-কিরে আজ এত দেরিতে বের হচ্ছিস!
মায়ের কথা শুনে সাকিব ঘুরে তাকাল। আজ একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। ঘুম থেকে দেরিতে উঠলে এমন হয়। সাকিবের আজ রাত হয়েছে দেরিতে। দেরিতে রাত হয়েছে বললে ভুল হবে। বলতে হয়, ঘুমাতে দেরি হয়েছে। তাই উঠতেও দেরি হয়েছে।
-এমনি। ঘুম থেকে দেরিতে উঠেছি।
সাকিব মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। মায়ের কাছ থেকে ব্যাপারটা লুকানোর চেষ্টা করছে। তবে তার মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ওর মনে একটা ব্যাপার খুব করে ঘুরপাক খাচ্ছে। রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি। চিন্তাটা কিছুতেই মাথা থেকে ঝাড়তে পারছেনা।
সাকিব ক্যম্পাসে এসে লামিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। লামিয়াকে দুইবার ফোন দিলেও রিসিভ করেনি। কি কারনে ধরল না সেটাও চিন্তার বিষয়। তবে কোন জরুরি কাজে ব্যাস্ত আছে। আবিরকে দেখে এগিয়ে গেল।
-কিরে আবির! লামিয়া আজকে ক্যম্পাসে আসেনি?
আবির ঘুরে তাকিয়ে একটু অবাক হল। লামিয়া সাকিবের কাছের ফ্রেন্ড। কাছের কোন মেয়ে বন্ধু বলতে সেই। লামিয়ার খবর সে ভাল জানার কথা। কিন্তু জানেনা! আবির কাছে এসে বলল
-লামিয়া তো রাফির সাথে ওদিকে গেল!
-রাফির সাথে! চল যাই।
আবিরের সাথে সাকিব হাটছে। ক্যম্পাসের ওদিকটায় দুজনকে পাওয়া যেতে পারে।
-কিরে তুই এখানে! আমার ফোন রিসিভ করিস নি কেন! কতবার ফোন দিয়েছি দেখেছিস!
সাকিব লামিয়ার পাশে ঘাসের উপর বসল। লামিয়ার মুখে বিরক্তির ছাপ। তার পাশে রাফি বসে আছে। দুজন গল্প করছিল। লামিয়া কিছুটা বিরক্তিভরে তাকিয়ে বলল
-আমি ব্যাস্ত ছিলাম। তাই ফোন রিসিভ করতে পারিনি।
-কি কাজে ব্যাস্ত ছিলি! ক্লাসেও নাকি যাস নি!
এবারে লামিয়া কিছুটা রেগে বলল
-আমার কাজ থাকতেই পারে।
সাকিব চুপ করে আছে। লামিয়াকে দেখছে আর অবাক হচ্ছে! হঠাৎ এতটা বদলে গেল! কিছুদিন আগে আলিয়া রাফির সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিল। সাকিব আগে থেকেই চিনত বলে নতুনভাবে কিছু জানেনি।
তারপরে আস্তে আস্তে লামিয়া সাকিবের কাছ থেকে দুরে চলে যাচ্ছিল। কালকে রাতে রিলেশনের কথা জানতে পেরে সবকিছু বুঝতে পেরেছে। সাকিব চায়না এই রিলেশন হোক। তবে লামিয়াকে বেশ খুশি খুশি লাগছে। নতুন মানুষের সাথে নতুন স্বপ্নে বিভোর সে।
রাফির সাথে লামিয়ার রিলেশন দুদিন হল। কিন্তু সাকিব কালকে জানতে পেরেছে। জানার পরে সে একবার ধাক্কা খেয়েছিল। সাকিব লামিয়াকে ভালবাসে। কিন্তু কোনদিন বলেনি। তার জন্য সাকিবের তেমন কষ্ট হচ্ছেনা। কষ্ট হচ্ছে রাফির সাথে ওর রিলেশনের কথা শুনে।
রাফি আলিয়ার খালাত ভাই। সপ্তাহ খানেক হল বেড়াতে এসেছে। রাফির সম্পর্কে সাকিব যতটা জানে। লামিয়া তার অনেকটাই জানেনা। রাফি দেখতে যেমন সুদর্শন আর স্মার্ট। তেমনি তার চরিত্র খুব খারাপ। এর আগেও অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন ছিল। শারীরিক সম্পর্ক করার পরে রিলেশন শেষ করে দিয়েছে। কিন্তু এই ব্যাপারগুলো মারিয়া জানেনা। আলিয়া তার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী। সে যেভাবে পেরেছে রাফিকে তার সামনে উপস্থাপন করেছে।
-আর কতক্ষণ বসবি এখানে! বাসায় যাবিনা?
