“মানুষ যে সময়টুকু যাপন করে সেটি জীবন নয়, জীবন হল সেটুকুই যা মানুষ মনে রাখে”- গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের এই কথাগুলো আমার ভেতর এলার্ম ঘড়ির মত বেজে ওঠে প্রতিনিয়তই। জীবনকে একটা গন্ডির ভেতর আটকে রেখে গড়পড়তাভাবে জীবনটাকে পার করে দেয়াটা কোন কাজের কথা নয়। এই বিশ্ব-ভ্রম্মান্ডে দেখার, জানার এবং বোঝার মত এত বিষয় রয়েছে সেগুলোর জন্য আমাদেরকে যে সময়টুকু বেধে দেয়া হয়েছে তা নিতান্তই তুচ্ছ। তাই এই ক্ষুদ্র সময়টাকে কাজে লাগানোটা বাধ্যতামূলক। যারা এই সময়টা কাজে লাগাতে পারেন তারাই আসলে সত্যিকার অর্থে জীবন যাপন করেন। যাপিত জীবন আর জীবন যাপন দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।
অধিকাংশ মানুষই টাকা কামানোর উপায় খুঁজতে খুঁজতে আর টাকা কামাতে কামাতেই জীবনটাকে পার করে দেন। আবাসস্থল থেকে কর্মক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র থেকে আবাসস্থল এই বৃত্তে নিজেদের চিরতরে বন্দি করে ফেলা মানুষের সংখ্যাই আমাদের মাঝে শতকরা নিরানব্বই ভাগ। এভাবে কূয়ার ব্যাঙ হয়ে জীবনটাকে পার করতে করতেই আমরা জীবনের স্বার্থকতা খুঁজি। কিন্তু এভাবে কখনোই মানব জনম স্বার্থক হয়ে উঠতে পারে না। সত্যিকারের জীবন যাপন করতে হলে মাঝে মাঝে কূয়া থেকে বের হয়ে এসে দুনিয়াটা দেখতে হয়, জানতে হয় এবং বুঝতে হয়। যারা প্রকৃতার্থে সৌভাগ্যবান তারাই কেবল এটা পারেন।
মন, আত্না কিংবা চিত্ত যা-ই বলি না কেন এসবকে তুমুল প্রশান্তি দেয় এমন সময় আমরা দৈনন্দিন জীবনে পার করিনা বা করতে পারিনা বললেই চলে; সেটা যে কারনেই হোক। চরম পর্যায়ের একঘেয়েমি আমাদের জীবনটাকে সবসময় আচ্ছন্ন করে রাখে। আবার এমন কিছু সময় আমাদের জীবনে হুটহাট চলে আসে যা আমাদের চিত্তকে তুমুল আনন্দ কিংবা প্রশান্তি দেয়। এসবই আমরা আসলে মনে রাখি। সেগুলোকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখি এবং ফুরসৎ পেলেই সেসব স্মৃতিতে হারিয়ে যেয়ে অন্যরকম সুখবোধ অনুভব করি।
জীবনটা এমন হওয়া উচিত যাতে আমরা এমন প্রতিটি ডাকে সাড়া দিতে পারি যা আমাদের আত্মাকে প্রশান্তি দেয়; আমাদের ভেতরে জাগ্রত হয় উদ্দ্যম, প্রেরনা আর আমাদের চিন্তা-ভাবনা হয় বিকশিত; এক কথায় জীবন পায় নতুন মাত্রা। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে কিছু সময়ের জন্য প্রকৃতির কাছে নিজেকে সমর্পন করে দেয়া অর্থাৎ প্রকৃতির খুব কাছাকাছি বসবাস করা। কারন ‘সত্য’ এবং সব সমস্যার সমাধান এতেই নিহিত!