একটা সময় ছিল যখন মেয়েটার মনটা ছিল একদম টলটলে দীঘির জলের মতো, সেই জলে কখনও কোনও পঙ্কিলতা জায়গা করে নেয়নি, সেই জলের স্বচ্ছতা নিয়ে কখনও কারো মনে কোনও প্রশ্নও জাগেনি, অমৃতের চেয়ে সেই পানি কম ছিলোনা কোনও ভাবেই, তবু মেয়ের মনে বড় ক্ষোভ। তার মনের দীঘিতে কেন কোনও রাজহাঁস এসে জায়গা করে নেয় না? কেন সাঁতার কাটেনা সেই শ্বেত শুভ্র পাখি? মা কিন্তু বারবার বকা দেয় বোকা মেয়েটিকে, খবরদার, রাজহাঁসের স্বপ্ন দেখবিনা, ছদ্ম বেশে তোর কাছে আসবে কোনও মড়াখেকো শকুন,দিঘির জলে তার বাস নয়, সে শুধু আসবে তোর সর্বনাশ করতে, তুই যখন ওর পিপাসা মেটাতে চাইবি পানি দিয়ে,সে শুষে নেবে তোর জীবন।
অবুঝ মেয়ে মানেনা সে কথা, সে ভালো করেই জানে, ওর রাজহাঁসের দেহ মন দুটোই সাদা, এবং সে আসবেই। আজ,কাল অথবা কোনও এক দিন,কিন্তু তাকে আসতেই হবে। সে অপেক্ষা করে থাকবে আর সে আসবেনা এটা হতেই পারেনা।
অবশেষে সেই টলটলে দীঘিতে আগমন সেই রাজহাঁসের। তার বিচরণে ঘোলা হয়ে যায় জল। কিন্তু স্বাভাবিক এই জিনিসটা রাজহাঁস মানতে চায়না, সে বলে,আমার জন্য কি তুমি কলুষিত হবে? মেয়ে বলে,এ তো কলুষিত হওয়া নয়,এ আমাদের প্রেম। আমি তো তোমায় বলেছি আমার মন শুধু তোমার জন্য।
রাজহাঁসের অনুচরেরা খিক খিক হাসে, মুখ বাঁকায়, আহা কি ভালোবাসা! সাদা পাখি আর কালো জলের ভালোবাসা। এ কি কখনও পরিণতি পাবার মতো?
ক্রমে ঘনিয়ে আসে শীত, তীব্র থেকে তীব্রতর হয়, মেয়ে চায় তাকে ছেড়ে চলে যাক রাজহাঁস, নিজের জীবন বাঁচাক, কিন্তু পাখির মনটা তো খুব শুভ্র, সে প্রিয়তমাকে ছেড়ে যেতে চায়না, একে একে সবাই রাজহাঁস কে ফেলে চলে যায় গরমের দেশে, প্রাণ বাঁচাতে। এক সময় রাজহাঁসও হাল ছেড়ে পাড়ি জমায় বহুদূরে। সুদূরে বসে কাঁদে মেয়ের কথা ভেবে।
এক সময় শীত শেষ হয়, রাজহাঁস ফিরেও আসে। কিন্তু দেখে কোথায় শুকিয়ে গেছে সেই অতলান্ত দিঘি। সেই মেয়ের কোনও খোঁজ নেই,আছে শুধু তার ফেলে রাখা এক গুচ্ছ কাশ ফুল। রাজহাঁস দেখেই বুঝতে পারে, ওর প্রিয়তমা এখানে নেই,আছে অনেক দূরে কোথাও,কিন্তু সবসময় সে শুধু ওর হয়েই থাকবে।