"তা-প্রহম" বৌদ্ধ মঠ
সে অনেক অনেক বছর আগের কথা সে সময় দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার দেশ ক্যম্বোডিয়ার বর্তমান সিয়েমরেপ ছিল এক উন্নত সভ্যতার পীঠস্থান। এলাকাটি ছিল বিখ্যাত খেমার রাজবংশের অধীন। ১১২৫ খৃষ্টাব্দের কোন এক দিনে সেখানকার রাজা দ্বিতীয় ধরাইন্দ্রবর্মন এবং রানী শ্রীজয়রাজকুদমনির ঘর আলো করে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত যে পুত্র সন্তানটি ভুমিষ্ঠ হলো সেই হলো খেমার রাজ বংশের ইতিহাসের সবচেয়ে পরাক্রমশালী এবং বিখ্যাত রাজা সপ্তম জয়বর্মন। বিচক্ষন জননন্দিত, প্রজাহিতৈষী, ধর্মপরায়ন এই রাজাকে পরবর্তীকালে তার পারিষদরা মহাপরমসৌগত উপাধিতে সন্মানিত করেছিল। তারই সৃষ্ট এক অনন্য নিদর্শন "তা প্রহম" রাজ বিহার ছিল আমাদের পরবর্তী গন্তব্য।
তা- প্রহমের সীমানা প্রাচীর
এংকরভাট থেকে বেরিয়ে যখন আসলাম সুর্য্য তখন বেশ কিছুটা পশ্চিম দিকে ঢলে পড়েছে। টুকটুক চালক আমাদের নিয়ে গেল আগেই ঠিক করে রাখা সবুজ গাছে ঢাকা এক রেস্টুরেন্টে। চালক টোম হাত দিয়ে ইশারায় দেখালো, "পথের ঐ পাশে যে লাল পাথরের সীমানা প্রাচীর দেখছো সেখানেই আমাদের গন্তব্য"। বাইরে প্রচন্ড রোদ, সমস্ত শরীর যেন পুড়ে যাচ্ছে , দেয়ালের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে তাড়াতাড়ি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরায় ঢুকে টেবিলে বসলাম।
স্থানীয় সেই রেস্তোরা যেখানে দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম
মেনু দেখে প্লেন ভাত, স্থানীয়ভাবে রান্না করা মুরগীর তরকারী আর নারকেল দিয়ে রান্না করা মাছের অর্ডার করলাম। টেবিলে দেয়া মাত্র সেই বিজাতীয় স্বাদের খাবারই এক মুহুর্তে চেটেপুটে খেয়ে নিলাম দুজন। সেই রেস্তোরার সব খদ্দেরই ছিল ট্যুরিষ্ট।
নারিকেল দিয়ে রান্না করা মাছ তখনো এসে পৌছেনি
খেয়ে দেয়ে বাইরে এসে সুন্দর সবুজ গাছ আর বিভিন্ন অর্কিডে ঢাকা সেই রেস্তোরা প্রাঙ্গনে কিছু ঘুর ঘুর করার পর রওনা হোলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের পানে। চালক কাম গাইড মিঃ টোম আমাদের নিয়ে রওনা দিল এই পথে ।
এমন ঝকঝকে রাস্তা দিয়ে চলেছি পাশে পাশে চলেছে লাল পাথরের দেয়াল
শত শত বছরের রোদ আর বৃষ্টিতে ক্ষয়ে যাওয়া লাল পাথরের দেয়াল আজও দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে ।
রাজা সপ্তম জয়বর্মন এর মুর্তি ,এই ছবিটি নেট থেকে নেয়া
