জীবনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে আজ দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেছি। শুধু মাত্র স্বপ্ন পূরণের আসায়। এই যুদ্ধ কখন যে শেষ হবে তার কোন ইয়াত্তা নেই। জীবন পাথরের চেয়েও শক্ত, সহজে এর ক্ষয় ধরতে চায়না। এর উপর দিয়ে যতই জড় বৃষ্টি বয়ে যাক না কেনো, দিন শেষে আবারও সতেজ হয়ে উঠে জীবন। সামন্য এই কিছু সময়ের জীবনের জন্য মানুষ কত কি করে! মৃত্যু যে নিদিষ্ট একটা টাইমের মধ্যে হবেনা, এটা যেনেও মানুষ গতিবেগে হাটতে থাকে জীবন-জীবিকার সন্ধানে। মৃত্যুর এক সেকেন্ড আগেও মানুষ ভাবে জীবন যুদ্ধে কি জিততে পেরিছি আমি? কিন্তু সে জানেনা যে তার মৃত্যু এক সেকেন্ড পরই নিঃস্বেশ হয়ে যাবে এই সাধের দুনিয়া থেকে।
মানুষ তার স্বপ্ন পূরণের জন্য স্কুল থেকে চাকরি পাওয়া অব্দি পর্যন্ত স্বপ্নের পিছু পিছু দৌড়ায়। জীবনের ৫ থেকে ২৫ কিংবা ৩০টা বছর কোথা থেকে চলে যায় কেউ টেরই পায় না। কেউ বুঝতেই পারে না জীবনের এই ২৫/৩০টা বছর কোন কোন খাতে ব্যয় হলো। এর হিসাব কসতে গেলে রাতের পর রাত চলে যাবে কিন্তু হিসাব মিলাতে পারবে না।
এরপর ২৫/৩০ বছর পর কারো কপালে ভালো চাকরি জুটলে জুটে, না হলে কোন না কোন কর্ম করে খায়। চাকুরি, বিয়ে, স্ত্রী কিংবা স্বামী, সন্তান, বাবা, মা, ভাই-বোন, শশুড়-শাশুড়ি। এদের দায়িত্ব, কর্তব্য, চাহিদা, যত্ন, দেনা-পাওনা সকল কিছুর জন্য জীবনে সব কিছু বির্সজন দিতে হয়। এগুলো প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই হয়। কিন্তু আমরা প্রত্যেকে নিজের জন্য কী করি? ২৫/৩০ বছর পর কর্মক্ষেত্রে যখন নামি তখন তো আর সেটা নিজের জন্য হলো না। সেটা তো সংসার বাঁচানোর তাগিদ, কিভাবে দুটো টাকা ইনকাম করবো, কিভাবে সংসার টিকিয়ে রাখবো, কিভাবে সন্তানদের ভবিষৎ উজ্জ্বল করবো সেই তাগিদে থাকি, সেটা নিয়েই তো ব্যস্ত হয়ে পরি এই দুনিয়ার মোহতে। তখন তো নিজের কথাটাই আমরা প্রত্যেকে ভুলে যাই। যে নিজের মধ্যে আরো একটা প্রাণ বাস করে। সেই প্রাণকেই না হয় প্রশ্ন করুন? সেই প্রাণের কি কোন সস্তি দেই আমরা?
