কয়েক দিন আগে পার হয়ে গেল ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মওলানা ভাসানী ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গা নদীতে বাঁধ বন্ধ করার দাবিতে যে ঐতিহাসিক মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তার তাৎপর্য সেদিনও যেমন ছিল, এখনো তেমনই, তার bnগুরুত্ব এতটুকু কমেনি। মওলানা ভাসানীর অনেক মহান অবদানের মধ্যে তার জীবনের শেষ মহৎ কাজটি ছিল ফারাক্কা মিছিল। এর অল্পদিন পরই তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর কবি বুলবুল খান মাহবুব এক অসাধারণ কবিতায় লিখেছিলেন-
'কোথায় মড়ক লাগে, পদ্মায় জল নেই, মুমূর্ষু বাংলার খবর অজানার অন্ধকার গর্ভ থেকে জ্যোতির্ময় দেহ নিয়ে উঠে আসে ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ একটি কণ্ঠ হতে লাঞ্ছিত মানুষের সহস্র সংবাদ।' কণ্ঠটি ছিল মওলানা ভাসানীর। পদ্মায় জল নেই। সেই খবর তিনিই প্রথম দিয়েছিলেন। ফরাক্কা বাঁধের কারণে যে পদ্মায় জল থাকবে না, এই সতর্ক বাণী তিনি উচ্চারণ করেছিলেন। দুই দেশের মধ্য দিয়ে কোনো নদী প্রবাহিত হলে যে ভাটির দেশের অধিকার থাকে নদীর পানির ওপর, সেই ব্যাপারে তিনিই আমাদের সচেতন করে তুলেছিলেন।
আজ অনেক বছর পর আমরা বলছি, পদ্মার মতো তিস্তাতেও পানি নেই। তিস্তার ৬৫ কিলোমিটার উজানে গজলডোবায় ভারত ব্যারাজ নির্মাণ করে তিস্তার পানির ৮৫ শতাংশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের তিস্তা এখন জলশূন্য ধু ধু প্রান্তর। যে তিস্তা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পাঁচ থেকে আট হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো, সেখানে এখন শুষ্ক মৌসুমে এসেছে মাত্র পাঁচশ কিউসেক। বিশেষজ্ঞরা হিসাব করে দেখিয়েছেন, এর ফলে সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ৮০ হাজার হেক্টর জমি। আর তার ফলে এই জমিতে ধান চিটা হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের হিসাব মতে, এতে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ৪২৭ কোটি টাকার মতো সম্পদ।
ভারত এভাবে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করতে পারে না। এটা আন্তর্জাতিক নীতিমালাবিরোধী। আন্তর্জাতিক নদী-সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের হেলসিংকি নীতিমালার পরিপন্থী। উজানের দেশ ভাটির দেশের অনুমতি ছাড়া এবং উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি ছাড়া খুশিমতো নদীর পানি সরিয়ে নিতে পারে না। অথচ সেটাই করেছিল ভারত পদ্মার ক্ষেত্রে। এখন করছে তিস্তার ক্ষেত্রে। ভারত বড় দেশ, অধিকতর শক্তিশালী দেশ বলে ভাটির দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে গায়ের জোরেই এ রকম যে আচরণ করছে তা অন্যায্য। বন্ধুত্বসুলভ মোটেও নয়। শোনা যাচ্ছে, পদ্মা-তিস্তা ছাড়াও আরও অনেক নদীতে বাঁধ দিচ্ছে ভারত বাংলাদেশকে গ্রাহ্য না করে, কোনো রকম চুক্তি ছাড়াই। অথচ যে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের চিরশত্রুতা তার সঙ্গে কিন্তু সাধারণ নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চমৎকার চুক্তি হয়েছিল পঞ্চাশের দশকেই এবং এত শত্রুতা ও যুদ্ধ সত্ত্বেও পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে নদীর পানি নিয়ে বিবাদ নেই। এ রকম দানিয়ুব নদী, রাইন নদী, মেকং নদী নিয়ে ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও কী চমৎকার চুক্তি আছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কেন ভারতের এমন বিরূপ আচরণ? বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু দেশ বলে? হায়রে বন্ধুত্ব। কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এক বক্তৃতায় স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন- 'হয় পানি দিতে হবে, না হয় বন্ধুত্ব হারাতে হবে।'
পশ্চিম পাকিস্তানের সিন্ধু নদী ও তার শাখা নদী নিয়ে পাক-ভারতের মধ্যে চুক্তি হলেও গঙ্গা-পদ্মার পানি নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি পাকিস্তান আমলে। সম্ভবত পাকিস্তানি শাসকরা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থের ব্যাপারে উদাসীন ছিল বলেই তারা এই অঞ্চলের নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কোনো চুক্তি করেনি অথবা করতে আগ্রহ দেখায়নি। ভারত সরকারও পূর্ববঙ্গের জনগণের চরম ক্ষতির বিষয়টি হিসাবে না এনেই কলকাতা বন্দরের নাব্য বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখিয়ে ফারাক্কায় বাঁধ নির্মাণ করেছিল। তখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলছে। ভারত আমাদের অকৃপন হস্তে সাহায্য করছে। সে জন্য আমরা কৃতজ্ঞও বটে। সময়টা ছিল যুদ্ধের। আমরা পদ্মার পানি নিয়ে কথা বলার, প্রতিবাদ করার অবস্থায় ছিলাম না। কিন্তু স্বাধীন হওয়ার পর যখন একটু সুস্থভাবে