ইতিহাস থেকে জানা যায় রাজা সপ্তম জয়বর্মন জীবনের প্রথম দিকে রাজধানী যশোধরাপুর অর্থাৎ বর্তমান এংকর নগরীর বাইরেই ছিলেন। কিন্ত ১১৭৭ ও ৭৮ সনে চাম রাজা জয় ইন্দ্র বর্মন স্বয়ং তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে মেকং নদী বেয়ে তুনলে সাপ হ্রদ পাড়ি দিয়ে ক্ষীন তোয়া সিয়াম রেপ নদী পথে খেমার সাম্রাজ্য আক্রমন ও দখল করে নেন ।
বর্তমানে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাঁধা পরা সিয়াম-রেপ নদী এখন চিকন একটি খালে পরিনত। আমরা যেদিন পৌছালাম সেদিন ছিল বিখ্যাত ওয়াটার ফেষ্টিভ্যাল। আর সে উপলক্ষে নৌকা বাইচ হচ্ছিল, আমরা দর্শক হিসেবে হাজির ছিলাম ।
সেই এংকরভাট আক্রমনের পর থেকেই বার বার চামদের আক্রমনে খেমার রাজ্য ছিল পর্যদুস্ত। কিন্ত এবার রাজা সপ্তম জয়বর্মন তার প্রশিক্ষিত সৈন্য নিয়ে চামদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং সম্পুর্নরূপে তাদের পরাজিত করে। ফলে খেমার সাম্রাজ্য চিরদিনের জন্য চামদের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে। এই যুদ্ধে রাজা সপ্তম জয়বর্মনের গৌরবময় সাফল্যের গাথা খোদাই করা আছে এংকরথমের বিখ্যাত সৌধগুলোর দেয়ালে দেয়ালে ।
রাজাধানী এংকরথমের প্রধান মন্দির বায়ন এর দক্ষিন গ্যালারীর দেয়ালে দেখা যাচ্ছে চাম রাজার সাথে নৌযুদ্ধে রত রাজা সপ্তম জয়বর্মন , পানিতে পড়ে আছে খেমার সৈন্যদের মৃতদেহ
জয়লাভের পর রাজা সপ্তম জয়াবর্মন ১২ শ শতাব্দীর শেষভাগ এবং ১৩ শতাব্দীর শুরুতে এংকরভাট থেকে সামান্য দুরে নতুন করে গড়ে তোলেন খেমার বংশের শেষ রাজধানী এংকরথম। সেই লাল পাথরের দেয়াল ঘেরা রাজধানীর বুকে অনিন্দ সুন্দর সৌধরাজি যা কালের গর্ভে অনেকটাই হারিয়ে গেছে তারপরও যতটুকু আছে তা আজও মানুষকে বিস্মিত করে তোলে। আর প্রতিদিন টেনে আনে শত শত পর্যটককে যেমন করে আলোর দিকে ছুটে চলে পতঙ্গের ঝাক।
ভেঙ্গে চুড়ে পরে থাকা বর্তমান প্রধান প্রবেশ পথ,
এই নতুন রাজধানী এংকরথমের মাঝে যে সব বিখ্যাত সৌধ রয়েছে তার ভেতর “তা-প্রহম” বা রাজবিহার উল্লেখযোগ্য। মূলত রাজপরিবারের সম্মানার্থে নির্মিত এই মন্দিরটির মূল বা প্রধান মুর্তির ইমেজটিতে রয়েছে রাজমাতা শ্রীজয়রাজকুদমনির আদল ,যিনি জ্ঞানের মনুষ্য প্রতীক “ প্রাজ্ঞ-পারমিতা” কে প্রতিনিধিত্ব করছেন এখানে ।
মা শ্রীজয়রাজকুদমনির উদ্দেশ্যে নিবেদিত মঠ "তা -ফ্রম"
আবার ভিন্ন মতানুযায়ী তিনি এই মন্দিরটি একান্তই মাকে উৎসর্গ করেছিলেন সপ্তম জয়বর্মন। যেমনটি ১১৯১ সালে চামদের বিরূদ্ধে যুদ্ধে জয়ের স্থানে স্মারক হিসাবে ৭মজয়বর্মন “ প্রি খান” নামে যে মন্দির ও সন্যাসী মঠ নির্মান করেছিলেন তা ছিল একান্তই তার পিতাকে উতসর্গকৃত। কারন তা-প্রহমের মতো "প্রি খান" এর মূল মূর্ত্তির ইমেজটি বোধিস্বত্তার আদলে হলেও আসলে রাজপিতা ধরাইন্দ্রবর্মন এরই প্রতিরূপ ।
পিতা ধরাইন্দ্রবর্মনকে উৎসর্গ করা প্রি খান মঠ
রাজধানীর প্রথম সৌধ “তা-প্রহম”কে রাজা জয়বর্মন গড়ে তুলেছিলেন একটি মহানামা বৌদ্ধ মঠ এবং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে । তার মৃত্যুর পর এই মঠের আর কোনও সংস্কার করা হয়নি এর কারন তাঁর উত্তরাধিকারী ছিল শৈব ধর্মের অনুসারী । সুতরাং বুদ্ধের এই মঠ পড়ে থেকেছে অবহেলায় ।এখানেও ভারতীয় স্থাপত্যের ভাবধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায় । এর অনন্য গঠনবৈচিত্র ও বৈশিষ্টের কারনে ১৯৯২ সালে "তা প্রহম" কে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নেয়া হয়েছে।
এমন লাল মাটির পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছি
ডান দিকে পড়ে থাকা এক ভগ্ন মন্দির
পরিত্যক্ত ধ্বংসাবশেষে গজিয়েছে জঙ্গল আর গাছ । যে জঙ্গল আর বিশাল শিকড়ওয়ালা গাছের কারনেই বিখ্যাত চলচ্চিত্র “ টম্ব রেইডার” এর স্যুটিং এই “তা-প্রহম” এর চত্বরেই করা হয় ।আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, টম্ব রেইডারের লারা ক্রফট একটি প্রাচীন আর্টিফ্যাক্ট (রেলিক)যা কিনা রহস্যময় আলোক ত্রিভুজ এর একটি অংশ তা খুঁজতে কম্বোডিয়া আসেন ?
এঞ্জেলিনা জোলির এই ছবিটি নেট থেকে নেয়া
কম্বোডিয়ার একটি কবরে ( টম্ব ) নাকি সেটা লুকিয়ে রাখা হয়েছে ! টম্ব রেইডার ছবির সেই কবরের মতো অন্ধকার আর নির্মম শীতল সেটটি পড়েছে তাই “তা-প্রহম”য়েই । রহস্য ছবির রহস্যময় আর ভৌতিক লোকেশন হিসাবে “তা-প্রহম” আপনাদের রূদ্ধশ্বাস করে দিয়েছে নিশ্চয়ই ।
পাথর বাধানো মূল পথ
১৭শ শতকে খেমার রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হলে "তা-প্রহম" পরিত্যক্ত হয় আর চারশত বছর ধরে পরে থাকে অবহেলায় । ২১শ শতকের শুরুতে এর সংরক্ষন আর পুনরুদ্ধার শুরু হলে সিদ্ধান্ত হয় তা-প্রহমকে যে ভাবে পাওয়া গেছে সে ভাবেই রেখে দেয়া হবে । কারন গাছ আর জঙ্গল যে ভাবে তাকে জড়িয়ে আছে সে দৃশ্য প্রকৃতির নান্দনিক ছবির মতোই । তবুও কিছু কিছু রক্ষনাবেক্ষনের কাজ করা হয়েছে তা-প্রহমকে একেবারেই ধ্বংশ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে ।
"তা- প্রহম"
এবার আরো সামনে
বিপুল সংখ্যক ভ্রমনপিপাসুদের পদভারে জর্জরিত হয়ে যেন তা-প্রহম ধুলিস্যাৎ না হয়ে যায় তাই ২০১৩ সালের দিকে কাঠের হাটাপথ, প্লাটফর্ম আর দড়িবাঁধা রেইলিঙ দিয়ে একে সুরক্ষিত করা হয়েছে । সিয়াম -রেপ এসেছে আর তা-প্রহম যায়নি এমন পর্যটকের দেখা মেলা ভার ।
