-জয়, ডকুমেন্টস গুলো এনেছিস?
-ইয়ো, ম্যান। তোর কী খবর?
-ডান। তাহলে আগের কথাই
থাকল।
-ওকে।
আতিক আর জয় কথা শেষ করে দুজন দুদিকে হাটতে থাকল। জয় কলেজ দাপ্তরিক রুমের পাশ দিয়ে হাটতে শুরু করল। আতিক তার মত সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকল।
আতিক ক্লাসে বসে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। স্যারের লেকচার তার মাথার মধ্যে খুব ঢুকছে তেমন নয়। তবুও দায় এড়ানোর জন্য তাকিয়ে আছে। গনীত ক্লাস চলছে। এই স্যারের ক্লাসে কারো অমনোযোগী হওয়ার উপায় নেই। আর কেউ অমনোযোগী হলে তার জন্য শাস্তি বরাদ্দ রয়েছে।
জয় বার বার আতিককে পিছন থেকে খোঁচা মারছে। আতিক রেগে গিয়ে জয়ের নাক বরাবর ঘুসি মারল। স্যার বুঝতে পেরে দুজনকে দাড় করাল। এই স্যার ভিন্ন পদ্ধতিতে শাস্তি দিতে বিখ্যাত। তাই ওদের কর্মকান্ডে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা আগত বিনোদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্যার আতিক আর জয়কে সবার সামনে দাড় করিয়ে বলল
-শারমিন, রিতু এদিকে এসো। রাকিব তুমি বেত নিয়ে এস আমার ডেস্কের উপর থেকে।
হাটু কাঁপছে দুজন অপরাধীর। স্যার দুজনের হাতে দুইটা মার্কার পেন ধরিয়ে দিল। অন্যান্য সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অনুভূতি বিরাজ করছে। সবার মধ্যে ভাব যেন, পাকিস্তান-ভারতের খেলা চলছে।
-এই চ্যাপ্টার থেকে শেষের দুইটা অংক করবে। তোমরাই চিন্তা কর কে কোনটা করবে। ভুল হলে রিতু আর শারমিন তোমাদের পাঁচবার বেতাবে।
স্যার করাচ্ছিলেন ১ম পত্রের 3(B) প্রথম গুলো। কিন্তু জয় আর আতিককে করতে দিয়েছেন 3(B) এর শেষের দুইটা। শারমিন আর রিতু বেশ অবাক হলেও মুচকি হাসছে।
হোয়াইট বোর্ডটা বেশ বড়। দুজন দুপাশ থেকে অঙ্ক শুরু করল। জয়ের অঙ্ক এক নিমিষেই শেষ। ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তার সাথে মেয়েদুটোর মুখ শুকিয়ে গেছে।
আতিকের প্রথম তিন লাইন ঠিক থাকলেও চতুর্থ লাইনে আটকে রয়েছে। একবার মুছছে আবার লিখছে। স্যার পাশ থেকে তাড়া দিলেন। এরপর একটানে অঙ্ক শেষ করে দিলেন। সবচেয়ে বেশি অবাক ও হতাশ হয়েছে মেয়েদুটো। তাদের শেষ আশা ছিল আতিক। কিন্তু সেও অঙ্কটা শেষ করে দিল!
স্যার গম্ভীরভাবে তাকিয়ে বলল
-ক্লাসে আর দুষ্টামি করবে না। দুজন জায়গায় গিয়ে বস। দুজন ঘার কাত করল। নিজেদের বেঞ্চে ঢোকার আগে আতিক সবার অগোচরে মেয়েদুটোর দিকে একটা চিরকুট ছুড়ে মারল। সেখাবে লেখা
-বিনা দোষে দাড় করিয়ে রাখায় দুঃখিত।
রিতু রাগে, হতাশায় চিরকুটটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল। একজন আস্তে করে বলল
-হারামি।
২
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
ওয়েটিং রুমে দুইটা কিশোর বসে আছে। কলেজ শেষে বাড়িতে যায়নি ওরা। তবে কলেজ ড্রেস বদলে ফেলেছে। নাহলে ডিসি সাহেব সমস্যা করতে পারে। ডিসি সাহেবের কাছে দুজনকে ক্লিন থাকতে হবে। সুযোগ বার বার আসেনা। মোক্ষম সুযোগ বলে কিছু নেই। সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে, সেটাই মোক্ষম সুযোগ। ওদের হাতেও ছোট অথবা মোক্ষম সুযোগ এসেছে।
রাফিয়ার সুইসাইডটাকে ওরা মেনে নিতে
পারছিল না। এমন কিছু মোটিভ আছে ওদের কাছে, যা থেকে কেইসটা ক্লিয়ারলি খুন বলে প্রমাণিত হয়। চারদিকে তেমন বিশ্বাসযোগ্য লোক না থাকায় ওরা জেলা প্রশাসকের কাছে এসেছিল। সব শোনার পর তিনি ওদের কিছু পার্সোনাল ডকুমেন্ট আর সার্টিফিকেট আনতে বলেছিলেন। ডিসি সাহেব ওদের একটা আইডি দিবেন। ব্যাপারটা ওরাও ভেবে দেখেছে। আইডি পেলে সর্বস্তরের লোকের সাহায্য পাওয়া যাবে। এখন ওরা ফাইলবন্দি ডকুমেন্ট নিয়ে ভেতর থেকে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে
একটু পরেই
ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেল। বেড়িয়ে এল পাকা দুই ঘন্টা পর। কর্মচারীরা মোটামুটি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কি এমন দরকার থাকতে পারে এই পুচকে দুই ছোকরার সাথে!
