পর্ব-৬
মানুষের একে অপরকে পছন্দ করার নীতিটি আসলে প্রধান তিনটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নির্ধারন হয়ে থাকে যেমন- ১) বংশগতি বা জেনেটিক্যাল কারন ২) পরিবেশগত প্রভাব এবং ৩) অভ্যাসগত বা অভ্যস্থতার কারন । তবে মানুষের পছন্দের ক্ষেত্রে বংশগতি বা জেনেটিক্যাল কারনটাই বেশী দায়ী। এই জেনেটিক্যাল কারন উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এখন মানুষের একে অপরকে পছন্দ করার নীতি আরো যে দুটি ভিত্তির উপর নির্ভর করে তা হল -পরিবেশগত প্রভাব এবং অভ্যস্থতার প্রভাব, এদুটি নিয়ে এবারে আলোচনা করা হবে তবে এই দুটি প্রভাবেরই একটা কমন বিষয় রয়েছে আর তা হল- এ দুটো প্রভাবই মানুষের অভ্যাসগত কারনেই সৃষ্টি হয় তারপরেও সুক্ষ্ণ বিচারে এবং পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করতেই দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ- ইন্ডিয়ার মাদ্রাজ, তামিল নাড়ুর পূরূষরা বেশীরভাগই শুধু গোঁফওয়ালা হয় বলে ঐ এলাকার নারীরা পরিবেশগত প্রভাবে গোঁফওয়ালা পুরুষদেরই বেশী সুন্দর মনে করে আর তারা গোঁফবিহীন পুরুষদের তেমন একটা পছন্দ করে না, এখন কোন কারনে যদি তামিলের কোন নারীর বিয়ে হল এমন এক পূরুষের সাথে যার দাড়ি-গোঁফ নেই বা রাখে না, এখন কিছুদিন ঐ স্বামীকে তার কাছে তেমন সুন্দর মনে না হলেও ধীরে ধীরে অভ্যস্থতার প্রভাবে একসময় ঠিকই সুন্দর লাগা শুরু হতে পারে। আবার তামিল কোন নারী যদি তামিল ছবি এবং তামিল চ্যানেলগুলো না দেখে সবসময় বলিউডের ছবি এবং ষ্টার প্লাস চ্যানেল ইত্যাদি নিয়ে পরে থাকে তবে কিন্তু উক্ত নারীও বিয়ের পূর্বেই অভ্যস্থতার প্রভাবে গোঁফওয়ালা পূরুষের চাইতে ক্লিয়ার সেভ করা ছেলেদেরকেই বেশী সুন্দর মনে করবে ঠিক যেমনটি বলিউডের হিরো এবং অভিনেতাদের চেহারা হয়ে থাকে। এখানে এই উদাহরণের দ্বারা বুঝা গেল যে সাধারনত জন্মের পর হতে জন্মস্থান বা নিজস্ব পরিবারসহ নিজস্ব এলাকাভিত্তিক যে রুচিবোধ মানুষের মাঝে তৈরী হয় তাকে ধরা হয় "পরিবেশগত" প্রভাব হিসেবে আর নিজস্ব এলাকার পরিবেশের প্রভাব ডিঙ্গিয়ে কেউ যদি কোনভাবে অন্যরকম কিছুতে অভ্যস্থ হয় তবে তাকে "অভ্যস্থতা" এর প্রভাব হিসেবে ধরা হয় যদিও দুটোই মানুষের মাঝে তৈরী হয় শুধুমাত্র অভ্যাসগত কারনেই কখনই জেনেটিক্যালী নয়। জেনেটিক কারনে তামিল ঐ নারীর পুরুষের দাড়ি গোঁফ দুটোই ভাল লাগার কথা কিন্তু ছোট হতেই নিজ পরিবেশের প্রভাবে শুধু তার গোঁফওয়লা পুরুষ বেশি সুন্দর লাগবে কিন্তু ঐ একই নারীই যদি আবার নিজ পরিবেশের প্রভাব ডিঙ্গিয়ে বলিউডে অভ্যস্থ হয়ে পরে তবে কিন্তু তারই আবার দাড়ি গোঁফ কোনটিই বেশি সুন্দর মনে না হয়ে উল্টো ক্লীন সেভ পুরুষদেরকে বেশি সুন্দর বা হিরো টাইপ মনে হবে। সুতারাং একজন মানুষের পছন্দ নির্ভর করে মৌলিক তিনটি প্রভাবের উপর ভিত্তি করে যেমন- ১) জন্ম গ্রহনের পূর্ব হতেই দৈহিকভাবে যা মানুষের মাঝে গাঁথা থাকে অর্থাৎ সরাসরি ঈশ্বর প্রদত্ত জেনেটিক্যাল প্রভাব। ২) জন্ম গ্রহনের পর হতে জন্মস্থান বা নিজস্ব পরিবারসহ নিজস্ব এলাকাভিত্তিক যে রুচির প্রভাব মানুষের মাঝে তৈরী হয় তা হল পরিবেশগত প্রভাব। ৩) সাধারনত বুদ্ধি হবার পর হতে কেউ যদি কোনভাবে উক্ত পরিবেশগত প্রভাব ডিঙ্গিয়ে কোন মাধ্যমের দ্বারা সম্পূর্ন অন্যরকম কিছুতে অভ্যস্থ হয়ে পরে তবে তাকে বলা হয় "অভ্যস্থতা" এর প্রভাব।
শুধু চেহারা পছন্দ নয় বরং ধর্ম হতে শুরু করে মানুষের পোষাক আশাক,কৃষ্টি- কালচার, বচনভংগী এমনকি সংগীত বা শিল্প-সংস্কৃতিগত রুচির পাশাপাশি অলংকার পছন্দের রুচিতেও উক্ত ৩টি নেচার দারূনভাবে প্রভাবিত করে।
