হালাল এবং হারাম খাওয়া দাওয়া নিয়ে সব সময়ই আমার চিন্তার ভিন্নতা আছে। হারাম খাদ্য দ্রব্য খাওয়া নিষেধ ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি। নিষেধ তো কত কিছুতেই আছে। ঘুষ, সুদ , জেনা , মিথ্যে কথা বলা , পরনিন্দা , পরচর্চা , চুরি ডাকাতি , একদম নিকটাত্মীয় ছাড়া মহিলাদের চেহারা দেখা , খুন আরো অনেক অনেক কিছুই নিষেধ আছে ধর্মে। মানি কতজনে আমরা ? কিন্তু কেউ যদি কোন হারাম হিসেবে চিহ্নিত খাদ্য দ্রব্য খায় , তা হলেই আমরা বিশেষ ভাবে তাকে দেখি বা হাসাহাসি করি। কিন্তু একজন ঘুস খোরকে আমরা সমাদার করি। খুনি একজনকে বাঁচানোর জন্য জাঁদরেল উকিল নিয়োগ করি। খালেদা হাসিনা কে আমরা বয়কট করিনা , শরিয়তের নিষেধ পালন করেন না বলে।
আল্লাহ নিজে আদম হাওয়াকে গন্ধম খাওয়া থেকে বিরত করতে পারেন নি। আমরা হারাম বিষয়ে যা জানি তা হলো - প্রচলিত কথা বা হুজুর গন আমাদেরকে যা বলেন তাই। একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বাষ করি - আদম হাওয়া আমাদের আদি পিতা মাতা। খাওয়ার বিষয়ে ওনারা আল্লাহর নিষেধ শুনেন নাই। এই অমান্যের বৈশিষ্ট আমাদের মধ্যে থাকবে, তা আর বিচিত্র কি ?
হারাম হিসেবে প্রচলিত যে সব খাদ্য আমি খেয়েছি ।
১। কাকরা ।
বাসার পাশের এক মৎস্য কর্মকর্তার বাসায় মাঝে মাঝে কাকরা এবং কচ্ছপ রান্না হতো । একদিন বলেই ফেললাম , আমিও খেতে চাই। প্রথম খেলাম কাকরা । দারুণ স্বাদ । শলা চিংড়ি মাছের মতই । ভুনা খেলে টেস্ট বেশী। এরপর থাইল্যান্ড যতবার গিয়েছি- একবার ও বাদ যায়নি। দারুন রান্না থাইল্যান্ডের পাতায়ায় ।
খুবই টেস্টি
এভাবেও পাওয়া যায়
২। কচ্ছপ
যারা এটা খান নি , তারা বুঝবেন না কত সুস্বাদু এটা । এটাও প্রথম খেয়েছি পাশের বাসার ওই দাদার বাসায়। তারপর খেপুপাড়া রাখাইন পল্লিতে এক বন্ধুর বাসায় । খাসির কুরকুরে হাড্ডির মত। কচকচে গোস্ত । তবে কেউ যদি এর আসল স্বাদ পেতে চান , তবে তাঁকে থাইল্যান্ড যেতে হবে। রেসিপি জানলে অবশ্য রান্না করা যায়। কিন্তু রেসিপি তো জানিনা
কচ্ছপের ফ্রাই ।
কত লোভনীয় দেখলেই বুঝা যায়। এটা খেতে হবে একটু ঝাল সস দিয়ে
৩। শামুক
প্রথম এটা খেয়েছি থাইল্যান্ডের পাতায়াতে । আস্ত সিদ্ধ করা থাকে । আপনার যেগুলো পছন্দ হবে , সেগুলোর উপরের দিকটা কিছুটা ভেঙ্গে , মসলা সহ প্লেটে আপনার সামনে দিবে। নিজের ইচ্ছেমত মসলা মিশিয়ে কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মুখে দিতে হয় । আমার কাছে ততটা ভালো লাগেনি। তবে ট্যুরিস্টরা এটা খায় খুব।
৪। পোকামাকড়
এটাও থাইল্যান্ডে প্রথম খেয়েছি। দু ধরনের পাওয়া যায় । হালকা ভাজা , এটা খেতে হয় সস দিয়ে। আর করকরে ভাজা, এটা খেতে হয় মরিচের গুড়া , বিট লবন ছিটিয়ে , অনেকটা আমাদের দেশের চানাচুর ভাজার মত।
খারাপ লাগে না খেতে
সস দিয়ে খাওয়া
পোকা মাকড় বিক্রেতা । বিশাল বাজার ।
হালাল হারাম সম্পর্কে কোরআন / হাদিছ :
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ احل لكم صيد البحر وطعامه متاعا لكم তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে। (সূরা মায়েদাহঃ ৯৬)
হাদিস শরীফে রাসুল সাঃ ইরশাদ করেনঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং এর মধ্যে মৃতপ্রাণী হালাল। (তিরমিযি, আবু দাউদঃ হাদিসটি আল্লামা আলবানী ছহীহ বলেছেন।)
শুনেছি আরব দেশে কাকড়া খুবই লোভনীয় এবং পছন্দনীয় একটি খাদ্যদ্রব্য। তবে সে কাকড়ার রং টা সাদা। আমাদের দেশের কাকড়া লাল/কালো । আরবের মুসলমানগন কই জানেন না , কাকড়া খাওয়া হারাম ? ওনাদের হেদায়েত করার জন্য , আমাদের দেশের হুজুরদের পাঠাতেই হবে
খুবই বিভ্রান্তির মাঝে আছি
অ:ক: এই পোষ্ট কোন ভাবেই প্রচলিত খাবারের বিকল্প এসব , তা যেন কেউ মনে না করেন। আমি জাষ্ট টেষ্ট করার জন্যই এসব দু একবার খেয়েছি। আসলে আমরা সমস্ত নিষেধ গুলো কেন মানি না - এই বক্তব্যটাকেই জোড় দেয়া হয়েছে এখানে।