এক দিকে সুউচ্চ পাহাড় আরেকদিকে অনেক নীচে টাইরেনিয়ান সমুদ্র সেই ভয়ংকর পাহাড়ী পথ দিয়ে আমাদের এসি বাসটা ছুটে চলেছে এক নন্দন কাননের উদ্দেশ্যে যার নাম সোরেন্টো। ডান দিকের সেই সমুদ্রের দিকে চোখ মেলতেই নীল সাগর আমাদের গা ঘেষে ঘেষে ছুটে চলেছে সেই সোরেন্টোর উদ্দেশ্যে। কিন্ত যা আমাকে চমকিত করলো তা হলো সেই সমুদ্রের পানি যা ছিল অত্যন্ত গভীর নীল রঙ। পানি যে এমন নীল হতে পারে ছবি ছাড়া দেখিনি কখনো।
অদূরেই ভয়ংকর ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখ থেকে গুমগুম আওয়াজ এতদুর পর্যন্ত ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে কোনো এক জীয়ন কাঠির ছোয়ায় ঘুম ভাঙাবে তার অপেক্ষায় আছে যেন এই ভয়ানক দৈত্য।
একটু দুরেই তাকিয়ে দেখি জেটিতে ক্যাপরিদ্বীপে যাওয়া-আসার জাহাজগূলোতে ট্যুরিস্টরা উঠছে নামছে।
A3 নেপলস-পম্পেই সোলার্নো হাইওয়ে রুট ধরে আমরা সোরেন্টোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। খাড়া পাথুরে পাহাড় অতিক্রম করার জন্য কত বিরাট বিরাট টানেলের ভেতর দিয়ে যে যাচ্ছিতা বলতে পারবোনা।বাতি জালানো আলো ঝলমলে সেই টানেলের বাঁকগুলোর ভেতর দিয়ে অনেক স্পীডে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িগুলো যখন যাচ্ছিল তখন ভীষন ভয় করছিল আমার।কারন এখানে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কি হবে সেই ভেবে। বেশ কয়েকটা বিশাল বিশাল টানেল অতিক্রম করার পর পাহাড়ের এপারে আসলাম।
সমুদ্রের গা ঘেষে পাহাড় আর পাহাড়ের পাশ কেটে তৈরী হাইওয়ের ডানদিকে রেলিং এর ঠিক পাশেই একেবারে খাড়া নীচে নেমে গেছে
পাথুরে বেলাভুমি বরাবর। সেই বড় বড় পাথরের বোল্ডারে টাওয়াল বিছিয়ে সুর্য্যস্নানে মেতেছে তরুন তরুনীর দল। স্বাদা ফেনা তোলা নীল পানির তরংগ বিভংগে আছড়ে পরছে শীর্ন সাদা বালু তটে তার সেই নৈসর্গিক দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করার মতন নয়। দু এক বার গাইড বাস থামিয়ে আমাদের সুযোগ করে দিল তা উপভোগ করার।
সোরেন্টো ভুমধ্যসাগরের তীরে হওয়ায় প্রচুর সাইট্রাস জাতীয় ফলের গাছ দেখা যাচ্ছিল রাস্তার দুপাশে।কমলা রঙের কমলা ভর্তি গাছগুলো ফলভারে আনত হয়ে আছে সাথে বড় বড় লেবু । ছোটো ছোটো টবের মধ্যেও ধরে আছে অজস্র লেবু, কমলা। এগুলো যে শুধু রসনা তৃপ্তিকরবে তা নয় বাগানের সৌন্দর্যের জন্যও দারুন এবং এই উদ্দেশ্যে ও অনেকে গাছগুলো বুনে থাকে।ফলগুলো, পাতাগুলোই শুধু চকচকে নয়, গাছের নীচটাও ঝকঝকে পরিস্কার করে রেখেছে নেপলসবাসীরা।এছাড়াও ছিল অসংখ্য জলপাই আর ডুমুরগাছ। পথের পাশে স্হানীয় অনেকেই এই আকর্ষনীয় ফল নিয়ে বসে আছে বিক্রির জন্য।আমরা ভীষন মজার সেই মিস্টি ডুমুর কিনে খেলাম।
বাস ভর্তি নানান দেশের ট্যূরিস্ট, হাসি খুশী রসিক বুড়ো গাইডটা বিভিন্ন গল্প করছে আমাদের সাথে। ওনার কথা শুনতে শুনতে আর চোখ ভরে সেই সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সোরেন্টো এসে পৌছালাম ঘন্টা খানেকের মধ্যেই।