somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুগত বুদ্ধের খোঁজে :

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নাম সমাচার :
হিমালয়ের পাদদেশে শাক্যজনপদের লুম্বিনী গ্রামে তাঁর জন্ম।কি নাম ছিল তার?অমরকোষ বোধিসত্ত্বে ছয়টি নাম পাওয়া যায়।এর মধ্যে শাক্যসিংহ, শৌদ্ধাদনি এবং মায়াদেবীসুত -এই তিনটি নিশ্চিত ভাবেই বিশেষণ ।আর অর্কবন্ধু গোত্র সম্পর্কীয় নাম।বাকী থাকে সবার্থসিদ্ধ আর গৌতম। আমরকোষের সবার্থসিদ্ধ বা জাতকে পরিবর্তিত সিদ্বার্থ অনেকের মতে কবির কল্পনা হতে উদ্ভুত।তাহলে নামটি প্রকৃতপক্ষে গৌতম/ গোতম। থেরীগাথার মহাপ্রজাপতি গোতমীর যেসব গাথা আছে তাতে গৌতম/গোতম নামটি পাওয়া যায়।তাই এটাকেই প্রকৃত নাম ধরা যায়। আমরা তাকে এ নামেই ডাকব,যদিও মহাপুরুষদের নাম নয় শিক্ষাটাই জানা জরুরী।আর সব নাম ছাপিয়ে তিনিতো বুদ্ধ।

জন্মকাল ও বাল্যকাহিনী :
পন্ডিতদের মাঝে গৌতমের জন্মতারিখ সম্বন্ধে মতভেদ আছে।তবে আধুনিক গবেষকরা যেসব তথ্যের ভিত্তিতে বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ খৃস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে বলেছেন সেটাকে মোটামোটি নির্ভুল বলা যায়।আশি বছর বয়সে তাঁর নির্বাণ হয়েছিল, সে হিসাবে তাঁর জন্ম সাল খৃস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে।এটাকেও প্রামান্য বলা যেতে পারে।
মহাপুরুষদের জন্মকাহিনী নিয়ে সবসময়ই পরবর্তীকালে কিছু অলৌকিকত্ব আরোপ করা হয়।বুদ্ধপরবর্তী জেসাস, মুহাম্মদসহ অনেকের ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়।গৌতমের বেলাতেও সেটার ব্যতয় ঘটেনি। মা মায়াদেবীর গর্ভে দশমাস থাকাকালীন এবং জন্মেরপরও মোট ষোলদিন ব্যাপি যেসকল অলৌকিক ঘটনার সমাহার দেখা যায়,তাদের থেকে মোটামুটি তিনটি (দশম,নবম,অস্টম)গ্রহনীয়ই মনেহয়।সে মতে বলা যায়,ঠিক দশমাস গর্ভধারনের পর মায়াবতি দাঁড়ানো অবস্থায় সন্তান জন্মদান করেন এবং ছেলের জন্মের সাতদিন পর মায়াবতি প্রান ত্যাগ করেন।জাতক মতে, শালবনের নীচে বা ললিতবিস্তার মতে, প্লক্ষ বৃক্ষের নীচে মায়াবতি সন্তান জন্মদেন।হতেপারে স্থানটি কোন বাগান/উদ্যান। এথেকে অন্তত এটুকু বুঝাযায়, তখন তিনি লুম্বিণী গ্রামে স্বামী শুদ্ধোদনের ঘরের বাইরে ছিলেন।
পত্নী বিয়োগের পর রাজা শুদ্ধোধন গোতমী নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন।তিনি ছিলেন তার শ্যালিকা।খালা/মাসির নাম থেকেই তাঁর নাম হয় গোতম/গৌতম।গোতমী তাঁকে প্রকৃত মাতৃস্নেহেই বড় করেছিলেন।কারণ পরবর্তী জীবনেও মায়ের প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা দেখা যায়।
গোতমের জন্মকাল থেকে বুদ্ধত্ব লাভ পর্যান্ত তাঁকে বোধিসত্ত্ব বলার রেওয়াজ বেশ পুরানো।প্রাচীন পালি সাহিত্যেও তার নিদর্শন আছে।“বোধি” মানে যে জ্ঞানে মনুষ্যের উদ্ধার হয়।আর এই জ্ঞানের জন্য যে প্রানী(সত্ত্ব)চেস্টা করেন তিনিই বোধিসত্ত্ব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমে এই ধারণা প্রবর্তিত হয় যে, বর্তমান জন্মের আগেও তিনি অনেকবার জন্মগ্রহন করেছেন।এসব জন্মেও তাঁর নামের সাথে বোধিসত্ত্ব বিশেষণটি লাগানো হলো।এভাবেই গড়ে উঠল ‘জাতক’ নামের গ্রন্থ।তারমানে জাতক হলো বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির সাধনকালে বোধিসত্ত্বরূপে বুদ্ধ যে জন্ম-জন্মান্তর কর্ম সাধনা করেছেন তার বর্ননা।বলা হয়ে থাকে মহানির্বাণের(বুদ্ধত্ব লাভের) আগে বুদ্ধ মোট পাঁচশতবার জন্মগ্রহন করেন।

বুদ্ধের বংশ ও জনপদ পরিচিতি:
হিমালয়ের পাদদেশে শাক্যজনপদের লুম্বিণী গ্রামে গৌতমের জন্ম।জাতি পরিচয়ে তিনি ক্ষত্রিয়।‘শক’ শব্দ থেকে শাক্য শব্দের উতপত্তি।এই শকের অর্থ শকবৃক্ষ বা সেগুন গাছ।শাক্য জাতি এই নামে পরিচিত হওয়ারও একটি কিংবদন্তী আছে।তিব্বতী ভাষায় রচিত বুদ্ধজীবনী ‘দুলভা’ নামক গ্রন্থে তার বিস্তারিত বিবরন পাওয়া যায়।কাহিনীটি সংক্ষেপে এরকম-
পুরাকালে পশ্চিম সাকেত(অযোধ্যার প্রাচীন নাম)অঞ্চলের রাজা ছিলেন আদিত্য গোত্রীয় ইক্ষ্বাকু।তাঁর মোট চার মহিষীর মধ্যে তিনজন ছিল নি:সন্তান।একমাত্র জ্যেষ্ঠা মহিষী ভট্টার ছিল নয় জন সন্তান(পাঁচ মেয়ে,চার ছেলে)।রাজা ইক্ষ্বাকুর এক পরমা সুন্দরী নর্তকী জয়ন্তীর গর্ভে যখন সন্তান এলো তখন তিনি জয়ন্তীকে কথাদেন তার সন্তান হবে সাকেত রাজ্যের ভবিষ্যত সিংহাসনের উত্তরাধিকারী।এতে করে রাজার সিদ্ধান্তে বিক্ষুব্ধ হয়ে একদল অমাত্য রাজার নটি পুত্র-কন্যা হয় দেশ ত্যাগ করেন এবং হিমালয়ের পাদদেশে এক শকবৃক্ষের বনে চলে আসেন।সেখানে ছিল কপিল মুনির আশ্রম।কপিল মুনির অনুমতি নিয়ে তাঁরা সেখানে বসতি স্থাপন করেন।শকবৃক্ষের অরণ্যে নিজেরা শাক্য পরিচয় গ্রহন করেন।নতুন রাজ্যের রাজধানী হয় কপিলবাস্তু(কপিলাবস্তু নয়)।ইক্ষ্বাকু রাজার বড় মেয়ে প্রিয়া বিয়ে করেন কাশি নির্বাসিত কোল নামক এক ক্ষত্রিয় রাজাকে।তাদের সন্তানগনই কোলিয় নামে পরিচিত।তাদের নিবাস ছিল শাক্যরাজ্যের পূর্বদিকেই রোহিণী নদীর ওপারে কোলিয়া রাজ্যে।শাক্য-কোলিয় উভয়েই ছিল কৃষিজীবি।স্বাভাবিক কারনেই চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় রোহিণী নদীর পানি নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ হতো।কৈশোর থেকে যৌবনে গৃহ ত্যাগের আগে গৌতম নিজেই বহুবার দুদলের সংঘর্ষ দেখেছেন।এমনকি জীবনের শেষভাগেও উভয়পক্ষের সেই হিংসা আর রক্তপাতের সাক্ষী তিনি নিজেই।
বৌদ্ধ সাহিত্যে যদিও বলা হয় গৌতম ছিলেন ‘শাক্য রাজার’ সন্তান তবে বিষয়টি সম্ভবত তেমন নয়।তিনি সম্ভবত ছিলেন একজন সংগতি সম্পন্ন গৃহস্থের সন্তান।ঐ সময়ে শাক্যরাজ্য ছিল ‘গণরাজ্য’।পিতা শুদ্ধোদন ছিলেন সেই রাজ্যের নির্বাচিত সভাপতি।উপাধি ছিল ‘রাজন’।ভ্রমটা সম্ভবত সেকারনেই অথবা হতেপারে পরবর্তীকালের লোকদের দ্বারা বুদ্ধের সম্মান বাড়ানোর প্রচেস্টার অংশ।ঐতিহাসিক তথ্যে দেখা যায়, কৈশোরে গৌতম পিতার সাথে কৃষিক্ষেত্রে যেতেন এবং নিজেদের বিত্ত বৈভবের তুলনায় নিতান্ত দরিদ্র ভূমিদাসদের অবস্থা দেখে তাঁর কিশোর মন পীড়িত হতো।বলা ভাল যে, সেসময়ে সম্পন্ন গৃহস্থেরা জমি চাষাবাদের জন্য ভূমিদাস বা মজুর রাখতেন।