আমরা দৈনন্দিন জীবনে, সংসারের খুটিনাটি কাজ, অফিস, রান্না-বান্না, বাজার-ঘাট, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম। সবটাই করি সংসার কিংবা পরিবারের জন্য। বিনোদন হিসাবে আমরা পারিবারের সবাইকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, শপিংয়ে যাওয়া, সিনেমা দেখতে যাওয়া সবই করি। কিন্তু নিজের জন্য কী করি? আপনি ভাবুন, আপনি যেই হোন ছেলে কিংবা মেয়ে, যেই লিঙ্গের মানুষ হোন আপনি শুধু একটু ভাবুন নিজের জন্য কখনো কি কিছু করেছেন এই ৫ থেকে ৬০ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সের মানুষগুলোকে বলছি “নিজের জন্য কি করেছেন।” নিজের সখ, আহ্লদ, পছন্দ, অপছন্দ এই চাহিদাগুলো কি আপনার মিটাতে পারেন? শুধু একাকীত্ব একবার ভাবুন নিজের জন্য কি করেছেন! কেউ হয়তো বলবেন হুম আমি নিজের জন্য সবই করি আমি বলবো না। নিজের জন্য কিছুই করেন না। সবটাই অন্যের জন্য করেন।
ধরুন একটা ফল গাছ- এই গাছটি থেকে আমরা ১২ মাসই ফল পাই। এটাতে আমরা যত্ন, সার, পানি দেই কিংবা না দেই। ও, ওর মতো সারা মাসই ফল দিয়ে যায়। একটা সময় ফলগুলো খুব ছোট আর রোগাটে হয়। গাছটি কিছুদিন পর থুবড়ে মাটিতে পরে যায়। কারণ গাছটি খুব দুর্বল। অন্যের জন্য সেবা দিতে দিতে নিজেই নিঃস্বেশ হয়ে যায়। আর গাছের মালিক ঠিকই বললো গাছটির বয়স হয়ে গেছে তাই হয়তো পড়ে গেছে। কিন্তু সে এটা বুঝলো না যে- যত্ন, সার কিংবা পানির অভাবে অকালের রোগা হয়ে থুবড়ে পরে গেছে। যদি একটু যত্ন বা এর গোড়ায় পানি কিংবা সার দেওয়া হতো তাহলে এতো তাড়াতাড়ি দূর্বল হয়ে পড়ে যেতো না। এটা তো একটা উদাহরণ-
মানুষও তো এমনি হয়, নিজের মনের চাহিদা, শরীরের যত্নের অভাবে একটা সময় শরীর দূর্বল হয়ে যায়। বাসা বাধে শরীরের বিভিন্ন রোগ। তখন নিজেরও মনে হয় “নিজের জন্য কী করলাম”। সবটাই তো অন্যের জন্য করলাম। যখন একটা মানুষ হাসপাতালের বেডে কিংবা বাসার বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাতরায়, যখন অন্যের অধীনে ছাড়া নিজে এক গ্লাস পানি ঢেলেও খেতে পারে না। তখন মানুষ জীবনের হিসাব কসতে বসে। কিন্তু অঙ্কের ফল আর মিলে না। তখন মনে হয় জীবন কোথার থেকে শুরু হলো আর কোথায় এসে শেষ হলো! এর যোগফল মিলাতে পারছি না!
তাই নিজের জন্য কিছু করুন- শুধু বাসা টু অফিস, বাজার টু রান্না, খাওয়া ঘুম সন্তানদের ভবিষৎ এগুলো থেকে একটু বিরত থাকুন। এগুলোর ফাকে একটু নিজের জন্য সময় বের করুন। সব ছেড়ে একটু নিজের জন্য বেরিয়ে পরুন অজানা কোন গন্তব্যে। কমলাপুর স্টেশনে এসে একটা টিকিট কেটে ছুটে যান কোন গন্তব্যে। সাগর পাড়ে যান, সিনেমা দেখুন, বই পড়ুন, গান শুনুন, গানে সুর ধরুন, ছবি আঁকুন, গল্প-কবিতা লেখুন। নিজের যা যা শখ আছে পুরণ করুন। নিজের জন্য পছন্দ মতো শপিং করুন, পছন্দ মতো খাবার খান, নিজের প্রতি যত্ন নেন এবং সুন্দর পৃথিবীটা উপভোগ করুন। তবেই নিজের উপর প্রশ্ন করার উত্তর পেয়ে যাবেন।
ইন্টারনেট থেকে ছবি সংগ্রহ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:১৪