somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান (একটি অন্যপাঠ)

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মুখবন্ধ :
আরবদের দ্বারা ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম সামরিক অভিযান শুরু হয় অস্টম শতকের প্রথমে যখন মুহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু আক্রমন ও জয় করেন। ইসলামের সাথে সেটাই কি এ অঞ্চলবাসীর (ভারতীয় উপমহাদেশ) প্রথম সাক্ষাত? সম্ভবত নয়।কারন সপ্তম শতকেই আরব বনিকরা বানিজ্যের প্রয়োজনে ভারতীয় বন্দরে আসতেন এমন নিশ্চিত দলিল অনেক পাওয়া যায়। সবশেষে আসেন ধর্মপ্রচারকরা। এভাবেই সময়ের পরিক্রমায় একসময় গোটাঅঞ্চলে নতুন এই ধর্ম একটা উল্লেখযোগ্য পরিমান মানুষের আচরিত ধর্মে পরিনত হয়।
বিদেশীদের মধ্যে বিশেষত মুসলিম আক্রমনকারীদের মধ্যে একটা নাম ইতিহাসে নানা কারনে আলোচিত- সমালোচিত হয়ে আসছে। তিনি সুলতান মাহমুদ,গজনীর সুলতান সুবক্তগীন তনয়। ঐতিহাসিক সোমনাথের শৈব মন্দির ধ্বংসকারী হিসাবে এবং সেইসূত্রে মূর্তি ধ্বংসকারী ও হিন্দু বিদ্বেষী রাজা হিসাবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছেন।প্রধানত: হিন্দু রোষেরও লক্ষ্য তিনিই। আধুনিক ভারতেও মাহমুদ বিরোধী একটা মনোভাব সমানভাবে চলে আসছে এবং অদ্যবধি ভারতীয় পাঠ্য পুস্তকেও ছাত্র-ছাত্রীদের সে ধারনাই দেওয়া হয়- মাহমুদ একজন লুন্ঠনকারী, মূর্তিভাঙ্গা ছিল যার ব্রত।

উপাসনালয় ভাঙ্গায়/দখলের সিলসিলা :
মুহাম্মদ বিন কাসিম যখন সর্বপ্রথম সিন্ধু আক্রমন করেন তখনও সিন্ধুর কিছু মন্দির ধ্বংস হয়। একই কথা বলা চলে মাহমুদের পিতা সুবক্তগীনের বেলায়ও। তিনি যখন কাবুলের পূর্বদিকে লাঘমন শহরের কাছে পাঞ্জাবের রাজা জয়পালকে আক্রমন করে পরাজিত করেন তখন বিপুল বিত্তবৈভব লাভের সাথে কিছু মন্দিরও ধ্বংস করেন। এছাড়াও আছেন কিছু হিন্দু রাজা যারা বিভিন্ন সময় প্রতিবেশী রাজ্যে হানা দিয়ে মন্দির লুন্ঠন করেছেন। দেবতাকে অসম্মান করেছেন। বিশেষত একাদশ শতকে কাশ্মিরের হিন্দুরাজা ‘হর্ষ’ সম্পদের লোভে বহু হিন্দু মন্দির লুট ও মন্দির ধ্বংস করেছেন। তাঁর শাসনামলে এ কাজের জন্য “দেবোতপাটক” নামে আলাদা বিভাগও ছিল,যার কাজ ছিল মন্দির ধ্বংস করা। বিষয়টি জানা যায় কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী’ নামক বই থেকে। এছাড়া খোদ সোমনাথ মন্দির লুটপাটের হাত থেকে রক্ষার জন্য বার শতকের গুজরাটের চালুক্য রাজা সেখানে মন্দির রক্ষার কড়া ব্যবস্থা নেন,ইতিহাস তেমনটাই বলে।চালুক্যরাজ মন্দিরটির ভগ্নদশা দেখে দু:খিতও হন। সে সময়ে লুন্ঠনকারীরা ছিল আশেপাশের হিন্দু রাজারাই যারা এমনকি মন্দিরের পথে আগত তীর্থযাত্রীদেরও লুট করত। পুরির বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দির যে আগে বৌদ্ধ মন্দির ছিল এবং পরে হিন্দুরা দখল করেন এ কথাতো বিবেকানন্দ খোলাখুলি ভাবেই বলেছেন।
মাহমুদ কি শুধু মন্দির ধ্বংসকারীই ছিলেন? রাজতরঙ্গিনীতেই আমরা দেখতে পাই মাহমুদ কর্তৃক মুলতানের মুসলিম শাসককে পরাজিত করে শহর লুটের সময় সমস্ত শহরে একটি মসজিদও আস্ত ছিল না।তখন মাহমুদের সাহায্যকারী ছিলেন পাশের রাজ্যের হিন্দু রাজা।মসজিদ ধ্বংসের কারন কি?সেখানে নিশ্চয়ই মূর্তিপুজা হয় না।
প্রকৃতপক্ষে তখন(মধ্যযুগে) সেটাই ছিল পরাজিত শত্রুকে আরও দূর্বল করার ও বিজিতদের বশে রাখার এক নিষ্ঠুর যুগ-কৌশল।সম্ভবত তখনই তৈরী হয় সেই বিখ্যাত উপলব্ধি- শহর পুড়লে দেবালয় কি বাঁচে ? আসলে বাঁচানোর চেস্টা করা হতো না, সেটা মন্দির, মসজিদ, গির্জা বা সিনাগগ যা ই হোক না কেন।