আলিয়া এসে লামিয়ার পাশে বসল।রিলেশন হওয়ার জন্য আলিয়ার অবদান সবচেয়ে বেশি। সে নাকি রাফিকে ভালবাসে! তাহলে সে কিভাবে লামিয়ার সাথে রিলেশনের ব্যাপারটা মেনে নিল! সাকিবের কাছে সবকিছু কেমন যেন লাগছে! রাতে ঘুম হয়নি বলেই এমন লাগছে! নাকি এর মাঝে কোন কিন্তু আছে!
-সাকিব, আলিয়া। চল আমরা ক্যম্পাসে যাই।
এতক্ষণে লামিয়া উঠে দাঁড়াল। সাকিবের সাথে আলিয়া আর রাফি হাটতে হাটতে ক্যাম্পাসের মাঝের দিকটায় এল। লামিয়া রাফির হাত ধরে হাটছে। যেটা দেখে হিংসায় সাকিবের ভিতরটা জলেপুড়ে যাচ্ছে।
-আমাদের থার্টি ফার্স্টের পার্টিতে তুই থাকবি তো!
আলিয়ার কথা শুনে সাকিব অবাক হল। আলিয়ার আবার থার্টি ফার্স্টের এর পার্টি! এর আগে তো কখনো এমন হয়নি। তবে এবারে কেন! লামিয়া মুচকি হেসে বলল
-হ্যা আমরা দুজন থাকব। আর তুই। এইত আমরা সবাই মিলিয়ে ভালই মজা হবে। আর এবারে আমার পাশে রাফি থাকবে। তাই বেশি মজা হবে।
-হতেই হবে। লাভার বলে কথা।
২
সাকিব মায়ের ডাকে বিছানা ছেড়ে উঠে বসল। দুদিন হল বাসা থেকে বের হয়না। ক্যাম্পাসে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। ক্যাম্পাসে গেলে লামিয়ার প্রেম করা দেখতে হয়। যেটা তার কাছে অসহ্য। তারা যেন দেখিয়ে দেখিয়ে প্রেম করে। তাতে কষ্ট আরো বেড়ে যায়।
-কিরে তোর কি হয়েছে?