গৌতমের গৃহত্যাগ :
কৈশোরে দেখেছেন ভূমি দাসদের দুরবস্থা।যৌবনে নগর পরিভ্রমনকালে দেখেছেন জরাজীর্ন বৃদ্ধা বা মৃত ব্যক্তি।এসব তাঁকে ভাবিয়েছে নিরন্তর।তনহা(তৃষ্ণা) যে সকল দু:খের মূল হেতু সে উপলব্ধি শ্রমণ-ধর্ম গ্রহনের আগেই তিনি চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন।তবে তখনো তিনি গৃহ ত্যাগ করেননি।
এসময়ে একটি ঘটনা তাঁর চিত্তকে নাড়া দেয়।কাহিনীটি হল-কপিলাবস্তু নগরীতে ছিল এক ধনাঢ্য ও কুলীন শাক্যের রূপবতী কন্যা মৃগজা।রাজন শুদ্ধেদনের রূপবান,বিদ্বান,সৌম্যদর্শন পুত্রের অনুরক্ত ছিল মেয়েটি।গৌতম প্রায়ই ঘোড়ায় চরে শহর পরিভ্রমন করতেন।সংগী হতেন প্রিয় রথের সারথী ছন্দক বা কখনো শুধু প্রিয় অশ্ব কন্থক।পথের ধারেই ছিল কুলীন শাক্যের বাড়ি।যুবতী মৃগজা গৌতমকে একপলক দেখার জন্য প্রায়ই দাড়িয়ে থাকতেন অলিন্দে।একদিন নিজেকে সম্বৃত্ত করতে না পেরে কুমারের শ্রোতিযোগ্য স্বরে বলে উঠলেন-আহা ধন্য সেই জননী,যিনি এই অনিন্দ্যকান্ত পুত্রকে জন্মদান করেছেন।ধন্য সেই জনক যিনি তার জন্মদাতা।ধন্য সেই নারী যার যৌবন এই দেবোপম পুরুষের অঙ্গস্পর্ষে নির্বাণপ্রাপ্ত হয়েছে। ‘নির্বাণ’ শব্দটি শুনে কুমার গৌতম হঠাত যেন তার পথের দিশা পেলেন।কুমারি মেয়েটি যদিও ভিন্নার্থে নির্বাণ শব্দটি বলেছিল তবে গৌতমের কাছে সেটি অর্থ হয়ে দাঁড়াল- তৃষ্ণা নিবারণ।তৃষ্ণার নির্বাণে সব দু:খের নির্বাণ।
সেদিন থেকেই তিনি সংসার ত্যাগের সংকল্প করেন।পত্নী যশোধরা আগেই আশংকা করেছিল কারন যোগী ঋষি ভরন্ডু কালামের আশ্রমে গৌতম মাঝেমাঝেই যাতায়াত করতেন।যশোধরার মুখে গৌতমী এবং শুদ্ধোদনও শুনলেন পুত্রের সংকল্পের কথা।মাতা-পিতা বা স্ত্রীর অনুমতি কি তিনি নিয়েছিলেন?বৌদ্ধ সাহিত্য বলে সবাইকে না জানিয়ে রাতের আধারে তিনি প্রাসাদ/গৃহ ত্যাগ করেন।তবে ঐতিহাসিকেরা বলেন সম্ভবত সবার থেকে অনুমতি নিয়ে তিনি গৃহত্যাগ করেন এমনটাই সত্য হতে পারে।কারনটা হলো,সেকালে সন্নাসব্রত যারা নিতেন তাদের জন্য বাধ্যতামুলক ছিল পরিবারের মা ও স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে গৃহ ত্যাগ করা।না হলে কোন সন্নাসী দীক্ষাদান করতেন না।বুদ্ধের বহুবছর পর(প্রায় পচিশ শত বছর)শ্রীচৈতণ্যের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য।কারন ‘ভারতী’সম্প্রদায় ওই দুটি শর্ত না মানলে কাউকে সন্যাসীদলে নিতেন না।বলা যায়,সন্যাসব্রতের এরূপ শর্ত যেন এক ভারতীয় সিলসিলা।আর গৌতম বা গৌরাঙ্গ সন্যাসধর্ম গ্রহনে(শর্তের বেলায়) মিথ্যা শপথ নিয়েছিলেন সেটা ভাবা যায় না।
বুদ্ধের অভিনিষ্ক্রমণ/গৃহত্যাগ প্রসঙ্গে দেবতাদের আগমন সংক্রান্ত যেসব কাহিনী আছে সেগুলি সম্ভবত পরবর্তী পর্যায়ের সংযোজন যখন ব্রাহ্মন্যধর্মে তাকে বিষ্ণুর নবম অবতার বলে মেনে নিয়ে আত্মীকরণের চেস্টা করা হয়।অন্তত যতদিন তিনি বেদনিন্দক,নাস্তিক,বিধর্মী বলে চিহ্নিত ছিলেন সেকালের নয় কোনক্রমেই।একটা কথা বলে রাখা ভাল বুদ্ধের কোন বানীতেই কিন্তু বেদ নিন্দা নেই।আছে যজ্ঞে পশু বধের নিন্দার কথা,যেটা তাঁর অহিংস ধর্মের কথাই মনে করিয়ে দেয়।কালক্রমে বৌদ্ধ দর্শন ঔপনিষদিক দর্শনের একটা বিশিস্ট শাখা হিসাবে নথিভূক্ত হয়েগেল।অথচ ব্রহ্মকেন্দ্রিক ঈশ্বরবাদী বা ভাববাদী দর্শনের সংগে নিরীশ্বরবাদী বৌদ্ধ দর্শনের মৌলিক পার্থক্য কোন যুক্তিতেই খন্ডনীয় নয়।