কি শিখছি কেন শিখছি :
তবে কেন শিখানো হলো - সোমনাথ মন্দির ধ্বংসের জন্যই মাহমুদের আগমন?কেন মাহমুদকে সাজানো হল মূর্তি ধ্বংসকারী হিসাবে? পুতে দেয়া হল হিন্দু-মুসলিম বিরোধের বীজ? ব্যাপারটা খতিয়ে দেখেছেন প্রাচীন ও আধুনিক কালের অনেক বিদগ্ধ ঐতিহাসিক (ভারতীয় এবং বিদেশী) এবং জমা করেছেন নানা ঐতিহাসিক তথ্য।
সোমনাথ মন্দির আক্রমনের পিছনে চারটি ভিন্ন বর্ননা রয়েছে।একটি সংস্কৃত সূত্রে, একটি পার্শিয়ান সূত্রে, একটি ব্রিটিশ সূত্রে ও শেষেরটি লোকমুখে প্রচলিত গল্প।এসব থেকে অন্তত এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, “ডিভাইড এন্ড রুল পলিসির” জনক ইংরেজরাই এর প্রবক্তা এবং ইংরেজ যুগের শেষে এটাকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেছেন একশ্রেনীর দেশীয় রাজনীতিবিদ। এটা অবশ্য এদেশীয় রাজনীতিবিদদের দোষ নয়,আমাদের এ অঞ্চলের রাজনীতির একটা বৈশিস্ট্য বলা যেতে পারে এটাকে (যার একমাত্র লক্ষ্য যে করেই হোক ক্ষমতালাভ/সিংহাসন লাভ)।বিষয়টি পরে আসছে।

