বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলার কথা শুনলেই নিরাপত্তার অভাববোধ করতে শুরু করেছে মোড়লেরা। কারণ বাংলাদেশে এলে বাঘের থাবায় চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। জিম্বাবুয়েকে দিয়ে ধবল ধোলাইয়ের হাত পেকেছে বাংলাদেশের। এরপর মোড়লদের মধ্যে প্রথম ধবল ধোলাই খায় নিউ জিল্যাণ্ড। পরের বার একই ধোলাই খায় কিউইরা।
এরপর বাংলাদেশের ক্রিকেটের কিছু দুর্দিন যায়। আবার হাত পাকায় জিম্বাবুয়েকে দিয়ে। তারপর বিখ্যাত বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের স্পর্শে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রথম শিকার পাকিস্তান। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের বিখ্যাত জয়ের পর পাকিস্তান ছিলো বাঘেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। খালি হেরেছে। ২০১৫ সালে চান্দুদের মুখ সাদা করে দেয় মাশরাফি বাহিনী। এরপর দাদারা ধবল ধোলাই খেতে খেতে বেঁচে যায়(২-১)। একই হাল দক্ষিণ আফ্রিকার।
এই ধোলাই খালের ভয়ে প্রথম লেজ গুটিয়েছে আরেক মোড়ল অস্ট্রেলিয়া।
ইংল্যান্ডও গাঁইগুঁই করেছে অনেক। বাংলাদেশ সফরের কথা হবার পর আজ এ দল থেকে পালায় তো, কাল সে পালায়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে এসেছেন রাজাবাহাদুররা। ভেবেছেন জিম করবেট হবেন। ম্যাচে ম্যাচে বাঘ শিকার করবেন। প্রথম ম্যাচে ৩০৯ রানের টার্গেট দিয়ে ভেবেছিলেন কিল্লা ফতেহ ! বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে পা না হড়কালে জিতেই গেছিলো।
২য় ম্যাচে ২৩৮ রানে বাংলাদেশকে আটকে ফেলে ভেবেছিলো সিরিজ হাতের মুঠোয় পুরে চাটগাঁ যাবেন ধবল ধোলাইয়ের মিশন নিয়ে। কিন্তু বাঘেদের বোলিং বিষে নীল হবার পর বুঝলেন এই বাঘ জিম করবেটের আমলের বাঘ না।
ফলে মেজাজ শরীফ আর কন্ট্রোলে থাকলো না !
সব চেয়ে অবাক কান্ড করেছেন আইসিসির ম্যাচ রেফারি। যিনি তেড়ে গেলেন তিনি ভালো, ভদ্রলোক। যারা আনন্দ করলো তারা দোষী। যিনি টুইট করে হুমকি দিলেন তিনি তো ডাকই পেলেন না। মাঠের আম্পায়ারগণ আম্পায়ারিং হারাবার ভয়ে রিপোর্ট করার সাহস পেলেন না।
ক্রিকেটে মোড়লদের প্রহসন আর অনাচার নতুন নয়। একসময় গ্যারি গিলমোরের (অস্ট্রেলিয়া) বল সবচেয়ে দ্রুতগতির বলে রেকর্ড ছিলো। কালা আদমী শোয়েব আক্তার যখন একশ মাইল স্পীডে বল করলো। তখন বলা হলো স্পীড গানের মেশিনে গোলমাল আছে। এরপর থেকে কে বেশি জোরে বল করতে পারে তার হিসাব করার পালা চুকে গেলো।
শেন ওয়ার্ন স্পিনার হিসাবে নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরাদের একজন। তাঁর রেকর্ড বাঁচাবার জন্য কালা আদমী মুরলীধরনের জীবন অতীষ্ট হয়ে গেলো। অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ার ডেরিল হার্পার নো-বল ডাকতে ডাকতে হাত ব্যাথা করে ফেললেন। কতবার যে মাঠ থেকে তাঁকে বাইরে থাকতে হয়েছে। কতোবার যে পরীক্ষা দিয়ে মাঠে ফিরতে হয়েছে। সব মিলে অন্তত বছর দুয়েক খেলা থেকে বাইরে থাকলেন। কিন্তু ওপরওয়ালার বিচার বড়োই কঠিন ! মুরলীই পেলেন টেস্টের ৮০০ উইকেট। শেন প্রায় ১০০ উইকেট পেছনে। ভদ্রলোক ওয়ার্ন কতো কেলেঙ্কারির জন্ম দিলেন। কালা মুরলীর চরিত্র নিয়ে টু শব্দ হয়নি কোন দিন।
এই কালাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য আইসিসিতে কতো ভানুমতির খেল হলো ! বিশ্বকাপে বাছাই পর্ব, দুই স্তরের টেস্ট ! আহারে, কতো কাহিনী !
আরেকটা নীরব কাহিনী আছে রেকর্ড বইতে কালাদের নাম তোলার পথ আটকাবার জন্য। এখন অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের এশেজ সিরিজ ছাড়া আর কোন পাঁচ টেস্টের সিরিজ নেই। এককালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগে ৪/৫ টেস্টের সিরিজ খেলা হতো। এখন সেটা ৩ টেস্টে নেমেছে। এমন কি নব্যমোড়ল ভারতের সাথেও নিউ জিল্যান্ড ৩ টেস্টের বেশি খেলে না। বাংলাদেশকে টেস্ট খেলতে দিতে চায় না। কেনিয়ার ক্রিকেট দলটি নব্বই দশকে বেশ ভালো হয়ে উঠেছিলো। কালা কেনিয়াকে নীরবে মুছে দেওয়া হলো। কালা জিম্বাবুয়ের অবস্থাও কাহিল। এখন আফগানিস্তান ভালো খেলছে। কিন্তু তাদের টেস্ট খেলার সুযোগ আদৌ দেওয়া হবে কিনা বলা মুশকিল।
ফুটবল বিশ্বকাপে যেখানে দল বাড়ছে, ক্রিকেট বিশ্বকাপে দল কমানোর কতো পাঁয়তারা চলে !
কালাদের খেলার মাঠে যে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হতে হয় তার ইতিহাসও করুন। বেনিফিট অব ডাউট কখনো কালাদের পক্ষে আসে না। ডিআরএসগুলো খেয়াল করলে দেখবেন যেখানে সিদ্ধান্ত আসে 'আম্পায়ার্স কল', সেখানে দেখবেন কালাদের বিষয়ে আম্পায়ারগণ আউট দিয়ে দিয়েছেন, আর সাদাদের বেলায় সেটা থাকে নট আউট। এখন তো ইউটিউবের যুগ। সেখানে যাঁরা স্বচ্ছন্দ তাঁরা একটু কোশেশ করলে এর সত্যতা পাবেন। আমার সেই কারিগরি জ্ঞান থাকলে লিঙ্ক দিয়ে দিতাম।
তাই কালাদের একটাই জায়গা-ভালো খেলে নীরবে এর জবাব দিয়ে যাওয়া। বাংলার বাঘেদের কাছেও আমরা সবিনয়ে সেই নিবেদনই রাখবো। যাতে বাংলাদেশের মাঠ এই রকম বিপজ্জনকই থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:২৩