মায়ের কথায় সাকিব কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাকে সব বলল। মা সব শুনে বলল
-তুই মেয়েটাকে তোত মনের কথা বলে দে।
-কিন্তু ও অন্য ছেলেকে ভালবাসে।
-দেখ, জোর করে কখনো ভালবাসা হয়না। মেয়েটি তোকে ভালবাসলে তোর কাছে আসবে। আর নাহলে নাই আসবে। ভালবাসলে তো সবাই সবাইকে পায়না।তবে তুই মনের কথা বলে দিতে পারলে তোর কিছুটা কষ্ট কমবে।
সাকিব চায়ের কাপ হাতে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের কথাগুলো ভাবছে। তবে কি কথাগুলো বলে দিবে! লামিয়া কি সাকিবের মনের কথা জানতে চায়! অনেক চিন্তা মাথার ভেতর ঘুরছে।
আজ ডিসেম্বর এর একত্রিশ তারিখ। তবে কি নতুন বছর হতেই জানিয়ে দিবে কথাগুলো! ফোনে বলবে নাকি মেসেজে বলবে! মেসেজে বললেই ভাল হবে। নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর সাথে সাথে প্রেম নিবেদন করা যেতে পারে।
★★
রাত প্রায় দশটা বাজে। লামিয়া সুন্দর একটা শাড়ি পরেছে। ইংরেজি নতুন বছরে শাড়ি পরার ব্যাপারটা অন্যরকম হলেও শাড়ি পরেছে। রাফি একদিন বলেছে শাড়িতে তাকে বেশি সুন্দর লাগে। শাড়ির সাথে মিলিয়ে একটা টিপ পড়ল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার নিজেকে দেখছে।
আলিয়ার ফোন পেয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পরল। অনেক্ষণ ধরে সাজগোজ করে বেশ সময় নষ্ট করে ফেলেছে। রিক্সা নিয়ে আলিয়ার বাসায় যেতে প্রায় পনের মিনিট লাগে। তড়িঘড়ি করে রিক্সায় উঠে বসল।
লামিয়া আলিয়াদের বাসায় ঢুকে বেশ পুলকিত হয়ে গেল। সুন্দর করে রুমটা সাজিয়েছে। তবে লোক বলতে আলিয়া, লামিয়া আর রাফি। লামিয়া রাফির পাশে দাঁড়িয়ে বলল
-আর কাউকে দেখছি না যে!
-দিনটা তুমি আমি নিজেদের মত করে উৎযাপন করব।
লামিয়া ওর কথায় শুধুই হাসল।
আলিয়া কম্পিউটারে ইংলিশ গান ছেড়ে দিল। রাফি টেবিলের উপর দুই বোতল বেয়ার বিয়ার রাখল। একটা বোতল খুলে তিনটা গ্লাসে ঢালল। আলিয়া রুমে বড় আলো নিভিয়ে লাল আলো জালিয়ে দিল। লামিয়া প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। রাফি হাত আঁকড়ে ধরে বলল
-আমি আছিতো।
এবারে মনে সাহস পেল। ভালবাসার মানুষ এভাবে হাত আঁকড়ে ধরলে মনে সাহস পাওয়া যায়।
-নে।
আলিয়া একটা গ্লাস এগিয়ে দিতেই লামিয়া কিছুটা নার্ভাস হয়ে রাফির দিকে তাকাল। রাফি একটা গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল
-সমস্যা নেই। একদিন তো।
লামিয়া একটা গ্লাস নিয়ে চুমুক দিল। এর আগে কয়েকবার সে বিয়ার খেয়েছে। সেগুলোতে এলকোহলের পরিমাণ খুব সামান্য ছিল। আর অল্প খাওয়ার কারনে কোন সমস্যা হয়নি। আজো অল্প করে খেলে কোন সমস্যা হবেনা।
রাফির দুই গ্লাস শেষ আলিয়া প্রায় এক গ্লাস শেষ করেছে। রাফির খাওয়া দেখে বুঝা যায়, সে এসব খেয়ে অভ্যস্ত। লামিয়াকেও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে খেতে হচ্ছে। তবে এটায় এলকোহলের পরিমান বেশি। সেটা বুঝা যাচ্ছে।
