আজ ১ ডিসম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৮ সাল থেকে পহেলা ডিসেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ’এইডস নির্মূলে প্রয়োজন জনগণের অংশ গ্রহণ’।
সরকারের জাতীয় এইডস/এসডিটি কর্মসূচির ২০১৮ সালের তথ্য মতে, বিশ্বে এইচআইভির সংক্রমণ কমছে, তবে বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর নতুন করে ৮৬৯ জন সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে। আর এক বছরে মারা গেছে ১৪৮ জন। দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৫৫ জন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। আর এ পর্যন্ত মারা গেছে ১ হাজার ২২ জন। দেশে এইচআইভি সংক্রমিত মানুষ আছে ১৩ হাজারের মতো। কিন্তু তাদের সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এইচআইভি বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবদেহে এইচআইভি প্রবেশ করার সাথে সাথেই শরীরে এইডস এর লক্ষণ দেখা যায় না। এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশের কতদিন পর একজন ব্যক্তির মধ্যে এইডস এর লক্ষণ দেখা যাবে তা নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপর। এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস হওয়া পর্যন্ত সময়ের ব্যাপ্তি সাধারণত ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বৎসর এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে। এই সময়কালে এইচআইভি সংক্রমিত একজন ব্যক্তি নিজের অজান্তেই অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন।
চট্টগ্রামে বাড়ছে এইডস রোগীর সংখ্যা, অধিকাংশই প্রবাসী পুরুষ
বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে এইডস (একোয়ার্ড ইমমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম) রোগীর সংখ্যা। দিনকে দিন বাংলাদেশেও বৃদ্ধি পাচ্ছে এ রোগীর সংখ্যা। শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই গত একবছরে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৭১ জন। যার মধ্যে অধিকাংশই পুরুষ। চট্টগ্রামের এইচআইভি সংক্রমিত পুরুষের মধ্যে অধিকাংশ সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, ম্যালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ফেরত বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এন্টি রিক্ট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার সূত্র।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের এন্টি রিক্ট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার (এআরটি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর ৪২১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২০১৮ সালে ছিল ৩৫০ জন। নতুনভাবে চট্টগ্রামে নভেম্বর ২০১৮ থেকে অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে ৭১ জন। তার মধ্যে ২১৯ জন পুরুষ ও ১৬০ জন মহিলা। এছাড়াও শিশু ছেলে রয়েছে ২৬ জন ও মেয়েশিশু রয়েছে ১৪ জন। তৃতীয় লিঙ্গ রয়েছে ২ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অ্যান্টি রিক্ট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টারের আউটডোর মেডিকেল অফিসার সঞ্জয় প্রসাদ দাশ বলেন, আমাদের চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ পুরুষ প্রবাসে থাকার সময় এইচআইভিতে সংক্রমিত হয়ে দেশে আসেন। স্ত্রীর সাথে এইচআভি সংক্রমিত গোপন রেখে শারীরিক মিলনের ফলে স্ত্রীও ওই রোগে সংক্রমিত হচ্ছে। এমনকি পিতামাতার কারণে নবজাতক শিশু সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছে।
ঝুঁকিতে বাংলাদেশ : বাড়ছে এইডস রোগীর সংখ্যা
দেশে ধারাবাহিকভাবে এইচআইভিতে আক্রান্ত নতুন রোগী এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। আগে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন রোগী বেশি পাওয়া যেত। কিন্তু এ বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বেশি দেখা গেছে।
জাতিসংঘের এইচআইভি/এইডসবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের গত বছরের প্রাক্কলন বলছে, বাংলাদেশে এইচআইভিতে আক্রান্তদের অনুমিত সংখ্যা ১৩ হাজার। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ৬ হাজার ৪৫৫ জন শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তের বাইরে থাকা মানুষ চিকিৎসাও নিচ্ছে না, অন্যদিকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির কর্মকর্তারা বলছেন, এইচআইভি–আক্রান্তদের ৫০ শতাংশ জানেনই না যে তাঁদের এই রোগ হয়েছে। যাঁরা জানেন, তাঁদের এক–তৃতীয়াংশের বেশি চিকিৎসা নেন না।
এদিকে অভিবাসনের মাধ্যমে দেশে এইচআইভি/এইডস ছড়িয়ে পড়ছে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণে দেখা গেছে, এইচআইভি আক্রান্তদের ৩০ শতাংশেরও বেশি অভিবাসী অথবা তাদের পরিবারের সদস্য। অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, একই সুচ ব্যবহার করে শিরায় মাদক গ্রহণসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এইডস সংক্রমণ হলেও অভিবাসনের মাধ্যমে সংক্রমণের ঘটনা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪০