somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাই ও বোনেরা ... ফজরের নামাজটা পড়েই ঘুমাইয়েন

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাসূলুল্লাহ্ (সা) হলেন ইসলামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে না জেনে, তার পথনির্দেশনা, নিষেধাবলী এবং শিক্ষণ সম্পর্কে অবগত না হয়ে ইসলামকে জানার কোন পথই নেই।

আল্লাহর রাসূল শান্তিচুক্তি করেছেন এবং যুদ্ধ করেছেন, বসতি স্থাপন করেছেন এবং ভ্রমণ করেছেন, ক্রয়-বিক্রয় করেছেন, আদান-প্রদান করেছেন। তিনি কখনো একাকী বসবাস করেনি নি নচেৎ একাকী ভ্রমণও করেননি।

মুসলিম উম্মাহ্ আজ দুর্বলতার শিকার কারণ তারা রাসুলুল্লাহর আদর্শ এবং পথনির্দেশনা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ বলেছেনঃ“(হে মুসলমানরা), তোমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের জীবনীতে অনুকরণযোগ্য উত্তম আদর্শ রয়েছে, (আদর্শ রয়েছে) এমন প্রতিটি ব্যক্তির জন্যে যে আল্লাহর সাক্ষাৎ পেতে আগ্রহী এবং যে পরকালের (মুক্তির) আশা করে, (সর্বোপরি) সে বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে” (সূরা আহযাব-২১)

এমনো কিছু মুসলিম রয়েছে যারা সেমিনার কিংবা উৎসব উদযাপনের সময় রাসুলুল্লাহর জীবনী পড়ে অথচ তার দেয়া নির্দেশাবলী অনুসরণ করে না। আবার এমন অনেকেই রয়েছে যারা তাঁর জীবনী পড়ে হয় সওয়াবের আশায় নতুবা বিভিন্ন ঘটনাবলীর সাথে পরিচিত হওয়ার উদ্দেশ্যে যেমন- যুদ্ধ, দিনক্ষণ ইত্যাদি

এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত: রাসুলুল্লাহ (সা) এর আদেশ এবং পথনির্দেশনাবলীর মূলনীতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের অভাব এবং তাঁর ভালোবাসা অর্জনে এটার আবশ্যকতা সম্বন্ধে জানার অভাব।

দ্বিতীয়ত: সীমাবদ্ধ পড়াশোনা এবং উপসংহার টানার দুর্বলতা হেতু রাসুলুল্লাহর জীবনীতে আলোচ্য পথনির্দেশনা হৃদয়ঙ্গম করতে তাদের ব্যর্থতা।

রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর জীবনালেখ্য থেকে শিক্ষা এবং সুফল লাভ করার তাৎপর্য-

রাসূল (সা) এর জীবনী শিক্ষার উদেশ্যে এটা নয় যে তা পড়ার মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করা কিংবা তৎকালীন ঐতিহাসিক জ্ঞান আহরণ করা অথবা কোনো প্রসিদ্ধ বীরপুরুষের আত্নকথা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা যাবে। এই ধরনের ভাসাভাসা গবেষণা অমুসলিমদের দ্বারা হয়ে থাকে। তাঁর জীবনী পড়ার জন্য একজন মুসলিমের নানমুখী উদ্দেশ্য থাকা উচিত তন্মধ্যে রয়েছে-

