শিক্ষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ – যেকোনো জাতির পরিচয় দিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক প্রভাব, মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার স্খলন এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে বা কথা বলতে অনেকের অনাগ্রহ থাকে, কেউ কৌশলে এড়িয়েও যায়। আপাতদৃষ্টিতে নিজেদেরকে এগুলোর সাথে সংস্পর্শহীন ভাবলেও, প্রকৃতার্থে আমরা কেউই এর প্রভাবমুক্ত নই। বিষয়গুলো যে বিচ্ছিন্নহীন নয়, তা চারপাশে একটু খেয়াল করে দেখলেই প্রতীয়মান হয় । আর আমাদের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা, দিগ্ভ্রান্ত ছাত্ররাজনীতি অথবা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ - এগুলো ছাড়াও দেশে সমস্যার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তাই ছোটখাটো বিষয়গুলো ভাবার এবং সমাধানের চেষ্টা কারো মাঝেই নেই। যদিও সব বড় সমস্যার শুরু ওই ছোট ছোট বিষয় থেকেই জন্মায়। সাম্প্রতিক সময়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন নিয়ে ফেসবুক, টুইটার এবং বিভিন্ন বাংলা ব্লগের পাতায় পাতায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় দেখছি। কিন্তু বিষয়টি শুধু এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার মান ও পরিবেশ এবং শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতি এমন নানা দিক উঠে আসছে। মন্তব্যগুলো পড়তে পড়তে বেশ বুঝতে পারলাম আমাদের সময় শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের যে শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা কাজ করতো, এখনকার অধিকাংশ ছাত্রদের মাঝে তার এক বিরাট ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার কোন কারণ নেই!
বিগত এক দশকে দেশে নতুন গজিয়ে ওঠা শতাধিক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু বলবো না। দেশের বিপুল পরিমান ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা লাভের একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এবং বিষয়টি ইতিবাচক। এই বর্ধিত সংখ্যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর খুব কম-ই মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ দিলেও তাদের সবার মাঝে রয়েছে প্রতিযোগিতা। তাই ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষণ করতে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখা যায় হরহামেশাই। আগে এ বিষয়টি তাই গুরুত্বহীন মনে হলেও ঠিক এই মুহূর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের ওপর কিছু নীতিমালা থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। দেশের অন্যতম পাঠকপ্রিয় সংবাদপত্রে কুরুচিপূর্ণ এবং বিকৃত বাংলা শব্দের প্রয়োগ দেখতে পাই বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং প্রফেসনাল ট্রেনিং সেন্টারের বিজ্ঞাপনে। অবাক হই। সব বিশ্ববিদ্যালয় গুলোই বিজ্ঞাপনে নিজেদেরকে ‘দি বেস্ট’ ‘নাম্বার ওয়ান’ ‘পাইওনিয়ার’ ইত্যাদি বলে দাবি করে। এগুলো ছাত্রছাত্রীদের যেমন বিভ্রান্ত করে, তেমনি অভিভাবকদেরও। আর সাম্প্রতিক কালে একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়া দৃষ্টিকটু, অপ্রাসঙ্গিক এবং বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন এখন আলোচনার শীর্ষে। এগুলো দেখার কি কেউ নেই? যার যা ইচ্ছে তাই ছাপিয়ে দেবে? শিক্ষার পরিবেশ এবং তার প্রতি ছাত্রদের স্রদ্ধাবোধ নষ্ট হতে পারে, বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেক দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য আলাদা নীতিমালা নির্ধারিত আছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতেও ২০১০ এ, এই বিষয়টি উঠে আসে এবং নতুন নীতিমালা গ্রহন করা হয় (*)। আমাদের দেশে শুরু হওয়া বিকৃতরুচির বিজ্ঞাপনের এই নতুন মাত্রা (!) যদি এখনি সংশোধনের কোন ব্যবস্থা নেয়া না হয়, সামনে পরিবেশ আরও খারাপ
হবে, এটা নিশ্চিত।
সবার প্রাসঙ্গিক এবং গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
*
1.http://www.indianexpress.com/news/guidelines-for-ads-by-educational-institutions-on-the-anvil/657606/
2.http://www.careers360.com/news/4663-New-advertising-guidelines-for-educational-institutes
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ২:০০