পুরনো পথের উপর কাঠের পাটাতন বিছিয়ে নতুন পথ
ক্যম্বোডিয়া এক সময় ফ্রান্সের অধীনে ছিল যার ফলে এখানকার অধিকাংশ পুরাতাত্বিক নিদর্শন যেমন ভাস্কর্য্য থেকে শুরু করে শিলালিপি অনেক কিছুই বর্তমানে ফরাসী যাদুঘরের শোভা বৃদ্ধি করছে। এর মাঝে সংস্কৃত ভাষায় লেখা যে শিলালিপিটি আজও সেখানে রয়ে গেছে, "তা-প্রহম" রাজবিহার সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারনা দেবে আপনাকে । শিলালিপিতে খোঁদাই করা আছে - ৩১৪০ টি গ্রামীন জনপদ নিয়ে গড়ে উঠেছে "তা-প্রহম" । ১৮ জন মহান ধর্মযাজক সহ ৭৯৩৬০ জনের এক বিশাল লোকবল লেগেছিল এই বিশাল মন্দির এলাকাকে দেখাশোনা করার জন্য । এদের তত্ত্বাবধানে ছিলো ২৭৪০ জন রাজকর্মচারী আর ২২০২ জন সহকারী । ছিলো আনন্দদানে নিয়োজিত ছয় শতাধিক নর্তকী ।
এই জনপদেরই কোন এক গৃহ আজ বৃক্ষের করাল গ্রাসে
মন্দিরের নিজস্ব সম্পদের মধ্যে ছিলো প্রচুর স্বর্ণ নির্মিত পাত্র যাদের ওজন ছিলো ৫০০ কেজি । ৩৫ টি হীরকখন্ড, ৪০৬২০ টি মুক্তা, ৪৫৪০ টি দুর্লভ রত্নরাজি, চীন থেকে আনা ৮৭৬ খন্ড বাহারী পর্দা , ৫১২ টি সিল্কের বিছানা ।যদিও সবাই এটা মেনে নিতে চাননা । ভেবে থাকেন রাজার শান শওকত বোঝাতে বাড়িয়ে বলা আছে সেই শিলালিপিটিতে ।
মঠের এপাশ থেকে
আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড মি টোম আমাদের গেটের কাছে নামিয়ে দিয়ে বল্লো 'তোমরা ঘুরে ঘুরে দেখো, আমি এখানেই অপেক্ষা করছি । তাকে না নেয়া যে কত বড় ভুল হয়েছিল তা পরে বুঝতে পেরেছি । ভাঙ্গা একটি তোরন পেরিয়ে মাটির পথ বেয়ে চলছি তো চলছি। মোটা মোটা গাছের শেকড় এ পাশ থেকে ওপাশে চলে গেছে ।
এমন সব বিশাল গাছ
এক বয়স্ক পর্যটক বিস্মিত নেত্রে দূরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভগ্নপ্রায় তা প্রাহমকে দেখতে গিয়ে এমনি এক শেকড়ে পা বেধে পড়ে গেল মাটিতে। তার ছিলে যাওয়া হাতের কনুই থেকে বেয়ে পড়া রক্তের ধারা দেখে আমরা আর মাটি থেকে চোখ তোলার চেষ্টা করিনি । আশে পাশে দুই একজন শাল বিক্রেতা মেয়ের পিড়াপিড়ি এড়িয়ে অবশেষে মুল মন্দিরের সামনে আসলাম । বড় বড় পাথর বিছানো এবরো খেবরো পথের সামনে এসে দাড়ালাম ।
মুল মঠের দিকে এগিয়ে চলেছি
মন্দিরের এই প্রবেশ পথের উপরেও ভারতীয় খিলানাকৃতির দরজা এবং কারুকাজ লক্ষ্য করা যায় । যা আমরা আগেও এংকরভাটেও দেখেছি
বা দিকে চলে যাওয়া করিডোর । ছাদটি ভাঙ্গা থাকায় আলো এসেছে ভেতরে ।
করিডরের পথ না ধরে এমন দরজা পেরিয়ে ভেতরের আঙ্গিনায় ।
