গতকাল ঝটিকাসফরে একটু গ্রামে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে কিছুটা রাস্তা সিএনজিতে আসতে হয়েছে। সিএনজির পিছনের সিটে একজন মহিলা আর তার ভাই বসেছিলেন। মহিলাটা হাউমাউ করে প্রচুর কাঁদছিলেন। নীরবে পুরুষটার চোখের জলও ঝড়ছিলো। ভদ্রলোকের ফোনালাপ থেকে যতটুকু বুঝতে পেরেছিলাম উনাদের মামা মারা গেছে। ভদ্রমহিলা বিলাপের সুরে অনেক কথা বলছিলেন। কিছু কথা এরকম ছিলো-
'হোন ভাই, তুই কিছু খাইয়া ল রে। নাইলে শেষে তুইই পইড়া যাবি রে।'
'আয় হায় রে ভাত রাইন্ধা আই নাই রে, ইমনে( সম্ভবত ভদ্রমহিলার ছেলে) ত বেহানে না খাইয়া গেছিলো রে।'
'পূব দিকের দূয়ারডাত ছিকল দেই নাই রে'
স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করলে মনে হবে ভদ্রমহিলা আসলে লোক দেখানো কান্না করছেন। নইলে কি এমন কষ্টের সময়ে এসব কথা বলতে পারেন।
না। মহিলা লোক দেখানোর জন্য কাঁদছিলেন না। গাড়ীর মধ্যে আমরা সবাই অপরিচিত মানুষ ছিলাম, ওখানে উনি কাকে দেখানের জন্য কাঁদবেন! তার মানে কান্নাটা প্রবল বেদনার জন্যই এসেছিলো।
এবার একটু অন্যভাবে ভাবুন।
ব্যাপারটা সূক্ষ্মভাবে ভাবলে অবাক হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। এতো কষ্টের সময়ও কি করে কারো মাথায় দুনিয়াবি ভাবনা আসে! প্রয়োজনী কাজগুলোর কথা কেমন করে মনে পড়ে? তার দায়িত্বজ্ঞান এতটা বেশী কি করে হয়?
প্রশ্নেগুলোর উত্তর হলো কারণ তিনি নারী!
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আ'লামিন তাকে এভাবেই তৈরি করেছেন। শত বেদনা, কষ্টের মাঝে দাঁড়িয়েও সে তার দায়িত্ব পালনে কোন ভুল করে না। একজন পুরুষের থেকে তার কষ্ট কোনভাবেই কম হয়না। কিন্তু সে পারে! সে পারে নিজেকে কন্ট্রোল করতে। সে পারে কষ্টগুলো বুকে জমিয়ে জীবনের সাথে মিশে যেতে, সে পারে হাসির আড়ালে সব কষ্ট চেপে রাখতে। আনন্দ কিংবা বেদনা, নারী কখনোই আবেগের সাগরে ডুবে যায়না। সে জাগ্রত। সদাসর্বদা জাগ্রত।
প্রত্যেক নারীই দুঃখগুলো চেপে সুখসন্ধানী হবার এক অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়।
................
আমার মা প্রায়ই একটা ছড়া বলেন,
"কষ্ট করে বড় হয়
পরের ঘরে যেতে হয়
নারী বড় শক্ত কাজ
পরকে আপন করতে হয়"
বাস্তবে ঠিক তাই। সারাজীবনের জন্য নিজ পরিবার ছেড়ে অন্যের পরিবারে যাওয়া, তাদের আপন করে নেওয়ার কঠিন কাজটা সে নারী বলেই পারে। এই আপন করে নেয়ার কাজটা তার মৃত্যু অব্দি করতে হয়।
পুরো পরিবারের দায়িত্বভার সে তার নরম কাঁধে সারাটা জীবন ধরে বয়ে চলে। মা, মেয়ে, বোন কিংবা অর্ধাঙ্গিনী সবরকমেই সে পরিবারকে ছায়া দিয়ে যায় জীবনভর। সেখানে ক্লান্তির লেশমাত্র নেই। আছে শুধু হাসি, মুখ ভরা হাসি। সে হাসিতেই আমরা হাসি।
এজন্যই বোধহয় ইসলাম বলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পুরুষ থেকে নারীর জন্য জান্নাত লাভের পথ অধিক সোজা ও সুগম করে দিয়েছেন।
ধন্যবাদ নারী
ধন্যবাদ আপনাকে।