প্র্থমত: আল্লাহর রাসূলকে অনুসরণ করা উচিত কারণ তিনি সকল মুসলিমদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শস্বরূপ। তিনি সেই আইন প্রণয়নকারী যাঁকে আমাদের আনুগত্য করা উচিত কারণ আল্লাহ্ বলেছেন- “(হে মুসলমানরা), তোমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের জীবনীতে অনুকরণযোগ্য উত্তম আদর্শ রয়েছে, (আদর্শ রয়েছে) এমন প্রতিটি ব্যক্তির জন্যে যে আল্লাহর সাক্ষাৎ পেতে আগ্রহী এবং যে পরকালের (মুক্তির) আশা করে, (সর্বোপরি) সে বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে।” (সূরা আহযাব-২১) আল্লাহ বলছেন- “যদি তোমরা তার কথামতো চলো তাহলে তোমরা সঠিক পথ পাবে।”(সূরা নূর-৫৪) আল্লাহ্ আরো বলেন: “যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে(যেন) আল্লাহরই আনুগত্য করে।’’(সূরা নিসা-৮০) আল্লাহ্ আরো বলেন-“(হে নবী) তুমি বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার কথা মেনে চলো, (আমাকে ভালোবাসলে), আল্লাহ্ও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহবলী মাফ করে দিবেন;আল্লাহ্ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’(সূরা আলে ইমরান-৩১)

তিনি(রাসুলুল্লাহ) ইসলামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি এবং আদর্শস্বরূপ যাকে অনুসরণ করা ব্যতীত আমাদের আল্লাহকে আনুগত্য কিংবা ইবাদাত করার কোনো উপায় নেই

ইসলামিক মনীষীরা তাঁর জীবনী থেকে দাওয়াত দেওয়ার কৌশল এবং ধাপসমূহ আহরণ করেছেন। আল্লাহর কথাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ(সা) কি অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং কিভাবে শত বাধা-বিপত্তির মোকাবেলা করেছেন সেটাও তারা জেনেছেন।

তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষকরা শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও কৌশল আয়ত্ত করতে পারেন।
তাঁর জীবনী থেকে শাসকবৃন্দ সুশৃঙ্খল নেতৃত্বদানের পদ্ধতি আয়ত্ত করতে পারেন।
তাঁর জীবনী থেকে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্য এবং নিয়মতান্ত্রিক নীতিমালা আয়ত্ত করতে পারেন।
যারা দু:খ কষ্টে জর্জরিত, তারা ধৈর্য্য এবং সহিষ্ণুতার সর্বোচ্চ মাত্রা শিক্ষালাভ করতে পারেন এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর উপর তাদের বিশ্বাস ও আস্থা আরো দৃঢ়তা লাভ করে যাতে করে তাদের সংকল্প ইস্পাতকঠিন হয়ে ওঠে এটা জেনে যে পরিশেষে ফলাফল তাদের অনুকূলেই যাবে।
তাঁর জীবনী থেকে ইসলামিক চিন্তাবিদরা আরো ভালোভাবে আল্লাহর কালাম এবং বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের সম্পর্ক বোঝার দক্ষতা লাভ করতে পারেন তন্মধ্যে রয়েছে- বাতিলকৃত বা স্থগিতকরণ সম্পর্কীয় আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার কারণ এবং আরো অনেক গভীরতর জ্ঞান।
সমগ্র জাতি তাঁর জীবনী থেকে নৈতিকতা, সামাজিক রীতিনীতি, আদবকায়দা এবং প্রশংসনীয় উৎকর্ষতা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে।



ইবনে কাছীর বলেছেন: “ বিশেষ যত্ন এবং মনযোগের সহিত রাসুলু্ল্লাহ্ (সা) এর জীবনী পড়া উচিত কারণ ওমর আল-ওয়াকেদী থেকে বর্ণিত আব্দুল্লাহ্ ইবন ওমার ইবনে আলী বলেছেন তাঁর পিতা আলী ইবন আল-হুসাইনকে বলতে শুনেছেন- “আমরা রাসুলুল্লাহর বিজয় সম্পর্কে জানতাম কারণ আমরা পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ জানি।”

আল-ওয়াকেদী বলেছেন- “আমি মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে তাঁর চাচা আল-যুহরি বলছেন বিজয়ের ঘটনাবলীর সাথে দুনিয়ার জীবন এবং আখিরাতের নিবিড় সম্পর্ক লুকিয়ে আছে।’’

