রেয় ছিলনা? আমার জিবনের মোড় একটা সময়ে এসে কাটার মত বিধতে লাগলো।শ্রান্ত অবহে রিক্ততার উৎসব আজ, নিরলিপ্ত অবহে মুখোর অগ্রাশন। জীবন যেন সেই বিষন্নগর্ভা নারীর মত। অনাগত প্রান জার জন্য শুধুই আশংকা নিয়ে আসছে। জার চোখ থেকে রৌদ্দুর মুছে গেছে, জোনাকি দেখে সে এলিয়ে বলে ভুল করতেই পারে। ছোট বেলার কথা মনে পরে। মা শিখিয়েছিল ঘুমানোর আগে মৃত্যুকে স্বরণ করে আল্লাহ এর কাছে ক্ষমা চাইতে। কাথার নিচে মাথা লুকিয়ে ক্ষমা চাইতাম। বড় হওয়ার পর এই ভাবনাটা মাথার ভেতরে স্থায়ী জায়গা করে নিল।কল্পনার জগতে একটা দৃশ্যই ভেসে আসতো। আমি আমার কবরের দরজার মুখে বসে আছি যেখান থেকে সুর্যাস্ত দেখা যাচ্ছে। আশেপাশের প্রতিবেশির টেলিভিশনের শব্দ কিংবা আ্যম্বুলেন্সের চিৎকার আমাকে মোটেই বিচলিত করছেনা। মৃত্যু - মাথার ভেতর একটা শব্দ বার বার ঘুরে ফিরে আসতে থাকে আর আমি যেন এই একটি মাত্র শব্দের তোড়ে বার বার ভেসে যাই জীবনের এপাড় থেকে ওপাড়। নিঝুম রাতে যখন আমি আমার নিজের কাছে ফিরে আসি একান্তভাবে তখন আমার অন্ধকার ঘরের ভেতর থেকে উঠে আসে 'মরণ' নামের নিশাচর পাখি, ডানা ঝাপটিয়ে বেড়ায় আমার দেহ খাচায়। নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারিনা। খুব অসহ্য যখন লাগে, উঠে আসি বিছানা ছেড়ে। টেবিলের উপর রাখা ধর্মের সেই পবিত্র গ্রন্থটি পড়ি যেখানে প্রভু কথা বলছেন মানুষের সাথে। আমি প্রার্থনা করি- একবার, একবার তুমি আমার সাথে কথা বল। আমাকে বলে দাও আমি কি করবো।প্রভু কথা বলেনি বলে কেঁদেছি...অভিমান করেছি। তখন তো বুঝিনি প্রভুর বলার ভাষা আমার জানা নেই। কথা না বলেও যে কথা বলা যায় সে আমার মতো এতো নগন্য মানুষ জানবে কি করে। প্রভু আমার প্রশ্নের উত্তরে মরণ কাকে বলে দেখালো। মত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখলাম। একটি পাঁচ বছরের শিশুকে মরতে দেখলাম, - হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে যখন যন্ত্রে সাহায্যে এক একটা শ্বাস নিচ্ছিল তখন তার পাশে দারানো অসহায় বাবার গোপন আকুতি বুঝতে পারলাম। তিনি প্রভুর কাছে তার আদরের ছেলে জীবন ভিক্ষে চাইছেন। এক সত্তুর বছরের বৃদ্ধকে ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হতে দেখেছি, - পাশে বসা তার স্ত্রীর অনবরত সুরা পাঠ করে যাচ্ছেন। নানার বুক থেকে যখন কৃত্তিম যন্ত্র গুলো সরিয়ে নিল, তিনি শুধু একবার চোখ খুললেন তারপর ঘুমিয়ে গেলেন চিরতলে। তার স্ত্রীর বিকট কান্না আজও অপ্রিতিকর আমার কাছে। প্রভু আমাকে আরো দেখালেন সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর অন্তিমকাল। সমবয়সী বন্ধুকে তারই প্রিয়তমার কোলে শেষ নিঃশ্বাষ নিতে দেখেছি। ওয়ারদা যেদিন মারা গেল তার আগের চব্বিশ ঘন্টা হয়তো আমার জীবনের দীর্ঘ সময়গুলোর মধ্যে একটি। তুইতো বিছানায় শুয়ে ছিলি, কিন্তু তোর পাশে আমি দারিয়ে সেই রাতেই মনে হয় অস্থিরতার হাজার মরন মরলাম। তোর মায়ের প্রতিটি চিৎকার আরো অসহ্য করে তুলছিল আমাদের অপেক্ষা। দরজায় দারানো আসাদের নীরবতা তাকে যে কতবার মারলো তুই আর জানলিনা।
প্রভু আমাকে এর সবকিছুর সাথেই পরিচয় করিয়েছেন। জানলাম যখন পৃথিবি ছাড়বো হয়তো অতি সামান্য মুহুর্তে কাজটি ঘটে যাবে কিন্তু এই মুহুর্তগুলোতে মানুষ হাজার মরনের স্বাদ পায়। আর এই অস্থিরতা থেকে বিষাদমাখা জিবনকে ভালই বলা যায়। অন্তত বেঁচে থাকার কিছু সুন্দর দিনের প্রত্যাশা করা যায়।
আজকাল বরো হতাশ লাগে। উদ্দেশ্যবিহীন পথ চলা। অর্থহীন কিছু পুতুলনাচ। খুশির মোড়োকে লুকিয়ে থাকা তিতকুটে জীবন। জানিনা তবু কেন ... ডাস্টবিনটার শরীর জরিয়ে মাধবীলতা যেমন ছরিয়ে থাকে, উড়াল পুলের নিচের অন্ধকারে যেমন স্বপ্নের জন্ম হয় তেমনি রাতচোরা পাখির ডানায় ভাসতে ভাসতে বলি আমি আজো জীবনানন্দেই বেঁচে থাকি।
মাঘ ৯ , ১৪১৪
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৬:০৩