ঘড়িতে প্রায় সাড়ে এগারটা বাজে। লামিয়ার নেশা হয়ে গিয়েছে। মাথাটাও ঝিম ধরে আসছে। হঠাৎ রাফি লামিয়ার হাতে চুমু খেল। তার ভেতরে একটা শিহরণ বয়ে গেল। আরেকটা চুমু খাওয়ার পরে সে যেন মাতাল হয়ে যাচ্ছে।
রাফি লামিয়াকে জাপটে ধরে ঘারে আর গলায় চুমু খাচ্ছে। রাফির চুমু পেয়ে লামিয়া আরো মাতাল হয়ে রাফিকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরছে। রাফিও তার শরীরের কানায় কানায় চুমুতে পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে। এতক্ষণে তার শরীর পুরোটাই সপে দিয়েছে।
লামিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিল। রাফি লামিয়ার আরো কাছে গিয়ে শরীরের সাথে মিশে গেল। লামিয়ার নগ্ন দেহর সবখানে নিজের শরীর দিয়ে ছুঁইয়ে দিচ্ছে। লামিয়া নেশায় বুদ হয়ে আরো শক্ত করে জাপটে ধরছে।
রাত বারোটা এক মিনিট বাজে। লামিয়ার ফোনে একটা মেসেজ আসল। এখন সেসব দেখার সময় নেই। রাফি শরীরের ক্ষুধা মিটাতে ব্যাস্ত। লামিয়া নেশার ঘোরে নিজেকে দুমড়ে মুচড়ে মিশে দিচ্ছে।
সকাল হয়ে গিয়েছে। নতুন দিনের নতুন বছর যুক্ত হয়েছে। বদলে গিয়েছে ক্যালেন্ডারের পাতা। লামিয়া চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে নতুন এক জায়গায় আবিষ্কার করল। এটা তার বেডরুম নয়। উঠে বসতেই বুঝতে পারল তার শরীরে কোন কাপড় নেই। চাদর দিয়ে নিজের শরীর ঢেকে বসল। কিছুক্ষণ চুপ করে ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করল।
-ঘুম ভাঙল তাহলে।
আলিয়াকে দেখে আস্তে আস্তে লামিয়ার সব মনে আসছে। কালকে রাতের ব্যাপারগুলো মনে আসছে। নেশার ঘোরে কতটা মাতাল হয়েছিল সেটা বুঝতে পারছে। আলিয়ার থেকে কাপড় নিয়ে পড়ে নিল। কিন্তু রাফি কোথায়!
-রাফি কোথায় রে?
লামিয়ার কথা শুনে আলিয়া হেসে বলল
-ওর কথা ভুলে যা। সাথে গতরাতের কথাও ভুলে যা।
-মানে!
-মানে রাফিকে আমি ভালবাসি। অনেক বেশি ভালবাসি। ও তোর শরীরের স্বাদ নিতে চেয়েছিল। তাই দুজন মিলে প্লান করে রাতের ব্যাপারটা করতে হল। এখন আর তোকে ওর দরকার নেই।
লামিয়ার মাথাটা ঘুরছে। তবে নেশার ঘোরে মাথা ঘুরছে না। আলিয়ার কথা শুনে মাথা ঘুরছে। কি বলছে এসব! এটা কিভাবে হতে পারে! তবে আলিয়ার মুখ দেখে মনেহয় না কথাগুলো মিথ্যে। তবে রাফির সাথে!
-এখন বাসায় যা। রাতের কথাগুলো গোপনে রাখিস। প্রকাশ হলে রাফির সন্মান যাবে না।
লামিয়া ফোন হাতে নিয়ে একটা মেসেজ দেখতে পেল। সাকিব মেসেজ পাঠিয়েছে। সাকিব কতটা তাকে ভালবাসে আর কতটা অনুভব করে সেটাই লিখেছে। কিন্তু লামিয়ার মাথাটা এখনো কেমন যেন হয়ে আছে।
লামিয়া রাস্তায় হাটছে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে। তার চোখের সামনে দুটি ভালবাসার মৃত্যু দেখতে পাচ্ছে। নিজের ভালবাসার সাথে সাকিবের ভালবাসার মৃত্যু দেখছে। নতুন বছরে এমন হবে সেটা কখনো ভাবেনি। তবুও সাকিবের নাম্বারে একটা মেসেজ পাঠাল "হ্যাপি নিউ ইয়ার"