মাহমুদ পর্যালোচনা:
এবার আসি মাহমুদের কথায়।প্রথম থেকে দেখতে চেস্টা করি এ অঞ্চলে কতটা ইসলাম প্রতিষ্ঠার ব্রত তাঁর ছিল, কতটা হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন তিনি অথবা তাঁর মতো পাপ (মূর্তি ধ্বংস) করেও কেন অন্যরা পার পেয়ে গেলেন।
পিতার মৃতূর পর (৯৯৭ সালে) মাহমুদ সিংহাসনে বসেন, ১০০০ সাল থেকে শুরু করে মোট সতের বার ভারতবর্ষ আক্রমন ও লুন্ঠন করে গজনী, খোরাসান, আফগানিস্তানে নিয়ে গেছেন বিপুল ধনসম্পদ।বুঝা যায়, প্রধানত ধন-সম্পদের লোভেই তিনি বারবার ভারত এসেছেন,ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য নয়। যদি ইসলাম প্রতিষ্ঠা তাঁর প্রধান লক্ষ্য হতো তবে প্রথমবার সোমনাথ মন্দির লুন্ঠন করে ফিরার পথে বিজয়ী রাজ্য শাসনের ভার পরাজিত ও নিহত হিন্দু রাজার ভাইকে না দিয়ে কোন ধর্মপ্রান মুসলিম শাসকের হাতে অর্পণ করতেন, বরং সেটাই ছিল প্রত্যাশিত।
যে সৈন্যদল নিয়ে তিনি শহর আক্রমন ও মন্দির ধ্বংস করেন তার ৫০% সৈন্য ছিল হিন্দু।বিশাল বাহিনীর বার জন সেনাধ্যক্ষ ছিল হিন্দু,তাদের দুইজন আবার ব্রাহ্মন।শুধু মন্দির ধ্বংস একমাত্র উদ্দেশ্য জানলে এতহিন্দু সৈন্য পেলেন কিভাবে? অথবা এটি যদি নিছক ধর্মযুদ্ধ/জিহাদ হয়ে থাকে তবে মাহমুদের দলে হিন্দু-মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করলেন কেন?
অধুনা আবিস্কৃত একটি সংস্কৃত ফলকে দেখা যায়,সোমনাথ যখন তুর্কিদের দ্বরা আক্রান্ত হয় তখন শহরের একজন মুসলিম অধিবাসী আরব বংশদ্ভোত জনৈক বোহারা ফকির স্থানীয় হিন্দুরাজার পক্ষে শহর রক্ষায় অংশনেন। ফলকটি তার বীরগাঁথায় উতসর্গকৃত।তাহলে দেখা যাচ্ছে, মাহমুদের সোমনাথ আক্রমন কোনক্রমেই ধর্মযুদ্ধ বা হিন্দু-মুসলিমের বিবাদ নয় যেমনটি পরে সরলীকরণ করে প্রচার করা হয়েছে।লক্ষ্যকরুন, সুদূর মুলতান থেকে সোমনাথ অবধি আসার পথে অনেক মন্দির পরলেও মাহমুদ সে দিকে চোখ তুলে তাকাননি।এমনকি বামিয়ানের বিখ্যাত বুদ্ধ মূর্তিও তিনি অগ্রাহ্য করেছেন, যেটি পরে তালেবান কর্তৃক ধ্বংস হয়(সেটিকে ভাংতে না পারলেও অন্তত ভাঙ্গার চেস্টা করে নিজের নাম ইতিহাসে লিখে রাখার চেস্টা করতে পারতেন)। শুধু মন্দির ধ্বংস করার মতলব থাকলে এমনটি হতো না।তাহলে কিসের আকর্ষনে তিনি এসেছিলেন সোমনাথে? হা, বহুবছর ধরে সোমনাথে সঞ্চিত অজস্র ধনদৌলত।
মাহমুদের সতেরটি আক্রমনের মধ্যে কয়েকটি (চতুর্থ,পঞ্চম,অস্টম বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য)এ অঞ্চলের মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধেও পরিচালিত হয়েছিল।পার্থিব উদ্দেশ্য ছাড়া অন্যকোন ধর্মীয় উদ্দেশ্য থাকলে তিনি মুসলিম শাসকদের সাথে সরাসরি যুদ্ধ নয়- আপোষরফাকে প্রধান্য দিতেন।এছাড়াও তিনি পশ্চিম সীমান্তে মুসলিম প্রধান পারস্যেও কয়েকবার হামলা করেছেন।হামলা করেছেন মুসলিম অধ্যুষিত মধ্য এশিয়ায়ও আর তখন ব্যবহার করেছেন বিশিস্ট হিন্দু সেনাপতিদের।এমনকি আব্বাসীয় খেলাফতের কিছু অঞ্চলে হামলা এবং দখলেরও নাকি তাঁর ইচ্ছা ছিল।তিনি তার হিন্দু সেনাপতি তিলককে দিয়ে দমন করিয়েছিলেন তারই অন্যতম মুসলিম সেনাপতি নিয়ালতিগিনকে। এ থেকে এটা পরিস্কার হলো রাজনৈতিক প্রয়োজনবোধে তিনি ধর্মীয় বিবেচনা অগ্রাহ্য করতেন।
শুধু সেনা বিভাগ নয়, নিজ প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্নপদেও তিনি ব্রাহ্মন হিন্দুদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।হিন্দুদের বিচার আচার হিন্দু আইন মোতাবক করার ব্যবস্থাছিল তার সময়।গজনীতে হিন্দু বাসিন্দাদের থাকার জন্য তিনি আলাদা অঞ্চল দিয়েছিলেন,যেখানে তারা নিজ খেয়াল খুশি মতো ধর্মাচার করতে পারতেন।ইসলামি কালচার অনুযায়ী জিম্মী নাগরিকদের ন্যায় জিজিয়া করও তাদের দিতে হতো না।একজন ধর্মোন্মাদ শাসকের পক্ষে এটা বেমানা। ভারতবর্ষে বহুবার অভিযান চালালেও জোর করে কাউকে ধর্মান্তরিত করার কোন নজির নেই।পরাজিত রাজারা ধনদৌলত দিয়েই তাঁকে সন্তুস্ট রাখতে পেরেছিলেন।যুদ্ধের বাইরে বিনা প্রয়োজনে একজন বিধর্মীকেও কখনো হত্যা করেন নি।আবার যুদ্ধের ময়দানে বিপক্ষ দলের সাধারন পরিচয় একটাই ‘শত্রু’।শত্রুর ধর্মীয় পরিচয় ছিল তাঁর কাছে অবিবেচ্য।

