‘সহজ’ বলতে আমি সহজিয়াদের কথা বলছি (পালনে সহজ, কঠিন কোন শাস্ত্রীয় বাধ্যবাধকতা নাই তাই সহজিয়া)।লোকায়ত ধর্ম(লোকেষু আয়ত বা সমাজের সাধারন ও প্রান্তীয় লোকদের মধ্যে পরিব্যপ্ত।) যেমন : আউল, বাউল, সাঁই সম্প্রদায়ের গান এখন বেশ জনপ্রিয়।বিশেষত লালনের গান এখন এককথায় হিট।বুঝে হোক না বুঝে হোক -গাইলেই হিট। লালনের গানের দুএকটি লাইন নিয়েই আমার এই অসংলগ্ন লেখা ।মনে রাখবেন বাউল একটি গুরুমুখি সম্প্রদায়।গুরুই তাঁর শিষ্যকে সাধনার পথ বাতলে দেন, সে পথ ধরে সাধক(শিষ্য)ধাপে ধাপে চলেন এক নির্দিস্ট গন্তব্যে।
“আট কুঠরি নয় দরজা আঁটা, মধ্যে ঝলকা কাটা
তার ওপরে আছে সদর কোঠা আয়না মহল তায়।”
## দেহতত্ত্বের গান।এই গানটিতে যোগ সাধনার প্রচ্ছন্ন ইংগিত আছে।মূলধর থেকে কন্ঠ পর্যান্ত পঞ্চভূত যথা- ক্ষিতি,অপ,তেজ,মরুত,ব্যেম সুক্ষাকারে দেহে পঞ্চচক্রে অবস্থান করে।তারপর আছে মন,বুদ্ধি, এবং অহংকার।এই আটটিকে বলা হয়েছে আট কুঠরি।আটটি কুঠরিতে যথাক্রমে আটজন দারেয়ান আছে- লজ্জা, ভয়, কুল, শীল, মান, জুগুপ্সা, অহংকার।কেউ কাউকে পথ ছেড়ে দেয় না।প্রত্যেকটি দরজায় খিল আঁটা।গুরুদত্ত সাধন প্রকৃয়া অবলম্বন করে এই দরজা খুলতে হয়।তার ওপর আছে সদর কোঠা- দ্বিতল পদ্ম।এখানে প্রকৃতিজ দর্পনে (আয়না মহল) অনন্ত বিভূতির সাম্রাজ্য।লক্ষ লক্ষ সাধক এখানেই থমকে যায়।
“এ বড় আজব কারখানা
আঠার মোকামের মাঝে জ্বলছে রূপের বাতি”
## দেহ মোকামের মাঝে আছে দশ ইন্দ্রিয়,পঞ্চভূত।সাথে মন, বুদ্ধি, অহংকার।এই হলো মোট আঠার মোকাম। সে এক রহস্য।রহস্যের সমাধান করেন একমাত্র গুরু।তিনি জানেন, আঠার মোকামের দেহের মধ্যে এক দিব্যজ্যেতিকে কেমন করে দেখতে হয়।তন্ত্র সাধকদের মতে, পুরো ব্রহ্মান্ডে যা আছে তার সবই এই দেহে আছে।ওদের ভাষায়- যা নেই ভান্ডে(দেহে),তা নেই ব্রহ্মান্ডে।তাই এদের দেহ সাধনা।দেহের মধ্যেই সেই অপরূপের সন্ধান চেস্টা।
“আমি একদিনও না- না দেখিলাম তারে
আমার বাড়ির কাছে আরশি নগর
এক পরশি বসত করে- একদিনওনা দেখিলাম তারে।”
## গুরু আঠার মোকামের মধ্যে বাতি জ্বেলে দিয়ে বলেন,ওই দেখ তোমার আপন জন।এ্টাই আরশি নগর।তোমার দেহের ভেতরেই আছে, তাকে দেখ অপলক নেত্রে।কে এই পড়শি ? তিনি সাঁই/নিরঞ্জন। নানা নামে ডাকা হয় তাঁকে।তিনিই পরম ব্রহ্ম/ইশ্বর/আলেকসাঁই....।দেহের মাঝেই তাঁর অবস্থান।
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়”
## দেহরূপ খাঁচাকে বাউলরা বলে ‘কাঁচা বাঁশের খাঁচা’।এর মধ্যে প্রানপাখি কেমন করে আসে আর যায় অর্থাত সৃস্টি রহস্য জানার আকুতি।এর আরেকটি ব্যাখ্যা হল, নারীদেহে (সাধিকা/প্রকৃতি) বিশেষ একটা সময়ে যে নিরঞ্জন আগমন করেন তাঁকে খুজে পাওয়া, তাঁর রূপ অবলোকন করা,তাঁর আসা-যাওয়ার ভেদ নির্নয় করা।যদি এই জন্ম রহস্য ভেদ বা নিরঞ্জনের আসা যাওয়ার ভেদ নির্নয় কেউ করতে পারেন তবে তিনি সাধারন মানুষ নন তিনি একজন ‘সিদ্ধ পুরুষ’।