somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতি চলেছে কোন পথে ?

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সভা- সমাবেশ, বিক্ষোভ -মিছিল, ধর্মঘট,অনশন, অবরোধ, মানব বন্ধন, লং মার্চ, হরতাল, অসহযোগ আন্দোলন ইত্যাদি কর্মসূচি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত। আমাদের সংবিধানেও রয়েছে নাগরিকদের মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা(অবশ্য সাম্প্রতিককালে প্রণীত এক আইনের দ্বারা নাগরিকের এই স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে); স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা মিলবে রাজনৈতিক কর্মসূচীর এক গৌরবজনক অধ্যায়ের। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতির মাঠে ময়দানে রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে যে ভয়াবহতা আর বীভৎসতা চলছে তা দেখলে গা শিউরে উঠে। আন্দোলনের গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সহিংসতা আর ত্রাসের রাজত্ব। ভিন্নমতের প্রতি সরকারি দলের চরম অসহনশীলতা আর দমন পীড়ন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে দিনকে দিন। শান্তির ললিত বানী ব্যর্থ পরিহাসে পরিনত হয়ে রাজনীতিকে করে তুলেছে সংঘাত – সংঘর্ষ আর জ্বালাও পোড়াও সর্বস্ব।


সংসদীয় গণতন্ত্রে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। তাই রাজনৈতিক দল সমূহ জনপ্রিয়তার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে রাজনীতির অঙ্গনে শক্তি মত্তার পরিচয় দিবে এটাই কাঙ্ক্ষিত। বহুদলীয় গণতন্ত্রে যে দল যত বেশি জনপ্রিয় সে দল তত বেশি শক্তিশালী হিসাবে বিবেচিত। গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধের প্রতি প্রকৃত আস্থা এবং বিশ্বাস থাকলে সকল রাজনৈতিক কর্মসূচীর চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত সাধারণ জনতার হৃদয় জয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশীয় রাজনীতির বাস্তব পরিস্থিতি এর একশ আশি ডিগ্রী উল্টো। আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী মোটেও জনগণ বান্ধব নয়। জনগণের ক্ষমতার প্রতি রাজনৈতিকদের আস্থার অভাব প্রকট বিধায় রাজনীতিতে চলছে পারস্পরিক বল প্রয়োগ আর পেশি শক্তির ভয়াবহ প্রদর্শনী। বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে বল্গাহিন সংঘাত আর সংঘর্ষে জনজীবন বিপন্ন হতে চলেছে। আর আন্দোলনের নামে সৃষ্টি হয়েছে বোমাবাজি , কক্টেল বাজি, জ্বালাও পোড়াও তথা নাশকতার ঘৃণ্য রেয়াজ। গণতন্ত্র রক্ষার নামে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ক্ষমতা লিপ্সায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে ধীরে ধীরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এক চরম অনিশ্চয়তার পথে।


নির্বাচন কালীন সরকার নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল এক এক গুয়েমির পরিচয় দিচ্ছে। মুখে ছেলে ভুলানো সংলাপ আর সমঝোতার কথা বললেও কেউই তালগাছটির দাবি ছাড়তে পারছেনা। এতে এতজনগণের মঙ্গলের চেয়ে তাদের স্বার্থবাদীতার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে বেশি। ফলশ্রুতিতে অনিবার্য হয়ে পড়ছে সংঘাত – সংঘর্ষ আর ধ্বংসের বিভীষিকা। মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও এর মর্মবাণী হৃদয়ে ধারন কারীর সংখ্যা হাতে আসলে গোনা।