সাধারনর ধর্মের ক্ষেত্রে জেনেটিক প্রভাব কাজ করে এভাবে যে, মানুষ জন্মগতভাবেই এমনভাবে সৃষ্টি যে সে তার চাইতে বৃহৎ কোন শক্তির কাছে মাথানত করতে চাইবে এবং বড় কোন ক্ষমতাশালীর কাছে মুখাপেক্ষী হবে। ভয়, জরা-মৃত্যু ইত্যাদি থেকে পরিত্রানের জন্য যিনি এসব থেকে মুক্ত তাঁর কাছেই সে সাহায্য প্রার্থনা করবে ইত্যাদি আরও বিভিন্ন কারনে প্রতিটা মানুষ জেনেটিক্যালীই ঈশ্বরের দিকে বা ধর্মের দিকে আসবে। মোটকথা জেনেটিক্যালীই মানুষ এমনভাবে প্রোগ্রামড করা যে সে আপনা-আপনিই আস্তিক বা ধর্মের দিকে ফিরবে। শুধু তাই নয় জেনেটিক্যালীই মানুষ এক ঈশ্বরমুখী এবং সঠিক ধর্মের অনুসারি হওয়ার জন্যও পূর্ব হতেই প্রোগ্রামড করা উদাহরণস্বরুপ- যারা বহুশ্বরবাদী তারাও কিন্তু সকল ঈশ্বরকেই পুরোপুরি একই সমান উপাসনা করতে পারে না, একটু হলেও কম বেশি হয় শুধু তাই না তারা সকল ঈশ্বরকেই একদম সমান সমান ভালবাসতে পারে না মোটকথা তারা সর্বদাই কোন একটি মাত্র ঈশ্বরেরই বেশি ভক্ত হয় অর্থাৎ একজন যদি একইসাথে ১০/২০ বা এরও বেশি ঈশ্বরের পুজো করে অথবা তাদের ভক্ত হয় তবু দেখা যাবে যে তাদের সবগুলোর মধ্যে কোন না কোন এক ঈশ্বরকেই শুধু সে একটু বেশি ভক্তি করে পূজো করছে, এমনকি কেউ যদি ৩ বা ২ ঈশ্বরেরও ভক্ত হয় তবু দেখা যাবে যে সে এক্ষেত্রেও কোন না কোন শুধু একজনকেই মনের সর্বচ্চ স্থানে রেখে পুজো করছে সুতারাং প্রতিটা মানুষই ঈশ্বর পছন্দের ক্ষেত্রেও জেনেটিক্যালীই শুধুই “এক সত্তা” কামী হতে বাধ্য আরেকটু উদাহরণ দিলে আরও ভালভাবে বুঝা যাবে- ধরা যাক এক ব্যাক্তি একইসাথে ৩ ঈশ্বরের পুজো করে আর এই ৩টি ঈশ্বরের ক্ষমতাও একদম সমান সমান তারপরেও উক্ত ব্যাক্তি কোন না কোনভাবে ৩ঈশ্বরের মাঝে বেছে বেছে শুধুমাত্র ১জন ঈশ্বরেরই একটু হলেও বেশি ভক্ত হবে এবং একটু বেশি ভালবাসবে এমনকি তার মন খুঁজে খুঁজে বেশি পছন্দের ঈশ্বরকে কোন না কোন দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ, বেশি ভাল বানাবেই অথবা মনে মনে একটু হলেও ভাববে যে, আমার প্রিয় ঈশ্বরের ক্ষমতা যদি কোনভাবে অপর দুইজনের চেয়ে বেশি হত! ইত্যাদি আরও বিভিন্নভাবে প্রমান করা সম্ভব জেনেটিক্যালীই প্রতিটা মানুষ এক ঈশ্বরমুখী হয় অর্থাৎ তার মনের সর্বচ্চ স্থানে শুধু এক ঈশ্বরের বেশি রাখতেই পারে না। অতএব বুঝা গেল যে জেনেটিক্যালীই ১মত মানুষ ঈশ্বরমুখী হয়ে ধর্মের দিকে আসার প্রবনতা রয়েছে কিন্তু সে বহুশ্বরবাদী বা একেশ্বরবাদীও হতে পারে কিন্তু আবার দেখা যায় ২য়ত সে জেনেটিক্যালীই এক ঈশ্বরকামীই হচ্ছে কিন্তু তারপরেও সে একেশ্বরবাদী হলেও সেই এক ঈশ্বরটিও ভুল ঈশ্বর হতে পারে বা সে ভুল ধর্মের অনুসারি হতে পারে। আর এখানেই সবচেয়ে অবাক করার বিষয় যে ৩য়ত সে এবারও জেনেটিক্যালীই সঠিক ঈশ্বরমুখী হবে বা সঠিক ধর্ম আপনা আপনিই বাছাই করবে। উদাহরণস্বরুপ- প্রতিটা মানুষ জেনেটিক্যালীই কৌতুহলী স্বভাবের হয়ে জন্মায় আর তার সেই কৌতুহল স্বভাব বশ্বতই সে তার ভুল ১ঈশ্বর বা ভুল ধর্মের প্রতি কৌতুহল দেখাবে এবং মনে বিভিন্ন যৌক্তিক প্রশ্নের উদ্রেগ হবে অতঃপর তার সাথে বাছ-বিচার ক্ষমতা যুক্ত হয়ে তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছিয়ে দিবে ফলে সে সঠিক ১ ঈশ্বরবাদী বা সত্য ধর্মে ফিরবে। এখানে উল্লেখ্য যে কৌতুহলী স্বভাবের পাশাপাশি আরও দুটি যেমন- যৌক্তিক প্রশ্ন আসার প্রবণতা এবং বাছ-বিচার করার ক্ষমতা এই মোট ৩টিই হল ঈশ্বরপ্রদত্ত জেনেটিক্যাল নেচার যা সকলের মধ্যেই বিদ্যমান। এখন প্রশ্ন হল- ১মত ধর্মের দিকে ফেরা হতে শুরু করে একদম সঠিক ধর্মে আসা পর্যন্ত সবই জেনেটিক্যালীই হলে তবে কেন বেশিরভাগ মানুষ ভুল ধর্ম মেনেই মৃত্যুবরণ করে?