এরপর চোখ তুলে যা দেখলাম তাতে মনে হলো তা-প্রহমের সবটাই যেন ভয়ঙ্কর আরণ্যক । ভেঙ্গে পড়া মন্দির আর দানবাকৃতির গাছের ফাকে বাতাস যেন এখানে খেলা করে যায় রোমাঞ্চ মেখে । আপনার চারপাশে আপনি দেখবেন প্রকৃতির দ্বৈত খেলা । পাথরের বুক চিরে দৈত্যের মত ডুমুর, বট আর কাপোক গাছ ডালপালা ছড়িয়ে মাথা তুলে আছে । তাদের সাপের মতো পেঁচানো বিশাল বিশাল শেকড় যেমন বিদির্ণ করেছে পাথরের বুক তেমনি আষ্টেপৃষ্ঠে আবার বেঁধেও রেখেছে মমতায় । আলো আধারির খেলায় ভৌতিক এক পরিবেশ আপনাকে গা ছমছম ভাব এনে দেবে ।
এই সেই বিখ্যাত শিকড় যা এক দিকে বিদীর্ন করছে আরেক দিকে জড়িয়ে রেখেছে
আর্কিওলজিষ্টরা রড দিয়ে শেকড় বেধে মঠ রক্ষা করছে , তথাপি কেটে ফেলছে না আমাদের দেশের মত
তথ্য সুত্র অনুযায়ী ২৬০ টি দেবতামূর্ত্তি, ৩৯টি চূড়া যুক্ত টাওয়ার, ৫৬৬টি সারিবদ্ধ নীচু ধাঁচের বাসগৃহ সহ বিশাল প্রাঙ্গন জুড়ে তৈরী তা-প্রহম দৈর্ঘে ১০০০ মিটার আর প্রস্থে ৬০০ মিটার লাল মাটির আয়তাকার দেয়ালে ঘেরা এক মন্দির । আর এই “ল্যাটেরাইট” দেয়াল সহ স্থাপনাগুলোর সবটুকুর দেখা না মিললেও জঙ্গলে ঘেরা এর ধ্বংশাবশেষ আপনাকে ভয় ধরিয়ে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট । এর দূর্ভেদ্যতার জন্য মন্দিরের সব জায়গাতেই আপনি যেতে পারবেন না । একাকী কেউ হারিয়ে যেতে পারেন যে কোনও সময় । যেটুকুই বা যেতে পারবেন তাও সরু অন্ধকারাচ্ছন্ন করিডোর ধরে । সেখানেও আপনাকে টর্চ বা সাথে কোনও গাইড নিয়ে যেতে হবে ।
সরু অন্ধকারাচ্ছন্ন করিডোর, অনেকে সাহস করে যাচ্ছে । আমি আর সাপের ভয়ে এগুলাম না
চারিদিকে এমন ভাঙ্গাচোড়া ভবন ।
আপনার নিজেকে টম্ব রেইডারের লারা ক্রফট এর মতোই মনে হবে যখন মাকড়সার জালের মতো বিছানো বিশাল বিশাল শেকড়ের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা জঙ্গলাচ্ছন্ন ক্ষয়িষ্ণু স্থাপনাগুলোর অন্ধকার সরু গলিপথে আপনি একটি ট্রাভেল কীট পিঠে ফেলে , এক হাতে একটি কম্পাস আরেক হাতে টর্চ জ্বেলে দেখতে দেখতে এগুবেন । গল্প নয় , আসলেই ভ্রমনকারীদের এভাবে সতর্কতার সাথেই দেখতে হবে যেটুকু দেখার । সতর্কবাণীতে একথাই লেখা আছে ।
দেয়াল ঘেষে এগিয়ে চলেছি আরো ভেতরে
মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা গাছ
বৃক্ষ দানব
এই গাছ আরেকটি সৌধকে গ্রাস করেছে
কাঠ দিয়ে বাধানো পথ খানিকটা আবার পাথুরে পথে চলতে চলতে চারিদিকে তাকিয়ে আপনার মনে হবে যা আমিও আগেও বলেছি , এখানে গাছ আর পাথর যেন পরষ্পরের সাথে শত্রুতায় মেতে আছে । কে কাকে ধ্বংস করবে ? আবার এও মনে হতে পারে যে, গাছগুলি সমস্ত মন্দিরটিকেই যেন ভেঙে পড়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে বুকে করে রেখেছে পরম আদরে ।