তবে ওরা বেনসন সুইচের ফিল্টার ফাটিয়ে টান দেওয়ার মত নির্ভর। প্রত্যেকেই ডিবির একেকটা অফিসারের মত ক্ষমতাসম্পন্ন।আতিক ভাবে, রাফিয়া আপুর খুনের বিচার পাওয়ার সময় এসেছে এবার।
৩
কয়েকদিন হল জয় আর আতিক কলেজে যায় না। ব্যপারটা নিয়ে ম্যাথ স্যার কিছুটা ভাবছেন। সেদিন বোর্ডে দুজনের অংক করা দেখেই ম্যাথ স্যার দুজনের চেহারা মনে রেখেছেন। ক্লাসে ফাঁকিবাজি করলেও দুজন ভাল ছাত্র সে বিষয়ে কোন ভুল নেই।
-কিরে বাড়িতে শুয়ে কি করিস?
জয় আতিকের পিঠ চাপড়ে দিল। আতিক বিছানা ছেড়ে উঠে বলল
-দরজা লাগিয়ে দিয়ে আয়। কথা আছে।
জয় পাশে বসতেই আতিক বলল
-নতুন কিছু ক্লু পেয়েছি।
-কিভাবে?
আতিক ব্যাগ থেকে দুইটা কাগজ বের করে সামনে ধরল। কাগজের মধ্যে কিছু লেখা। দেখে বুঝা যায়, কোন পরিক্ষার উত্তর পত্র। আরেকটা রাফিয়ার সুইসাইড নোট
-এটা রাফিয়া আপুর পরিক্ষার খাতা। আমি ওর কলেজ থেকে সংগ্রহ করেছি।
জয় দুইটা কাগজ নিয়ে ভাল করে মিলিয়ে দেখল। একটার সাথে আরেকটা হাতের লেখার মিল নেই। জয় চট করে বলল
-তাহলে কি এই সুইসাইড নোট অন্য কারো হাতে লেখা?
-হ্যা। এটা অন্য কারো হাতে লেখা। আরেকটা ক্লু আছে।
-দেখি বের কর।
-তার জন্য আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।
-চল যাই।
দুজন ব্যগ কাধে নিয়ে বেড়িয়ে পরল। বাসার সবাই ভাবল, কোচিং করতে যাচ্ছে। কিন্তু তারা কেউ কোচিং করতে যাচ্ছে না। হাটতে হাটতে দুজন রাফিয়ার বাসার সামনে থামল। এখান থেকে বাসার বেলকুনি দেখা যায়। এমনকি রুমটাও বুঝতে পারা যায়। রাফিয়া এই রুমেই ফাসি নিয়ে সুইসাইড করেছিল।
-কিরে কি বুঝলি?
আতিকের কথা শুনে জয় মুচকি হাসল। যা বোঝার যে খুব ভালভাবেই বুঝে নিয়েছে। মাথার মধ্যে সেটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। জয় চট করে বলল
-আমরা ভেতরে গিয়ে ইনভেস্টিগেশন করলেই তো পারি।
-আরে নাহ। এভাবে গেলে হবেনা। অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
দুজন পথ মারিয়ে প্রাচিলটার দিকে আসল। এখান থেকে রাফিয়ার বাসাটাকে পরোখ করে দেখছে। রাফিয়ার লাশ ময়নাতদন্ত করতে দেওয়া হয়নি। ব্যাপারটা সন্দেহজনক। আত্মহত্যা করলেও ময়নাতদন্ত করতে দিতে সমস্যা নেই। রাফিয়ার বাবা একজন রিটায়ার্ড আর্মি মেজর। যদিও তিনি রাফিয়ার সৎ বাবা। রাফিয়ার বাবা মারা যাওয়ার পরে এখানে বিয়ে করেছেন।
-বাড়িতে ঢোকার বুদ্ধি পেয়েছি।
জয় চট করে টেলিফোনের তারটা কেটে দিল। ব্যাগের ভেতর সবসময় প্লাস জাতীয় কিছু থাকে। আতিক জয়ের ব্যপারটা বুঝতে পেরে বলল
-এখন টেলিফোন অপারেটর অফিসে যোগাযোগ করবি?
