গত পরশু বিকেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় যাবার সময় প্রবেশ পথে দেখলাম একজন তরুণী একটা ব্যানার দু’হাতে ধরে আছে, তাতে একটা মেয়ের ছবি, আর লেখা “... কে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন”! পাশে এক তরুণ একটা র্যাপিং করা বাক্স হাতে দাঁড়িয়ে আছে, যার উপরের অংশটুকুতে একটু ফাঁক রয়েছে, যেন ইচ্ছুক ব্যক্তিরা সেখানে তাদের দান করা টাকার নোট ভাঁজ করে ঢুকিয়ে দিতে পারেন। পাশ কাটিয়ে চলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু মনে মনে ঐ লেখাটাই ভাসছিল- “... কে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন”! আবার ফিরে এলাম। একটা নোট ভাঁজ করে ঢুকিয়ে দিলাম তরণের হাতে ধরা বাক্সের ফাঁকে। তরণটি ছোট্ট একটা ধন্যবাদ দিল, তরুণীটি দীর্ঘ। তরুণীর চোখ মুখের ভাষায় বেশ বুঝতে পারলাম, ক্যান্সার আক্রান্ত বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য তার কমিটমেন্ট তরুণটির চেয়ে অনেক বেশী।
বই মেলায় প্রকাশকের সাথে তাড়াহুড়ো করে একটা জরুরী কাজ শেষ করে ফেরার সময় আবার অন্য এক জোড়া তরুণ তরুণী একই উদ্দেশ্যে এগিয়ে এলো। তাদেরকে জানালাম, যাবার সময় দিয়ে গিয়েছি। ওরা ধন্যবাদ জানালো। ওদেরকে অসুস্থ মেয়েটির কথা জিজ্ঞেস করলাম। ওরা ওর নাম জানালো ঐশ্বর্য রায় প্রমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুব সম্ভবতঃ) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মেধাবী ছাত্রী। এমন একটা তরতাজা তরুণ প্রাণের উপর আঘাত এসেছে জেনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আবার তার সাহায্যার্থে তার সতীর্থরা যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তা দেখেও মনটা খুশীতে ভরে গেল।
যে তরুণীটি আমার কাছে ব্যানার হাতে প্রথম এসেছিল এবং পরে অকুন্ঠ ধন্যবাদ জানিয়েছিল, তাকে দেখে মনে হয় নি সে জীবনে কোন কিছুর জন্য কারো কাছে হাত পেতেছে। কিন্তু বন্ধুর জন্যে আজ সে জনে জনে অনুরোধ করছে সাহায্যের জন্য। এরই নাম বন্ধুত্ব, এরই নাম ভালবাসা, এরই নাম মানবিকতা।
ঢাকা
১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:২১