আজ বিশ্ব ব্যাপী ব্যাপক উদ্দীপনা নিয়ে উদযাপিত হচ্ছে বন্ধু দিবস। কেউবা হাতে ফুল নিয়ে আবার কেউবা মোবাইলের ম্যাসেজ বক্স নিয়ে ব্যস্ত। এত কিছুর মাঝে সবচেয়ে মনে পড়ছে কিছু বন্ধুর মিষ্টি হাসির মুখখানি। ফিরে গেলাম পিছনে। সেই দিনগুলো সত্যিই এখন অনেক পীড়া দিচ্ছে। কাজের ব্যস্ততায় সেসব বন্ধুরা আজ কে কোথায় তার কোন খবর রাখছি না। একটি সন্ধ্যা বা বিকেল তাদের সাথে না থাকলে যেন রাতে ঘুমই হতো না। সেই বন্ধুদের সাথে নিয়ে কলেজের নতুন পরিচয়ের মেয়ে বন্ধুটির বাড়িতে যাওয়া। প্রচন্ড বৃষ্টিতে ভিজে তার বাসার বারান্দায় যখন পৌছি তখন আমরা একে অপরকে ধাক্কাই যেন সে এগিয়ে যায়। মেয়েটির বার্থ ডে'র দাওয়াত। সেখানে গিয়ে পরিচয় হলো আরও কিছু বান্ধবীর সাথে। সেখান থেকে আমাদের কারও কারও জুটিও তৈরী হয়েছিল। এখন তাদের কেউ আমেরিকায়, কেউ ক্যান্টনম্যান্টে আর্মি অফিসারের বউ আবার কেউ ডাক্তার, কেউ টিভিতে। তবে সবাই যার যার জীবন কে সাজাতে মহাব্যস্ত।
কোন মেয়েটা পাড়ায় নতুন এসেছে। সে কি বিকেলে ছাদে যায়, সে কি বিকেলে রাস্তায় হাটে? এসব বিষয়গুলো ছিল আমাদের কেবিনেটের এজেন্ডা। স্কুলের পাশে কাঠাল তলায় কিংবা পুকুরধারে প্রতিদিন আমরা এগুলোই বেশি শেয়ার করতাম। এখন সে কথা মনে করে শুধুই হাসি পাচ্ছে।
আমার এক বন্ধু মেয়েদের দেখলে যেন তার জ্বর উঠতো। সে যখন এক অপরিচিত মেয়ের মোবাইলে ম্যাসেজ দেয়া শুরু করলো তখন ওই মেয়ে একটা সময় তার প্রতি আগ্রহ তৈরী হলো। শুরু হলো কথোপকথন। কিন্তু বন্ধু আমার ভীরু ভীরু কন্ঠে বেশিদিন তার সাথে এগুতে পারলো না। ওই মেয়ে শুধু তার জাপানী দুলাভাই আর অস্ট্রেলিয়ান বড় ভাইয়ের গল্প করতো। কিন্তু বন্ধু আমার কোন ভাবেই তাকে বানিয়ে গল্প শুনাতে পারেনি। অবশেষে আবার পুরনো রাস্তায়।
আর এক বন্ধু একটু বোকা প্রকৃতির ছিল। সেই একবার milk নিয়েparagraph লিখতে গিয়ে লিখলো milk is a domestic animal. তার প্রতিটি ভুল আমাদের দিতো বিনোদন। কিন্তু সেই সহস সরল বন্ধুটি আমার ২বার এসএসসি আর একবার এইচএসসি ফেল করলো।
আরেক বন্ধু ছিল খুব স্বাস্থ্যবান। তার বাবা বিডিআরে চাকুরী করতো বলে তাকে আমরা প্রায়ই রাগাতাম। বলতাম বর্ডারের ডাল। হাবিজাবি শুনেও বন্ধুটা কখনো আমাদের গায়ে হাত উঠাতো না। কখনো রেগে গিয়ে গালাগালি করতো। কিন্তু ১০মিনিট পর আবার আগের জায়গায়। একবার মৌমাছি তাকে এতোটাই আক্রমন করলো যে সে একটি চোখ ঠিকমতো খুলতে পারেনি।
দূরন্ত সময়গুলি সত্যিই মনে পড়ছে। সেই ডাবচুরি, জাম্বুরা আর অফিসের গাছের পেয়ারা, কাঠাল চুড়ির সেই অপরাধগুলো যেন ছিল একরকম প্রতিযোগিতার। কালচারাল অনুষ্ঠানের নামে পাড়ার সুন্দরী মেয়েটার সাথে দু'মিনিট কথা বলার সুযোগ এখন আর হয়না। ফরম ফিলাপ আর বিভিন্ন দাবিতে কলেজের গ্লাস ভাঙ্গার উৎসবগুলো এখন শুধুই ভাবায় আর হাসায়।
আজ মনটা বেশ বিষন্ন। সন্ধ্যায় এক দূঃসংবাদ আমাকে খুব পীড়া দিল। বন্ধুর মতো যাকে জানতাম সেই বড় ভাইটির একটি দূঃসংবাদ শুনলাম। যা কখনোই ব্লগে শেয়ার করার মতো নয় বলে দূঃখিত। তাকে আর কাজের জন্য কাছে পাবো না। তিনি আছেন কিন্তু অনেক দূরে। তার হাত ধরে অনেক কিছু আমি শিখেছি। তাকে তাই কখনো ভূলবো না। মিস করবো খুব। ভাইয়া আপনি ভালো থাকুন। আমাদের জন্য দোয়া করুন। আর আপনার সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা করছি। সত্যিই আপনাকে খুব মনে পড়ছে। অনেক অনেক বেশি বেশি। সেই বিকেল থেকে ফোন করছি। আপনি কেন ফোন ধরছেন না সেটা জানি। জানি না এই লেখাটি আপনার চোখে পড়বে কি না।
লেখাটি পড়ে যদি কারও ভালো না লাগে তাতে আমি দুঃখিত। মনের অনেক স্তুপিকৃত বেদনা প্রকাশ করতে পারছিলামনা সন্ধ্যা থেকে। এখানে অনেক বন্ধুর সামনে মনের সামান্য আবেগ প্রকাশ করতে পেরে নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে। প্রতিটি বন্ধুর জন্য শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০০৯ রাত ১১:১৫