-হ্যা সেটাই করব। চল যাই।
দুজন টেলিফোন অপারেটরের অফিসে ঢুকল। প্রথমে জয়ের প্রস্তাব শুনে লোকটা কপাল কুঁচকে তাকিয়েছিল। জয় ব্যাগ থেকে তাদের আইডি বের করে দেখানোর পরে কোন সমস্যা হল না। অফিস থেকে দুজন দুইটা ব্যাগ নিল। যেটা লাইন সার্ভিসিং এর জন্য জরুরি। দুজন অফিসের লোকটার সাথে সব কথা সেড়ে বেড়িয়ে এল।
রাফিয়ার বাসায় ঢোকার আগে দুজন দুজনকে দেখে নিল। ছদ্মবেশ নিয়ে একজন অন্যজনকে চিনতে পারছে না। মুখে কালো কালো ছোপ হালকা হালকা দাড়ি। দুজনকে দেখে পারফেক্ট ইলেকট্রিক মিস্ত্রী মনেহয়।
দুজন বাসায় নক করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে একজন লোক দরজা খুলে বলল
-কি চাই?
-আমরা টেলিফোন অপারেটর থেকে এসেছি।
-কিন্তু আমি তো লাইনের জন্য অভিযোগ করিনি।
-আপনার এখানে সমস্যা থাকার কারনে, অন্যদের ব্যাবহার করতে হচ্ছে। তাই চেক করতে হবে।
-আচ্ছা ভেতরে আসুন।
দুজন উপরতলায় এসে ভালভাবে ঘরটা দেখছে। এই রুমেই রাফিয়া আত্মহত্যা করেছিল টেলিফোন তারের দিকে তাকালেও তাদের দুজনের মনোযোগ অন্যকিছুর দিকে। এই রুমটায় কেউ থাকত না। তবে আরাম আয়েস বা সময় কাটানোর জন্য মাঝেমাঝে আসা হত।
দুজন কাজ সেরে বেড়িয়ে এল। যা দেখার দেখে নিয়েছে। অনেককিছু বুঝে নিয়েছে। নিচে এসে একজন মহিলাকে দেখতে পেল। মহিলাটি বেয়াব্রভাবে বসে আছে,গায়ের কাপড়ের কোন ঠিক নেই। হাটার সময় টলতে দেখেই বুঝা যায় মাতাল হয়ে আছে। দুজন বাসা থেকে বেড়িয়ে এল।
৪
ডিসির সামনে বসে আছে দুজন। বিকেলবেলা অফিসের অনেকেই চলে গেলেও ডিসি সাহেব বসে আছে। এই দুই ছেলের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা সেড়ে নিচ্ছে। জয় সংগ্রহ করা আলামত বের করল। রাফিয়ার সুইসাইড নোট আর কলেজের লেখা দেখে দেখে ডিসি সাহেব বুঝতে পারছেন, এটা আত্মহত্যা নয়। কিন্তু এই খুনের কিনারা বের করতে হবে।
ডিসি দুজনের কাছ থেকে সবকিছু দেখে নিল। যে কোন সমস্যা হলে বলতে বলল। দুজন বেড়িয়ে এল। দুজনের মাথায় নতুন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। তার আগে বাড়ির দিকে নজর রাখতে হবে। কারা বাড়িতে আসা যাওয়া করছে জানতে হবে। তবে এই খুনিকে বেশ বুদ্ধিমান মনেহয়। দুজন যার যার মত করে বাসায় চলে গেল।
৫
জয় একটা বেনসন সুইচ নিয়ে আতিকের পাশে দাঁড়াল। এই বাড়ির দিকে অনেক্ষন ধরে নজর রাখছে। সন্ধ্যার দিকে এই বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা বাড়ে। বাড়ে বলতে অনেক মানুষ এসে কোন মজলিস বসেনা। সমাজের উচ্চ পদস্থ লোকজনের আনাগোনা আছে এই বাড়িতে। তবে আতিক একটা লোকটা উৎসাহ নিয়ে দেখছে। লোকটাকে আগেও বেশ কয়েকবার দেখেছে। কিন্তু সেটা রাফিয়ার মৃত্যুর আগে।
-দাঁড়িয়ে থাকবি আরো?
