" হৃদয় আছে যার সেই তো ভালোবাসে। সব মানুষেরই জীবনে প্রেম আসে ।"
প্রেম আমারো এসেছিলো দুয়ারে । অতি নিরবে । বসন্তের সবটুকু শুভ্রতা আর জানা অজানা ফুলের সুবাস নিয়ে । তপ্ত মরুভমির অসহ্য উত্তাপের তৃষিত হৃদয়ে সে এসেছিল একফোটো জল হয়ে। বসন্তের নির্মল হাওয়ায় আমার হৃদয় ভেসেছিলো ভালোবাসার প্লাবনে । একরাশ প্রশান্তির আবেশ ছড়িয়ে পড়েছিল দেহ মনে ।। রবীন্দ্রনাথের গানের মতো -
"হৃদয় আজি কেমনে গেল খুলি,
জগৎ আসি সেথা করেছে কোলাকুলি ।"
পাখির কলকাকলীর মতো সেই মধুর দিনগুলো ছিল স্বর্গীয় ভালোবাসায় ভরপুর । সেই প্রথম শুনেছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে আকাংখিত , প্রচন্ড ভালো লাগার শব্দটি। " ভালোবাসি" ।
বলেছিলাম - আমিও যে তোমায় ভালোবাসি ।
-কতটুকু ?
-যতটুকু হলে তোমাকে পাওয়া যায় ।
- তাহলে বলোনি কেন এতদিন ? কেন রেখেছিলে লুকিয়ে ?
- যদি তুমি প্রত্যাখ্যান করো সেই ভয়ে ।
- বোকা ছেলে । এতদিন একসাথে পড়ি। তুমি কি কখনোই বুঝতে পারোনি আমার মনের কথা !
- তুমিও তো আমার হৃদয়ের কথা বুঝতে পারোনি । শুধু তোমার হাসিমুখ দেখব বলে, শুধু তোমার সেই নিষ্পাপ চাহনি দেখার জন্য ছুটে আসি তা কি তুমি বুঝনি?
- শুধু আজকের দিনটির জন্য কতদিন অপেক্ষায় রয়েছিলাম। বারবার যে আমি শুধু তোমাকেই চেয়েছি ।
চুপ করে ছিলাম । গভীর ভালো লাগা আর ভালোবাসায় ছিলাম আচ্ছন্ন । সে আমার চোখে চোখ রাখল । এ এক অন্য রকম চাহনী । যে চাহনীতে সবকিছুই বদলে যায় । আমিও ওর কাজল কালো মায়াবী আঁখিতে মুগ্ধ বিস্বয় নিয়ে চেয়ে রইলাম । কত কথাই যেন সে চোখে জমে রয়েছে । কত কিছুই না ও দুটি চোখ বলতে চায় । মনে হচ্ছিল আমি সারাটি জীবন সেই মায়া ভরা চোখের দিকে চেয়ে কাটিয়ে দিতে পারব । সেই থেকেই ভেসেছিলাম ভালোবাসার স্বপ্ন সুখের ভেলায় । হৃদয়ের কত আকুলতা , না বলা কথা , কিছু জমানো ব্যথা বিনিময় আর ভালোবাসার রঙ্গীন সব জাল বোনা । সেই ভালোবাসার জাল অনেকদুর বিস্তৃত হয়েছিলো ।
"তোমাকেই যেন ভালোবেসেছি শত রূপে শতবার,
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।"
সবে মাত্র কলেজে পা দিয়েছিলাম । স্কুলের স্যারদের কড়া নিয়ম কানুন আর মা বাবার কঠো শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে আনন্দ উচ্ছাস ছিল বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো ! নিজের অজান্তেই পিঠে দু`টো পাখা গজিয়েছে । সেই পাখা নিয়ে একা একা উড়ে বেড়াই আর খুঁজে ফিরি মনের মানুষকে ।
শীতের পাতা ঝড়া মুগ্ধ বিকেল। চারিদিকে হিম হিম মৃদু পরিবেশ । এমনই এক বিকেলে ওর সাথে প্রাইভেটে ভালোবাসার সম্পর্ক । দুজন দুজনকে কাছে পাওয়া! কিছু সুখ, কিছু আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া । তারপর কতদিন, কতটা সময় একসাথে ঘুরে বেড়িয়েছি। কখনো হাতে হাত রেখে ফয়স লেকের নির্মল ঠান্ডা জলের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া । আবার কখনো লেকের শান্ত জলে নৌকায় চড়ে ভেসে বেড়ানো । কখনো বা সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় বসে আদিগন্ত মাঠ ঘাট পেরিয়ে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদুরে হারিয়ে যাওয়া । আবার নয়ত পতেঙ্গা সৈকতের ভেজা বালিতে পা ভিজিয়ে সমুদ্রের বিশালতার মতো নিজেদের প্রেম কে পরিপূর্ণ দানের প্রচেষ্টা । বৃষ্টি ভেজা নগরীতে পাশাপাশি রিকশায় বসে স্নিগ্ধ প্রকৃতি উপভোগ করা এবং আরো কত কি ! জীবনের কঠিনতম বোধ গুলোর মাঝে বারবার এসে ছুঁয়ে দিচ্ছিলো এক অনুভুতি । রবীন্দ্রণাথের ভাষায় -
"সমাজ সংসার মিছে সব
মিছে এই জীবনের কলরব
কেবল আঁখি দিয়ে ,আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব
আঁধারে মিশে গেছে আর সব ।"
তারপর আজ কতদিন পেরিয়ে গেছে । আজো মনে পড়ে সেউ উথাল পাথাল করা প্রেমের সময় গুলো । মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরণে গেঁথে রয়েছে সবকিছু। । প্রথম প্রেমের স্মৃতি কি কখনো ভোলা যায় ? যদিও এর পরের ইতিহাসটুকু বড় করুণ । কঠিন নির্মমতা আর গাড় বিষাদের গল্প । প্রতারনা বঞ্চনা আর অভিমানে বুক ভেঙ্গে যাওয়া । অন্য পোষ্টে না হয় এই বিষয়ে বলব ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:৪২