অপারেশন সার্চলাইট
Operation Searchlight.
অপারেশন সার্চলাইট পাকিস্তানে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী মুক্তিকামী বাঙালিদের কঠোর হস্তে দমনের জন্য ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে তাকেই ওরা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে অভিহিত করে। এ অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা সহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান শহরগুলিতে বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ এবং বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের গ্রেপ্তার ও প্রয়োজনে হত্যা করা, সামরিক আধা সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণ, অস্ত্রাগার, রেডিও এবং টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখলসহ প্রদেশের সামগ্রিক কর্তৃত্ব গ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমন করে প্রদেশে পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় ২৫শে মার্চ রাত সাড়ে এগারোটা থেকে মে মাসের মধ্য ভাগ পর্যন্ত বড় বড় শহরে এই অপারেশন সার্চলইট নামক অভিযানে নিরস্ত্র বাঙ্গালি হত্যা করা হয়।
অপারেশন সার্চলাইট অভিযান শুরুর সময় নির্ধারিত ছিল ২৬ মার্চ রাত ১টা। কিন্তু ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে কোনো ইতিবাচক ফলাফল না পেয়ে সবাইকে সর্বাত্মক সংগ্রামের জন্য তৈরি হওয়ার আহবান জানান। সে রাতেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিকামী বাঙালি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ও এ.এ.কে নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালেক মন্তব্য করেছেন যে, বাঙালি বিদ্রোহীদের প্রবল প্রতিরোধ সৃষ্টির আগেই পাকিস্তান বাহিনী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পৌঁছার লক্ষ্যে অভিযান এগিয়ে ২৫ মার্চ রাত ১১-৩০ মিনিটে শুরু হয়। অবশ্য ৫ আগস্ট প্রকাশিত পাকিস্তান সরকারের শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, আওয়ামী লীগ ২৬ মার্চ ভোরে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। শ্বেতপত্রে উল্লেখিত এ তথ্যকেও অভিযান এগিয়ে আনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
পাকিস্তান বাহিনীর ১৪ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এবং ৫৭ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অপারেশন সার্চলাইট নামে একটি সামরিক অভিযানের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছেন। ১৭ মার্চ চীফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খানের নির্দেশে জেনারেল রাজা পরদিন ঢাকা সেনানিবাসে জিওসি অফিসে অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। পাঁচ পৃষ্ঠার এই পরিকল্পনাটি রাও ফরমান আলী নিজ হাতে লিখেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২৪-২৫ মার্চ জেনারেল হামিদ, জেনারেল এ. ও মিঠঠি, কর্নেল সাদউল্লাহ হেলিকপ্টারে করে বিভিন্ন সেনানিবাসে প্রস্ত্ততি পরিদর্শন করেন। সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ মার্চ রাত ১টায় অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় অভিযানে ঢাকায় নেতৃত্ব দিবেন জেনারেল রাও ফরমান আলী। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নেতৃত্ব দিবেন জেনারেল খাদিম রাজা। লে. জেনারেল টিক্কা খান ৩১ ফিল্ড কমান্ডে উপস্থিত থেকে অপারেশনের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া এ অভিযানকে সফল করার জন্য ইতোমধ্যে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের দু’জন ঘনিষ্ঠ অফিসার মেজর জেনারেল ইখতেখার জানজুয়া ও মেজর জেনারেল এ.ও মিঠঠিকে ঢাকায় আনা হয়।
অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় যেসব পরিকল্পনার ছক করা হয়েছিলো:
১.একযোগে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে অপারেশন শুরু হবে।
২.সর্বাধিক সংখ্যক রাজনীতিক ও ছাত্রনেতা, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার চরমপন্থীদের গ্রেফতার করতে হবে।
৩.ঢাকার অপারেশনকে শতকরা ১০০ ভাগ সফল করতে হবে। এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করতে হবে।
৪.সেনানিবাসের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
৫.যাবতীয় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, রেডিও, টিভি, টেলিপ্রিন্টার সার্ভিস, বৈদেশিক কনস্যুলেটসমূহের ট্রান্সমিটার বন্ধ করে দিতে হবে।
৬.ইপিআর সৈনিকদের নিরস্ত্র করে তদস্থলে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈনিকদের অস্ত্রাগার পাহারায় নিয়োগ করতে হবে এবং তাদের হাতে অস্ত্রগারের কর্তৃত্ব দিতে হবে।
৭.প্রথম পর্যায়ে এ অপারেশনের এলাকা হিসেবে ঢাকা খুলনা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রংপুর, সৈয়দপুর ও সিলেটকে চিহ্নিত করা হবে। চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রংপুর ও কুমিল্লায় প্রয়োজনে বিমানযোগে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
অপারেশন সার্চলাইটে ঢাকা শহরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রাধান্য দিয়ে পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ উপরোক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত নেয়:
১.পিলখানায় অবস্থিত ২২নং বালুচ রেজিমেন্ট বিদ্রোহী ৫ হাজার বাঙালি ইপিআর সেনাকে নিরস্ত্র করবে এবং তাদের বেতার কেন্দ্র দখল করবে।