আসলে এমন হবার কারন হল- মানুষের পছন্দের ১জেনেটিক্যাল কারন ছারাও আর দুটি কারন আছে যেমন ২পরিবেশগত কারন এবং ৩ অভ্যস্থতার কারন। এই দুটি কারনের প্রভাব যদি মানুষের উপর বেশি পরে তবে জেনেটিক্যাল নেচারটিও সুপ্তাবস্থায় থাকে বা ঘুমন্ত থাকে ফলে সর্বদাই উক্ত ২ নেচারের প্রভাবই বিজয়ী হয়। যেমন- জেনেটিক্যালীই ১জন মানুষ ১মত আস্তিক এবং সর্বদাই ১ঈশ্বরবাদী সঠিক ধর্মের অনুসারি হবার কথা কিন্তু যদি তার পরিবার, আশপাশের পরিবেশে বহুশ্বরবাদী বা ভুল ধর্মের প্রভাব বেশি থাকে তবে সে প্যাগান হবার সম্ভাবনা এমনকি সে প্যাগান অবস্থায় যদি পশ্চিমাদের সেকুলার শিক্ষায় বেশি অভ্যস্থ হয়ে থাকে তখন কিন্তু সে নাস্তিকও হয়ে যেতে পারে। ব্যাক্তির উপর যেটার প্রভাব বেশি থাকবে অথবা সে স্বাধীনভাবে যেটাকে প্রাধান্য দিবে তার প্রভাবই বেশি কাজ করবে তবে জেনেটিক্যাল নেচার ঈশ্বর প্রদত্ত এমন নেচার যা কখনই পরিবর্তন হয় না তবে সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে ব্যাক্তির স্বাধীন ইচ্ছানুযায়ি মৃত্যু পর্যন্ত। সবচেয়ে বড় কথা হল কোন ব্যাক্তি পরিবেশের প্রভাবে ১মে প্যাগান পরবর্তিতে অভ্যস্থতার প্রভাবে নাস্তিক হলেও তারই স্বাধীন ইচ্ছানুযায়ি জেনেটিক্যাল নেচার আবারও যেকোন সময় জাগাতে পারে। তখন তার সেই জেনেটিক্যাল কৌতুহলী স্বভাব বশ্বত নিজের বিশ্বাসকে যৌক্তিক প্রশ্নবানে বিদ্ধ করে বাছ-বিচার করার ক্ষমতাকে পরিপূর্ন কাজে লাগিয়ে সে আবারও নাস্তিক হতে ১ঈশ্বরবাদী একদম সঠিক ধর্মালম্বী হতে পারে। তাই পরিবেশ ও অভ্যস্থতার প্রভাব বেশি থাকার জন্য কেউ ভুল পথে গেলেও অপরিবর্তনীয় জেনেটিক প্রভাব এবং স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকায় সে কখনই নির্দোষ নয়।
শুধু চেহারা বা ধর্ম নয় পাশাপাশি মানুষের পোষাক আশাক,কৃষ্টি- কালচার, বচনভংগী এমনকি সংগীত বা শিল্প-সংস্কৃতিগত রুচির পাশাপাশি অলংকার পছন্দের রুচিতেও উক্ত ৩টি নেচারের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। সাধারনত পোষাক আশাকের সৃষ্টি হয়েছে মূলত ১মত মানুষের লজ্জা ঢাকার উদ্দেশ্যে ২য়ত মানুষের সৌন্দর্য্য আরও বৃদ্ধি করতে। ছেলেমেয়ে উভয়েরই লজ্জাশীলতা হল ১টি জেনেটিক্যাল নেচার আর এই নেচারের কারনেই নিজের লজ্জা ঢাকতে মানুষ পোষাক পরিচ্ছদ ব্যাবহার করে আসছে আদিকাল হতেই অর্থাৎ পোষাক পরিধান মানুষের ১টি জেনেটিক্যাল নেচার এমনকি কেউ একাকী থাকাবস্থাতেও একদম উলংগ থাকতে চাইবে না কিন্তু এই ১জেনেটিক নেচারও ২পরিবেশগত এবং ৩অভ্যস্থতার প্রভাবে একদম উল্টো হয়ে যেতে পারে যেমন- আরবদেশের মানুষ পুরো শরীরকেই ঢেকে রাখে এখানে তাদের জেনেটিক নেচারের সাথে পরিবেশ এবং অভ্যস্থতার নেচারও একই আছে বলেই সেখানে মানুষের সত্যিকারের স্বভাবসুলভ নেচারটি আজও অব্যহত আছে কিন্তু আমেরিকা আর ইউরোপে দেখা যায় তার উল্টোটা যদিও তারা পরিপূর্ন উলঙ্গ থাকে না এমনকি কয়েকশত বছর পূর্বেও তারা এমন ছিল না বরং ধীরে ধীরে তাদের অভ্যস্থ করা হয়েছে, তাই তো আজ তারা ব্রা-পেন্টির দ্বারা খুব অল্প পরিমানেই লজ্জা ঢাকে আর আরব দেশে বেশি পরিমানে লজ্জা ঢাকে, সুতারাং যে জাতি যত বেশি লজ্জা ঢাকে সে জাতি ততো বেশি লজ্জাশীল আর যে জাতি যত বেশি ঢাকে না সে জাতি ততোই বেশী নির্লজ্জ। জেনেটিক নেচারের প্রভাবে সকল মানুষেরই একই ভাবে লজ্জা ঢাকতে পোষাক ব্যাবহার করার কথা কিন্তু পরিবেশ ও অভ্যস্থতার প্রভাবে কিছু জাতিকে খুবই কম পোষাক ব্যাবহার করতে দেখা যায় এমনকি জংগলে বসবাসরত কিছু আদিবাসীদের উলংগ থাকতেও দেখা যায়। সৌন্দর্য্যের প্রকাশেও পোষাক ব্যাবহার জেনেটিক নেচার হলেও এক্ষেত্রেও পরিবেশের প্রভাব কাজ করে যেমন- পরিবেশগত প্রভাবে উপমহাদেশের ইন্ডিয়ায় যারা বাস করে তাদের পছন্দের পোশাক-আশাক আর ইউরোপিয়ান বা এরাবিয়ানদের পছন্দের পোশাক-আশাক হয় সম্পু্র্ন আলাদা। আবার আমেরিকায় বাস করেও কেউ যদি ইসলাম ধর্মে অভ্যস্থ হয় তবে অভ্যস্থতার প্রভাবে দেখা যাবে সে খোলামেলা পোষাক না পরে বেশি কাপড় পরিধান করছে।
