somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিতামাতার ভরণপোষণ বিল-২০১৩ এবং কিছু কথা

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে পিতামাতার ভরণপোষণ বিল-২০১৩; এ বেসরকারি বিল টি ২০১১ সালে সংসদে উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। এটি পাশের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ একটি মানবিক দায়িত্ব পালন করল। পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী নির্দয় সন্তানদের অবহেলা, অনাদর থেকে বৃদ্ধ পিতা মাতাদের সুরক্ষায় এই আইন রক্ষাকবচের কাজ করবে বলে প্রতীয়মান।

যা আছে এ আইনেঃ

‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিল-২০১৩’ বিলে পিতার ঔরসে এবং মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান তার পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ না করলে তা হবে জামিন অযোগ্য অপরাধ। তবে আপোসযোগ্য।


ভরণ-পোষণ ও এর খরচ না পেলে বাবা-মা আদালতের আশ্রয়ও নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সন্তান সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা বা অর্থ দণ্ডসহ অনাদায়ে অনূর্ধ্ব ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।


কোনো সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ প্রদান না করতে প্ররোচনা দিলে উক্ত স্ত্রী বা স্বামীও কিংবা অন্য সহায়তাকারী উপরিউক্ত অপরাধে অভিযুক্ত হবেন।


প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে হবে। বিলের বিধান অনুযায়ী সন্তানের আয়ের যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ পিতামাতাকে দিতে হবে। কোনো পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকলে সেক্ষেত্রে সন্তানরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে বাবা-মার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে।


বিলে বলা হয়েছে, ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার সঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। কোনো সন্তান তার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বৃদ্ধনিবাস, বা অন্য কোথাও বা আলাদা আলাদভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবেন না।



প্রত্যেক সন্তান তার পিতামাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখবেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে। তারা পৃথকভাবে বসবাস করলে সন্তানদের নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে হবে।


শুধু পিতা বা মাতার ভরণ-পোষণই নয়, পিতা বা মাতার মৃত্যুর পরও যদি দাদা-দাদী বা নানা-নানী বেঁচে থাকেন তবে তাদেরও ভরণ-পোষণ দেওয়া নাতী-নাতনীর আইনি দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিলে।

অপরাধের আমল-যোগ্যতা, বিচার ও জামিন-সংক্রান্ত বিধানঃ


এ ব্যাপারে বলা হয়, ‘এ ধরনের অপরাধ প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য হবে। তবে কোনো আদালত এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট সন্তানের পিতা বা মাতার লিখিত অভিযোগ ছাড়া আমলে নেবে না। অভিযোগকারী পিতা বা মাতাকে শুনানির সুযোগ না দিয়ে কোনো আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেবে না।

কিছু কথাঃ

যে পিতামাতা অপত্য স্নেহে সন্তানদের লালন পালন করতে গিয়ে নিজেদের যাবতীয় সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননা, নিয়তির নির্মম পরিহাসে জীবন সায়াহ্নে এসে তাঁরা ছেলে মেয়েদের সংসারে হয়ে পড়েন অপাংত্তেয়, অনাকাঙ্ক্ষিত; পরিগণিত হন বিরাট বোঝা হিসাবে!
যে সকল স্বার্থপর সন্তান ধর্মীয়, পারিবিরিক ও সামাজিক মূল্যবোধ তথা অনুশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করতঃ বৃদ্ধ পিতামাতাকে অবজ্ঞা করেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই তাদের জীবনে অভিশাপ নেমে আসবে। পিতামাতা বদ দোয়া না করলেও তাদের কর্মফল ভোগ করতে হবে ইহকালিন জীবদ্দশায়। আর পরকালে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ আজাব। কিন্তু বর্তমানে ধর্মীয় অনুশাসন আর সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ অনেকের কাছে ঠুনকো হয়ে দাঁড়িয়েছে বিধায় কুলাঙ্গার সন্তানদের জন্য সতর্ক বার্তা হিসাবে এ আইন রাখতে পারবে যুগান্তকারী ভূমিকা। অবশ্য কয়জন বাবা মা চাইবেন সন্তানের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে সেটাও এক বিরাট প্রশ্ন।



দেশে পারিবারিক মূল্যবোধ ও চেতনা বিরোধী যে সকল বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠেছে সেগুলিকে আইন করে বন্ধ করে দেওয়া কিংবা অপরিহার্য ক্ষেত্রে লিমিটেড স্কেলে চালু রাখার বিষয়ে আইনি নজরদারি থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে যৌবন চিরস্থায়ী নয়। একদিন সবাইকে বার্ধক্যে উপনীত হতে হবে। নিজের বাবা মা কে অবহেলা করা হলে আপনার নিজের ক্ষেত্রেও যে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবেনা এর কোন গ্যারান্টি আছে কি ? আপনার সন্তান কিন্তু আপনাকে দেখেই শিখছে। অতএব একবার শুধু চোখ বন্ধ করে পিতামাতার স্থলে নিজেকে কল্পনা করুন, তাহলে আর এ আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবেনা কখনো।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×