এর আগের পোস্টঃ অস্ট্রেলিয়ার পথে (৩) .... অবশেষে মেলবোর্নের মাটিতে!!!
দুয়ারে দুয়ারে (ঢাকার বাসা থেকে মেলবোর্নে ছেলের বাসার) প্রায় ২১ ঘন্টা জার্নীর পর গতরাতে শরীরটা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তার উপর রাতে শয্যা নিয়েছি অনেক দেরীতে। তাই সকালে ঘুম ভাংলো অনেক দেরীতে। আমার ছেলে ও বৌমা মেলবোর্নে সংসার শুরু করার পর ওদের এই বাসাটা দ্বিতীয় বাসা। আগের বাসাটা ছিল এখান থেকে অনতিদূরে, মাত্র আট-দশ মিনিটের ড্রাইভ। আমরা আসবো বলে ওরা আগের বাসাটা ছেড়ে দিয়ে একটু বড় পরিসরের এ বাসায় উঠেছে। বাসার চারিদিকে মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যে আছে মেট্রো রেলস্টেশন, হাইওয়ে, বাস স্টপেজ, Woolworths Departmental Store আর কিছু রেস্তোরাঁ, কাবাবের দোকান ইত্যাদি। কাজেই, ওদের জন্য বাসাটা খুবই সুবিধেজনক জায়গায় হয়েছে। তবে বাসার এত কাছে এত জনসমাগমকেন্দ্র থাকার পরেও এখানে সারাদিনব্যাপী থাকে রাতের শুনশান নীরবতা। নাশতার পর ওদের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। হাইওয়ে ধরে গাড়ী, বাস ও লরীর সারি দ্রুতবেগে ছুটছিল। মেট্রো রেলযোগে পাঁচ-দশ মিনিট পর পর দু’দিক থেকেই ট্রেন চলছিল। কিন্তু কোথাও কোন আওয়াজ নেই, মনে হচ্ছিল যেন ঘরে বসে মিউট করা টিভিতে কোন ফিল্ম দেখছি। গতি আছে, চলাচল আছে, কিন্তু শব্দ নেই। আশেপাশের সবকিছুই আপন লয়ে গতিষ্ণু, কিন্তু নিঃশব্দ! ট্রাফিক সিগন্যালের আদেশ অনুযায়ী মনে হচ্ছে কেউ রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে গাড়ীগুলোকে ক্ষণে ক্ষণে আটকে দিচ্ছে, আবার আদেশানুযায়ী চালিয়েও দিচ্ছে।
ব্যালকনিটা খুব সুন্দর। কোমর আর বুকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পুরু কাঁচের দেয়াল, তার ওপরে খোলা। কাঁচের অংশে ভেতর থেকে বাইরে দেখা যায়, বাহির থেকে নয়। ওখানে দুটো চেয়ার পাশাপাশি রাখা আছে, আরও দুটো রাখার স্পেস আছে। কাঁচের দেয়াল থেকে এক ফুটের মত শক্ত কাঠের একটি হরাইযোন্টাল এক্সটেনশন আছে, যেখানে চায়ের কাপ, বিস্কুটের প্লেট ইত্যাদি বেশ সহজেই রাখা যায়। মোট কথা সকালে বিকেলে চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য এটা একটি আদর্শ জায়গা। ছেলে সকালে উঠে কাজে গেছে। বৌমা যে সেকেন্ডারী স্কুলে পড়ায়, সেটার এখন বার্ষিক ছুটি চলছে, কাজেই সে আমাদেরকে সঙ্গ দিতে পারছে। বৌমা তিন মগ চা নিয়ে ব্যালকনিতে আমাদের সাথে এসে বসলো। ধোঁয়া ওঠা কাপ হাতে নিয়ে আমরা এই শীতের সকালে আলাপচারিতায় মগ্ন হ’লাম (যদিও এদের এখানে এখন ‘সামার’ চলছে, কিন্তু গুগলে দেখলাম, তাপমাত্রা আমাদের দেশের এই পৌষের ভরা শীতের দিনের চেয়েও কম)।
ব্যালকনি থেকে দু’পাশে তাকালে অনেক গাছপালা দেখা যায়। সেখানে সারা দিনমান পাখিদের ওড়াউড়ি দেখি। প্রথম দিনেই নিস্তব্ধ দুপুরে ঘুঘুর ডাক শুনে মুগ্ধ হয়েছি। শালিখের ডাকও শুনেছি। বিকেলে আমরা তিনজনে মিলে একটু বাসার চারপাশে হাঁটতে বের হ’লাম। সব জায়গায় পরিচ্ছন্ন রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটিয়েদের জন্য পরিচ্ছন্ন ওয়াকওয়ে বা হাঁটাপথ আছে। এমন ছিমছাম, নিরিবিলি, সুন্দর পরিবেশে হাঁটাটাই যে কতটা আনন্দের ব্যাপার হতে পারে! তিনজনে মিলে ধীরে ধীরে হাঁটছি আর গল্প করছি। বাসার খুব কাছেই রয়েছে ST. DAVID’S ANGLICAN CHURCH. সুন্দর পরিবেশে ছোট্ট চার্চ, সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বাহিরে একটি বোর্ড টাঙানো রয়েছে। সেখানে কিছু ছবি তুলে আমরা গেলাম মুরাব্বিন মেট্রো স্টেশনের ভেতর দিয়ে বের হয়ে অপর পাশের রাস্তায়। একটু এগোতেই পেলাম Kingston City Hall, এ এলাকার নতুন নাগরিকত্বপ্রাপ্তদের এখানে সিটিজেনশিপ সেরিমনির মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেয়া হয়। হলটির বাকী কাজ সম্ভবতঃ অনেকটা আমাদের জেলা শহরগুলোর ‘টাউন হল’ এর মত। হলের ওপরে একটি “ক্লক টাওয়ার” বসানো হয়েছে, অনেক দূর থেকেও সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখা যায়। এমনকি রাতেও লেসারের সাহায্যে ঘড়িটি নানা রঙে রঞ্জিত হয়ে জিজ্ঞাসুদেরকে সময় বলে দেয়। জানালার পর্দা সরানো থাকলে আমার শয্যা থেকেই আমি এ ঘড়িটি দেখতে পাই। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, মাগরিবের নামাজের সময় ( ঐ দিন ৮টা ৪৩ মিনিট) প্রায় সমাগত। আমরা তাই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এলাম।
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
০৬ জানুয়ারী ২০২০
প্রিয় প্রাঙ্গণ ---- A favorite place
সেখানে "All are welcome"।
চা পানের সময় এখানে বসি
চা পানের সময় এখানে বসি
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:১১