অবশেষে ছাত্রী নির্যাতনের কথা কবুল করেছেন শিক্ষক মাহফুজুর রশীদ ফেরদৌস। গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ফেরদৌস বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব ও তার অফিস কক্ষেই ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন করতেন। এ পর্যন্ত সাত-আট জন ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের বিষয় স্বীকার করেছেন। দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করলে জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সূত্র জানায়, ফেরদৌস তার জবানবন্দিতে বলেছেন, ক্লাস শেষে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতেন। কখনো কখনো ল্যাবে এই ধরনের অপকর্ম করতেন। স্বীকারোক্তিতে অপরাধ স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির শুরু থেকেই যৌন নেশায় মাতাল হয়ে যান এই ফেরদৌস। ২০০০ সাল থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সেইসঙ্গে পান সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব। তার আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই লেখাপড়া করেছেন ফেরদৌস। শিক্ষকতার শুরু থেকেই একের পর এক সুন্দরী ছাত্রীদের টার্গেট করে তাদের জিম্মি করতেন তিনি। বিশেষ করে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদের জিম্মি করতেন বলে স্বীকার করেছেন। নির্যাতিতা ছাত্রীরা জানান, সহকারী প্রক্টর হওয়ার কারণে তারা তাকে ভয় পেতেন। যে কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পেতেন না তারা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্লাস ও পরীক্ষায় সহযোগিতার কথা বলে ছাত্রীদের ডেকে নিতেন। গল্প করতেন। একদিন এক ছাত্রীকে পড়া বোঝানোর নামে পান্থপথের ওই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তখন ওই শিক্ষক একা ছিলেন। কথা বলার সময় শিক্ষক ফেরদৌস তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেন। একপর্যায়ে ‘সুইটহার্ট’ বলে তার হাত ধরে কাছে টেনে নেয়ার চেষ্টা করেন।
সেদিন বাধা দিয়েও পার পাননি ওই ছাত্রী। জোর করে তাকে যৌন নির্যাতন করেন ওই শিক্ষক। এরপর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ছাত্রী। পরবর্তীতে ওই শিক্ষককে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ফেরদৌস তাকে হুমকি দিতেন যে, এ বিষয়ে মুখ খুললে পরীক্ষায় ফেল করানো হবে। বাধ্য হয়েই শিক্ষক মাহফুজের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি ওই ছাত্রী। মামলাটি গত বৃহস্পতিবার কলাবাগান থানা থেকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে হস্তান্তর হলে ওই ছাত্রী কর্মকর্তাদের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তবে পান্থপথের বিল্ডিং ১৫২/২/জি/১-২ এর চার নম্বর ফ্ল্যাটে নিয়ে ছাত্রী নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করেননি ফেরদৌস। তিনি জানান, সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে অনেক সময় আড্ডা দিয়েছেন। তবে সেখানে একাধিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
সূত্র মতে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন ছয়জন ছাত্রী। তাদের প্রত্যেককে বাগে নিতে প্রায় একই রকম কৌশল অবলম্বন করেছেন ফেরদৌস। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ফেরদৌস জানিয়েছেন, সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করে প্রথমে তাদের সঙ্গে বন্ধুতা করার চেষ্টা করতেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি বন্ধুতা গড়তে সফল হতেন। প্রতিটি বিশেষ দিবসেই ছাত্রীদের মোবাইলফোনে রোমান্টিক বার্তা দিতেন এই শিক্ষক। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আসমা মিলি জানান, মাহফুজের কর্মকাণ্ড ছিল অত্যন্ত জঘন্য। চাকরি জীবনের শুরু থেকে অর্থাৎ গত ১৬ বছরে অর্ধশত অপকর্ম করছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অনেক ছাত্রী অভিযোগ করেছেন।