দেশ গড়ার কথা ভাবছি, তখন দেখলাম, ফারাক্কা বাঁধের কারণে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। তখনই মওলানা ভাসানী বিষয়টিকে রাজনৈতিক এজেন্ডায় নিয়ে এলেন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরলেন। সেটা ছিল ১৯৭৬ সাল। সেদিন অনেকে ভাসানীকে ভারতবিরোধী, এমনকি সাম্প্রদায়িক বলেও কুৎসা করেছিল। পাকিস্তানের ঘোর সাম্প্রদায়িক যুগে যে মহান পুরুষ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সূত্রপাতই শুধু নয়, মেহনতি মানুষের অধিকার ও সমাজতন্ত্রের দাবি নিয়ে পাকিস্তানে সবচেয়ে প্রগতিশীল রাজনীতির প্রবর্তন করলেন, তাকে এভাবে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেওয়াটা ছিল অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও কুরুচিসম্পন্ন। বস্তুত শাসক ও শোষক শ্রেণীর লোকেরাই ইচ্ছাকৃতভাবে ভাসানীর বিরাট ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে চেয়েছিল।
এখনো যারা তিস্তার পানি দাবি করবেন, হয়তো তাদের কপালেও এমন বদনাম জুটতে পারে। একদল লোক আছে, যারা প্রগতিশীলতার মিথ্যা আবরণে, এমন অদ্ভুত আচরণ করে থাকে। অন্ধ ভারতবিরোধিতা সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয় এবং অবশ্যই তা প্রতিক্রিয়াশীলতা। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে ভারতের সমালোচনাকেও সাম্প্রদায়িকতা বা প্রতিক্রিয়াশীলতা বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে আরেক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা। তার মধ্যে আর যাই হোক দেশপ্রেম নেই। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এক বক্তৃতায় বলেছেন, তিস্তার পানি নিয়ে হৈচৈ করার মধ্যে নাকি আছে ভারতবিরোধিতার রাজনীতি। আমরা বরং পাল্টা বলব, তিস্তার পানির ব্যাপারে নীরব থাকাই হলো দেশের স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। ভারত সরকারকে তুষ্ট করার এক হীন মনোবৃত্তির পরিচয়।
আজ যখন তিস্তার পানির দাবি নিয়ে সবচেয়ে দৃঢ় অসাম্প্রদায়িক ও সেক্যুলার রাজনৈতিক দল সিপিবি ও বাসদ তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ করছে, তখনো কি তাদের ভারতবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক বলে গালি দেওয়া হবে? কিছু স্বার্থান্বেষী লোক হয়তো তাই দেবে। কিন্তু যে জনগণ পানির অভাবে হাহাকার করছে তারা বলবে সিপিবি-বাসদ যথাযথ দেশপ্রেমিকের ভূমিকাই পালন করেছে।
১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সংখ্যাধিক্যের ভোটে একটি কনভেনশন গৃহীত হয়েছিল। পুরো নামটি হলো United Nation Convention for Non Navigational uses of Water Courses. বিপক্ষে ভোট পড়েছিল তিনটি- চীন, তুরস্ক ও রুয়ান্ডা। ব্রহ্মপুত্রসহ অনেক নদীর উজানের দেশ বলেই বোধহয় চীন নিজস্ব সংকীর্ণ জাতীয় স্বার্থে কনভেনশনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। কাজটি ভালো করেনি। ভোটদানে বিরত ছিল ভারত, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ। তারাও কাজটি ভালো করেনি। বাংলাদেশ পক্ষে ভোট দিয়েছিল। বাংলাদেশ সঠিক ভূমিকাই পালন করেছিল। এই কনভেনশনটি আইনে পরিণত হলে ভাটির দেশ বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক আইনগত ক্ষেত্রে আমরা অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতাম। কনভেনশনকে আইনে পরিণত করতে ৩৫টি দেশের স্বাক্ষর লাগবে। এ পর্যন্ত ৩৪টি দেশের স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। আর একটি মাত্র দেশ স্বাক্ষর করলেই এটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হবে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে- বাংলাদেশ ভোটাভুটির সময় পক্ষে ভোট
দিলেও (তখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন) আজ পর্যন্ত কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। এরপর ১৭ বছর পার হয়েছে। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতার এসেছে। এখনো ক্ষমতায় আছে। তারা কিন্তু স্বাক্ষর করেনি। যে বিএনপি এখন তিস্তার পানির জন্য চিৎকার করছে তারাও ক্ষমতায় ছিল ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তখনো তারা স্বাক্ষর করেনি। তাহলে কি এটা ধরে নেব যে, নদীর পানির ওপরে অধিকারের ব্যাপারে তারাও আন্তরিক নন? সবই লোক দেখনো।
ভারতবিরোধিতা তাদের জন্য রাজনৈতিক কৌশলমাত্র। সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে পশ্চাৎপদ মানুষের ভোট সংগ্রহের ঘৃণ্য কৌশল মাত্র। ২০০৭-২০০৮ সাল দুই বছর ক্ষমতায় ছিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মনে আছে, তখন সেনা সমর্থিত শব্দদ্বয় উচ্চারণের আগে দেশপ্রেমিক শব্দটি যোগ করতে হতো অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবে। তারা কেন স্বাক্ষর করেননি? ভারত নাখোশ হবে, এই আশঙ্কায়?
