জাফলং এ শীতকাল পাথর উত্তোলনের জন্য সবচে ভাল সময়। পাথর উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ সময় হাজার হাজার পাথর শ্রমিক নিয়োগ করে। প্রায় দুইশতাধিক পাথর ভাঙা কারখানা প্রতিদিন বিপুল পরিমান পাথরচূর্ণ দেশের বিভিন্ন নির্মাণস্থলে সরবরাহ করে থাকে। পিয়াইন নদীর তীরে ব্যস্ত এই বল্লার ঘাটে গিয়েছিলাম সেই সব পাথর শ্রমিকদের সাথে পরিচিত হতে, জীবন্ত বল্লার ঘাটের সারাদিনের কর্মব্যস্ততা তুলে ধরতে।
দিনের শুরু খালি নৌকা দিয়ে। রহমান (২৫), একজন পাথর শ্রমিক,পাথর সংগ্রহ করেই তার সংসার চলে। পাথর বহনের জন্য বিশেষ
ভাবে তৈরি নিজের 'বুরকি' নৌকাকে পানি সেচের মধ্যে দিয়ে প্রস্তুত করাই তার প্রথম কাজ...
স্টোন মাইনে যাওয়া খুব সহজ নয়। নতুন ব্রিজ তৈরির জন্য দেয়া বাধ, পিয়াইন নদীর স্রোতকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুনে। মোটরচালিত নৌকা ছাড়া এ পথ পার হওয়া শক্ত। আব্দুল কাদির (৫৭) এর মত একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মাঝি ও পাথর শ্রমিক কে কয়েক মিনিটেই হাঁপিয়ে উঠতে দেখে এ ধরনা পাকা হয়।
স্টোন মাইনে যাওয়ার পথে আমি দেখেছি নারী- পুরুষকে পাশাপাশি কাজ করতে...
পরিচিত হয়েছি কাহারের (৫৩) পরিবারের সাথে। আমি তাকে দেখেছি তার ছেলে, বউকে নিয়ে একসাথে পাথর সংগ্রহ করতে। পুরো পরিবারের একটাই লক্ষ্য...যতটা সম্ভব পাথর সংগ্রহ করা!
স্টোন মাইন। ব্যস্ত, কোলাহলপূর্ণ। বয়স্ক শ্রমিকরা এ পর্যন্ত আসতে পারে না। এটাই বাংলাদেশ-ভারতের নদীপথের সীমান্ত। সবচে বড় আর বেশি পাথর কতটা তাড়াতাড়ি সংগ্রহ করা যায়, সে লক্ষ্যই সবার।
পিয়াইনের স্ফটিক স্বচ্ছ পানির নিচে পাথর খুঁজে পাওয়া খুব কথিন নয়। কিন্তু বড় পাথর গুলোর জন্য গভীরে ডুব দিতে হয় বৈকি !
পাথরে ভরে যাওয়ার সাথে সাথেই নৌকা গুলো দ্রুত ফেরত আসে বল্লার ঘাটে। যেখানে স্তুপ করা পাথরগুলো ট্রাকে করে পাথর ভাঙা কারখানায় নিয়ে আসা হয়।
অলিখিত এ প্রতিযোগিতা চলতে থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত...
মহিলারা বড় পাথর সংগ্রহের সাথে জরিত না। তারা বালি পাথর সংগ্রহ করে। নুরি পাথর আলাদা করে..
ছোটরা নুরি পাথর ভর্তি নৌকা ঘাটে নিয়ে আসে, স্তূপ করে রাখে। আমিন (১৪) আর রাজিব (১৭) তিন বছর ধরে পাথর শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। দুজনেই তাদের মা বাবার সাথে কাজে সাহায্য করে
যতক্ষণে ঘাটে পাথরের স্তুপ জমা হতে থাকে, ততক্ষণে বড় আর ভারী পাথরগুলো ট্রাকে করে পাথর ভাঙা কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সারাদিন চক্রাকারে এ কাজই হতে থাকে।
পিয়াইন নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহমান। শুধু পানিই নয়, নদীপথে স্রোতের সাথে সাথে পাথর ও আসে। সারাদিন শত শত নৌকা এ নদী থেকে পাথর উত্তোলন করে, সংগ্রহ করে। তাই, এ নদীর অর্থনৈতিক গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। হাজার হাজার শ্রমিক এ নদী আর পাথরের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে।
এখানে রাত নেমে আসে খুব তাড়াতাড়ি। সব নৌকা এখনো ঘাটে এসে পৌছায়নি। মোহাম্মাদ আসাদ (৪২) নৌকাগুলোর জন্য অপেক্ষা করে। সারাদিনের পরিশ্রমের পর এ সময় তা একটু জিরিয়ে নেয়ার
এভাবেই বল্লার ঘাটে আরেকটা ব্যস্ত দিন কেটে যায়। বাকি থাকা নৌকা গুলো আরও কিছু নুরি পাথর নিয়ে ঘাটের দিকে ফিরতে থাকে...
______________________________________
আশাকরি সবার প্রাসঙ্গিক এবং গঠনমূলক মন্তব্য আমাকে আরও পোস্ট দিতে উৎসাহিত করবে।
[অনুমতি ছাড়া ছবিগুলো অন্য কোথাও ব্যাবহার না করার জন্য অনুরোধ করছি]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:২৮