১৪ই অক্টোবর ১৯৭৩ যে সব ছাত্র-ছাত্রীরা একটি রাজনৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রান দিয়েছিল তাদের স্মরনে এই স্মৃতিস্তম্ভ
রাজপ্রাসাদের রাজ মন্দির ওয়াট আরুনে চন্দন কাঠের উপর সোনায় মোড়ানো কফিনে শায়িত প্রয়াত রাজার দেহ। তাঁর মৃত আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনও দুরদুরান্ত থেকে কালো পোশাকের হাজারো শোকার্ত লোকের আসা যাওয়া। ভাবলাম টিভিতে তো প্রতিদিনই দেখছি , এবার স্বচক্ষে দেখে আসি আর শ্রদ্ধা জানিয়ে আসি শ্রদ্ধা জানাতে আসা শোকার্ত জনতার ঢলকে সঙ্গী করে।
রাজার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল থেকে রাত এমনি করে দিনের পর দিন মানুষের স্রোত
স্বর্নালী রঙ্গে মোড়ানো অপরূপ কারুকাজে শোভিত রাজপ্রাসাদের বাইরে চাও ফ্রায়া নদীর তীর ঘেষা চত্বর যা সানাম লুয়াং নামে পরিচিত। এখানেই রাজ রাজরাদের শেষ কৃত্য অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। রাজার মৃত্যুর পর তাঁর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেই সানাম লুয়াং চত্বরে দুপুর আর রাত দুবার এক সংগীতে অংশগ্রহন করেছিল প্রায় তিন লক্ষ থাই জনতা।
অশ্রুসজল চোখে রাজকীয় সংগীত গেয়েছিল লাখো জনতা
রাতের সেই সঙ্গীতে সবার হাতে ছিল একটি করে মোমবাতি যা অপার্থিব এক দৃশ্যের অবতারনা করেছিল। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা ও সেলুলয়েডের ফিতায় ধারন করেছেন প্রখ্যাত থাই জাতীয় শিল্পী ও চলচিত্র নির্মাতা MC Chatrichalerm yukol ।
সেদিন অন্ধকার রাতের আকাশ শুধু লাখো জনতার গানেই নয়, মোমবাতির আলোতেও উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল
শোকের কালো পোশাক আর অশ্রু সজল চোখে থাইবাসীরা রাজার প্রতি অসীম দরদ নিয়ে অন্তর দিয়ে গেয়েছিল সেই গান যা রাজকীয় সঙ্গীত নামে পরিচিত। কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সার্টিফিকেট দিচ্ছিলেন রাজা ভুমিবলের সব কাজের সংগী তার দ্বীতিয় কন্যা রাজকুমারী শ্রীনিধন মহাচক্রী। স্টেজে দাঁড়ানো অবস্থায় সে গান শুনে পিতার জন্য তাঁর দুচোখ বেয়ে নেমে এসেছিল অশ্রুধারা যা ছিল সকল প্রটোকলের পরিপন্থি। কিন্ত আবেগ বাঁধ মানেনি।
প্রজ্জলিত মোমবাতি তুলে ধরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র
আমাদের সাময়িক নিবাসের পেছন দিয়ে যে ওয়াটার ট্যাক্সি চলাচল করে তা আগেই এক পোষ্টে উল্লেখ করেছি। শুনেছি তার একটি পথ শেষ হয়েছে রাজবাড়ীর কাছে গিয়ে। সকাল আটটায় আমি আর সহ-পর্যটক রওনা হোলাম বেশ কয়েক বছর আগের দেখা সেই রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে।
থাইল্যান্ডের রাজপ্রাসাদের সামনে চৌরাস্তার এক দৃষ্টি নন্দন সড়ক দ্বীপ
ওয়াটার ট্যক্সি থেকে নেমে চওড়া রাস্তা পার হয়ে আসলাম , সেই পথে বেশ কিছু শেতাঙ্গ পর্যটক কালো পোশাক পড়ে আমাদের সংগী হয়েছিল । কিছুদুর এগুতেই দু তিনটা টেবিল পেতে সামনে খাবার দাবার সাজিয়ে কিছু মানুষ বসে আছে। উদ্দেশ্য সেখানে আসা লোকজনের মাঝে বিনে পয়সায় খাবার বিলি করা। আমরা দুটো সেদ্ধ ডিম আর দু গ্লাস পানি নিলাম । জানিনা কত পথ হাটতে হবে ।
শ্বেতশুভ্র অর্কিড বেশ অনেকখানি পথ আমাদের সাথী হয়ে চল্লো
পানি খেয়ে আবার হাটা শুরু করলাম সে পথে যে পথ চলে গেছে রাজবাড়ীর দিকে। পাশে পাশে চলেছে পবিত্রতার প্রতীক সাদা শুভ্র অর্কিডের সারি। যা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। রাস্তার মাঝখানটিতে সড়ক দ্বীপ সাজানো রয়েছে সদ্য প্রয়াত রাজা ভুমিবলের বিভিন্ন ছবি দিয়ে।
দুটি স্বর্নালী ময়ুরের মাঝে ফ্রেমে বাধানো হাস্যোজ্জ্বল প্রিয় মুখ
হঠাৎ পথের পাশে পিলারের গায়ে সবুজ তীর চিনহ দেয়া নাম ফলকে লেখা দেখলাম ১৪ই অক্টোবর ৭৩ মেমোরিয়াল । রাজপ্রাসাদের কাছে ১৪ ই অক্টোবর ৭৩ এ কি এমন ঘটেছিল যার জন্য তৈরি হয়েছে স্মৃতিসৌধ !