শ্রমণ ও বুদ্ধত্ব প্রাপ্তি :
সেই সময়ে বনবাসী মুনি ঋষিদের তাপস বা পরিব্রাজক বলা হতো।তাদের তপোসাধনার পদ্ধতি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না।তারা জনসাধারনের মাঝে এসে জ্ঞান বিতরন করতেন না।এই তাপসদের সংঘ থেকে বেরিয়ে এসে কেউকেউ জনগনকে উপদেশ দিবার জন্য ভিন্নভিন্ন শ্রমন সংঘ স্থাপন করে।শ্রমন কেন বলা হয় ?তাপস বা অন্য নাম নয় কেন?শ্রমণ শব্দটি শ্রম ধাতু থেকে নির্গত।অর্থ- যারা কস্ট বা পরিশ্রম করেন।আজকাল যেমন শ্রমিকের গুরুত্ব বাড়ছে বুদ্ধের যুগে শ্রমনের গুরুত্বও বাড়ন্ত ছিল।এই শ্রমণেরা সমাজে আধ্যাত্মিক জাগরণ আনবার জন্য কস্ট করতেন। তাই শ্রমণ বলা হতো।মুনি-ঋষিরা সেটা করতেন না।বুদ্ধের জন্মের একশত তিরানব্বই বছর আগে পরিনির্বাণ প্রাপ্ত নিগ্রন্থ শ্রমণ পাশ্বমুনির নাম আমরা জানি।বুদ্ধের সময়ও ছয়টি বড় শ্রমন সংঘ ছিল যারমধ্যে নিগ্রন্থ শ্রমন সম্প্রদায়ের স্থান ছিল সবার ওপর।
গৃহত্যাগ করে প্রথমে তিনি কিছুদিন ভারত বর্ষের পথে প্রান্তরে ঘুরেছেন।একসময় প্রকৃত গুরুর সন্ধানে আড়াঢ় কালাম ও রামপুত্র রুদ্রক ঋষিদ্বয়কেও গুরু হিসাবে গ্রহন করেছিলেন।কিন্তু তাঁর অনুসন্ধিতসু প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর তাদের কাছে না পেয়ে তিনি অবশেষে গয়ার উরুবিল্ব নগরের(বর্তমান বিহার রাজ্য)গভীর বনে(স্থানটি বর্তমানে বুদ্ধগয়া নামে প্রসিদ্ধ) একটি বৃক্ষতলে ধ্যানস্থ হন।ছয় বছর কঠোর সাধনার পর ধ্যানের প্রকৃতি পরিবর্তন করেন।কিছুদিনপর তিনি পরমজ্ঞান বুদ্ধত্ব বা সম্বোধি লাভ করেন।তিনি হয়েগেলেন বুদ্ধ।স্বয়ং গুরুর উপদেশ বিনা সমস্ত বিষয়সম্ভূত জ্ঞান সম্যকরূপে জ্ঞাত হয়েছেন বলে তাঁর আরেক নাম সম্যক সম্বুদ্ধ।বলা হয় থাকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন পচিশটি বিষয়ে ধ্যান করেছিলেন। বুদ্ধ শব্দের মানে হলো পরমজ্ঞানী।
তথাগত নাকি সুগত :
বোধি লাভের পর শ্রমণ গৌতম বুদ্ধ বা সম্বুদ্ধ নামে পরিচিত হলেও তাঁর জীবনকালে অন্যান্য শ্রমণ বা গৃহীর নিকট তিনি সেই শ্রমণ গৌতম নামেই পরিচিত ছিলেন।সদ্ধর্মের অর্থাত বুদ্ধের প্রবর্তিত ধর্মের উপসম্পদ/দীক্ষা গ্রহন করে যারা শ্রমণ কিংবা ভিক্ষুসংঘে যোগদান করেছিলেন তারা বুদ্ধ সম্পর্কে ‘সুগত’ শব্দটি ব্যবহার করতেন।বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পরেও দীর্ঘ কয়েক শতক সদ্ধর্ম সংঘের শ্রমণ-ভিক্ষুরা “সৌগতিক” অর্থাত সুগত-প্রবর্তিত ধর্মমতের অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন।বৌদ্ধ বিশেষণটি বহু পরে প্রচলিত হয়।সুগত সম্পর্কে তথাগত শব্দটিও পালি সাহিত্যে বহুলব্যবহৃত শব্দ।তথাগত=পূর্ববর্তী মুনি-ঋষিগণ যেধরনের তপশ্চর্যার (তথা)দ্বারা সিদ্ধি লাভ করেছেন,সেই তপশ্চর্যা রীতির দ্বারাই সিদ্ধিপ্রাপ্ত(আগত)।
আধুনিক কালে অনেক গবেষক বলেন, ‘তথাগত’ বিশেষণটি যদিও বুদ্ধ সম্পর্কে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত একটি শব্দ এবং বৌদ্ধরাও এটিকে মেনে নিয়েছেন তবুও এর প্রচার সম্ভবত ব্রাহ্মন্যধারার প্রচারকদের দ্বারা আরোপিত হয়েছিল।উদ্দেশ্য ছিল বুঝানো যে, তিনিও প্রাচীন মুনি-ঋষিদের পথেই জ্ঞান লাভ করেছেন।অথচ বুদ্ধের প্রবর্তিত সদ্ধর্মের মৌলিক ভিত্তি হল কুশলকর্মবাদ ও লোককল্যান।বুদ্ধ ছিলেন নিরিশ্বরবাদী কাজেই বেদের অপৌরুষেয়তা তিনি স্বীকার করেননি।সারাজীবন করেছেন যাকযজ্ঞ, পশুবলির নিন্দা।

