তিনজন ঘুরতে বেরিয়েছি ক্যাম্পাস । না, আবার ভাববেন না ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তো ঘুরবেই, এ আবার জানানোর কি আছে ? না, মানে, আমাদের ঘুরা মানে শুধুই ঘুরা নয় । ঘুরাঘুরির মাঝেই চলতে থাকে অফুরন্ত হাসি ঠাট্টা তামাশা, কৌতুক, জ্ঞান-গর্ভ কথাবার্তা, নারী দেখা, আর পরিচিত কাউকে হঠাৎ অপ্রুস্তুত অবস্থায় ফেলার চেষ্ঠা ইত্যাদি ইত্যাদি করা । আমরা ঠিক গৌধূলির সময়টাতে বাইরে বের হওয়ার চেষ্ঠা করি । মানে হল বিকেল আর সন্ধ্যার ঠিক মাঝামাঝি সময়টাতে । আর ঘুরাঘুরি চলে সন্ধ্যার সময় থেকে একটু বেশি সময় । আমরা তিনজন বলতে আমরা দুই বন্ধু আর আমাদের খুবই ক্লোজ একজন বড় ভাই । কি করবো ভাই, প্রেমের ডিউটি করতে হয়না তো তাই আমরা এখনও কর্মহীন রয়েছি, তাই এমন ঘুরাঘুরিতে কারও কোন সমস্যা নেই । আসলে কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বলবো বলেই আজ এই স্ট্যাটাস ।
তো যথারীতি আমরা ঘুরতে বের হলাম কিন্তু আজ বেশ দেরি হয়ে গেছে । আজ বের হলাম সন্ধ্যারও পরে । আমাদের ক্যাম্পাসে আবার গরমকালের দিকে মেয়েদের হল (বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের এই একটিই হল । এটি বন্ধ হলেই ক্যাম্পাস হয়ে যায় একেবারেই জনশূন্য) বন্ধ হয় রাত ৮ ৮:৩০ এর দিকে আর শীতকালের দিকে সেই হল বন্ধ হয় রাত ৮:০০ এর দিকে । এখন অবশ্য গরমকালই বলা চলে তাই হল বন্ধ হয় রাত ৮:৩০ এর দিকে । আমরা হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পাসের কোনার দিকে চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম । আজকে আবার বড় ভাইয়ের মনটা খারাপ । পারিবারিক সমস্যা । আমরা বিস্তারিত জিজ্ঞেস করিনি । আজকে বড় ভাইকে সান্ত্বনা দিতে দিতেই সময় কেটে যাচ্ছে তাই হাসি ঠাট্টা তামাশা সব কিছু আপাতত স্থগিত । চায়ের এই দোকানটিও সবকিছু গুছাচ্ছে মানে আরেকটু পর বন্ধ হয়ে যাবে । মেয়েদের হল বন্ধ হতে আর মাত্র বিশ মিনিটের মত । কিন্তু মনে হচ্ছে ক্যাম্পাস ইতিমধ্যেই জনশূন্য হয়ে গেছে । আমরা গল্প করছিলাম, এর মধ্যেই হঠাৎ খেয়াল করলাম একটি মেয়ে আর একটি ছেলে আমাদের পাশ দিয়ে চায়ের দোকানটির পিছন দিয়ে অন্ধকারে আসতে আসতে হেঁটে দূরের দিকে যাচ্ছে । মেয়েটিকে চিনলাম । জুনিয়র একটি মেয়ে, অন্য আরেকটি ডিপার্টমেন্টে পড়ে । কিন্তু ছেলেটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের না । কেমন জানি খটকা লাগলো ।
ওরা যাবার পাঁচ মিনিট পর বড় ভাই প্রস্তাব দিল তাদের পিছন পিছন যাওয়ার জন্য । আমার কেন জানি একদম ইচ্ছে হচ্ছিল না কিন্তু দেখলাম আমার বন্ধুটিও বেশ আগ্রহী । কি আর করার । আমরা তিনজন ওদের পথ অনুসরণ করে চলতে লাগলাম । প্রায় একমিনিট হাঁটার পর একটু দূর থেকেই ওদেরকে দেখতে পেলাম । একসাথে বসে আছে, খুবই ক্লোজভাবে । এবার বড় ভাইয়ের মাথায় কেন জানি একটি দুষ্টু বুদ্ধি আসলো । তিনি প্রস্তাব করলেন চল ওদের ডিসক্লোজ করি । এবার আমি পরিস্কার ভাবেই এতে অস্বীকৃতি জানালাম আর ফিরে যেতে চাইলাম । কিন্তু আমরা বন্ধুটি এবারও রাজী । তারা আমাকে ছাড়াই সেখানে যেতে চাইলো দুইজনে । এরপর আমাকে রেখেই তারা দুইজনে সেখানে গেল । আর আমি ফিরে আসলাম ।
পরে বন্ধুটির কাছ থেকে শুনলাম সেখানে গিয়ে তারা ঐ কাপল দুইজনকে অত্যন্ত আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায় । তাদের দুইজন সেখানে গিয়ে ছেলেটিকে অনেক মারধোর করেছে । টাকা-পয়সা, মোবাইল সবকিছুই নিয়ে নিয়েছে । প্রথমে দিতে চায়নি কিন্তু বড় ভাইটি যখন মেয়েটিকে রেপ করার ভয় দেখালো তখন তারা আর না করেনি । আসলে মেয়েটি অন্ধকারে এদের দুইজনের কাউকেই চিনতে পারেনি ।
হায়, কপাল, এ আমি এতদিন কাদের সাথে মিশতাম ? আর আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে আছি ? শত শত ধিক্কার, সেই মেয়েটিকে, আমার বন্ধুটিকে আর বড় ভাইকে । আজ থেকে আমি থাকবো আমারই মত, ইনশাল্লাহ ।
এখানে আমি মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, তোমাদের মানসম্মান তোমাদেরকেই বজায় রাখতে হবে আর বড় ভাই ও বন্ধুটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, আমি কখনো এমনটা ভাবতেই পারিনি । সরি, আমি হয়তো আপনাদের মত হতে পারিনি ।
(বিঃদ্রঃ ঘটনাটি বাংলাদেশের কোন একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে । একজনের জীবনের সত্য একটি ঘটনা । তার মুখ থেকেই শোনা । )