https://ibb.co/348JC7C
আমার প্রায় সাত বছরের নাতনি গত ঈদের দিন সন্ধ্যায় ওর নানুবাড়ি থেকে আমাদের বাসায় এসেছে। এসে সেদিন সে আমাকে বাসায় পায়নি, কারণ আমি সেদিন রংপুরে ছিলাম। আমি ফিরেছি ঈদের পরদিন গভীর রাতে, সুতরাং পরদিনও সে আমাকে দেখে নাই। তার পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সে আমাকে দেখে অবাক হয়। আমাকে জড়িয়ে ধরতে চায়, কিন্তু আমি ওকে বলি, আমাকে ধরা যাবে না, কারণ আমার শরীরে করোনা ভাইরাস থাকতে পারে। ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস সম্বন্ধে সে মোটামুটি ভালই ধারণা পেয়েছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি মাস্ক পড়েছিলাম কিনা। আমি হ্যাঁ বলায় সে জিজ্ঞেস করলো বাসায় এসে আমি সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি কিনা। আমি বললাম, শুধু সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি তাই নয়, বাসায় এসে আমি রাতেই সাবান দিয়ে গোসল করেছি। সে বললো, তা’হলে তো তোমাকে টাচ করতে অসুবিধে নেই। আমি বললাম, ‘না, আমি অনেক দূর থেকে জার্নি করে এসেছি, অনেকক্ষণ অনেক লোকের সাথে ছিলাম, তাই আমার কাছে তোমার এখন আসা যাবে না’। সে বললো, ‘কতদিন’? আমি একটু কম করে বললাম, ‘মিনিমাম দশ দিন। এই দশ দিন তোমাকে আমার কাছ থেকে ছয় ফুট দূরে থাকতে হবে’। সে বললো, ‘ছয়ফুট কতদূর’? আমি বললাম, ‘মিনিমাম দুই চেয়ার ডিসট্যান্স’। সে বললো ‘আচ্ছা’।
ওরা এবার অনেকদিন পরে আমাদের বাসায় থাকার জন্য এলো। এর আগে কয়েকদিন ছিল রোযার ঈদের সময়। আগে নিয়ম করে প্রতিদিন ও ঘুমোতে যাবার আগে আমার কাছে এসে আদর নিয়ে যেত। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কিছু দোয়া পড়ে চুমু দিতাম আর বলতাম, ‘এবারে তুমি ঘুমাতে যাও’। সে বলতো, ‘তুমি ঘুমাবে কখন’? আমি বলতাম, ‘বারটায়’। অধুনা সে ঘড়ির সময় চিনতে শিখেছে। বারটার মধ্যে আমি কোনদিন ল্যাপটপ বন্ধ না করলে সে তার দরজা ফাঁক করে বলতো, ‘বারটা বেজে গেছে, দাদা তুমি এখনো কী করছো’? আমি বলতাম, ‘ল্যাপটপ শাটডাউন দিয়েছি, একটু পরেই বন্ধ হবে, হলেই ঊঠে যাবো’। এ কয়দিন সে ঘুমোতে যাবার আগে তার আন্দাজ মত ছয়ফুট দূর থেকে বাই বাই দিয়ে ঘুমোতে যেত। কিন্তু সে হিসেব রেখেছে দশদিনের। গতরাতে ঘুমোতে যাবার আগে সে আমার কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘দাদা, হাগ মি’। আমি ওকে আগের মত জড়িয়ে ধরে, জোরে জোরে দোয়া করে (মনে মনে দোয়া করলে সে সন্তুষ্ট হয় না, কী দোয়া করছি তা শুনতে চায়) ওকে গুডনাইট কিস দিলাম। ও তখন আমাকে দুই ভাঁজ করা একটা কাগজ আমার হাতে দিয়ে বললো, ‘এটা দেখ’। ভাঁজ করা কাগজটার উপর সে নিজের নাম লিখেছে, ‘আনায়া’। আমি বললাম, ‘এটা কী’? সে বললো, ‘এটা তুমি’। আমি তাড়াতাড়ি কাগজটা খুলে দেখি সে আমাকে এঁকেছে, যেভাবে পেরেছে। কাগজটার উপরের বাম পাশে একটি ‘লাভ চিহ্ন’। তার পাশে বড় করে লেখা ‘আই লাভ দাদা’। তার নীচে সে এঁকেছে একটা খোলা ল্যাপটপ, কী বোর্ড আর মাউস, যা সে সবসময় আমার টেবিলে দেখে, আর মাঝে মাঝেই এসে জিজ্ঞেস করে, ‘দাদা, তুমি কী লেখো’?। মনিটর আর কী বোর্ড এর নীচে সে তার দাদার কিম্ভূতকিমাকার একটা দাঁড়ানো ছবি এঁকেছে। কাগজের নীচের ডান পাশে লেখা ‘বাট দাদা লাভস ল্যাপটপ’, একটা তিরচিহ্ন দিয়ে দিয়ে লেখাটা দাদাকে দেখাচ্ছে।
হাউ সুঈট! এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে, সে বুঝতে পেরেছে দাদা তাকে সময় দিচ্ছে না। তাই যেভাবে পেরেছে, সেটা এঁকে তাকে বুঝিয়েছে। আমি তাকে আবার আদর করে বললাম, ‘তোমার ড্রয়িং দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি তো তোমাকে ডাকি আমার সাথে বসে ইউটিউবে গল্প শোনার জন্য, গান শোনার জন্য, তুমি তো এখন আসো না, আগে আসতে’। সে বললো, ‘তোমার ল্যাপটপ ছোট, আমি চাচুর বড় টিভিতে কার্টুন দেখি’। আজও সারাদিন আমার ওর ছবিটার কথা মনে হয়েছে। আমি মনে মনে তার বুদ্ধির অনেক তারিফ করেছি। আজ একটু কাজে ঘরের বাইরে যেতে হয়েছিল। ফিরে এসে গোসল সেরে দেখি ও টিভি ছেড়ে দিয়ে খাচ্ছে। ওকে বললাম, ‘তোমার কালকের আঁকা আমার ছবিটা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। থ্যাঙ্ক ইউ ফর ড্রয়িং মি। আজ খাওয়া শেষে তুমি আমার কাছে আসবে। আমরা সেলফোন থেকে ইউটিউবে স্টোরি শুনবো। সে শুধু একটু হাসলো, তারপর আবার টিভি দেখায় মনোনিবেশ করলো।
ঢাকা
০১ অগাস্ট ২০২১
শব্দ সংখ্যাঃ ৬০৫