ইতিহাসে যুগধর্ম বলে একটা কথা আছে। মধ্যযুগীয় ‘যুগধর্মের’ ছাপ মাহমুদের ভারত অভিযানে পড়েছিল কথাটা সত্য। সক্ষম রাজারা তখন সম্পদের যোগানের জন্য প্রথমে দেশে করের হার বাড়াতেন তারপর আশেপাশের দেশে হামলা চালাতেন রাজ্য বিস্তার ও সম্পদ লুটের জন্য।সেটাই ছিল যুগধর্ম।মাহমুদও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।লুন্ঠিত সম্পদ দিয়ে তিনি গজনীতে গড়ে তুলেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়,একটি মিউজিয়াম ও একটি লাইব্রেরী।গজনীকে তিনি মধ্যযুগের এক শ্রেষ্ঠ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিনত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।বুঝা গেল নিছক ভোগবিলাসি রাজা তিনি ছিলেন না।তার সাথেই এদেশে এসেছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত আলবিরুণী।

কেন বারবার সোমনাথ !
তীর্থস্থান হিসাবে সোমনাথের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে।বহুকাল সেখানে কোন মন্দির ছিল না।সোমনাথ মন্দির সম্ভবত নবম শতাব্দীর শেষের বা দশম শতকের গোড়ার দিকে তৈরী হয়।এটি একটি শৈব মন্দির।সোমনাথ তখন একটি সমৃদ্ধ বন্দর।তীর্থযাত্রীদের দান থেকে যে আয় হতো তা বিনিয়োগ করা হতো স্থানীয় বানিজ্যে।এভাবে তখন সোমনাথ মন্দিরে জমা হয় অজস্র সম্পদ।তাছাড়া রাজা-রাজরারা নিরাপদ ভেবে ওখানে নিজ সম্পদ জমা রাখতেন বলেও শুনা যায়।সোমনাথের বিগ্রহটি ছিল শূন্যে ভাসমান।মাহমুদ সোমনাথ জয়ের পর দেখেছেন বিশেষ কৌশলে চুম্বকের সাহায্যে দেবতার বিগ্রহটি ওভাবে রাখা হয়েছিল।সে যাইহোক, জাগ্রত শিব দেবতার এই মন্দির কখনোই ধ্বংস বা লুন্ঠিত হবার সম্ভাবনা নেই তেমনটাই নাকি ছিল তখনকার লোকশ্রুতি, অন্তত: সমকালীন জৈন গ্রন্থে তেমনটাই লেখা দেখা যায়।এসব কারনে মাহমুদের আগে থেকেই স্থানীয় অনেক রাজারাজরাদের লক্ষ্যবস্তু হন সোমনাথের পথে আসা তীর্থযাত্রীরা সেকথা আগেই বলেছি।সোমনাথের এই ধনসমৃদ্ধির কথা একসময় পৌছে যায় মাহমুদের কাছেও আর এভাবেই তিনি অভিযানে প্রলুব্ধ হন।প্রথমবার সোমনাথ বিজয়ের শেষে অফুরন্ত ধনরত্ন,হিরা,মনিমুক্তা তাঁর হস্তগত হয়।বলা হয়ে থাকে শুধু স্বর্নমুদ্রাই তিনি পেয়েছিলেন দুইকোটি।
