-মামা, টিকিট দেন তো।
আমার কথা শুনে কাউন্টারের লোকটা আমার দিকে করুন চোখে তালাল! ভাব দেখে মনেহয়, আমি তার কলিজা চেয়ে বসেছি!
-টিকিট নাই।
আস্তে করে লোকটি বলে চুপ করে থাকল। টিকিট না পেয়ে মেজাজ খারাপ হচ্ছে। মন খারাপ হওয়াও স্বাভাবিক।
-মামা, টিকিট লাগবে?
একজন লোক পিছন থেকে ডাক দিতেই ফিরে তাকালাম। কাকে বলেছে জানিনা। তবে টিকিটের কথা শুনেই ঘুরে তাকালাম।
লোকটির দিকে ঘুরে বললাম
-টিকিট লাগবেই তো।
-এদিকে আসুন।
লোকটি আমার হাত ধরে পাশে ডেকে নিয়ে গেলেন।
-টিকিট আছে, কিন্তু দাম বেশি।
টিকিট আছে শুনেই মনে আশা জাগল। দাম কোন ব্যাপার না। টিকিট পেলেই হল। আমি লোকটির দিকে তাকিয়ে বললাম
-কত লাগবে?
-ছয়শ টাকা।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
আমার কথা শুনে লোকটি পকেট থেকে টিকিট বের করে দিল। আমি পকেট থেকে ছয়শ টাকা বের করে দিলাম।
টিকিট হাতে পেয়েই চলে এলাম। সাড়ে তিনশ টাকার টিকিট ছয়শ টাকা! তবুও অবশেষে পেলাম, এটাই বড় কথা। তবুও তো বাড়ি যেতে পারব।
কালকে সকালের বাসের টিকিট পেয়েছি। এখন চিন্তামুক্ত হয়ে ব্যাগটা গুছিয়ে নিলেই হল। কালকে ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়ার চেয়ে আগেই গুছিয়ে রাখা ভাল।
টিকিটে সিটের নাম্বার দেখে সিট খুঁজে নিলাম। জানালার পাশের এই সিটটা ভালই হয়েছে। রাস্তায় যে পরিমাণ ট্রাফিক জ্যাম! তাতে জানালার কাছে না বসলে শেষ।
আমার সিটে বসে, পাশের সিটে তাকালাম। পাশের সিটের যাত্রী এখনো আসেনি। বাস ছাড়তে আর দশ মিনিট বাকি। এখন কেউ বাস মিস করার কথা না। তবুও আমার পাশের সিটের যাত্রী যদি মিস করে যায়, তবে আমার কোন সমস্যা নেই। সারাপথ আরামে যেতে পারব।
-এই যে সরে বসুন।
একটা মেয়ের কণ্ঠ শুনে মাথা তুলে তাকালাম। এতক্ষণ মাথা নিচু করে ভাবছিলাম। কি ভাবছিলাম জানিনা। তবে ভাবছিলাম এটা জানি।
আমি মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে সরে বসলাম। আমার পাশের সিট এই মেয়েটার। তাই বসার জায়গা দিতেই হবে।
-আপনি একটু এইপাশে আসবেন?
মেয়েটির কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম! আমার সিট ছেড়ে আমি ওপাশে যাব কেন! অনেক কষ্ট করে জানালার পাশে সিট পেয়েছি। এখন কি সেই সিট ছাড়তে হবে!
-আমি ওপাশে যাব কেন!
আমার কথা শুনে মেয়েটি আস্তে করে বলল
-জানালার পাশে না বসলে আমার সমস্যা হয়। তাই যদি...
-জানালার পাশে না বসলে আবার কি সমস্যা!
-সমস্যা আছে। আপনি এপাশে আসুন।
-সম্ভব না।
-আপনাকে এ পাশে আসতে বলছি। আসুন।
মেয়েটির মুখে এমন কথা শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেল। মেয়েটি আমাকে আদেশ করছে! কিন্তু সে আদেশ করার কে!
-আমার বমি বমি ভাব হচ্ছে। তাই আপনাকে এপাশে বসতে বললাম।
মেয়েটির কথা শুনে হাসব নাকি আরো রাগ দেখাব সেটা বুঝতে পারছি না।
-আপনি কি প্রেগন্যান্ট! যে আপনার বমি আসবে এখন!