ইসমাঈল ইবন মুহাম্মদ ইবন সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস বলেছেন- “আমার পিতা আমাদরকে রাসুলুল্লাহর বিজয়সমূহের কাহিনী শিক্ষা দিতেন এবং পুনরাবৃত্তি করে আমাদের বলতেন এগুলো তোমাদের পূর্বপুরুষদের গৌরবময় কর্ম; সুতরাং এগুলোকে বৃথা হতে দিয়ো না।’’

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অনেক রাজা-বাদশাহ্, নেতা, কবি এবং দার্শনিকদের জীবনী রয়েছে কিন্তু তাদের কোনোটাই রাসুল (সা) এর জীবনীর মত অনুকরণীয় আদর্শরূপে অনুসরণ করা হয়নি। কালের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে তাদের কৃতিত্ব শুধু রয়ে গেছে কয়েকটি নাম।

ইতিহাসের খাতায় অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জীবনী নিছক উপহাস হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নমরূদ যে ইব্রাহিম (আ) কে বলেছিল: “আমি জীবন এবং মৃত্যু দান করি।’’ কুরআনে বর্ণিত ফেরাউন বলত “আমিই হচ্ছি তোমাদের সবচেয়ে বড় রব”(সূরা নাযিয়াত-২৪) এবং তার পরিণতি কি হয়েছিল? সে আরো বলত- “হে আমার পারিষদরা, আমি তো জানি না আমি ছাড়া তোমাদের আরও কোনো মাবূদ আছে।”(সূরা কাছাছ-৩৮)

তাদের সময়কার বাঘা ব্যক্তিত্ব আজ সকলের পরিহাসের পাত্র- তরুণ-বৃদ্ধ, জ্ঞানী-মূর্খ সবার কাছে। যদিও তারা তাদের সময়কার জনগণকে ধোঁকা দিতে সফল হয়েছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে তাদের ধোঁকাবাজি আজ পরিষ্কার এবং তারা উপহাসের পাত্ররূপে পরিগণিত।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর জীবনী মানুষদের শিরক আর ইবাদাতের দূষণীয়তা থেকে বের করে আল্লাহর একত্ববাদ এবং বিশ্বাসের আলোতে আসার পথ বাতলে দিয়েছে। আল্লাহ্ বলছেন- “হে নবী আমি তোমাকে (হেদায়াতের) সাক্ষী (বানিয়ে) পাঠিয়েছি, তোমাকে বানিয়েছি (জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও (জাহান্নামের) সতর্ককারী, আল্লাহ্ তাআলার অনুমতিক্রমে তুমি হচ্ছো আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও (হেদায়াতের) এক সুস্পষ্ট প্রদীপ।”(সূরা আহযাব-৪৫-৪৬)

দ্বিতীয়ত: আমরা রাসুলুল্লাহ (সা) এর জীবনী পড়ি যাতে করে তাঁর সততা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় হয়। তাঁর মো’জেযাসমূহ এবং নবুওয়্যাতের নিদর্শনাবলী আমাদের ঈমান এবং তাঁর সততার উপর আস্থা স্থাপনে নিশ্চিতভাবে সহায়তা করে। তাঁর জীবনী এবং মহৎ দৃষ্টিভঙ্গি কেবলমাত্র তাঁর চূড়ান্ত উৎকর্ষ, মহত্ব এবং সততার প্রমাণ বহন করে।

তৃতীয়ত: আমরা তাঁর জীবনী পড়ি যাতে করে আমাদের হৃদয়ের গভীরে তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা দৃঢ়তর হয় কেননা তাঁর জীবনী মহৎ আচরণ, সহৃদয় ব্যবহার, মানবজাতির কল্যাণ এবং সঠিক পথ প্রদর্শনে তাঁর যত্নবান উদ্যোগ, মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসা,দু:খ-কষ্ট থেকে সুখ-শান্তির দিকে টেনে আনা যাতে করে কোনো দু:খ-কষ্টই যেন তাঁর জাতির উপর পতিত না হয় সে জন্য তাঁর শারীরিক এবং আর্থিক ত্যাগ-তিতিক্ষা ইত্যাদির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত বহন করে।


[সুত্রঃ একটি ইসলামিক ওয়েবসাইট]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:১২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×