বিজিত দেশে তিনি কখনো স্থায়ী সেনানিবাস গড়েননি।পরাজিতদের সাথে আপোষরফা করেই ফিরিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতা।ফলে মাঝে মাঝেই স্থানীয় রাজারা সন্ধি ভঙ্গ করেছেন,প্রতারনা করেছেন আর রাজ্য বিস্তার ও রাজ্য জয়ে আকাঙ্খি মাহমুদ বারবার ছুটে এসেছেন ভারতে বিশেষত সোমনাথে।তবে লক্ষনীয় বিষয় সোমনাথ মন্দির ধ্বংসের পর তিনিই আবার স্থানীয় রাজাকে নির্দেশ দিয়ে যান যাতে তাড়াতাড়ি মন্দির পূনর্নিমান করা হয়।একজন মূর্তি বিদ্বেষীর নিকট যেটা কখনোই আশা করা যায় না।

লর্ড সভায় বিতর্ক
লর্ড এলেনবোরো আফগানিস্তান বিজয়ের পর মাহমুদের কবর থেকে চন্দন কাঠের ফটক খুলে নিয়ে আসার নির্দেশদেন তার সেনাবাহিনীকে।তারমতে সেটা হবে আফগানিস্তানের ওপর ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রনের প্রতীক।সেই সাথে হিন্দুদের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনারও তাগিদ ছিল তার।উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় হিন্দু-মুসলিম জাতির মধ্যে একটা মনস্তাত্বিক খেলা চালু করা।হিন্দুদের ওপর বহিরাগত মুসলিম শাসকদের নির্যাতন এবং এই লুটপাট নির্যাতনে হিন্দুস্থান একটা মরুভূমিতে পরিনত হয়েছে মোটামুটি এধারনা তার পূর্বসুরীরা ইতিহাসস রচনার নামে চালু করতে সমর্থ হয়েছিলেন আর তিনি নিয়ে এলেন জ্বলন্ত সাক্ষী। কাজেই বহিরাগত ব্রিটিশরা লুটপাট নয় বরং উদ্ধার করেছে হিন্দু গৌরব। এই বিখ্যাত ‘ফটক ঘোষনা’ বিতর্কের সৃস্টিকরে। ১৮৪৩ সালে ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সে এ নিয়ে বিতর্ক হয় এবং এলেনবারোকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো এই চন্দন কাঠের ফটক লুটের কথা পূর্বের কোন ঐতিহাসিকে লিখাতেই নেই।কাঠের দরজাটি এখনো দিল্লীর ভারতীয় মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে।দর্শনার্থীরা দেখছেন।লেখা আছে এটাই সেই মাহমুদের ফটক।তবে ওপরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আকেটি লেখা আছে - পরীক্ষাকরে দেখা গেছে এটি চন্দন কাঠের তৈরী নয়,দেবদারু গাছের কাঠ দিয়ে তৈরী।
সোমনাথের মতো বিখ্যাত মন্দিরের ফটক হলে এটা নিশ্চিভাবেই ভারতে সহজলভ্য ও দামী চন্দন কাঠের হওয়াই স্বাভাবিক এবং ইতিহাসেও সেরকমই লিখা আছে সোমনাথ মন্দিরের দরজা সম্পর্কে।কিন্তু এটা দেবদারু কাঠে তৈরী কেন? উত্তরটাও সহজ। আফগানিস্তানের পাহাড়ী অঞ্চলে দেবদারু/পাইন গাছ সহজ লভ্য।তারমানে দাঁড়াল, এটি কখনোই সোমনাথের চুরিকরা/লুটকরা ফটক নয়।কিন্তু অতশত লিখা পড়ার সময় কই জনগনের?তাদের ভরসা নেতাদের কথা আর সুশীল সমাজ।ওনারা কি কম জানেন?পাঠ্য বইয়ে কি ভুল লিখেছে?ব্যাস এভাবেই চলছে।

