(আধুনিক বাংলা ভাষার বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ এর আজ ৬২তম প্রয়াণ দিবস। দু'বছর আগে আমি তাঁকে স্মরণ করে এ কবিতাটি লিখেছিলাম।)
কতটা যন্ত্রণা ছিলো তোমার বুকে, হে কবি?
কতটা বিষণ্ণতার আঁধার ঢেকেছিলো তোমায়,
করেছিলো এই হিরণ্ময় পৃথিবী থেকে বিমুখ?
'সোনালী চিলের ডানা', 'দারুচিনি দ্বীপ' আর
'ধানসিঁড়ি নদীতীর', কিছুই তোমাকে রাখতে
পারলোনা? 'মুখোমুখি বসিবার', 'শ্রাবস্তির
কারুকার্য' খচিত নাটোরের সেই বনলতা সেন!
একবারও কি সে তোমাকে আবারো প্রলোভন
দেখায়নি দু'দন্ড শান্তির? সবকিছু ছেড়ে তুমি
লোহার চাকার নীচে কেন শান্তি খুঁজেছিলে?
তোমার এ আকস্মিক দূুর্ঘটনা 'রূপসী বাংলা'কে
রেখে গেছে নিঃস্ব করে। একশ' চল্লিশ বছরের
কোলকাতার ট্রামের ইতিহাসে তুমিই একমাত্র
পিষ্ট হয়েছো তার চাকার নীচে। 'ঝরা পালকের'
মত কেন তুমি ঝরে গেলে, অপঠিত পড়ে র'লো
তোমার 'ধূসর পান্ডুলিপি'! অতৃপ্ত এক জীবনের
যবনিকা টেনে কোথায় কোন অচিনপুরে গেলে?
আজ আমাদের কে দেখাবে প্রকৃতির আনকোরা
রঙের বাহার, 'রক্তাভ রৌদ্রের বিচ্ছুরিত স্বেদ'?
'রামধনু রঙের কাঁচের জানালা' ভেদ করে কেউ
কি দেখাবে কারও 'নগ্ন নির্জন হাত' এর ইশারা?
মেহগনি অথবা 'কমলা রঙের রোদ' এর ছবি?
পাদটীকাঃ কবি জীবনানন্দ দাশ (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯, বঙ্গাব্দ: ৬ ফাল্গুন, ১৩০৫; মৃত্যু: ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪, বঙ্গাব্দ: ৫ কার্তিক, ১৩৬১) এর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল। তার আদি নাম ছিল জীবনানন্দ দাশগুপ্ত। ১৯২৭ খৃস্টাব্দে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ঝরা পালক' প্রকাশিত হয়। সে সময় থেকেই তিনি তার পারিবারিক উপাধি 'দাশগুপ্তের' বদলে কেবল 'দাশ' লিখতে শুরু করেন এবং 'গুপ্ত' অংশটুকু ছেঁটে বাদ দেন। জীবনানন্দের মাতা কুসুমকুমারী দাশও কবিতা লিখতেন। তাঁর সুপরিচিত কবিতা আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে) আমাদের বাল্যকালে শিশুশ্রেণীর পাঠ্য ছিল। তবে তখন হয়তো আমরা জানতাম না যে তিনিই কবি জীবনানন্দ দাশ এর মাতা ছিলেন। তার পিতা ছিলেন সত্যানন্দ দাশগুপ্ত (১৮৬৩-১৯৪২)। তাঁর পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত বিক্রমপুর থেকে বরিশালে যেয়ে আবাস গাড়েন। সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন; পরে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন। তিনি বরিশালে ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁর মানবহিতৈষী কাজের জন্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ছিলেন।
(তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া)।
আমার অন্যতম প্রিয় এ কবির প্রয়াণ দিবসে তাঁর প্রতি আমার এ শ্রদ্ধাঞ্জলি উৎসর্গিত। বলা নিষ্প্রয়োজন, কবিতায় উদ্ধৃতি চিহ্নের অন্তর্গত শব্দাবলী কবির বিভিন্ন কবিতা ও কাব্যগ্রন্থের নাম এবং তাঁর কবিতায় বহুল ব্যবহৃত শব্দভান্ডার থেকে নেয়া হয়েছে।
ঢাকা
২৩ অক্টোবর ২০১৪
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
(ইতোপূর্বে অন্যত্র প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৪৯