Click This Link
প্রিয় ডেভিড ম্যাকক্লেমেন্ট
খটমটে ট্রেনিংয়ের ততোধিক খটমটে বিষয়গুলো আমাদের ভালো লেগে গেলো রিসোর্স পারসন ডেভিড ম্যাকক্লেমেন্টের কল্যাণে। আগেই উল্লেখে করেছি ভদ্রলোক ইঞ্জিনিয়ার। তেল গ্যাস সেক্টরে আছেন চল্লিশ বছরের বেশী। তার বিষয়ে আসলেই বেশ ভালো জানেন। কিছু জানতে চাইলে সেটার জবাব যোগাড় করে দেবার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। খুব হাসিখুশী মানুষ। সেটা আমাদের ভেতর সংক্রমিত করে দিলেন। তাই সময়টা উপভোগ্য হয়ে উঠেছিলো। আমরা বাঙালী মার্কা প্যাঁচানো প্রশ্ন করলে মা্ইকার চিপায় পড়ার মতো মুখ করে নিজের স্মৃতি হাতড়ে এসে বলতেন, এটা তার জানা নেই।
ট্রেনিংয়ের সময় মজার মজার ডকুমেন্টারী দেখাতেন। গল্পও বলতেন। ভিয়েতনামের সাথে একবার একটা চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিলেন। সে অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে জানালেন, সেখানে মিটিং হয়। একটু পর পর চা আসে। নানা বিষয়ে গল্প হয়। চুক্তি নিয়ে কথা হয় কম। কখনো কথাই হয় না। বারবার যান। মিটিং হয়। চা চলে। চুক্তি হয় না। বললেন, কতো গ্যালন চা খেয়েছি তার হিসাব নেই। এক সময় এইসব গল্প আর চা-ভোজের রহস্য তিনি বুঝতে পারলেন। ভিয়েতনামীরা চুক্তির আগে প্রতিপক্ষের সাথে আলাপ করে বোঝার চেষ্টা করেন লোকগুলো কেমন ? তাদের ওপর আস্থা রাখা যাবে কিনা ? অর্থাৎ পেছনের মানুষগুলোকে না বুঝে চুক্তি করতে চান না। কারণ ভিয়েতনামীদের কাছে মানুষের ওপর আস্থা রাখাই মূল কথা। প্রাণহীন নিষ্ঠুর ব্যবসার ভেতর প্রাণের এই সন্ধান ডেভিডকে মুগ্ধ করেছে।
একদিন ডেভিড ব্রাজিলের জাতীয় তেল গ্যাস সংস্হা পেট্রো ব্রাস-এর
( আমাদের যেমন পেট্রো বাংলা, চীনের যেমন পেট্রো চায়না) এক নতুন প্রধানের গল্প বললেন। তিনি এসেই পেট্রো ব্রাসের খরচ বাঁচানোর জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। ইঞ্জিনিয়ারদের ডিজাইন কেটে কমিয়ে সাগরে ভাসমান প্লাটফর্মে সাগরের নীচ থেকে তোলা তেলের প্রসেস প্লান্ট বসিয়ে দিলেন। সেটা চালু করতে না করতে কিভাবে সাগরে তলিয়ে গেলো তার ওপর মুভি দেখিয়ে বললেন, পেট্রো ব্রাস প্রধানের মূল মন্ত্র ছিলো ''Different way of thinking''। চিন্তার বিপ্লব করে ফেলতে চেয়েছিলেন। এই হলো তার পরিণতি। এই গল্প দিয়ে তিনি বোঝাতে চাইলেন, যে জিনিসগুলো নাড়াচাড়া করা ঝুঁকিপূর্ণ ( তেল গ্যাস ইত্যাদি) সেখানে প্রমানিত প্রযুক্তি ব্যবহার করাই উত্তম। আমি ছবি দেখে মন্তব্য করলাম, This not only the different way of thinking but also thedifferent way of sinking ! "' আমার এ রসিকতায় ডেভিড হেসে কুটিকুটি !
টেনিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে নিজের বউ ছেলে মেয়ে আর নাতিনাতনীদের গল্প করতেন ডেভিড।
তার আন্তরিকতা আর সরলতা সবাইকে এমন আকৃষ্ট করেছিলো যে, বিদায়ের দিন সবার চোখই ছলোছলো হয়ে উঠেছিলো।
এখনো অবসরে হঠাৎ মনে পড়লে ডেভিডের জন্য মনটা কেমন যেন করে ওঠে। ভালো থাকবেন ডেভিড। জানি না আর কখনো আপনার সাথে দেখা হবে কিনা।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:৩২