এই সমাজে আমি ভালো মানুষের সন্ধান খুজি। এই সমাজে হরেক রকমের মানুষ বাস করে। কত রকম মানুষ আমি দেখি, ভালো মানুষ, খারাপ মানুষ এবং অমানুষ কিন্তু ভালো মানুষের সন্ধান আমি পাচ্ছি না।
বাঙালীরা খুবই হাস্যকর, এরা যদি কানাডা, অস্টোলিয়া থেকে পিএইচডি করে আসে তবুও এদের কুৎসি মানসিকতা কখনোই পাল্টাবে না। তাদের মানসিক রোগির মতো মুখের সংলাপ বাক্য কখনো পাল্টাবে না।
মানুষ বলতে নারী-পুরুষ উভয় হয়ে থাকে। কিন্তু আজকের বিশ্বে নারীদের পুরুষরা মানুষ মনে করে না। ধর্মের দিক দিয়ে যদি বলি তাহলে এই ধরণের অমানুষগুলো অবশ্যই এর জবাবদিহি করবে এবং করতে হবে, সৃষ্টিকর্তার নিকট। আমি জানিনা পুরুষ জাতি কোন দিক দিয়ে ক্ষমতাবান। যদি কোন দিক দিয়ে ক্ষমতাবান দেখাতে পারে সেটা আমি মেনে নিবে। অনেকেই কোরআন হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দেয়। যা একে বারের নাটকীয় ব্যাখ্যা।
গতকাল আমি বাসে করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাদের গাড়ির পিছন থেকে এসে একটা পুলিশের গাড়ি ওভার টেক করলো। আমাদের গাড়িতা সামান্য একটু বামে চাপালো। বামে ছিলো পুলিশের মোটরসাইকেলও। যদিও তার সাথে লাগেনি ড্রাইভার চেয়েছে ডান বাম দুই সাইটের গাড়ি এবং নিজেই বাঁচতে। আমরা যাত্রীরা দেখলাম ড্রাইভারের কোন দোষ নেই দোষটা ছিলো পুলিশের গাড়িটির। পিছন থেকে এসে কি ওভারটেক করার নিয়ম আছে? পুলিশের ক্ষমতা!
ঘটনাটা লেখার একটা কারণ আছে- মোটরসাইকেলের পুলিশ বেটা তার মুখের ভাষাগুলো আমাকে বিচলিত করলো। ড্রাইভার দোষ না করেও দোষি সাবস্থ হলো। কিন্তু ড্রাইভারের মা কোন দোষে দোষি হলো? ড্রাইভারকে কিছুই বললো না সবটাই বললো ড্রাইভারের মাকে, একজন নারীকে। এই ভাষাগুলোর জন্ম কোথার থেকে তা আমি জানিনা। একজন মা এককজন নারী কবরে আছে না জিন্দা আছে সেটা কেউ জানেনা। শুধু জানেন একজন নারী মাদারচোদ, একজন নারী, বেস্যা, একজন নারী খানকি মাগি। ভাষা গুলো বলতে মন চাইছিলো না তবুও বললাম। কারণ এই ভাষাগুলো মেয়েদের বলতে খুব কষ্ট হয়। নারীদের মুখের সংলাপ ছাড়তে দিদ্বাদন্দে পরতে হয়। কারণ নারীরা লজ্জা আছে। যদিও লজ্জা উভয়ের থাকার কথা। কিন্তু একজন পুরুষ সেটা অনায়েসে কবিতার মতো আবৃত্তি করতে পারে।
কিছুদিন আগে দিয়াবাড়ি ঘুরতে গিয়ে ছিলাম। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ঘোর-ফেরা করতে আসে সেটা সবাই জানেন। সেখানে কিছু শৃঙ্খল, কিছু উশৃঙ্খল ছেলে-পুলেরাও ক্রিকেট, ফুটবল খেলতে আসে। কিন্তু এই শৃঙ্খল আর উশৃঙ্খল দুটোর মধ্যেই না আমি কোন অমিল খুজে পাইনি। কারণ এরা দু’দলেই একজন মাকে, একজন নারীকে বকে। বন্ধুকে কিন্তু না, বন্ধুর মাকে বলে এই শালা তোর মাকে.... ঐ শালা তোর বইনেকে.......। আমি একটা ছেলেকে ডেকে বললাম তোমার মা আর ওর মা এই দুইজনের মধ্যে পাথ্যর্ক কি? ছেলেটা তখন প্রশ্নের উত্তরটা দিতে পারলে না।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশের একজন এমপি যার সংক্ষিপ্ত নাম নিক্স। এই ভদ্রলোকের একটা কল রেকর্ডার শুনলাম। কিছুই শুনলাম না শুধু শুনলাম একজন নারীকে, একজন মাকে ছড়ার সংলাপ শুনাচ্ছে।
আমি যখন স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে পড়ি তখন দেখতাম ছেলেরা কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে একজন আরেকজনের মাকে, বোনকে বলছে তোর মাকে.... তোর বোন....। প্রাণের বন্ধুকে কিছুই বলছে না। প্রাণের বন্ধুকে এটা বলতে পারছে না যে- তোকে, তোর ভাইকে, তোর বাপকে। কিন্তু কেনো?