ভারতের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের যে সাহায্য করেছিল তা আমরা কখনোই ভুলব না। এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দান, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও অস্ত্র সরবরাহ (যদিও বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভারত সরকারের আচরণ মোটেও ভালো ছিল না, সম্ভবত ভারতের বুর্জোয়া সরকারের মনে বাম-কমিউনিস্ট ভীতি কাজ করত) এবং সরাসরি যুদ্ধে পনেরো হাজার ভারতীয় সৈন্যের জীবনদান- এসব কথা কী করে ভুলতে পারি? কিন্তু এই কারণে আবার ভারত নিশ্চয়ই আমাদের কাছ থেকে অন্যায় দাবি করতে পারে না। পদ্মা ও তিস্তার পানির সমস্যা ছাড়াও এখন আবার নতুন করে আরেকটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভারত সরকার জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে যে টিপাইমুখ বাঁধ দিয়েছে তাতে সর্বনাশ হয়ে যাবে সিলেটসহ আমাদের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো। এরকম বাঁধ নির্মাণের আগে ভারতের নৈতিক দায়িত্ব এবং আইনগত বাধ্যবাধকতা হচ্ছে বাংলাদেশের অনুমতি নেওয়া। সেটা তারা না নিয়েই একক সিদ্ধান্তে বাঁধ প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
আমরা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। সে কথা বহুবার বলেছি। আমরা ভারতের সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব চাই। সে জন্য আমরা ভারত সরকারকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছি। মনে রাখতে হবে, ভারত কিন্তু অধিকার বলে ট্রানজিট সুবিধা দাবি করতে পারে না। আমরা ইচ্ছা করলে নাও দিতে পারতাম। তবু দিয়েছি। কারণ আমরা বন্ধুত্ব চাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে ট্রানজিট প্রদানের পক্ষে। নদীর পানির ন্যায্য অংশ কিন্তু দয়ার ব্যাপার নয়। এটা আমাদের অধিকার। তাই দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। পার্থক্যটি ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের বোঝা উচিত।
এ প্রসঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের একটি বক্তব্যের কিছুটা উদ্ধৃত করছি। ভারত আমাদের বৃহত্তম প্রতিবেশী। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব থাকলে দুই দেশের জনগণের লাভ হয়, আর না থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উভয়পক্ষ।... ভারত আমাদের ন্যায্য পানি দেবে না, তাদের জন্য আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে মরবে, কৃষক-ক্ষেতমজুররা না খেয়ে থাকবে, আর আমরা চুপ করে থাকব তা হয় না।... অভিন্ন নদীর ন্যায্য পানি না দিলে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের চিন্তা আমাদের বাদ দিতে হবে।
কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যটি পার্টির মুখপত্রে (একতা, ১৮ মে) ছাপা হয়েছে। তাহলে ধরে নিতে হবে, এটা পার্টির অফিসিয়াল বক্তব্য। আশা করি এ বক্তব্যকে ভারতের প্রগতিশীল দল ও ব্যক্তিরা গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন। দুই দেশের
বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দিয়ে তারাও বাংলাদেশের নদীর পানি ন্যায্য অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবেন। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হবে প্রকৃত আন্তর্জাতিক এবং জনগণের ভ্রাতৃত্ববোধ। এভাবেই পরাজিত হবে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদী শক্তি এবং উভয় দেশের প্রতিক্রিয়াশীল শাসক গোষ্ঠী।
বাংলাদেশের প্রথম পলিটিক্যাল ডেইলী অনলাইন ও সম্ভাব্য বিশ্বসেরা রাজনৈতিক গবেষণাধর্মী সাইট
http://www.jononeta.com