১৪ই অক্টোবর ১৯৭৩ সড়ক
ভাবতে ভাবতেই হাতের বাঁদিক ঘেষে গোলাকার এক স্থাপনার সামনে এসে হাজির হোলাম । চারিদিকে হলুদ আর লাল থাই ঐতিহ্যবাহী নকশায় তৈরী ঘরবাড়ীর পাশে সিমেন্ট আর কংক্রীটের অদ্ভুত এই স্থাপনাটি যেন বড্ড বেমানান। তাকিয়ে দেখি প্রাচীরের গায়ে থাই আর ইংরেজী ভাষায় লেখা আছে ১৪ই অক্টোবর ৭৩ মেমোরিয়াল ।
থাই আর ইংরাজীতে লেখা ১৪ই অক্টোবর ৭৩ মেমোরিয়াল ।
কি হয়েছিল সেই ১৯৭৩ এর ১৪ই অক্টোবরে? কি তার ইতিহাস জানার জন্য অনুসন্ধিতস্য মন উসখুস করে উঠলো । প্রবেশ দারে কোন দরজা নেই, সবার জন্য অবারিত, সবাইকে আহবান জানাচ্ছে “আসো দেখো আর শুনে যাও আমাদের ইতিহাসের এক নির্মম করুন কাহিনী”।
১৪ই অক্টোবর মেমোরিয়াল , দোতালার সিড়ি থেকে
সেখান দিয়ে প্রবেশ করতেই সিড়ি যার একটি ধাপ নীচের দিকে অন্যটি উপরের খোলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়েছে।আয়তকার সেই ভবনের দেয়ালে দেয়ালে রয়েছে অজানা এক ইতিহাস আর কাগজের পাতা থেকে কেটে নেয়া বাধানো সব ছবি। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলাম ছবিগুলো সাথে লেখা ছিল থাই ভাষায় সেই করুন ইতিহাসের বিস্তারিত বর্ননা যা আমাদের বোধগম্য ছিল না । দু এক জায়গায় খুব সামান্য ইংরাজী বর্ননা ও ছিল। সেখানে দেখাশোনা করে এমন উপস্থিত কিছু লোকের কাছ থেকে প্রশ্ন করে জানলাম এর বিস্তারিত ইতিহাস।
সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাত্র সমাজ ।
এই ইতিহাস জানার জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনায়। ১৯২৫ সালে সিঙ্গহাসনে বসার পর থেকেই থাইল্যান্ডের বিখ্যাত চক্রী বংশের ষষ্ঠ রামা রাজা প্রজাধীপক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন । তার মাঝে সবচেয়ে বড় ছিল অর্থনৈতিক সমস্যা । ১৯৩২ সনের জুন মাস, কিছু প্রগতিশীল ছাত্র এবং রাজার প্রতি আনুগত্যহীন কিছু সামরিক বাহিনীর সদস্য হাতে হাত মিলিয়ে গনতন্ত্রের দাবীতে সোচ্চার হয়েছিল। রাজা বিনা প্রতিবাদে তাদের দাবী মেনে নিলে থাইল্যান্ডের সাতশ বছরের পুরানো রাজতন্ত্র আর দেড়শ বছরের প্রাচীন চক্রী রাজবংশের নিরংকুশ ক্ষমতার পতন ঘটলো। সেই রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের ফলে প্রতিষ্ঠিত হলো গনতন্ত্র, প্রতিষ্ঠিত হলো নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র। এতে রাজার ক্ষমতা কিছু নিদৃষ্ট কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেলো, দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলো প্রধানমন্ত্রী ও তার অধীনস্থ জাতীয় সংসদ।
সস্ত্রীক শেষ নিরংকুশ ক্ষমতাধর রাজা প্রজাধীপক
এরপর থেকে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক নেতারা মাঝে মাঝে ক্ষমতায় আসলেও সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বার বার তাদের হটিয়ে দিয়েছে , গনতন্ত্রকে কবর দিয়ে চালু করেছে সামরিক শাসন আর তারাই হয়েছে দেশের হর্তাকর্তা।
১৯৭৩ সালের ১৪ই অক্টোবর থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে রচিত হলো এক নতুন ইতিহাস, লিপিবদ্ধ হলো এক কালো অধ্যায়। সেদিনের সেই ভয়ংকর ঘটনার সাথে মিল রয়েছে আমাদের দেশের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ের ছাত্র আন্দোলনের ঘটনাবলীর। মিল আছে সেসব শহীদের রক্ত আর আত্মদানের করুন কাহিনীর।
আমাদের শহীদ মিনার, আমাদের গর্ব
