বামন পুরাণ মতে, শরভরূপী মহাদেব দন্তাঘাতে নরসিংহকে দ্বিখন্ডিত করেন। নররূপ দেহার্ধ থেকে মহাতপা মুনিরূপধারী নর আর সিংহরূপ দেহার্ধ হতে মহাতপা নারায়ন নামক জনার্দন উতপন্ন হন।জনার্দন কে?
মহাভারত আদিপর্বে আছে,বিষ্ণুর অপার নাম জনার্দন।‘জন’ নামক অসুরকে বধ করে ইনি জনার্দন নামে অভিহিত হন। বুঝা গেল,অসুর বধও তাঁর অন্যতম কাজ। এখন জানা দরকার বিষ্ণু কে?
ইনি ব্রহ্মাদি ত্রিমূর্তির একতম। সৃস্টির পালক। লোক রক্ষার জন্য,দেবতাদের সাহায্যের জন্য,পৃথিবীর কল্যানের জন্য তিনি নানা অবতাররূপে আবির্ভূত হন নানা যুগে।তিনি সদগুনর আধার।তিনি পরমাত্মা,পুরুষ,প্রভূ।প্রলয় সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় নারায়নরূপী মনুষ্যদেহধারী হয়ে তিনি শেষনাগের উপর শায়িত আছেন। আচ্ছা,অসুর কে?
বেদের প্রাচীনতম অংশে অসুর দেবতা।পারসিক আবেস্তায় শব্দটা অহুর।নানা পরিক্রমায় বেদের শেষাংশে মানে অথর্ব বেদে দেখা যায় অসুর মানে দেব বিরোধি। দেবতাদের সাথে যুদ্ধ করাই যেন তাদের অন্যতম কাজ।ব্রহ্মান্ড পুরাণ মতে,যেসব অসুর দেবতাদের সাথে যুদ্ধে নিহত হতো তারা্ আবার মানুষ রূপে জন্মান, সৃস্টি করেন নানারকম বিপদ।মানে দাঁড়াল মানুষের মাঝেও অসুর আছে।
এবার নিজের বয়াণে আসি।
সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর যুগে দেব-দেবীগন নানা সময়ে চেস্টা করেও অসুর বংশ সম্পূর্নরূপে ধংস করতে সমর্থ হননি।বড় বড় কিছু অসুর বীর ধংস করে সম্ভবত তাঁরা রণে ভঙ্গ দেন।কলি যুগে অসুরদের বংশ বৃদ্ধি পেল।তদুপরি মানুষর মাঝেও বংশের নতুন ধারা এলো।রণে ভঙ্গ দিয়ে একসময় দেবতারা তাদের চির অনুগত মানুষের কাছে পৃথিবীর ভার অর্পন করেন।কলিকালে তাই মানুষের দখলেই পৃথিবী। দেবতারা সামান্য ফুল চন্দন ভেট পেয়েই তৃপ্ত।অসুরদের হলো পোয়া বার।কারণ মানুষের মাঝে যে তারাও আছেন।দেবতাদের সাথে যুদ্ধ করতে হলে স্বর্গলোক...আরও কতলোকে পাড়ি দিতে হয়।আর দেবতাদের অনুচরতো হাতের নাগালেই!
এবার বলি নারায়নগঞ্জ নামের বৃত্তান্ত।১৭৬৩-৬৬ সালের কথা, হিন্দু সম্প্রদায়ের জনৈক নেতা বিকললাল পান্ডে ওরফে লক্ষী নারায়ন ঠাকুর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাছ থেকে শীতলক্ষা নদীর তীরে কিছু জমি বন্দোবস্ত নেন।এরপর তিনি দেবতা প্রভূ নারায়নের সেবার ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত বাজারটিকে ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী দেবোত্তর সম্পত্তি ঘোষনা করেন।দেবতা নারায়নের নাম থেকেই বাজার/স্থানটির নাম নারায়নগঞ্জ।এছাড়াও নামকরণের আরও কিংবদন্তী শুনা যায়।(আমি একটি উল্লেখ করলাম মাত্র)।
এহেন নারায়নগঞ্জে দেবাসুর লড়াই হবে না তা কি করে হয়? এ যে চিরকালীন বৈরিতা!দেবতা যেহেতু আর পৃথিবীতে আসছেন না তাই দেবতাদের প্রিয় ও অনুগত মনুষ্য প্রজাতির ওপরই অসুরদের নতুন আক্রোশ।অসুরও এখন মনুষ্য বংশজাতই।তাই এখানে সৃস্টি হয় নূর হোসেনের মতো অসুর(নেপথ্যে আরও নামনা জানা অনেক)।খুন হয় কখনো নয়জন, কখনোবা পাঁচ জন।ভবিষ্যতে কি হবে কে জানে?এ লড়াই যে থামবার নয় কখনো।
কলিকাল! ঘোর কলিকাল!!
তথ্যসূত্র: পৌরানিক অভিধান, বাংলাদেশের জেলা নামকরণের ইতিহাস।