-ওই লোকটাকে দেখ। রাফিয়ার খুনের পরে আজ আবার দেখছি। চোখের মধ্যেও একটা নার্ভাস ভাব। মনেহয় কিছু লুকিয়ে যাচ্ছে।
আতিকের কথা শুনে জয় তাকালো লোকটার দিকে। লোকটা দুইবার বাসায় ঢুকে আবার বেড়িয়ে এসেছে। কি কারনে এমন করছে! রাফিয়ার মায়ের পরিচিত কেউ হবেন।
অনেকেই রাফিয়ার মায়ের পরিচিত। রাফিয়ার মা একজন দেহ ব্যবসায়ী। সমাজের অন্যসব বেশ্যাদের মত যার তার কাছে শরীর বিক্রি করেনা। সমাজের উচি পদের লোকরা তার কাস্টমার। রাতে কোন উচ্চপদস্থ লোকের সাথে শোওয়া, দিনে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে থাকা রাফিয়ার মায়ের নিত্যদিনের কাজ। রাফিয়ার বাবা প্রথমদিকে এসব নিয়ে ঝগড়া করলেও, এখন কিছু বলেনা। উপরের তলায় থাকে। নিচতলায় কি হয়, সেসব দেখার সময় নাই।
৬
দুজন ডিসির সামনের চেয়ারে বসল। ডিসি তাদের দুজনকে পার্সোনালি ডেকেছে। দুজন অধির আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। ডিসিকে দেখে বুঝা যায়, কোন ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে। ডিসি স্যার একটু বাইরে গিয়েছে।
-এইটা দেখ তো।
দুজন ডিসি স্যারের হাত থেকে পেপার নিয়েই চোখ ঝলমল করে উঠল। রাফিয়ার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তাদের হাতে! কিন্তু কিভাবে! ডিসি স্যার দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
-রাফিয়ার দাফনের পরের দিন ওর লাশ কবর থেকে তোলা হয়। তবে সবকিছুই চুপিচুপি করেছি।
রিপোর্ট দেখে বুঝা যায়, এটা খুন। প্রথমে রেপ করা হয়েছে, পরে কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। পরে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যা করা হয়েছে এটা নিশ্চিত। কিন্তু হত্যাকারি কে! জয় মোবাইল থেকে একটা ছবি বের করল। ডিসি ছবি দেখে বলল
-উনি!
-কালকে বাড়ির সামনে ঘুরাফিরা করছিল। ব্যাপারটা সন্দেহজন মনে হওয়ায় ছবি তুলেছি।
-উনি একজন সাবেক প্রভাষক। এক মেয়ের শ্লীলতাহানীর দায়ে বরখাস্ত হয়েছে।
দুজনের চোখ কেমন যেন অবাক হয়ে গেল। বেশি কথা না বলে রিপোর্টটা হাতে নিল। দুজন ডিসির অফিস থেকে বেড়িয়ে এল।
৭
দুজন ফোনের আশায় ছিল। রাফিয়ার বাসার ইলেক্ট্রিসিটি নষ্ট হয়েছে। একটু আগেই অফিসে ফোন দেওয়া হয়েছে। দুজন ইলেক্ট্রিশিয়ান হয়ে বাসার সামনে চলে এল। রাতের অন্ধকারে বেশি মেকাপ নিতে হয়নি। আতিক আগেই ইলেক্ট্রিসিটির কাজ জানে। খুব বেশি বেগ পেতে হবেনা তাদের। শুধু লাইনটা চালু করলেই হল।
আতিকের কোনভাবেই মনেহয় না ওই লোক রাফিয়ার খুনি। রাফিয়ার খুনের পরে লোকটা হাওয়া হয়ে যাওয়া সন্দেহজনক। জয়ের মাথায় অন্যকিছু ঘুরছে। আরেকবার ওই বাড়িতে ঢুকতে চায়। যদি কোন আলামত পাওয়া যায়! এতদিন পরে আলামত পাওয়ার কথা না। তবুও জয়ের মনে বারবার ব্যাপারটা ঘুরছে।
দুজন ভেতরে ঢুকে উপর তলায় চলে এসেছে। রুমের দরজা বন্ধ করা। এই সেই ঘর, এখান থেকে রাফিয়ার লাশ বের করা হয়েছিল। তারপরে ঘরটা বন্ধ করা। লাশটা বের করার পরে কাউকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ কোন আলামত সংগ্রহ করতে পারেনি। রাফিয়ার বাবা লোক ডেকে লাশ বের করেছিল।