একদিন আমি মিরপুর ১০ নং দিয়ে হেটে যাচ্ছিলিম সেই রাস্তায় ৮/১০ বছরের দুটো ছেলে সাইকেল চালানো শেখছে। দু’জনেই ছোট, একজন আরেকজনকে শেখাচ্ছে সাইকেল চালানো। যে পিছন থেকে ঠেলছে সে চালক ছেলেটাকে কথায় কথায় বাজে ভাষায় বকছে। এই খানকি পো, এই শালার পো, তোর মাইরে..... তোর গুষ্ঠিরে......। আচ্ছা প্রত্যেকটি পুরুষই কি এই রকম? প্রত্যেকটা পুরুষই কি জন্মর পর থেকে এই ভাষা গুলো আয়ত্ব করে নেয়। কিন্তু কেনো।
এই ছেলেটার নাম জীবন মাহমুদ এই অভদ্র, অমানুষটা মেয়েদের নিয়ে বাজে বাজে সংলাপ বানিয়ে ভিডিও তৈরি করে। এর জন্য ওর শাস্তি হওয়া উচিত।
পুরুষরা প্রকাশে অপ্রকাশে নারীদের এইসব বলে ক্ষ্যান্ত যায় না। তারা এখন আবার সামাজিক মিডিয়াগুলোতে ছড়াচ্ছে। নারীদের কত ভাবে কত প্রকাশের হেনাস্থ করা যায়। টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউব এই সব মাধ্যমগুলোতে দেখবেন কিছু সমাজের কিট, কিছু অশিক্ষিত, অগাছারা নারীদের নিয়ে অসামাজিক, অরুচিশীল বাক্য বলে প্রকাশে ভিডিও বানাচ্ছে। তার মধ্যে কয়েকজন মুর্খ টিকটকার আছে যেমন- জীবন মাহমুদ, মানুন, অপু আরো অনেকেই্। এরা নারীদের নিয়ে অসভ্য ভাষায় সংলাপ তৈরি করে ভিডিও বানাচ্ছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে আইনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বাংলাদেশ।
এরকম লক্ষ লক্ষ ঘনটার উদাহরণ হয়ে আছে। পুরুষ জাতি হোক সে বাবা, হোক সে ভাই, হোক সে ছেলে, হোক সে স্বামী, সে হোক পিএইচডি করা, হোক সে ডাক্তার, হোক সে ইনঞ্জিনিয়ার, হোক সে এমপি, হোক সে ভদ্র, হোক সে অভদ্র, হোক সে আলেম, সে গোলাম, রিক্সাচালক, পুলিশ, হোক সে রাস্তার লোক। সে যেই হোক, কিছু হলেই প্রকাশে অপ্রকাশে নারীদের বাজে ভাষায় যাইচ্ছে তাই বলছে। এমন কোন পরুষ নেই বাঙালীদের মধ্যে যারা রাস্তাঘাটে, কোন না কোন মেয়েকে, কোন না কোন মাকে, কোন না কোন নারীকে বাজে বাক্য না বলছে। তাই যদি হয়! তাহলে পুরুষরা আসলেই কি মানুষ? আমার প্রশ্ন এখানেই।
আমি জানি, আমার উপর ব্লগের অনেক পুরুষই ক্ষেপে যাবেন। কারণ তাদের আতে নাড়া দিয়েছি যে আমি। পুরুষদের সত্যিটা বললে মানতে পারে না তারা। তারা মনে করে তারা সব বলবে আর নারীরা তা সইবে। অনেকেই আমাকে নারীবাদি বলে। আমি তাদের বলবো নারীবাদি শব্দটা আমি চিনিনা। আমি চিনি আমি একজন মানুষ, আমাকে সৃষ্টিকর্তা সকল বিষয় বলার, চাওয়ার, অধিকার, ক্ষমতা দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে দুটো জাতি সৃষ্টি করেছেন শুধু মাত্র তার ইবাদত করার জন্য। তা হলো- ১। মানুষ ২। জীন। তাই আল্লাহ মানুষজাতিকে সমান ভাবেই সৃষ্টি করেছেন। কারো থেকে কাউকে কম কিছু দিয়ে সৃষ্টি করেননি। কিন্তু আমরা মানুষ হয়ে সেটা আদি কাল থেকে মানতে পারছিনা। এটাই আমাদের দুভাগ্য।
আসুন আমাদের সমাজ আমরা আরো সুন্দর করে গড়ে তুলি। আপনারা আপনাদের সন্তানদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করুন। ভেদাবেদ জিনিসটা ভুলে যান, সন্তানদের এটা থেকে দূরের রাখুন। দেখবেন দিন শেষে আমার মানুষ। আমাদের প্রত্যেকেরই সমাজে বাঁচার, থাকার, খাওয়া সমান অধিকার রয়েছে যেহেতু, সেহেতু আমরা প্রত্যেকেই সমান এবং মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাবেদ না করে আমরা মিলে মিছে বাস করি।
প্রত্যেকেই বুকে হাত দিয়ে স্বপথ করুন কখনো রাস্তা ঘাটে অন্যের মা, বোন, স্ত্রীকে বাজে ভাষায় বকা না দেই। কারণ অন্যেকে যে বকাটা দেন সেটা আপনার উপরে এসেই পরে। কেউ যখন অন্যের মাকে বকা দেয় সেই বকাটা কিন্তু নিজের মায়ের উপর এসেই পরে অন্যের মায়ের উপরে না।
রাস্তা ঘাটে পরিচিত অপরিচিত যারা এই ধরনের বাজে ভাষায় বকা দেয়, অশ্লীল সংলাপ কবিতার মতো ছাড়ে তাদের দু’গালে থাপ্পার মারা মতো ক্ষমতা রাখুন। তাদের শিক্ষা দিয়ে দেন যাতে জীবনে কোন দিন আর এই সব না বলে। এই বিচার করার ক্ষমতাই হলো প্রকৃতি মানুষের পরিচয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৫৩