আমার কথা শুনে মেয়েটি রেগে গেল। আসলে এভাবে না বললেও হত। তবুও বলে ফেললাম।
মেয়েটি রেগেই বলল
-আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন।
-আসলে আমার আনলিমিটেড টকটাইম তো। তাই লিমিট ক্রস করে যাই।
আমার কথা শুনে মেয়েটি চুপ করে সিটে বসল। এতক্ষণে বাস ছেড়ে দিয়েছে। মেয়েটি এখনো রেগে আছে। মেয়েটি দেখতে তো সুন্দরি। তাহলে এমন করে কথা বলে কেন! ছোটবেলায় মুখে মধু না দিয়ে কি নিমের পাতা দিয়েছিল!
বাস আপন গতিতে ছুটে চলেছে। এখন পর্যন্ত মেয়েটির বমি ভাব দেখিনি। মেয়েটি জানালার পাশের সিট নেওয়ার জন্য ভান করেছিল। এটা বুঝতে পারছি।
গাড়ি জ্যামে আটকা পরে আছে। যাচ্ছে আবার থামছে। এই ট্রাফিক জ্যাম আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্ত লাগে। গাড়ি চলন্ত অবস্থায় বসে থাকা যায়। কিন্তু এভাবে জ্যামে আটকালে বসে থাকতে ইচ্ছা করেনা।
মেয়েটি আমার পাশে বসে ঘামছে। গরমে ঘামার কথা। মেয়েটি তার ব্যাগ থেকে পাথা বের করে বাতাস করছে নিজেকে। মেয়েটির হাতের পাখা দেখে স্যারের কথা মনে পরছে। আমাদের এক স্যার এই পাখাকে ডিস্কো পাখা বলত!
অনেক সময় পরে জ্যামের হাত থেকে মুক্তি পেলাম।গাড়ি এখন আপন গতিতে চলছে। গাড়ি চলার সাথে মনের আনন্দ বেড়ে যাচ্ছে। বাডি যাওয়ার আনন্দ একটু বেশি হয়।
-ওহ শিট!
মেয়েটি তার ব্যাগ থেকে কিছু খুঁজছে। খুঁজে না পেয়ে মেয়েটি হতাশ হয়ে গেল। আমার মনেহয় পানির বোতল খুঁজছে। এখন বাস থামাবে না। তাই পানি পিপাসা পাওয়ার পরে বোতল খুঁজে না পেলে হতাশ হওয়া স্বাভাবিক।
-এই নিন।
আমি মেয়েটির দিকে পানি এগিয়ে দিলাম। মেয়েটি মনেহয় আমার থেকে এমন কিছু আশা করেনি। মেয়েটি চুপ করেই আছে।
-রাগ করে থাকলে আপনার পানি পিপাসা মিটবে না।
আমার কথা শুনে মেয়েটি পানির বোতল হাতে নিল। এখন ঠিকভাবেই পানি খেয়ে নিল।
-ধন্যবাদ।
মেয়েটির কথা শুনে আমি মুচকি হেসে বললাম
-আমার মা বলেন, বন্ধুত্তের হাত বাড়ালে শত্রুও মিত্র হয়ে যায়।
আমার কথা শুনে মেয়েটি মুচকি হাসল।
গাড়ি চলতে চলতে এক জায়গায় থামল। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে আবার সিটে বসলাম। মেয়েটি এখনো আসেনি। সেও মনেহয় ফ্রেশ হতে গিয়েছে।
-নিন। খান।
মেয়েটি একটা প্যাকেট থেকে খাবার বের করে আমায় দিল। আমি তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। হঠাৎ এত ভাল!
-মা বলেছে, অপরিচিত কেউ কিছু দিলে খাবি না।
আমার কথা শুনে মেয়েটি হেসে ফেলল। আমি চুপ করে খেতে থাকলাম। আমার সাথে মেয়েটিও খাচ্ছে।
-এই নিন।
পানির বোতল এগিয়ে দিতেই আমি বললাম
-পানির ধার শোধ করছেন নাকি!
আমার কথা শুনে মেয়েটি হাসল। আমি পানির বোতল নিয়ে পানি খেলাম।
বাস থামতেই বাস থেকে নেমে গেলাম। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আবার চলে গেল। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেল
-ভাল থাকবেন। হয়ত আবার দেখা হবে।
আমি আমার মত গন্তব্যে চলেছি। আমি মেয়েটির শেষ কথার পরে আর কথা বলিনি। তবে ভাবছি মেয়েটির সাথে দেখা হবে নাকি! আচ্ছা আবার যদি দেখা হয়ে যায়!