(গত বইমেলায় (২০১০) ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত রুদ্র আরিফ ও বিজয় আহমেদ সম্পাদিত ফিল্মমেকারের ভাষা বইটিতে একটি অধ্যায় অনুবাদ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। বইটি দশজন বিখ্যাত ল্যাটিন আমেরিকান চলচ্চিত্রকারের জীবনী ও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের সংকলন। আমার অনূদিত অধ্যায়টি ছিলো মেক্সিকান ফিল্মমেকার কার্লোস রেগাদাস কে নিয়ে। সামু ব্লগাদের জন্য কিস্তি আকারে অনুবাদটা প্রকাশ করলাম। )
কার্লোস রেগাদাস
জন্ম ১৯৭১। মেক্সিকো সিটি, মেক্সিকো।
টিনএজে আন্দ্রেই তারকোভস্কির ফিল্ম দেখতে দেখতে তারো ইচ্ছে হয় ফিল্মমেকার হওয়ার। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছে পড়তে হয় আইন নিয়ে। তাই বলে ফিল্ম বানানোর স্বপ্ন ঝেড়ে ফেলেননি মাথা থেকে। জীবনের অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে ঠিকই জানান দিয়েছেন নিজের উপস্থিতি। আর হয়ে উঠেছেন লাতিন আমেরিকান ফিল্মের এক নতুন কণ্ঠস্বর।
প্রথাগত নিয়মকানুনের প্রতি আগ্রহ নেই কার্লোসের। অভিনয় জানা লোকদের পছন্দও করেন না তিনি। পৃথিবীর নানা অলিগলি, পথ-প্রান্তর, জনবসতিতে খুঁজে ফেরেন তার ফিল্মের চরিত্রদের, এবং ঐ চরিত্রের অভিনেতাদের। তারপর কোনো প্রশিক্ষণ না দিয়েই তাদের পুরো স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেন ক্যামেরার সামনে। অভিনয় না জানা, না শেখা এইসব মানুষের মুহূর্তের কর্মকাণ্ডে নির্মিত হতে থাকে কার্লোসের ফিল্ম।
র’-সেক্সের প্রাবল্য এবং বুড়ো ও কুৎসিত মানুষদের প্রাধান্য দেখা যায় তার ফিল্মে। ফলে প্রায়ই ভয়ানক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। তবু সোজাসাপ্টা কথা বলতে অভ্যস্থ এই ফিল্মমেকার স্বপ্ন, জিদ ও রক্ত-ঘামে গড়ে তোলা নিজস্ব ফিল্মধারাতেই এগিয়ে যেতে চান।
কার্লোস রেগাদাসের ফিচার ফিল্ম
২০০২ : জাপান
২০০৫ : ব্যাটল ইন হেভেন
২০০৭ : সাইলেন্ট লাইট
বার্থ অব এ ফিল্মমেকার
''তারুণ্যে খেলাধূলাই আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাবা-মা খুব গান শুনতে ও ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন। আমার পরিবারের বেশকিছু সদস্য আর্কিটেক্ট। তাই অল্পবয়সেই মিউজিক ও পেইন্টিংয়ের সান্নিধ্যে যাই আমি। ছুটির দিনে বাবা-মা খুব জোরসে ভালো ভালো মিউজিক বাজাতেন। ফলে আমি শুনতাম।
১৮ বছর বয়সে আইন পড়া শুরু করি। মাস্টার্স ডিগ্রি নেওয়ার জন্য ইংল্যান্ড যাই। তারপর বেলফেস্টে ইউরোপিয়ান ফিল্ম কমিশনে যাই। অবশ্য ১৬ বছর বয়স থেকেই আমার ফিল্ম দেখা শুরু। এর আগে অবশ্য আমাদের বাসায় টিভি ছিল না। এ সময় টিভির সঙ্গে ভিডিও প্লেয়ার আর কিছু ভিডিও এলো। এগুলো দেখে আমার মনে হলো, ফিল্ম একটা বিশাল ও অসাধারণ ক্ষেত্র।
ফিল্ম দেখতে সিনেমা হলে আমি গেছি মাত্র কয়েকবার। তাও হলিউডের সস্তা জনপ্রিয় ফিল্ম। এরপর ভিডিওতে অসাধারণ ফিল্ম দেখতে শুরু করি। সেই সময়ই ফিল্ম বানাতে চেয়েছিলাম আমি। ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে আমি বাস্তবিকভাবে প্রতিদিনই ফিল্মের মধ্য দিয়ে পাড়ি দিয়েছি।
আইন পেশাকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু এ পথটা ছিল খুবই সোজা। আইনজীবি হিসেবে আমি ভালো করতে পারতাম। কিন্তু আমার মনে হলো, সোজা পথের বদলে বাঁকা হাইরোড হলে আরো বেশি জমতো। আসলে আমি আমার জীবনকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। ফিল্ম এক্ষেত্রে অজুহাত ছিল মাত্র। তাই ভাবলাম, ফিল্ম বানানোর চেষ্টা করবো। জানতামও না আমার মধ্যে মেধা আছে কি নেই। তবু আইন পেশা ছেড়ে দিলাম। ছয় মাসের মধ্যে চারটি শর্টফিল্ম বানালাম এবং এক বছরের মধ্যে বানালাম ‘জাপান’।
ততদিনে ফিল্ম বানানোর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেখা হলো আমার। ''
ব্যাটেল ইন হ্যাভেন পাইরেট বে ডাউনলোড লিংক
(চলবে...............)