দেয়ালে গাছ
সেই নিঃশব্দ বাতাসের আনাগোনা আর ঝিমধরা মৌনতায় অবগাহন করে যখন ফেরার পথ ধরেছি তখন আর পথ খুজে পাচ্ছিলাম না । শুধু যে সরু অন্ধকারাচ্ছন্ন করিডোরেই পথ হারাবেন তাই নয় । সেই বিশাল প্রাঙ্গন জুড়ে পড়ে থাকা বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো আর আদিম অরন্যের মাঝে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন । অবশেষে মুল প্রাঙ্গনে এসে দেখি বেশ কিছু মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তবে বেশিরভাগই ভেঙ্গে চুড়ে আছে ।
মাথার উপর ক্রেন তারই মাঝে পথ খুজে খুজে এগিয়ে চলেছি ভেতরের প্রাঙ্গনের
পাথরের স্তুপ
"তা- প্রহম" মন্দিরের ভেতরের প্রাঙ্গনে ক্ষুদ্রতর মন্দির দুইটি রাজগুরু জয়মঙ্গলার্থ ও তার সহোদর ভ্রাতার নামে উৎসর্গিত ।
সেই মন্দিরেরই আরেকটি ছবি
এমন অনেক ছোট খাটো মন্দির নাকি বাসস্থান কে জানে ? কত লোকইতো থাকতো এখানে ।
নৃত্যশিল্পীদের বাসভবন নাকি পুরোহিতের অজানাই রয়ে গেল
বার বার ঘুরে ঘুরেও আমাদের টুকটুক যেই গেটে অপেক্ষারত সে পথ আর খুজে পাচ্ছিলাম না । পথের দিক নির্দেশনাও খুব কম । নিরাপত্তা ও রক্ষনাবেক্ষনকারীরাও যে কোথায় তাদেরও খবর নেই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশাল এংকরভাট দেখে যথারিতী ক্লান্ত শ্রান্ত আমরা দুজনা অনেকক্ষন যাবার পর দেখি লেখা রয়েছে এক্সিট।
চমকে গেলাম এক্সিট লেখা দেখা দেখে । এপথ তো আমাদের নয় ।
কিন্ত আমাদেরতো যেতে হবে এন্ট্রি পথে। সে সময় আমি উপভোগের চেয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছিলাম । যাই হোক আবার ঘুর পথে রওনা দিয়ে বেশ কিছুক্ষন ঘুরে ঘুরে পরে আমাদের নির্ধারিত পথ খুজে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম ।
আবার এই দরজা দিয়ে পথের খোজে ।
যদি সত্যি হারিয়ে যেতাম সেই পাথর আর অরন্যে ঘেরা প্রাচীন মন্দিরে তাহলে হয়তো এত কাব্য করে এই লেখাটি লিখতে হতোনা আর আপনারাও জানতে পারতেন না এঞ্জেলিনা জোলি আর আমি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ।
"তা প্রহম" রাজ বিহারের নকশা
প্রবেশের সময় পথের ধারে এই নকশাটি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে এসেছি কিন্ত সেই বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠা "তা- প্রহম" এর রহস্য ভেদ করা সত্যি দুঃসাধ্য ।
বিদায় রহস্যময়ী ও রোমাঞ্চে ভরপুর "তা প্রহম "
উল্লিখিত দুটি ছবি ছাড়া সব আমাদের ক্যমেরায় তোলা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৬