তোমাদেরই মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই
এ পৃথিবীতে মানুষ সুখেই তার জীবনটুকু কাটিয়ে যাক কিংবা দুঃখে, অথবা এ দুই এর তারতম্যপূর্ণ সংমিশ্রণে, দিনশেষে বোধকরি তার অনুভূতির পাল্লাটা দুঃখের দিকেই ঝুঁকে পড়ে। সবাই যে মৃত্যুভয়ে ভীত থাকে তা নয়। তবে ক্ষয় ও লয় এর কাছে মানুষ যখন ধীরে ধীরে সমর্পিত হতে থাকে, তখন চরম আত্মবিশ্বাসী মানুষেরও দৃষ্টি ঘোলাটে হতে থাকে। বুকে ফাঁপর লাগে, শূন্যতা অনুভূত হতে থাকে, জগত সংসারের কোন কিছুই বা কেহই আমার নয়- এ চিন্তাটা একসময় হাসিখুশী মানুষকেও বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। মানুষ না চাইলেও একদিন তাকে বিদায় নিতে হয়, বিলীন হতে হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও জানতেন, তিনি চিরস্থায়ী নন, তবুও তিনি লিখে গেছেনঃ
প্রাণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।
এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই!
ধরায় প্রাণের খেলা চিরতরঙ্গিত,
বিরহ মিলন কত হাসি-অশ্রু-ময়_
মানবের সুখে-দুঃখে গাঁথিয়া সঙ্গীত
যদি গো রচিতে পারি অমর-আলয়!
তা যদি না পারি, তবে বাঁচি যত কাল
তোমাদেরই মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই,
তোমরা তুলিবে বলে সকাল-বিকাল
নব নব সঙ্গীতের কুসুম ফুটাই।
হাসিমুখে নিয়ো ফুল, তার পরে হায়
ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায়।
এই যে “তোমাদেরই মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই” – এ আকুতিটুকু বোধকরি ভাল মন্দ, সুখী দুঃখী, অন্তুর্মুখী বহির্মুখী, সব মানুষই এক সময় কম বেশী অনুভব করে। চলে যাওয়ার আগেও সে চায়, সে যেন কারো হৃদয়ে রয়ে যায়, “জীবন্ত হৃদয় মাঝে” যেন স্থান পায়! সবাই তো আর “নব নব সঙ্গীতের কুসুম” ফোটাতে পারে না, তাই অনেকেই হয়তো রবি ঠাকুরেরই আরেকটি গানের কথা স্মরণ করতে করতে অশ্রুসিক্ত হয়ঃ
“ঝরা পাতা গো, আমি তোমারই দলে।
অনেক হাসি, অনেক অশ্রুজলে,
ফাগুন দিনের বিদায় মন্ত্র আমার হিয়াতলে”।
অথবা জীবনের অন্য কোন মধুর সঙ্গীতের কথা স্মরণ করে, আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতেই তারা চিরপ্রস্থানে চলে যায়!!!
ঢাকা
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
(ঝরা পাতা প্রস্থানের প্রতীক। প্রস্থান বেদনাদায়ক। বেদনা কবিতার প্রসূতি।)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৫৪