নির্বাণ এবং অত:পর :
উনত্রিশ বছর বয়সে যিনি ঘর ছাড়েন মানুষের কল্যানব্রত সংকল্পে,ছয় বছরের কঠোর তপস্যায় তিনি পেয়ে যান সেই অজানা পথের দিশা।তারপর দীর্ঘ পয়তাল্লিশ বছর ধর্মপ্রচার।অবশেষে নির্বাণ।জন্ম,বুদ্ধত্ব প্রাপ্তি আর মহাপরিনির্বাণ তিনটি ঘটনাই ঘটে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের বৈশাখী পূর্নিমা তিথিতে।এ এক অদ্ভূত ব্যাপার।আর কোন মহামানবের জীবনে এমন কোনদিন আছে কিনা জানিনা।বুদ্ধের নির্বাণের পর সংঘের ভিক্ষুরা তাঁর উপদেশাবলী লিখে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।এতদিন সবই ছিল শ্রুতি।এখন লিখে রাখার আয়োজন।
এজন্য আহ্বান করা হয় মহাসঙ্গীতির।মহাসঙ্গীতি হলো ভিক্ষুসংঘের সর্বোচ্চ সভা।সভায় উপস্থিত ভিক্ষুগন সম্মিলিত হয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে ধর্মের রীতি-নীতি সংস্কার,সংস্থান ও সংরক্ষনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে এরকম ছয়টি মহাসঙ্গীতির বিবরন পাওয়া যায়।প্রথম সঙ্গীতিতে ত্রিপিটক গ্রন্থনের কাজ শুরু হয় আর তৃতীয়টিতে এর সমাপন হয়।
পালি ভাষায় তি-পিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক।পিটক শব্দের শুরুতে ত্রি(তিন) সংখ্যাবাচক শব্দ সংযোগ করা হয়েছে।যার অর্থ হলো তিনটি পিটকের সমন্বিত সমাহার।সেই তিনটি হলো-বিনয় পিটক,সূত্র পিটক ও অভিধর্ম পিটক।এই হলো ত্রিপিটকের মূলধারা।পিটক শব্দটিও পালি।বাংলায় যার অর্থ ঝুড়ি,বাক্স-পেটরা,পেটিকা,পাত্র....।মানে যেখানে কোনকিছু সংরক্ষন করা যায়।বুদ্ধ নিজেই তাঁরবাণী বা উপদেশ অর্থে পিটক শব্দটি ব্যবহার করেছেন বলে কথিত আছে।সেজন্যই বুদ্ধের বাণী যে আধারে সংরক্ষিত আছে তাকে পিটক বলা হয়।বিনয় পিটকের অন্তভূক্ত আছে পাঁচটি গ্রন্থ।সূত্র পিটকে আছে পাঁচটি (একটিতে যোলটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ আর বাকীগুলি তিনখন্ডে সমাপ্য)।আবার ষোলটি গ্রন্থের একটির নাম জাতক যার খন্ড পাঁচঠি।অভিধর্ম পিটকে গ্রন্থসংখ্যা সাতটি।গ্রন্থগুলি সবই পালি ভাষায় রচিত।প্রকৃতপক্ষে ভাষাটির নাম মাগধী।বুদ্ধের সময়ে প্রভাবশালী রাজ্য মগধে এভাষা প্রচলিত ছিল বলে ভাষাটির নাম মাগধী।এর সথে একটি বিষয় জানিয়ে শেষ করছি।বুদ্ধের বাণীগুলির ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করা আছে প্রাচীন সিংহলী ভাষায়।এগুলিকে বলে অটঠকথায়ং।অঠটকথা মানে অর্থযুক্ত কথা।বলাচলে এগ্রন্থগুলি হলো বুদ্ধধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের প্রয়োজনীয় টিকা, ব্যাখা বা তাফসির।








সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যোগ্য কে???

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪১

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)




(সকল... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতান্ত্রিকভাবে লীগকে ক্ষমতার বাহিরে রাখা যাবে আজীবন।

লিখেছেন শাহিন-৯৯, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১৩



লীগ সদ্য বিতাড়িত কিন্তু তাদের সাংগঠিক কাঠামো এখনো পূর্বের মতই শক্তিশালী শুধু ছোবল দিতে পারছে না, স্থানীয় নেতারা বিএনপির নেতাদের বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ইতিমধ্যে এলাকায় প্রবেশ করছে তবে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেললেন মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৪১


মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী লম্বা রেইসের ঘোড়া মনে হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া হতে বেডরুমে যার নিয়োগ নিয়ে অস্বস্তি আছে তিনি খুব দ্রুত শিখে গেলেন কিভাবে মানুষের মাথা ঠান্ডা করতে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×