২.আওয়ামী লীগের মুখ্য সশস্ত্র শক্তির উৎস রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ৩২নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এক হাজার বাঙালি পুলিশকে নিরস্ত্র করবে।
৩.১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট শহরের হিন্দু অধ্যুষিত নবাবপুর ও পুরনো ঢাকা এলাকায় আক্রমণ চালাবে।
৪.২২নং বালুচ, ১৮ ও ৩২নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বাছাই করা একদল সৈন্য আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শক্তিকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল (জহরুল হক হল), জগন্নাথ হল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াকত হল আক্রমণ করবে।
৫.বিশেষ সার্ভিস গ্রুপের এক প্লাটুন কমান্ডো সৈন্য শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি আক্রমণ ও তাঁকে গ্রেফতার করবে।
৬.ফিল্ড রেজিমেন্ট দ্বিতীয় রাজধানী ও সংশ্লিষ্ট বসতি (মোহাম্মদপুর-মিরপুর) নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
৭.শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশে এম ২৪ ট্যাংকের একটি ছোট্ট স্কোয়াড্রন আগেই রাস্তায় নামবে এবং প্রয়োজনে গোলা বর্ষণ করবে।
৮.উপর্যুক্ত সৈন্যরা রাস্তায় যেকোন প্রতিরোধ ধ্বংস করবে এবং তালিকাভুক্ত রাজনীতিবিদদের বাড়িতে অভিযান চালাবে।
পাকিস্তান সৈন্যরা ১১.৩০ মিনিটে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে ফার্মগেটে মিছিলরত বাঙালিদের উপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের সূচনা ঘটায়। এরপর পরিকল্পনা মোতাবেক একযোগে পিলখানা, রাজারবাগে আক্রমণ চালায়।
রাত ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ইকবাল হল, জগন্নাথ হল, রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে ৯ জন শিক্ষকসহ অগনিত ঘুমন্ত ছাত্রদের হত্যা করে। একই পরিকল্পনার আওতায় পুরনো ঢাকা, তেজগাঁও, ইন্দিরা রোড, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা বিমানবন্দর, গণকটুলী, ধানমন্ডি, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান প্রভৃতি স্থানে আক্রমণ চালায়।
এ রাতে চট্টগ্রামে পাক সেনাদের গুলিতে অনেকে হতাহত হয়। মার্চ মাসের মধ্যেই অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনায় সেনানিবাসকে কেন্দ্র করে পাকবাহিনী তান্ডব চালায়। এ ছাড়া বাঙালির মুক্তির আন্দোলনে সমর্থনের কারণে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ ও দি পিপলস অফিসে অগ্নিসংযোগ করে।
বহু সংবাদকর্মী আগুনে পুড়ে মারা যান।
২৫ মার্চ গণহত্যা শুরুর প্রাক্কালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান করাচির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার জন্য আগত পাকিস্তান পিপলস পার্টির সভাপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে থেকে অভিযান প্রত্যক্ষ করেন। পরদিন ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে ভূট্রো সেনাবাহিনীর পূর্ব রাতের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে মন্তব্য করেন, ‘আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ যে পাকিস্তানকে রক্ষা করা গেছে।’
ইয়াহিয়া খানসহ সামরিক কর্মকর্তাদের সকলে অভিযানের প্রশংসা করেন। এমনকি পরবর্তী ৫ আগস্ট পাকিস্তান সরকার যে ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করে তাতে ২৫ মার্চ সামরিক অভিযানকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় ২৫ মার্চ রাতের অভিযানে প্রকৃত হতাহতের হিসাব পাওয়া যায় না। বিদেশি সাংবাদিকদের ২৫ মার্চ অভিযানের আগেই দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। দেশি সংবাদপত্রের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ সম্পর্কে তেমন বিশেষ কিছু জানা যায় না।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লুকিয়ে থাকা তিন বিদেশি সাংবাদিক আর্নল্ড জেটলিন, মাইকেল লরেন্ট, সাইমন ড্রিং-এর লেখনী থেকে সে রাতের ভয়াবহ নৃশংসতা সম্পর্কে জানা যায়।
সাইমন ড্রিং ‘ডেটলাইন ঢাকা’ শিরোনামে ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ২১ মার্চ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তাতে ইকবাল হলের ২০০ ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় শিক্ষক ও তাদের পরিবারের ১২ জন নিহত হওয়ার সংবাদ পরিবেশিত হয়। পুরনো ঢাকায় পুড়িয়ে মারা হয় ৭০০ লোককে। দেশি বিদেশি বিভিন্ন সূত্র থেকে যে বিবরণ পাওয়া যায় তাতে ওই রাতে শুধু ঢাকায় ৭ হাজার বাঙালি নিহত হয়।
তথ্য উপাত্ত এবং সন তারিখ প্রাপ্তিতে Wikipedia'র প্রত্যক্ষ্য সাহায্য নিয়েছি..
ওরা ভেবেছিলো এই ঠাণ্ডা মেজাজের সদা সুখী, অত্যাচার শোষণ করা কাদার মত ভদ্র নরম সরম এই জাইতটারে একরাইতের নির্বিচার গণহত্যার ভয় দিয়ে অাজীবন ওদের ঘাড়ে কাঠাল ভাইঙ্গা খাওন যাইবো!
ওরা টের'ই পায়নি যারা কারো সাথে পাচে থাকেনা, নিজের উপার্জিত অাহার ছাড়া যাদের ক্ষিধে মেটেনা যাদের হাটতে চলতে ঠকানো যায়, তারা ক্ষেপলে তাদের সামনে সুসজ্জিত অাধুনিক সমরাস্ত্রের খুনী কোন অার্মী বাহিনীকে নেংটি মারখোড় ছাগলের মত ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে চেয়ে অাত্বসমর্পণ করে জীবন বাচাতে হয়।
ধন্যবাদ, অাবার অাসবো..
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:১২