পোষাক আশাক ছারাও মানুষের শিল্প-সংস্কৃতি/কৃষ্টি- কালচার, সংগীত, বচনভংগী ইত্যাদি রুচির পাশাপাশি অলংকার পছন্দের রুচিতেও উক্ত ৩টি নেচারের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সাধারনত ধর্মই শিল্প-সংস্কৃতি বা কালচারাল ব্যাপারগুলোর পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করে তবু বিষয়গুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা করার জন্য কিছু উদাহরণ দেয়া হবে যেমন- শিল্প-সংস্কৃতি বা কালচারাল ব্যাপারগুলোর প্রত্যেকটিতেই জেনেটিক প্রভাব রয়েছে উদাহরণস্বরুপ প্রতিটা মানুষই দলবদ্ধভাবে বাস করতে চাইবে, শিশুরা পিতা-মাতাসহ বড়দের কাছ থেকে স্নেহ ভালবাসা চাইবে, প্রাপ্ত বয়স্করা বিয়ে শাদীর মাধ্যমে একান্ত সংগীর সাথে বসবাস করবে, সকলেই মিলেমিশে থাকতে চাইবে, সুখে-দুঃখে একে অন্যের সহযোগী হবে, কঠোর ও শক্তি সমর্থপূর্ন কাজ পুরুষরাই করবে আর গৃহস্থালির কর্মের পাশাপাশি সেবামূলক কর্ম নারীরা করেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে, পুরুষরা বিপদে বা আত্মরক্ষার্থে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিবে, পুরুষরা যুদ্ধ চর্চা ও শরীরচর্চা করবে, নারীরা নিজের সঙ্গিনীর জন্য সৌন্দর্য্য চর্চা করবে, নিজেদের কোন বিশেষ ব্যাপারে আত্মীয়-স্বজনের পাশাপাশি প্রিয় মানুষদের নিমন্ত্রণ করবে তথা বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি পালন করবে, ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব/প্রবীণ ব্যাক্তি/প্রধান ব্যাক্তিদের কাছ থেকে সত্য ইতিহাস শুনে তা হতে শিক্ষা নিবে এবং নিজেদের ভুল ভ্রান্তি শুধরানোর চেষ্টা করবে, নিজে জ্ঞানীদের হতে শিক্ষা নেয়ার পাশাপাশি অন্যকেও শিক্ষা দিবে, নিজেদের জীবন যাপন সহয করার জন্যে বিভিন্ন বস্তুগত জিনিসের উদ্ভাবন ও উন্নয়নের স্বার্থে সৃজনশীল কর্ম করবে, মাঝে মাঝেই বেশি ভোগ-বিলাস ও আনন্দ উল্লাস করতে চাইবে ইত্যাদি আরও অনেক কিছুই মানুষ জেনেটিক্যাল নেচার বশ্বতই করতে চায়। আর এসব কৃষ্টি-কালচারাল ব্যাপারগুলো মানুষের জীবনে উপকার ছাড়া তেমন একটা ক্ষতি করে না।
বর্তমান পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যস্থ্যতার প্রভাবে পরিবেশ –পরিস্থিতিও সম্পূর্ন উল্টো হয়ে গিয়েছে যেমন-জেনেটিক প্রভাব অনুসারে প্রতিটা মানুষই দলবদ্ধভাবে বাস করতে চাইলেও এখন বেশিরভাগই যতটা সম্ভব একাকী বাস করতে চায়, শিশুরা বড়দের কাছ থেকে তো দূরের কথা আপন পিতামাতা হতেই পরিপূর্ন সহচার্য্য ও ভালভাসা পায় না, প্রাপ্ত বয়স্করা ১৮/২০ এর আগে জীবন সংগী তো পায়ই না বরং বিয়ে-শাদী ছারাই অনিরাপদ রিস্কি ভঙ্গুর রিলেশনশিপে জরিয়ে জীবন বিস্বাদ করে তুলে, সকলে মিলেমিশে থাকতে তো চায়ই না বরং সুখে-দুঃখে একে অপরের সহযোগী না হয়ে বরং প্রতিযোগী হয়, পুরুষরা শক্তি সমর্থ পূর্ন কাজে উৎসাহী না হয়ে আরামপ্রিয় কাজ করতে চায় পাশাপাশি নারীরা আপন ঘরের সেবামূলক কাজ বাদ দিয়ে বাহিরে পর-পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে ফলে যে ঘরের শান্তির জন্যই মানুষ এত কষ্ট আর রোজগার করতে উদ্দত হয় সেই ঘরের নারীরা বেশিরভাগ সময় বাহিরে থাকায় অভ্যন্তরিন ভারসম্যতা ভীষনভাবে নষ্ট হয় ফলে ঘরে আর শান্তি থাকে না, বর্তমানে গভার্মেন্ট পুলিশদের দারাই নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে জনগনকে নিরস্ত্র করা হয়েছে ফলে স্বৈরাচারী সরকারকে জনগন ভয় পায় এবং ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে পুরুষরা যুদ্ধ চর্চা ছেরে দিয়েছে আর তখন হটাৎ আত্মরক্ষার প্রয়োজন হলে তারা নিরাপত্তার পরিবর্তে কাপুরুষতার পরিচয় দেয়, নারীরা শুধুমাত্র নিজের জীবন সংগীর জন্যই আর সৌন্দর্য্য চর্চা করে না বরং তারা এমন সব পর-পুরুষের জন্য নিজেদের সাজায় যাদের কাছে নারীরা সুন্দর লাগায় তারা কাছে এসে একটু আদর-সোহাগও করতে পারবে না উক্ত নারীর সৌন্দর্য্যের কোন মূল্যই তারা দিতে পারবে না একমাত্র কুদৃষ্টি ছাড়া, বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে বেশিরভাগই একমাত্র স্বার্থবাদীদেরই দাওয়াত দেয়া হয় নিজের আপনজন কমই থাকে বিশেষ করে যাদের হক্ব বেশি তাদের জানানোই হয় না, ধর্মীয় ব্যাক্তিদের হতে সর্বদাই সকলে দূরে থাকার চেষ্টা করে আর প্রবীণ ব্যাক্তিদেরকে মূর্খ্য ভেবে তাদের কথা তুচ্ছ্য মনে করে আর সেকুলার শিক্ষা নেওয়া জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে যেখানে বিভিন্ন কাল্পনিক ইতিহাস-সাহিত্য কবিতায় ভরপুর, এসব গোঁজামিল পূর্ন শিক্ষা নেওয়া এবং দেওয়ার জন্য অনেকে সারা জীবনই ব্যায় করে কিন্তু সে অনুযায়ি সত্যিকারের ধর্ম শিক্ষা মানুষ নিতেই চায় না ফলে মৃত্যুর মত সত্যকে ভুলে থাকে, আর এজন্যই মানুষ তাদের মাত্রারিক্ত সীমাহীন ভোগ-বিলাসিতা আর আনন্দ-ফূর্তিতে জীবন কাঁটাতে শিল্প-সংস্কৃতির নামে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় উদ্ভাবন এবং বস্তুগত জিনিসের উন্নয়ন করছে আত্মিক দিকের চেয়ে। অতীতে মানুষের জেনেটিক নেচার অনুযায়িই পরিবেশ পরিচালিত হত ফলে সবাই সেসব সংস্কৃতিতেই অভ্যস্থ হত কিন্তু এখন সবাই পশ্চিমা কালচারে অভ্যস্থ হয়ে পরিবেশও সেভাবেই গড়ে তুলছে । তাই তো আজ মানুষের চিরন্তন জেনেটিক নেচার অনুযায়ি তাদের মনের অভ্যন্তরে কাজ করছে এক ধরনের চাহিদা আর তারা পুরুন করছে অন্য ধরনের চাহিদা, যাও কিনা তাদের চিরন্তন নেচার বিরুদ্ধ, সবচেয়ে বড়কথা হল বেশিরভাগই জানেও না যে তারা নিজেদেরই নেচারের বিরুদ্ধে চলছে। সুতারাং ফাইনালী সকলে আনসেটিসফাইডই থেকে যাচ্ছে, সমাজে সর্বত্রই যেন হাহাকার বিরাজ করছে। মানুষগুলো নিজেদের জেনেটিক নেচারকে উপেক্ষা করে পরিবেশ ও অভ্যস্থতার প্রভাবে নেচার বিরুদ্ধ কালচার মানতে গিয়ে সমাজে চরম বিশৃংখলার সৃষ্টি করছে ফলে নিজের শান্তি নষ্টের পাশাপাশি অন্যের শান্তিও নষ্ট করছে যদিও সকলে শান্তিই চাইছে এবং ভাবছে এভাবে চললেই বোধহয় শান্তি আসবে অর্থাৎ প্রকৃত শান্তি মিলছে না বিধায়ই তারা শান্তি কামনা করছে। সত্যিকারের শান্তি পেতে চাইলে সকলকে সরাসরি ঈশ্বর প্রদত্ত জেনেটিক নেচার অনুযায়ি চলতে হবে আর একমাত্র ধর্মই মানুষকে তার চিরন্তন স্বভাবসুলভ নেচার অনুযায়ি চলতে বলে কিন্তু বিগত কয়েকশত বছর হল মানুষ ধর্মকে সমাজ, রাষ্ট্র ও বৃহত্তর পরিবেশ হতে বাদ দিয়ে ব্যাক্তি জীবনে নির্বাসন দিয়েছে তারপর হতেই সমাজে অশান্তির শুরু। ১৫৩৭ খ্রীষ্টাব্দে রাজা ৮ম হেনরী এর রাজত্বকালে ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম ধর্মকে সমাজ ও রাষ্ট্র হতে বাদ দেওয়া হয় এরপর ইংল্যান্ড হতে ইংরেজরা সারাবিশ্ব দখল করে এই নীতিতেই সকলকে ধীরে ধীরে অভ্যস্থ করে তোলে, অতঃপর বর্তমানে জাতিসংঘ এবং আমেরিকা এই নিয়ম সারাবিশ্বে চালু রেখেছে যাতে গুটি কয়েক ব্যাতীত বিশ্বের সকল মানুষই অনেকটা গর্বের সাথেই মডার্ন স্লেভ এ পরিনিত হয়। যাইহোক সকল ধর্মই কিন্তু ঐ এক ঈশ্বরই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মহামানবের দ্বারা প্রেরণ করেছিলেন, যেহেতু জেনেটিক নেচার ঈশ্বর প্রদত্ত আর ধর্মও ঈশ্বর প্রদত্তই তাই সকলে যদি ঈশ্বর কর্তৃক প্রেরীত ধর্মের দিকে ফিরে তবেই সকলেই ধর্ম মানতে গিয়ে জেনেটিক নেচার অনুযায়িই চলবে ফলে শান্তিও ফেরত আসবে । আর কেউ যদি একদম পরিপূর্ন শান্তি পেতে চায় তবে তাকে ঈশ্বর কর্তৃক সর্বশেষ প্রেরীত ধর্ম যা কিনা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সর্বদাই আপগ্রেট থাকে সেটি মানতে হবে।