ফলাফল
বিখ্যাত রাজনীতিবীদ ললা রাজপত রায়ের অটোগ্রাফিক্যাল রাইটিংস থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি: সে সময়ে সরকারি স্কুল গুলিতে ওয়াকিয়া-ই-হিন্দ” নামে ভারতীয় ইতিহাসের উপর একটা বই পড়ানো হতো।বইটি আমার মনে এই বোধের জন্ম দেয় যে মুসলমানরা হিন্দুদের প্রতি গভীর নিষ্ঠুরতার সংগে আচরন করেছিল।বাল্যকালে ইসলামের প্রতি যে শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলাম, ওয়াকিয়া-ই-হিন্দ পাঠের ফলে ধীরে ধীরে তা গৃনায় পরিনত হতে থাকে।”
এভাবেই চালু হয় মিথ। স্বাক্ষী-গোপালকে সামনে রেখে দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে চালু হয় এক স্থায়ী বিভক্তির রেখা।আওরঙ্গজেব,টিপুসুলতান বা সিরাজদের কেউ হয়ে গেলেন ধর্মোন্মাদ/মৌলবাদী কেউবা নারি লোলুপ ও অত্যাচারী শাসক। যেটিকে পরে পুস্ট করেছে ক্ষমতালোভী দেশীয় নেতাদের অনেক অবিবেচক কার্যাকলাপ। ফলাফল ? লক্ষ লক্ষ মানুষের বাস্তুহীন হওয়া আর দেশ বিভাগের এক হৃদয় বিদারক ইতিহাস।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যোগ্য কে???

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪১

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)




(সকল... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতান্ত্রিকভাবে লীগকে ক্ষমতার বাহিরে রাখা যাবে আজীবন।

লিখেছেন শাহিন-৯৯, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১৩



লীগ সদ্য বিতাড়িত কিন্তু তাদের সাংগঠিক কাঠামো এখনো পূর্বের মতই শক্তিশালী শুধু ছোবল দিতে পারছে না, স্থানীয় নেতারা বিএনপির নেতাদের বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ইতিমধ্যে এলাকায় প্রবেশ করছে তবে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেললেন মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৪১


মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী লম্বা রেইসের ঘোড়া মনে হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া হতে বেডরুমে যার নিয়োগ নিয়ে অস্বস্তি আছে তিনি খুব দ্রুত শিখে গেলেন কিভাবে মানুষের মাথা ঠান্ডা করতে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×