দেশের তিন পার্বত্য জেলায় অন্তত পাঁচ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম ও কফি চাষ করলে বছরে এক বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। আর এই দু’টি ফসল হতে পারে দেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকশিল্পের বিকল্প।
বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও আয়ে চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলায় দু’হাজার কফি ও কাজুবাদামের বাগান করার লক্ষ্য নিয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তারা একসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন।
প্রকল্প নিতে পারলে পাহাড়ের অন্তত দু’হাজার পরিবার কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। আগ্রহী সংশ্লিষ্ট কৃষককে কফি ও কাজুবাদাম উৎপাদন, চাষ পদ্ধতি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কফি ও কাজুবাদামের চারা সরবরাহ করা হবে বিএডিসি, হর্টিকালচারাল সেন্টার থেকে।
বর্তমানে সারা বিশ্বে মোট ৩৫ লাখ মেট্রিকটন কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১২ লাখ মেট্রিকটন উৎপাদিত হয় পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরিকোস্ট, নাইজেরিয়া, ঘানা ও বেনিনে। তবে এসব দেশ কাজুবাদাম প্রসেসিং করতে পারে না। আফ্রিকার দেশগুলো মাত্র ১০ শতাংশ প্রসেসিং করে। এদের কাজুবাদাম ভিয়েতনাম প্রসেসিং করে বছরে চার বিলিয়ন ডলার আয় করছে।
সারা বিশ্বে কাজুবাদামের বাজার ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভিয়েতনাম একাই চার বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। বাকিগুলো ভারত ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে রপ্তানি হয়। কাজুবাদামের বড় মার্কেট যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ
বিলল্প চিন্তা হিসেবে দেশে এখন কাজুবাদাম এর প্রচুর চাহিদা তৈরি হচ্ছে এবং এই চাহিদা আরো কয়েক গুন বৃদ্ধি করা সম্ভব। বিশেষ করে কাজুবাদাম এর গুনাগুণ সম্পর্কে সাধারন মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে পারলে মানুষ এই কাজুবাদাম চাষাবাদ এবং ব্যাবহারের ব্যাপরে আগ্রহী হত। কাজুবাদাম এর কিছু গুনাগুনের কথা নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
কাজু বাদামের ১৫টি গুনাগুণ
প্রচুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ কাজুবাদাম। আমাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে কাজু বাদামের গুনের তুলনা হয়না। কাজুবাদাম অনেক ঔষধি গুণাগুণের জন্য পরিচিত। এতে প্রচুর আঁশ ও পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। হৃৎপিণ্ডের জন্য বেশ উপকারি। এটি চিনি ও কার্বহাইড্রেট মুক্ত। সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো এর স্বাদ অসাধারণ। তাই শরীরকে ফিট ও সুস্থ রাখতে কাজু বাদাম খাওয়ার কোন বিকল্প হয়না।
গবেষণায় জানা গেছে, যারা নিয়মিত বাদাম খান, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে। এ ছাড়াও তাদের মধ্যে ক্যানসার ও হৃদরোগের হার কম থাকে। জেনে নিন কাজুবাদামের নানা উপকারিতা ও ব্যবহার
১. সংক্রমণকারী রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি
সবুজ কাজুবাদাম সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ জমা করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। সবুজ কাজুবাদাম শরীরে রোগ প্রতিরোধক কার্যক্রম বৃদ্ধি করে এবং সংক্রমণকারী রোগ প্রতিরোধ করে।
২. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে
প্রতিদিন বাদাম খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের বাড়তি ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে ফেলে। এটি আমাদের শরীরের এইচ,ডি,এল বাড়িয়ে তোলে এবং এল,ডি,এল নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর এ কারনেই শরীর ফিট রাখতে প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ হলেও কাজু বাদাম খাওয়া উত্তম।
৩. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে
কাজু বাদাম রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে ও ডায়াবেটিস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে তোলে। কাজু বাদামে উপস্থিত উপকারী ফ্যাটস, ভিটামিন, মিনারেলস শরীরে গ্লুকোজের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রতিদিন খাবার খাওয়ার আগে প্রায় আধ ছটাক পরিমাণ কাজু বাদাম খাওয়া বাঞ্ছনীয়।
৪. মস্তিষ্কের কার্যশক্তি বৃদ্ধি