শিল্প-সংস্কৃতি/কৃষ্টি- কালচারের আরও অন্নান্য অংশ যেমন- সংগীত, বচনভংগী, অলংকার পছন্দের রুচিতেও উক্ত ৩টি নেচারের যথেষ্ট প্রভাব বিদ্যমান। সংগীত শ্রবনের প্রবনতা মানুষের জেনেটিক নেচারের অন্তর্ভুক্ত এবং এটিও সরাসরি ঈশ্বর প্রদত্ত একটি উত্তম স্বভাবের অন্তর্গত। ঈশ্বরই সর্বপ্রথম মানুষের জন্য তাঁর বানীকে সংগীত রুপে প্রেরণ করা শুরু করেন তাই সুর সংগীতের উদ্ভব ধর্মের দ্বারাই শুরু হয়, যে কারনে দেখা যায় সব ধর্মগ্রন্থই খুবই ছন্দময় এবং সুন্দর করে সুর দিয়ে পাঠ করতে হয়। সাধারনত প্রতিটা মানুষেরই জেনেটিক নেচার এটিই যে সে সুরেলা সংগীতের মাধ্যমে যে কথাটি শুনবে তাই বেশি মনে রাখবে এবং পরবর্তীতে সেই কথা অনুযায়িই চলার চেষ্টা করবে আর তাই ঈশ্বর তাঁর বানীকে সংগীতের মাধ্যমে প্রেরণ করেন এবং প্রত্যেককে সেভাবেই পাঠ করতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ডেভিল শয়তান সেই সুর নকল করে তার নিজস্ব ভুল কথা যুক্ত করে বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকদের দিয়ে মানুষের মাঝে প্রচার করতে থাকে এমনকি সে নূহ আঃ সময় একধরনের বাঁশিও তৈরী করে ফেলে এবং মানুষদের পথভ্রষ্ট করতে ধীরে ধীরে আরও বিভিন্ন ধরনের বাদ্য যন্ত্র বানিয়ে সংগীত শুনাতে থাকে। যেসব এলাকার বেশিরভাগ মানুষ ঈশ্বরকে পরিপূর্ন মানত না সেসব এলাকার পরিবেশেই শয়তানী গান-বাজনার চর্চা হত ফলে প্রায় সকলেই পরিবেশের প্রভাবে এসব খারাপ সংগীতে আসক্ত হয়ে পরত কিন্তু তারপরেও যারা সেখানে থেকেও ঈশ্বর প্রেরীত বানীর দ্বারা সংগীত চর্চায় অভ্যস্থ হত তারা সেসব শয়তানী পরিবেশের প্রভাব থেকে ঠিকই মুক্ত থাকত। এভাবেই যে কেউই ভাল কিছুতে নিজেকে অভ্যস্থ করে পরিবেশের প্রভাব ডিঙ্গিয়ে পুনরায় জেনেটিক নেচারে প্রত্যাবর্তন করতে পারে। মানুষের জেনেটিক নেচার অনুযায়ি সুর ও মিউজিক ভাল লাগলেও এর পাশাপাশি সে উক্ত সংগীতে মাঝে সুন্দর কোন কথা আছে কিনা সেটিও বিবেচনা করবে, যদি সুন্দর কোন কথা সে পেয়ে যায় তবে উক্ত সংগীত তার কাছে আরও ভাল লাগলেও তখনও সে খুজবে যে উক্ত কথাগুলো সত্যি বাস্তবধর্মী কোন কল্যানমূলক কথা কিনা? যদি সেটিও সে পেয়ে যায় তখনই উক্ত সংগীত তার মনে সত্যিকারের জায়গা করে নিবে। সাধারনত এই নেচারটি ঈশ্বর প্রদত্ত জেনেটিক নেচার হলেও যে কেউই পরিবেশ বা অভ্যস্থতার প্রভাবে শুধুমাত্র সুর ও মিউজিক সুন্দর কিন্তু কথাগুলো অবাস্থব কাল্পনিক বা অপ্রয়োজনিয় খারাপ কথা এমন সংগীতও সে পছন্দ করবে আর বর্তমানে ইবলীসের এজেন্টরা এমন গান-বাজনাই ভিডিও সহকারে সারাবিশ্বে সয়লাব করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করছে।
সংগীতের পাশাপাশি মানুষের বচনভংগীতেও উক্ত ৩টি নেচারের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে যেমন- জেনেটিক্যালী সব মানুষই অন্য সকলের কাছ থেকে সুন্দর ভদ্রভাবে নম্রতার সহিত কথা শুনতে আগ্রহী এবং নিজেরাও সেভাবেই বলতে চায় এমনকি এক্ষেত্রে বচনভঙ্গীমাও সুন্দর ভদ্র এবং হাসিমুখই কামনা করে। কিন্তু বর্তমানে বৃটিশদের প্রভাবে বেশিরভাগই কথা বলার সময় মুখকে আবেগহীন, কঠোর এবং মুডি রেখে কথা বলে আর এমন রোবট টাইপ বচনভংগী ইংরেজদের শাষনের পরই শুরু হয়েছে এটিও পরিবেশ এবং অভ্যস্থতার প্রভাবে হয়েছে যা কিনা মানুষের মোটেও নেচারাল বৈশিষ্ট নয়। বচনভংগীর পাশাপাশি মানুষের অলংকার পছন্দের রুচিতেও ৩টি নেচারের বড় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মানুষের জেনেটিক নেচার অনুযায়িই অলংকৃত হবার প্রবনতা কাজ করে তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র নারীরাই অলংকৃত হয়ে তাদের সৌন্দর্য্যকে আকর্ষনীয় করে তুলতে চায় আর পুরুষরা চায় তাদের অলংকৃত করে রাখতে। জেনেটিক নেচার অনুযায়ি সাধারনত পুরুষরা চায় তার নারী সংগিনীর গলা, হাত, কোমর, মুখের সর্বচ্চ নাক-কানসহ এমনকি মাথা পর্যন্ত অলংকৃত দেখতে এবং যথাসাধ্য চেষ্টাও করে নারীদের সেভাবেই রাখতে সুতারাং নারীরাও তাদের জেনেটিক স্বভাব বশ্বত বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু যেমন স্বর্ণের দ্বারা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সর্বদাই অলংকৃত রাখতে ভালবাসে। নারীরা অলংকৃত হওয়ায় তাদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিকরনের পাশাপাশি নারীদের শরীরের সাথে এসব ধাতব অলংকারগুলো শারিরীক বিক্রিয়ায় এক ধরনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে ফলে হরমনের প্রভাবে তাদের নারীসুলভ নেচার আরও বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষের কাছেও আরও বেশি আকর্ষনীয় হয়ে উঠে যা কিনা সব নারীরাই কামনা করে থাকে। নারীদের অলংকৃত হবার প্রবণতা জেনটিক হলেও পুরুষদের অলংকৃত হবার এই প্রবণতা নেই, যদি কোন পুরুষ অলংকৃত হয়ও তবে তাকে নারীদের চোখে মোটেও অতিরিক্ত আকর্ষনীয় মনে হয় না উল্টো আরও বিকর্ষন কাজ করে। মোটকথা পুরুষদের অলংকার ধাতব বস্তুতে নয় বরং অন্যকিছুতে যদিও স্বর্নবিহীন কিছু আংটি, রিং বা এধরনের কিছু হাতে ধারন করতে পারে সর্বচ্চ ।
