আজ বলাকায় 'গেরিলা' দেখে এলাম। সরকারী অনুদান, আড়িয়াল স্পেস লিমিটেড এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্মের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটির পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত উপন্যাস 'নিষিদ্ধ লোবান' এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফের যুদ্ধাভিজ্ঞতার সংমিশ্রনে চলচ্চিত্রটির কাহিনী গড়ে উঠেছে। 'গেরিলা' বিলকিস বানু নামের এক নারীর গল্প যিনি যুদ্ধ আক্রান্ত মাতৃভূমির প্রয়োজনে একজন সাধারন ব্যাঙ্কার থেকে পরিপূর্ণ যোদ্ধায় পরিনত হন। এই সিনেমার অন্যতম চরিত্র শহীদ সংগীতকার আলতাফ মাহমুদ! ইতিহাসের বাস্তব কিছু চরিত্র চলচ্চিত্রটিতে উঠে এসেছে। এই সিনেমার গান নেয়া হয়েছে শহীদ আলতাফ মাহমুদের করা সুর থেকে, শহীদুল্লাহ কায়সার, ডঃ ইনামুল সহ আরো মুক্তিযুদ্ধের বীরদের লেখা থেকে। চলচ্চিত্রটির সংগীত পরিচালক শিমুল ইউসুফ।
গেরিলা গতানুগতিক মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা। তারপরও মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা দেখতে খুব ভালো লাগে। শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায়। সিনেমাটির কিছু কিছু জায়গায় অসামঞ্জস্য চোখে পড়লেও চলচ্চিত্রটি নির্মাণে যত্ন আর মমতার ছাপ স্পষ্ট। অ্যাকশন, সিনেমাটোগ্রাফি আর কিছু কিছু অভিনয় ভালো লেগেছে। জয়া আহসান বরাবরের মতই ছিলেন অসাধারন। তবে এ ছবির সবচেয়ে ভালো দিক শতাব্দী ওয়াদুদের চোখ ধাঁধানো অভিনয় । পাকি হানাদারের দ্বৈত ভূমিকায় শতাব্দী যে অভিনয়টা দেখিয়েছেন তা সম্ভবত এ চরিত্রে এখন পর্যন্ত সেরা । তার অভিনয়ে ছোট-খাটো ত্রুটির জন্য পরিচালকের নির্দেশনা ও চিত্রনাট্যই দায়ী থাকবে। তবে এ ত্রুটিকে আমলে না নিলেও চলবে। ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করলেও শম্পা রেজার অভিনয় ভালো লেগেছে।
পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ এর আগে বানিয়েছিলেন ' একাত্তরের যীশূ ' চলচ্চিত্রটি। শাহরিয়ার কবিরের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সে চলচ্চিত্রটি বেশ ভালো লেগেছিলো। নাসির উদ্দীন ইউসুফ একজন স্বনামধন্য সংস্কৃতকর্মী হলেও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সাধারন বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। তার চলচ্চিত্রগুলোর চিত্রনাট্য খুব থিমেটিক হওয়ার স্বত্ত্বেও নির্মাণশৈলীর কারণে পর্দায় সেভাবে পরিস্ফুটিত হয়না।
গেরিলাতে অ্যাকশন দৃশ্যগুলোর প্রতি পরিচালক যত্নবান ছিলেন বেশি। ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের কাজ আহামরি কিছু না হলেও বলবো বেশিরভাগ অ্যাকশন দৃশ্য বেশ ভালো হয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ যুদ্ধের চিত্র দেখার চেয়ে দর্শক এখন ভিন্নধারার চিত্র দেখতেই বেশি আগ্রহী। গেরিলার শুরুটাও খাপছাড়া লেগেছে। অনেকটা গেরিলাদের অতর্কিত আক্রমণের মতই। হয়তো পরিচালক এভাবেই চেয়েছেন পুরো সিনেমায় গেরিলা আবহ ফুটিয়ে তোলার জন্যে। ছবির মাঝামাঝি এসে গতি হারালেও শেষে আবার পালে হাওয়া লাগে। কিছু অসাধারন ও মর্মস্পর্শী দৃশ্যের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় কিছূ দৃশ্য জুড়ে না দিলে চলচ্চিত্রটির সৌন্দর্য কোন অংশেই কমতো বলে মনে হয়না।
চলচ্চিত্রে রাজাকারবাহিনী আর জামায়াতে ইসলাম এর উপর পরিচালকের সাহসী ও সরাসরি আক্রমণের বিষয়টি দারুন লেগেছে। নাসিরউদ্দীন ইউসুফ সেজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
সব মিলিয়ে গেরিলা একবারে খারাপ লাগেনি আমার কাছে। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে চলচ্চিত্রটি দেখে আসুন।
গেরিলার ট্রেইলার দেখুন