ওরা চেয়েছিল আমাদের বানের জলে ডুবিয়ে মারতে,
আমরা পিঁপড়ের দলের মত কুন্ডলী পাকিয়ে
একে অপরকে জড়িয়ে ধরে জলে ভেসে রইলাম।
আমরা আজ ভাসতে জেনে গেছি, ডুবতে ভুলে গেছি!
এক ঐশ্বরিক শক্তি বলে সারা দেশ যেন এক হয়ে গেল!
অন্য সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মতের শতধা বিভক্ত এই জাতি
এক দৃপ্ত শপথে আজ নিজেদের একতাবদ্ধ করে নিল।
তাদের ঐক্যে কোথা থেকে কে যেন সীসে ঢেলে দিল!
বন্যার্তদের সাহায্যার্থে যে যার সাধ্যমত এগিয়ে এলো।
হিন্দুরা পূজোর খরচ কেটে কুটে ত্রাণের দান নিয়ে এলো,
মুসলিমরা জুম্মাবারের সংগৃহীত অর্থ পুরোটাই দিয়ে দিল,
চট্টগ্রামের ভিক্ষুরা মানুষের প্রাণরক্ষায় জলে নেমে এলো!
সকল উপাসনালয় বিপন্নদের জন্য সরব হলো প্রার্থনায়
দ্রুত সাড়া দিল সামরিক বাহিনীগুলো ত্রাতার ভূমিকায়।
হেলিকপ্টার উড়ে এলো গুলি বা গরম পানি ছুঁড়তে নয়,
বন্যার্তের জন্য ত্রাণ নিয়ে, বিপন্ন জলবেষ্টিতদের উদ্ধারে।
সেনা ও নৌবাহিনী এগিয়ে এলো তাদের নিজস্ব ত্রাণ নিয়ে,
মমতাময়ী নারীসৈনিক অপত্য স্নেহে এক শিশুকে বাঁচালো
বুকের মাঝে জাপটে ধরে, হাঁটুজল মাড়িয়ে। আশ্রয় পেল
এক তরুণ নৌ-সেনার কোলে অচেতন দুগ্ধপোষ্য শিশু।
ছাত্রদের আহবানে টিএসসি’র মোড়ে জনতা সমবেত হলো।
স্কুল পড়ুয়া ছাত্ররা ঢেলে দিল ব্যাঙ্ক থেকে তাদের সঞ্চিত মুদ্রা।
ত্রাণদ্রব্য নিয়ে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে গেল অগণিত মানুষ ও গাড়ি।
যার যা আছে তাই নিয়ে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়লো এই ত্রাণযজ্ঞে।
এ এক নতুন বাংলাদেশ! যত বড় দুর্যোগ, তত শক্ত হয় ঐক্য।
সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার এক গর্ভবতী নারীকে উদ্ধার করে
পৌঁছে দেয় হাসপাতালে; সেখানেই জন্ম নেয় এক নবজাতক।
ধ্বংসযজ্ঞে প্রস্ফূটিত হয় এক রক্তগোলাপ, ভবিষ্যতের দিশারি!
রিজাইনা, সাস্কাচুয়ান, কানাডা
২৩ অগাস্ট ২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১২:২৪