মুক্তির কথা বলতে গিয়ে আমার পিতা পিতামহ
এক বর্ষার অন্ধকার কাদাময় পথ বেয়ে যশোর রোড হয়ে
হেটে চলছিলেন অবিরাম।
আমার পিতামহী তার নূজ্য শরীর নিয়ে ধীরপায়ে,
কোলে থাকা বড়'পা তখন সেই স্যাতস্যাতে শীতার্ত রাতে,
অনভ্যস্ত হাতে বোরকা সামলাতে সামলাতে আমার কিশোরী মা,
আর বাবা -মায়ের স্বপ্নের ভেতরে হয়তো আমিও,
আমরা সবাই চুপচাপ,গৃহতাড়িত উদ্বাস্তু হয়ে কলকাতার পথে
সেই তীব্র বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে হেটে চলি ,হেটে চলি...।
ছত্রিশ বছর পরে কোন এক বিকেলে আমাকেও
উদ্বাস্তু করে দেয় কিছু উন্মাদ মানুষ,
আমার অন্তর্জালের ঘর,দীর্ঘ ৬ মাসে জমানো কথামালা,
অনেক প্রিয় মানুষের ঠিকানা,
অনেক রাগ-অভিমান-দূ:খ-ক্ষোভ
সব কিছু থেকে হঠাৎ একদম বিনানোটিশে উৎখাত করে আবারও কিছু হায়েনা শাবক তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ভাবে ,
বেশ একহাত দেখে নেয়া গেল তবে।
আবারও মুক্তির কথা বলায়,
আবারও আমার স্বাধীনতার কথা বলায়,
আবারও আমার মায়ের অধিকারের কথা বলায়
আবারও উদ্বাস্তু হতে হয়।
আমার পিতামহ ফিরতে পারেন নি আর নিজ ভূমে,
তবে আমার পিতা ঠিকই ফিরেছিলেন।
ফিরেছিলেন পাশের বাড়ির জয়ন্ত দা,
ফিরেছিলেন মাহবুব ভাই
মিছিলে মিছিলে মাথা উচুঁ করে ফিরেছিল অসংখ্য মানুষ
পিপড়ার পালের মতো,বন্যার জলের মতো অসংখ্য
ঘরছাড়া মানুষ ফিরেছিল আবার নিজের ঘরে।
নির্বোধ হায়েনারা জানে না,
ঘর ছাড়া করলেই
মুক্তির কথাকে চুপ করা যায় না।