১৯৬৩ সনে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল থানোম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও সামরিক বাহিনী প্রধান সারিতকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে প্রধানমন্ত্রী পদ গ্রহন করেন । দশ বছর পর ১৯৭৩ সালে থানোম জাতীয় সংসদকে বিলুপ্ত করে নিজেকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে ঘোষনা করেন। সে সময় আমেরিকার সাথে ভিয়েতনামের যুদ্ধ চলছিল । থানোম আমেরিকাকে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করেন, তাদের থাইল্যন্ডের মাটিতে ঘাটি গাড়ার সুবিধা দেন। এমনকি থাই সৈন্যবাহিনীকে সেই যুদ্ধে আমেরিকার পক্ষ হয়ে অংশ গ্রহন করতে বাধ্য করেন। থানোমের এই অনৈতিক কার্যকলাপ থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক এমনকি সামাজিক অবস্থাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলছিল।
থামাসাট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের ছবি আর বিবরণ।
৭০ এর প্রথম দিক থেকেই উন্নত বিশ্বে পড়াশোনা শেষে ফিরে আসা ছাত্র ছাত্রী ছাড়াও থাইল্যান্ডের মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠতে থাকে। আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সামরিক শাসনের অধীনে থাকা জনগন অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ছিল ব্যাগ্র। এরই ফলে বিভিন্ন কোন্দলে বিভক্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যবৃন্দ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ ও বিদ্বেষ ঘনীভুত হতে শুরু করে । যা পরিনতি লাভ করে ১৯৭৩ এর ১৪ই অক্টোবর ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।
ইংরাজীতে লেখা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের ঘটনাবলী
থাইল্যান্ডের রাজপ্রাসাদ আর তার খুব কাছেই সেখানকার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থামাসাট। ১৯৭৩ এর জুন মাসে থামাসাট বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রকে সরকার বিরোধী কার্যকলাপের জন্য বহিস্কার করা হলে এলাকা জুড়ে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে । এই বিক্ষোভ আরো উসকে উঠে যখন সে বছরের ৫ই অক্টোবর কয়েকজন ছাত্র নেতাকে গ্রেফতার করা হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল থিরায়ুথ বুনমি। ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সামরিক সরকার তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় । কিন্ত ১৩ই অক্টোবর তাদের পুনরায় গ্রেফতার করা হলে পরিস্থিতি দাঁড়ায় আগুনে ঘৃতাহুতির মত।
থাই ভাষায় লেখা ১২ ই অক্টোবরের বিবরন যা আমরা বুঝতে পারি নি
আর এরই ফলে ১৪ ই অক্টোবর এক রক্তাক্ত বিপ্লবের সুচনা ঘটে। ছাত্রনেতা সহ তাদের তেরজন সহপাঠীদের মুক্তির দাবীতে সেদিন থামাসাট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, বেড়িয়ে আসে রাস্তায়।অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও এই আন্দোলনে অংশ নেয় সামরিক শাসকদের দুঃশাসনে নিস্পেষিত সাধারন জনগন।
এই সেই বিখ্যাত ডেমোক্রেসী মনুমেন্ট যা নির্মিত হয়েছিল নিরংকুশ রাজতন্ত্র পতনকে স্মরন করে ।
রাজপ্রাসাদের কাছেই বিখ্যাত ডেমোক্রেসি মনুমেন্টকে ঘিরে প্রায় তিন লাখের উপর মানুষ সেদিন সমবেত হয়েছিল, যা সেদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের গন জমায়েত । এটা হলো সেই মনুমেন্ট যা নির্মিত হয়েছিল ১৯৩২ সনে থাইল্যান্ডের নিরংকুশ রাজতন্ত্রের পতন আর গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্মরনে।
জনতার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড ছুড়ে মারছে এক সামরিক বাহিনীর সদস্য
সেই বিশাল জনতার বিক্ষোভ দমন আর ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বাহিনী ব্যার্থ হলে তলব করা হলো সৈন্যবাহিনীকে।তারা আধুনিক সমরাস্ত্র ট্যাংক, হেলিকপ্টার আর সশস্ত্র সৈন্যবাহিনীর বিশাল বহর নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র ছাত্র ও জনগনের উপর। উপরের নির্দেশে নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে ছাত্র-জনতার উপর।
১৩ই অক্টোবর ১৯৭৩ এর বিবরন লেখা
তাদের একতরফা আক্রমনে বিক্ষোভরত ছাত্র জনতার অনেকেই লুটিয়ে পড়ে রক্তস্নাত রাস্তায়। কেউবা আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পালাতে থাকে, রাজপ্রাসাদ ঘিরে থাকা লেকের পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে অনেকে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করে ছাত্র জনতাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য রাজা ভুমিবলের নির্দেশ খুলে দেয়া হয় তার রাজকীয় প্রাসাদ চিত্রলদার প্রধান ফটক।সেখানেও আশ্রয় নেয় বিক্ষোভকারী অনেকেই।
জনতার উপর নিপীড়নের ছবি
বলা হয়ে থাকে এর মাঝে অনেক সাহসী বীর জীবনের মায়া তুচ্ছ করে পথের উপর গাছে ফেলে তাদের দিকে এগিয়ে আসা ট্যাংকের গতিরোধ করেছিল। সরকারী হিসাব অনুযায়ী সেই কলংকময় দিনে ৭৭ জন নিহত হয়েছিলো আর আহতের সংখ্যা ছিল ৮০০ র ও বেশি ।
নিরস্ত্র ছাত্র আর জনগনের উপর আক্রমন
নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর সেনাবাহীনির এই এক তরফা আক্রমনের পেছনে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল বলে বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন জনের কাছে এ ঘটনারও বিভিন্ন রকম বর্ননা রয়েছে। তবে যাই থাকুক থাইবাসীরা আজও সামরিক বাহিনীর এই ন্যাক্কারজনক এবং একপেশে আক্রমনকে সম্পুর্নরূপে যুক্তিহীন বলেই মনে করে থাকে।
এ ঘটনার পর পরই রাজা ভুমিবল জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে সামরিক ও পুলিশ বাহিনী প্রধান যারা আবার পরস্পরের আত্মীয় ছিল তাদের পদত্যাগের নির্দেশসহ দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে প্রধান ভুমিকা রাখেন।
রাজা ভুমিবল ,দেশের বিপর্যয়ে সবসময় যিনি ছিলেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক স্বরূপ
১৯৭৫ সালের জানুয়ারী মাসে থামাসাট ইউনিভার্সিটির রেকটরকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হলো। তিরিশ বছর পর একজন বেসামরিক ব্যাক্তি প্রধানমন্ত্রী হলেন। তাঁর হাত ধরে দেশে এক দীর্ঘ এবং স্থিতীশিল গনতন্ত্র আসবে এটাই ছিল থাইবাসীর প্রত্যাশা।
আন্দোলনটি যেমন হঠাৎ করেই শুরু হয়েছিল তেমনি দ্রুতই মিলিয়ে গিয়েছিল থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে । নেতাসহ ছাত্র ছাত্রীরা ফিরে গিয়েছিল তাদের শিক্ষা জীবনে। এটাকে পুজি করে তারা অন্যান্য দেশের মত ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েনি।
আন্দোলনে যারা মৃত্যুবরন করেছিলেন সেইসব হতভাগ্যের ছবি
এই ঘটনার বিশ বছর পর গনতন্ত্রের জন্য প্রান দিয়েছিল যারা তাদের স্মরনে এই মনুমেন্টটি তৈরী হয় । এই স্থাপনাটির মাঝখানে খাড়া উচু হয়ে আছে এক স্মৃতিস্তম্ভ । সেখানে লেখা আছে সেইসব হতভাগ্যের নাম যারা ১৯৭৩ এর ১৪ই অক্টোবর প্রান হারিয়েছিল ।
এর নীচ তালায় রয়েছে ছোট একটি স্থান যাতে প্রদর্শন করা হয়েছে সেদিনের ঘটনার টুকরো টুকরো ছবি ।
গ্যালারীতে সাজিয়ে রাখা সেই আন্দোলনের ছবি
এদেশের ছাত্র আন্দোলনের এক অজানা ইতিহাস জানা হলো আমার । যুগে যুগে দেশে দেশে ছাত্ররাই যে সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনের সুচনাকারী তা আবার প্রমানিত হলো এই স্মৃতিস্তম্ভ দেখে ।
রাজা ভুমিবলের মৃত্যুর পর তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাইল্যান্ডের অত্যন্ত জনপ্রিয় রক গায়ক সহোদর আসানি ও ওয়াসান ছোটিকুলের গাওয়া একটি গান আপলোড করলাম ।
https://youtu.be/miKh4S0q9Ww
৪টি ছবি ছাড়া বাকি সব আমাদের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনে তোলা । কিছু আছে টিভি থেকে সরাসরি তুলেছি ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৩২