আইন ও শালিস কেন্দ্রের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে ক্ষমতার রাজনীতির এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। গত ১৯৯৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু বরন করেছে ২২৩৪ জন। বিগত ২২ বছরে প্রতিটি সরকারের শেষ বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রান হানি সর্বাধিক বলে প্রথম আলোর সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে জানা গেছে। গণতন্ত্র যদি হয় জনগণের নাগরিক অধিকার তবে সে অধিকার রক্ষায় এত প্রানহানি কেন ? জনগণ কিংবা দেশের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে বিবদমান রাজনৈতিক দল সমূহ কেন নিজেদের সৃষ্ট সংকটের গ্রহন যোগ্য সমাধান খুঁজে পেতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে? দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের ইগো বিসর্জন দিয়ে, কিছুটা আন্তরিক হয়ে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এলে অবশ্যই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের একটা সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান বের হয়ে আসার কথা। কিন্তু কেন প্রতি ৫ বছর পর পর জাতির ভাগ্যাকাশে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা ? সকল দল ও সচেতন নাগরিক মহলের মতামতের ভিত্তিতে এর একটা স্থায়ী সুরাহা হওয়া দরকার।



সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচীতে দেশের আর্থিক ক্ষয় ক্ষতির বিবরণ লিখে শেষ করা যাবে না। বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মসূচী গতি প্রকৃতি পরিবর্তন করায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছে মানবিক বিপর্যয়। আগে হরতালের মত কর্মসূচী পালনের জন্য রাজনৈতিক দল সমূহের ব্যাপক সাংগঠনিক প্রস্তুতির দরকার হতো। কিন্তু ইদানিংকালে হরতাল পরিণত হয়েছে সবচেয়ে সহজ সাধ্য ফলপ্রসূ কর্মসূচীতে। এর জন্য তেমন সাংগঠনিক প্রস্তুতি কিংবা পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়েনা। হরতালের ঘোষণা দিয়ে কিছু ভাড়াটে সন্ত্রাসীকে দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করতে পারলেই হয়ে যায় ঘরে বসে থেকে দারুন এক হরতাল উদযাপন। সাথে কিছু লাশের পরিসংখ্যান যোগ হলে তো আরও পোয়া বারো। এ ধরনের রাজনৈতিক নৃশংসতা চালানোর পর ধ্বংস যজ্ঞ কিংবা প্রানহানির জন্য হরতাল পালনকারীদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা করতে দেখা যায়না সে যে দলেরই হোক। হরতালে রক্তপাত আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে আজকাল। লাশ না পড়লে হরতাল কারীরা ও ভাবে – নাহ এবারের কর্মসূচীটা বুঝি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল!


পরিসংখ্যান বলে দেশের প্রধান দুই দলের দলীয় জন সমর্থনের পার্থক্য উনিশ বিশ। নির্বাচনে নিরপেক্ষ দোদুল্যমান ভোটাররাই প্রতিবার হয়ে উঠে সংখ্যা গরিষ্ঠতা নির্ধারণের প্রধান নিয়ামক। সরকার –বিরোধী দলের কর্মকাণ্ড বিবেচনা করেই তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকে । রাজনীতিবিদগন এ চরম সত্যটিকে আন্তরিকভাবে আমলে নিলে দেশে কোন অস্থিরতা কিংবা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। কারন তখন রাজনৈতিক দল সমূহের ধ্যান জ্ঞান থাকত এ সচেতন ভোট ব্যাংককে ঘিরেই। অথচ এ সহজ পথটিকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সবাই কেন বেছে নিতে চায় ক্ষমতায় আরোহণের দুর্গম পথ ?


আমাদের নেতা নেত্রীদের অন্তরে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগ্রত হোক। দলীয় চিন্তা চেতনার উর্ধে স্থান পাক দেশ ও আম জনতার মঙ্গল চিন্তা। সংঘাতময় বিপদসংকুল বক্র পথ পরিহার করে রাজনীতি চলুক সহজ সরল পথে। আমাদের গণতন্ত্রের ভীত হোক ইস্পাত কঠিন। কোন আলাদীনের চেরাগের দৈত্য এসে আমাদের জাতীয় সমস্যার সুরাহা করে দেবেনা। রাজনীতিকদের নিজেদের সৃষ্ট সংকট হতে উত্তরণের পথ খুঁজে নিতে হবে নিজেদেরকেই। আর তা যদি করতে অসমর্থ হন তাঁরা তবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের কপালে জুটে যেতে পারে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা। হাল আমলের সংঘাতময় রাজনীতি দেশকে কোথায় নিয়ে যায় সেটা আপাতত সময়ের হাতে সঁপে দেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় দেখছিনা।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×