তবে পরিবেশগত প্রভাবে নিম্নবিত্ত নারীদের মাঝে তাবিজসহ সূতা বা শুধুই সূতা ধাতব অলংকারের বিকল্প হিসেবে ব্যাবহার করতে দেখা যায়। জেনেটিক্যালী নারীদের অলংকৃত হবার স্বভাববশ্বত কারনে তারা নিজেদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খালিও রাখতে চায় না কিন্তু পরিবেশ ও অভ্যস্থতার প্রভাবে অনেকেই শুধুই সূতা অলংকার হিসেবে ব্যাবহার করে অথচ সুতা এক ধরনের উদ্ভিদ আর সুতা দিয়ে সাধারনত পোষাক তৈরী হয় তাই সুতা কখনও অলংকারের বিকল্প হতে পারে না। তাছারা সুতা ধাতব বা মেটাল জাতিয় কিছু না হওয়ায় ধীরে ধীরে ময়লা পরে জীবানু আক্রমনের পাশাপাশি বিবর্ন কুৎসিত বর্নের হয়ে যায় যা কিনা নারীকে আকর্ষনের বদলে উল্টো বিকর্ষনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। সবচেয়ে বড় যে ব্যাপার তা হল সুতা কোন ধাতব বস্তু না হওয়ায় নারীর শরীরে প্রভাবক হিসেবে ধাতুর ন্যায় কোন বিক্রিয়া করে না ফলে নারীদের অতিরিক্ত নারীসুলভ নেচার আপনা আপনি দৈহিকভাবে সৃষ্টি হয় না অর্থাৎ দৈহিক কোন উপকার তো হয়ই না বরং দীর্ঘদিন শরীরে ধারন করায় চর্ম রোগসহ আরও বিভিন্ন রোগের সংক্রামণ হতে পারে।
যাইহোক জেনেটিক নেচার বশ্বত নারীরা অলংকৃত হবে আর পুরুষরা নারীদের অলংকৃত করবে কিন্তু নিজেরা অলংকৃত হবে না অথচ মানুষের এই চিরন্তন স্বভাবসুলভ এই জেনেটিক প্রভাবের বিপরীতে বর্তমানে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যস্থতায় সকলে পরিবেশ পরিস্থিতি এমন করে ফেলেছে যে, এখন পুরুষরাই নারীদের ন্যায় বিভিন্ন ধাতব পদার্থের অলংকার পরিধান করছে আর নারীরা অলংকারমুক্ত থাকছে পুরুষদের মত, ফলে নারী-পুরুষের পরস্পরের প্রতি আর সত্যিকারের প্রবল আকর্ষন কাজ করছে না। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হল মানব দেহের যেসব অংগ অলংকৃত করলে জেনেটিক্যালী আকর্ষন কাজ করে সেসব অংশে তারা অলংকারমুক্ত রাখছে আর এমন এমন সব অংগে অলংকার যুক্ত করছে যা দেখতে সত্যিই খুবই কুৎসিত এবং বিকর্ষন কাজ করে যেমন- ঠোঁট, গাল , ভ্রু, জিহ্বা , নেভেল, নিপল, বেলী, হিপ, ঘার, হাত, বুক এমনকি গোপন যৌনাংগ পর্যন্ত ছিদ্র করে তাতে রিং প্রবেশ করাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা নিজেদেরকে বেশি আধুনিক প্রমান করতে মাতালের ন্যায় এসব করছে শুধু তাই না দেহের বিভিন্ন জায়গায় ট্যাটু আঁকিয়ে দেহের সৌন্দর্য্য বিনষ্ট করছে। আর পুরুষরা নারীদের ন্যায় অলংকৃত হওয়ায় তাদের যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে যেমন- স্বর্ন পুরুষরা ব্যাবহার করলে তাদের দেহে তা বিক্রিয়ার সময় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে যৌন ক্ষমতা হ্রাস করে অন্যদিকে তাদের শরীরে নারীদের ন্যায় ১টি এক্স ক্রোমোজম পূর্ব হতেই থাকে তাই পুরুষরা বেশী অলংকার ব্যাবহার করলে ধীরে ধীরে বটোমকামী গে তে রুপান্তরিত হবার সম্ভাবনা। আর এ সবকিছুই হচ্ছে মানব জাতির চিরশত্রু ইবলিসের মদদে সেকুলার পশ্চিমাদের হাতে ফলে বেশিরভাগই পরিবেশ ও অভ্যস্থতার প্রভাবে জেনেটিক নেচারের বিপরীতে চলে নিজে সহ অন্যদের মাঝেও অস্বাভাবিকতা ও বিশৃংখলার সৃষ্টি করছে যদিও কেউ ইচ্ছে করলেই আবারও নিজের চিরন্তন সেই জেনেটিক নেচারের দিকে ফিরতে পারে।