কাজু বাদাম আপনার মস্তিষ্কের জন্য একটি অন্যতম সেরা খাদ্য। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ কাজু বাদাম আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্রম সঠিক রাখতে ও স্মরণশক্তি বাড়াতে খুব সাহায্য করে। এছাড়া বাদামের জিঙ্ক উপাদান ও মিনারেল মস্তিষ্কের সেল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। তাই নিজের স্মরণশক্তি বাড়াতে ও মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে প্রতিদিন একমুঠো কাজু বাদাম গ্রহণ করুন।
৫. ওজন কমাতে
নিয়মিত চার-পাঁচটি কাজু বাদাম খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা থাকে না। ফাইবার আর প্রোটিন সমৃদ্ধ কাজু বাদাম অত্যন্ত যত্ন সহকারে আপনার শরীরের বাড়তি ওজনটুকু ঝরিয়ে দেবে।
৬. শক্তিশালী হাড় গঠনে
কাজু বাদামের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস উপাদান আপনার শরীরের হাড়ের সুষ্ঠু গঠন নিশ্চিত করে। মজবুত আর শক্তিশালী হাড় গঠনে কাজু বাদামের সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয়না। এছাড়া উষ্ণ বাদাম তেলের মালিশ আপনার বাচ্চার দেহের হাড় মজবুত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। আমরা প্রায়ই বাদাম আর কাজু বাদামকে এক করে ফেলি। কিন্তু মনে রাখতে হবে বাদাম আর কাজু বাদাম এক নয় আর এদের পুষ্টিমান আর গুনাবলিও এক নয়।
৭. শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে
সব বাদামের মধ্যে আলমন্ড বেশি পরিমাণে আছে। যা শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ত্বকের নানা রকমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত, উদ্বীপ্ত ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের বলিরেখা দূর করতে কাজু বাদামের জুড়ি নেই।
৮. হৃদরোগে প্রতিরোধে
হৃৎপিণ্ডের জন্য বেশ উপকারি। কাজু বাদাম খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা অনেক গুণ কমে যায়।
৯. চুলের গোঁড়া মজবুত করতে
সবুজ কাজু বাদাম এর ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ চুলের গোঁড়ায় পুষ্টি যোগায়। ফলে চুল পড়া কমে গিয়ে চুলের গোরা হয় সুস্থ ও মজবুত। এবং চুল হয় আকর্ষনীয়।
১০. ত্বকের যত্নে
ত্বকের জন্য যেসব খাদ্য সবচেয়ে ভালো সেসব হল-উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি এবং ই সৌন্দর্যকে ধরে রাখবে। কাজু বাদাম হলো ভারী ময়েশ্চারাইজার। ভারী হলেও এটি মুখের ব্ল্যাকহেডস, ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বক এ যারা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারে না, তাদের জন্য অনেক উপকারী।
১১. চোখের নীচে কালো দাগ
কাজু বাদামের তেল চোখের নীচের কালো দাগ দূর করে। তাছাড়া কাজু বাদাম বেটে, ওই পেস্ট রাতে ঘুমানোর সময় চোখে দিয়ে ঘুমালে, চোখের নীচের কালো দাগ চলে যায়। চোখের বলিরেখা, চোখ ফুলা ভাবও কমে যায়। কাজু বাদাম চোখের নীচের দাগ দূর করতে যেকোনো ভালো আই ক্রিম এর থেকেও ভালো।
১২ মাংসপেশী ও স্নায়ুর সঠিক কাজ ও হাড় মজবুত
কাজু বাদাম ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। আমাদের শরীরে দৈনিক ৩০০-৭৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন। আর এটা পূরণ করে এ বাদাম। কাজু মাংসপেশী ও স্নায়ুর সঠিক কাজ ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
১৩ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
কাজু বাদামে কোলেস্টেরল থাকে না, এবং এতে ভালো ফ্যাট আছে। খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমতে সাহায্য করে কাজুবাদাম। তাছাড়া কাজুতে অলেইক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অনেক উপকারি। কাজুতে সোডিয়াম কম এবং পটাসিয়াম বেশি থাকে। যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
১৪ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
কাজু বাদামে সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ই থাকে। কাজুতে থাকা জিংক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আপানাকে সুস্থ রাখে। কাজু ফ্রি র্যাডিকেলের জারণ প্রতিরোধ করে, যার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
১৫ হরমোনের উৎপাদন
কাজুতে উচ্চমাত্রার কপার থাকে তাই এনজাইমের কাজে, হরমোনের উৎপাদনে এবং মস্তিস্কের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও লাল রক্ত কণিকার উৎপাদনেও সাহায্য করে। এক কথায় এটা অ্যানেমিয়া প্রতিরোধ করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০৪