রুমে ঢুকতে গেলে দরজা খুলতে হবে। রাফিয়ার বাবাকে দরজা খুলতে বললে, ইতস্তত করছিল। পরে এই রুমে সমস্যার কথা বললে রুমটা খুলে দিল। রাফিয়ার বাবার ফোন আসতে ওদিকে চলে গেল। দুজনের মুখে তৃপ্তির হাসি।
রুমে ঢুকে জয় চারপাশে ঘুরে দেখছে। আতিক তার মত কাজ করছে। তিনটা কাগজের টুকরা পেয়ে পকেটে ঢুকিয়ে নিল। পাশেই কয়েকটা ছেড়া চুল পেল। আতিক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। জয় তার মত করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
৮
দুজন বেশ ঘোরের মধ্যে রয়েছে। আলামত দেখে এবারে সন্দেহর কাটা রাফিয়ার বাবার দিকে ঘুরে যাচ্ছে। রাফিয়ার বাবা এমন কিছু কেন করবে! সন্দেহর খাতায় নামটা বারবার ঘুরছে। রাফিয়ার সৎ বাবার সাথে সম্পর্ক ভাল ছিল না। সেখান থেকেও একটা দিক।
রিপোর্ট দেখে বুঝা যায়, এটা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কারো কাজ। কাচা হাতে কাজ করলে এত সুক্ষভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। রাফিয়ার বাবা একজন সামরিক বাহিনির লোক ছিলেন। ব্যাপারটা এখানেই জটলা।
দুজন দুইটা কাগজের টুকরা বের করল। একটা রাফিরারর সুইসাইড নোটের কিছু অংশ। যেটা ভুল হওয়ার কারনে খাতা থেকে ছিড়ে ফেলা হয়েছিল। আরেকটা রাফিয়ার বাবার হাতের লেখা। দুটো পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে।
৯
দুজন মিলে সব ডকুমেন্ট আর পেপার বের করল। ডিসি স্যার আলামতগুলো ভালভাবে দেখছে। এতক্ষণে প্রমান হয়েছে খুনটা রাফিয়ার বাবা করেছে। সব প্রমান এখন দুজনের হাতে। ডিসি স্যার'ও আসল ঘটনা বুঝতে পেরেছে।
রাফিয়ার মৃতু হয় দুইতা নাগাদ। রাফিয়া কলেজ থেকে ফেরে, একটা পনের নাগাদ। সেদিন কলেজ থেকে এসে রুমেই কাপড় চেঞ্জ করছিল। হঠাৎ করে রাফিয়ার সৎ বাবা রুমে ঢুকে পরে। রাফিয়া তাড়াহুড়ো করে দরজা লাগাতে ভুলে গিয়েছিল। সৎ বাবার লোলুপ দৃষ্টি নতুন কিছু নয়। এর আগে অনেকবার এমন দৃষ্টির সম্মুখিন হত হয়েছে।
রাফিয়া তাড়াতাড়ি করে লজ্জা নিবারনের চেষ্টা করল। কিন্তু ততক্ষণে রাফিয়ার সৎ বাবা রাফিয়ার উপর ঝাপিয়ে পরেছে। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও কোন লাভ হল না। যা হবার হয়ে গেল।
রাফিয়া গোঙানির সাথে কান্না শুরু করেছে। রাফিয়ার সৎ বাবা মাথায় আঘাত করল। শুধু আঘাত করেই ক্ষান্ত হল না। গলা টিপে মৃত্যু নিশ্চিত করল। কৌশলে দড়ি বেধে লাশটা ঝুলিয়ে দিল। সুইসাইড নোটটাও লিখে দিল।
জয়ের বর্ননা শুনে ডিসি স্যার লিখে নিল। সুইসাইডাল কেসের সমাপ্তি হয়ে গেল। খুনিকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এখন গ্রেপ্তার করতে বাকি। ডিসি স্যার দুজনের হাতে একটা মোড়ক পেঁচানো ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল
-ওয়েলডান। তোমাদের জন্য খুনের রহস্য খুঁজে পেলাম। আবার দরকার হলে তোমাদের ডাকব।
দুজন রাস্তা দিয়ে হাটছে। মোড়কটা খুলে একটা ক্যামেরা পেল। সাথে একটা চিঠিতে লেখা, এটা তোমাদের উপহার। এগিয়ে যাও তোমরা। দুজন মুখে হাসি ফুটিয়ে রাস্তায় হাটতে থাকল।