একদল লোলুপ দুর্বৃত্ত আজ আমাদের নিজেকেই ঘৃণা করতে শিখিয়েছে। তারা ছড়িয়ে দিয়েছে তারাই শ্রেষ্ঠ জীব। তাই আমাদের ভিতরে প্রোত্থিত করে দিয়েছে তাদের মতো শ্রেষ্ঠ হতে গেলে আমাদেরও তাদের মতো সাদা চামড়া হতে হবে। আমরাও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হতাশ হলাম আমরা তো সাদা চামড়ার নই। নিজ বংশকে ঘৃণা করে তখন আমরা ভুলে গেলাম আমাদের শত জনমের মহা সংগ্রামের ইতিহাস। ভুলে গেলাম পলাশী, সিপাহী বিদ্রোহ সহ অসংখ্য গৌরব। ভুলে গেলাম মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদে পুড়ে গড়া গৌরবের নিজ ভাগ্যের কথা। আজ যে ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছি তা গড়া আমার পেছনের অসংখ্য পূর্বপুরুষের শত শত বছরের সাধনায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সব কোথায় যেন হারিয়ে গেল।চোখের সামনে ভাসে কেবলি সাদা চামড়া। ষড়যন্ত্রকারীরা তখন বুঝে গেল তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়েছে। সুযোগ বুঝে তারা দখল করে নিল আমাদের আত্মা, মান সন্মান, মর্যাদা, ইতিহাস, সাধনা সব কিছু। দেশে এল ইউনিলিভারসহ অসংখ্য হায়েনারা। সাথে যোগ দিল স্কয়ারসহ বিভিন্ন নামে আরো কিছু এদেশীয় শকুন। তারা বলল সব সমাধান তাদের কাছে আছে বিভিন্ন নামে আনল তাদের তথাকথিত রঙ ফর্সাকারী টোটকা। বাহারী নাম সেগুলোর ফেয়ার এন্ড লাভলী, পন্ডস, মেরিল স্নো, এজ মিরাকল, জেন হোয়াইট সহ আরো অসংখ্য নামে। বলল ৩০ টাকার ক্রীম কিনে মাত্র চার সপ্তাহে আপনি হবেন তাদের মতো। কিন্তু আপনি তা হলেন না। এভাবে চলল কয়েক বছর। আপনি অনেক ক্রীম কিনলেন কিন্তু হলেন না ফর্সা। মধ্যে থেকে পকেট থেকে বের হয়ে গেল অনেকগুলো টাকা। এর পর বলল আপনি পন্ডস হোয়াইট বিউটি কিনেন এবার আপনি ফর্সা হবেনই কিন্তু দাম একটু বেশি লাগবে। দাম কত ১৫০ টাকা। এটাও আপনি কয়েক বছর গায়ে মাখলেন কিন্তু এবারো আপনি হতাশ। হলেন না ফর্সা। এবার তারা বলল এবার আছে রং ফর্সাকারী মহৌষধ। আপনি প্রচন্ড উৎসুক। নিতেই হবে এটা, ফর্সা হওয়াটা চাইই চাই। এবার নিলেন প্রায় দুই হাজার টাকায় এজ মিরাকল। মাসের
অনেক কষ্টের আয়ের অর্ধেক টাকা আপনি দিয়ে দিচ্ছেন। একবার বুক ফুলিয়ে বলুনতো আপনি কি ফর্সা হয়েছেন? আপনার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে তারা আপনাকেই কিনে ফেলতে চায় আজ। দাস বানাতে চায় আজ। কি করবেন আজ? কি প্রতিবাদ আছে আপনার হাতে?
বন্ধু,
মুখ থেকে সব মলম ধুয়ে ফেলে একবার দাঁড়াও না আয়নার সামনে। চেয়ে দেখ তুমি কত সুন্দর। তোমার কাজল কালো চোখদুটো কতটা মায়াময়। তোমার তীক্ষ্ণদৃষ্টি তোমাকে কেমন মহিমান্বিত করেছে। তোমার নিস্পাপ মুখোমন্ডল কতটা অপূর্ব লাগছে। আগে কি এমন করে নিজেকে দেখেছিলে? তুমি এত সুন্দর তা কি তুমি জানতে? তোমার স্নিগ্ধ চাহনি বলছে তুমিই সব থেকে সেরা। তোমার মহা ইতিহাসের মহা সংগ্রামের রঙ তোমার গায়ে। এই সংগ্রাম সাধনাই তোমাকে মহান করেছে। তারই চিহ্ন তোমার সারা শরীরে। তাকে লুকাতে চেয়ে নিজের অহংকারকেই তুমি মুছে ফেলে দিতে চাইছিলে এতদিন? একবারও কি মুখটা উচিয়ে তোমার এখন বলতে ইচ্ছে করছে না তুমিই শ্রেষ্ঠ? পারলে ঐসব বুর্জোয়া সম্রাজ্যবাদীরাই তোমাকে অনুসরন করুক। তোমার আছে সত্যের পথে অবিচল টিকে থাকার ইতিহাস। তোমার আছে মানবতার মহা ইতিহাস।
কৃতজ্ঞতা : ইন্জিনিয়ার হাসানুজ্জামান ।