দেশের রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসছে তৈরী পোশাক শিল্পখাত থেকে। শিল্পখাতে কর্মসংস্থান হওয়া শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশ কাজ করছে এ খাতে। প্রিন্টিং, প্যাকেজিং, বোতাম, জিপার, লেবেল, ট্যাগ, কার্টুন থেকে শুরু করে শত শত শিল্পের সাফল্য নির্ভর করছে পোশাকের ওপর। পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা আছে বৃহদাকার তুলা, সুতা, টেক্সটাইল, ডায়িং, উইভিং প্রভৃতি শিল্পেরও। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও টিকে আছে তৈরী পোশাক শিল্পকে ঘিরে। সঙ্গত কারণেই পোশাক শিল্পে কোনো সঙ্কট দেখা দিলে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় সংশ্লিষ্ট অগ্র ও পশ্চাদ শিল্পগুলোয়। ঝুঁকিতে পড়ে সামগ্রিক অর্থনীতি।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কাঁচামাল সংকটে এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রপ্তানি আদেশ বাতিলের সংকটে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। আর এখন করোনাভাইরাসের কারণ দেখিয়ে পোশাকের বৈশ্বিক ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি উৎপাদন থেকে বিরত থাকতে বলছেন। গতকাল পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক এ তথ্য জানিয়েছেন। এর সত্য প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে, অনেকে প্রস্তুত হওয়া পন্য ক্রেতা গুষ্টির পক্ষ থেকে পরবর্তি নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হচ্ছে, অনেকর উৎপাদন বন্ধ করা হচ্ছ।
করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি পোশাকের চলমান ক্রয়াদেশের ওপর স্থগিতাদেশের পর এবার ২০টি পোশাক কারখানার ১৪৬ কোটি টাকার (১ কোটি ৭২ লাখ ডলার) ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। এরমধ্যে সিএন্ডএ, জারা, পুল এন্ড বেয়ার, বেবি শপ, ব্ল্যাকবেরি, প্রাইমার্কের মতো উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কার্যালয় গতকাল মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) চার ঘণ্টার ব্যবধানে এই কারখানাগুলোর কাছ থেকে ক্রয়াদেশ বাতিলের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরেছে। অবশ্য কেবল বাতিল নয়, পাশাপাশি কারখানাগুলোর ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
রফতানি গন্তব্যের সব দেশেই নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারীতে আক্রান্ত।একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তৈরি পণ্যের প্রধান রফতানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। আবার অঞ্চলভিত্তিক হিসাব করলে বাংলাদেশী পণ্যের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার ইউরোপ।
রপ্তানি অনুযায়ী গন্তব্য তালিকা
১) যুক্তরাষ্ট্র
২) জার্মানি
৩) যুক্তরাজ্য
৪) ফ্রান্স
৫) স্পেন
৬) ইতালি
৭) কানাডা
৮) ন্যাদারল্যান্ড
৯) বেলজিয়াম
১০) চীন
ইতমধ্যেই উল্যেখিত দেশ গুলুতে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলছে, তারা তো আর আমাদের বাংলাদেশের মানুষদের ঈদ আমেজে নেই, তারা এই সমস্ত ব্যাপারে খুবই সচেতন এবং তারপরেও করোনা ভাইরাস সেইসব দেশে মহামারী আকার ধারন করেছে।অনেক দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, ফলে সুপার শপ গুলাতে বেচা বিক্রি বা মানুষ সমাগম বন্ধ রয়েছে।
এতে করে পোশাক শিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত ৫০ লাখ মানুষ ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। সাথে পোশাক শিল্পের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সমুহের সাথে জড়িত আর কয়েক কোটি মানুষ এই অনিশ্চয়তায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে।
পোশাক খাত ৩৫ লাখ নারীশ্রমিকের সরাসরি ক্ষমতায়ন করেছে। শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের সাথে যুক্ত ছোট ছোট দর্জি, মুদি দোকানি, ফ্ল্যাক্সি লোডের দোকানদার, লিপিস্টিক বিক্রেতা, লেইস ফিতার হকার থেকে শুরু করে অর্থনীতির অনেক খাতে প্রভাব পড়বে। আর আমাদের ব্যাংকিং সেক্টর তো টিকে আছে পোশাক শিল্পের ওপরই। এ শিল্পের কিছু হলে আর্থিক খাতে চরম দুর্গতি নেমে আসবে বলে ধারনা করা হচ্ছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে।
এই দুর্যোগ অবস্থায় সরকার বাহাদুরের বিকল্প চিন্তা কি তা নিয়ে হতাশায় ভুক্তভোগী জনগন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:৫৯