হার্টের অসুখ ও হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা দেশে বাড়ছে। বুকে ব্যথা, সঙ্গে ঘেমে যাওয়া অথবা শ্বাসকষ্ট মোটেই উপেক্ষা করার মতো লক্ষণ নয়। অনেকেই পেপটিক আলসারের ব্যথা ভেবে বুকের ব্যথাকে অবহেলা করি। কিন্তু রোগীর বয়স, বিভিন্ন রিস্ক ফ্যাক্টর বিবেচনা করে এর যথাসম্ভব দ্রুত চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে আসবে।
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্টের কোনো একটা অংশ প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ না পেলে অঙ্েিজনের অভাবে সেখানকার মাসলগুলো মরে যায় বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়_ এটাই হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন।
হার্ট অ্যাটাকের কারণ :-
বেশির ভাগ হার্ট অ্যাটাক রক্ত জমাট বেঁধে ক্লট বা ব্লক তৈরি হওয়ার কারণে হয়। এ ক্লট সাধারণত হার্টের ধমনি বা করোনারি আর্টারিতে পূর্ববর্তী অ্যাথরোস্ক্লোরিক পরিবর্তনের ফলে হয়।
রিস্ক ফ্যাক্টর :-
* ধূমপান * অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন * রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও ফ্যাট * পরিবারের নিকটাত্মীয়ের মধ্যে এ রোগের উপস্থিতি
* বয়স ৪৫ বছরের বেশি হলে * মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি * স্ট্রেস বা অতিরিক্ত চাপ।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ :-
* বুকে ব্যথা, যা সাধারণত চেপে ধরা বা বুক ভারী লাগার মতো অনুভূত হয় * শ্বাসকষ্ট * প্রচুর ঘাম * বমি বমি ভাব
অনেক সময় ব্যথা বাঁ হাতে বা নিচের চোয়ালেও অনুভূত হতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ওপরের লক্ষণগুলো সম্পূর্ণ প্রকাশিত না-ও হতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে বুকে ব্যথার অনুভূতি কম থাকতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা :-
ইসিজি-ইসিজিতে (ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম) হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যা দিয়ে হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেখানে হার্ট পেশির অল্প অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেখানে ইসিজিতে পরিবর্তন না-ও আসতে পারে। তাই ইসিজি স্বাভাবিক থাকলেও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা নাকচ করে দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষার সাহায্য নিতে হবে।
রক্ত পরীক্ষা
হার্ট অ্যাটাক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রক্তের কার্ডিয়াক এনজাইম পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ট্রপনিন-আই, সিকে-এমবি এবং মায়োগ্লোবিন পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত হার্ট মাসল ইনজুরি হওয়ার পর রক্তে এগুলোর পরিমাণ বেড়ে যায়, যা হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত দেয়।
অন্যান্য পরীক্ষা
এ ছাড়া হার্টের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বুকের এঙ্-রে, ইটিটি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি এবং করোনারি এনজিওগ্রাম করা হয় ।
হার্ট অ্যাটাক হলে যা করবেন
হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে প্রতিটি মুহূর্ত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া যাবে ততই বেড়ে যাবে রোগীর জীবন বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা।
প্রথমত. হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই নিকটতম কার্ডিয়াক বা হার্ট হাসপাতালে নিতে হবে। প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সের সাহায্য নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত. রোগী যদি বুকে ব্যথার পর দ্রুত খারাপ হয় বা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তাহলে শ্বাসনালি, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং সার্কুলেশন পরীক্ষা করার পর পালস্ না পাওয়া গেলে বুকে চাপ দেওয়া বা চেস্ট কম্প্রেশন ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে হবে এবং দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি হয় হার্টের অস্বাভাবিক কাঁপনের ফলে, যাকে ভেন্টিকুলার ফিব্রিলেশন বলে। এটি রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে ডিসিব্রিলেশনের কোনো বিকল্প নেই, যা কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সে প্যারামেডিকের কাছেও থাকে।
আর বুকে ব্যথার রোগীর যদি জ্ঞান থাকে, তাহলে ট্যাবলেট এসপিরিন (৩০০ মিলিগ্রাম) দেওয়া উচিত, যাতে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া প্রতিরোধ করা যায়। আবার নাইট্রোগি্লসারিন স্প্রে জিহ্বার নিচে দেওয়া যায়।
তৃতীয়ত. রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে। পর্যাপ্ত বাতাস পায় এমন স্থানে রাখতে হবে এবং রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিশ্রাম দিতে হবে। যাতে হার্টকে বেশি কাজ করতে না হয়।
সতর্কতা
সুতরাং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়াতে ধূমপান পরিত্যাগ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি নিয়মিত সহনীয় মাত্রায় ব্যায়াম বা হাঁটা এবং চাপমুক্ত জীবনযাপন অত্যন্ত জরুরি।
জনস্বার্থে শেয়ার করলাম
সংকলন তথ্য -ডা. এ জেড এম আহসান উল্লাহ
ইমার্জেন্সি বিশেষজ্ঞ