উপরের বিস্তারিত আলোচনা হতে আশা করা যায় এখন সকলেই বুঝতে সক্ষম যে মানব জীবনে ১) জেনেটিক ভিত্তির প্রভাব ২) পরিবেশগত ভিত্তির প্রভাব এবং ৩) অভ্যস্থতার প্রভাব আসলেই কিভাবে কাজ করে। ধর্ম হতে শুরু করে মানুষের একে অপরকে পছন্দ করার ভিত্তি পর্যন্ত এই ৩টি প্রভাব নির্ভর। সাধারনত ঈশ্বর প্রদত্ত জেনেটিক প্রভাবে যে নেচার কাজ করে তা আসলে জন্মগত পূর্ব হতেই মানুষের মাঝে গাঁথা থাকে এবং একে পরিবর্তনও করা যায় না তাই এই নেচারটি চিরন্তন। পরিবেশ ও অভ্যস্থতার প্রভাবে যে নেচার তৈরী হয় তা পরিবর্তনশীল তবে এই দুই নেচারের প্রভাব বেশি হলে জেনেটিক চিরন্তন নেচারটিও ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। মানুষকে স্বাধীনভাবে ছেরে দিলে তাদের জেনেটিক নেচার অনুযায়িই তারা আশ-পাশের পরিবেশ সৃষ্টি করে ফলে তারা একই নেচারে অভ্যস্থ হয়ে থাকে আর এমন হলেই কিন্তু মানুষগুলো পরিপূর্ন সেটিসফাইড থাকে, অতীতে মানুষরা অনেকটাই এমনি ছিল কিন্তু বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানুষদেরকে পরিবেশ ও অভ্যস্থতার প্রভাব খাঁটিয়ে তাদের চিরন্তন জেনেটিক নেচারের একদম উল্টো নেচারে পরিবর্তিত করা হয়েছে ফলে বেশিরভাগ মানুষই আজকে পরিপূর্ন সেটিসফাইড নয়। বর্তমানে যারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রন করে তারা সমস্ত দেশ দখল করে সেখানে তাদের এজেন্ট পুতুল সরকার বসিয়ে শিক্ষা ও মিডিয়ার মাধ্যমে সকল মানুষকেই ব্রেইন ওয়াশ করছে। তাদের সৃষ্ট শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অপরিহার্য্য করে সেই শিক্ষার পাঠ্যক্রমগুলো নিজেরা এমন সব তথ্য, প্রমান ও যুক্তি দিয়ে সাজায় যাতে সকলেই তাদের মনমত চলতে অভ্যস্থ হয়ে যায় এবং পরিবেশ ও সমাজ সেভাবেই গড়ে উঠে। শিক্ষার পাশাপাশি তারা মিডিয়ার মাধ্যমে আরও বেশি প্লান বাস্তবায়ন করে যেমন- জেনেটিক নেচার অনুযায়ি পুরুষদের দাড়ি-গোঁফ ও লোম গজাবে এবং নারীদের গজাবে না সুতারাং পুরুষরা লোমহীন নারীদের পছন্দ করবে এবং নারীরাও দাড়ি-গোঁফ ওয়ালা পুরুষদের পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু বৃটিশরা বিশ্ব দখলের সময় তারাই সর্বপ্রথম ধর্মকে রাষ্ট্র হতে বাদ দেয় এবং পুরুষদের দাড়িতে পরিবর্তন আনে, ১ম দিকে তারা শুধু থুতনির নিচের অংশটুকু সেভ করার প্রচলন ঘটায় এরপরের পর্বে তারা দাড়ির পরিমান আরও কমিয়ে ফেলার কালচার সৃষ্টি করে। কিছুকাল পরেই তারা দাড়িকে মোটা চীপ এর স্টাইলে রাখার রীতি চালু করে এরকিছুদিন পরে তারা দাড়ি-গোঁফহীন শুধুই চীপ ওয়ালা স্টাইলের সূচনা করে এবং এরপরই পরিপূর্ন ক্লীনসেভড রীতি ছড়িয়ে দেয় বিশ্বব্যাপী। বর্তমানে চলছে শুধুমাত্র জেনেটিকভাবে পুরুষদের দাড়ি-গোঁফ বা ধর্মীয় রীতিতে দাড়ি-গোঁফ এর স্টাইল বাদে আপডেট যেকোন স্টাইল অর্থাৎ আনলিমিট স্টাইল। বিগত ১০০ বছরের মিডিয়ার কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করলে এদের ধীরগতির প্লানগুলো যেকেউই বুঝতে পারবে। একইভাবে ১মদিকে তারা মানুষের লম্বা ও ঢিলেঢালা পোষাক পরার নেচারে পরিবর্তন আনে অর্থাৎ ১মদিকে শুধুমাত্র হাঁটু অবধি কাপড় এবং তুলনামূলক একটু আঁটসাঁট পোষাকের রীতি ছরিয়ে দেয় পাশাপাশি তারা প্রত্যেক জাতির নিজস্ব কালচারের পোশাকের জায়গায় ইংরেজদের প্যান্ট শার্টে অভ্যস্থ করতে শুরু করে। পরবর্তীতে এতেও সকল জাতি অভ্যস্থ হয়ে পড়লে তারা শার্ট প্যান্টকেও ধীরে ধীরে আরও শর্ট এবং স্কিনটাইপ করে ফেলে যদিও বর্তমানে চলছে ছেঁড়া শার্ট প্যান্ট পরিধানের যুগ অর্থাৎ যে যতবেশি কাপড় ছিদ্র করে নিজের দেহ প্রদর্শন করবে সে ততোই আধুনিক।
মানুষের নেচারাল বৈশিষ্ট্যকে পরিবেশ ও অভ্যস্থতার প্রভাবের দ্বারা পরিবর্তন করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পশ্চীমারা খুব কৌশলে ধীরে ধীরে কাজ করে যেমন- তারা ১মে প্লান করে তারপর সেই প্লান মোতাবেক শিক্ষা-সচেতনার মাধ্যমে তাদের মতবাদগুলো প্রতিষ্ঠিত করে এমনকি মানুষগুলো কি করবে, কি পরিধান করবে, কি কি ব্যাবহার করবে, কি খাবে আর পান করবে, কি পছন্দ করবে, কি ধরনের আশা করবে আর কিসের স্বপ্ন দেখবে এগুলো পর্যন্ত তারা নির্ধারন করে দেয়। তাদের এজেন্ডাগুলোতে মানুষকে অভ্যস্থ করতে তারা মিডিয়াকে ব্যাপকভাবে ব্যাবহার করে থাকে ,এজন্য পত্র-পত্রিকা ও সাহিত্য ইত্যাদি প্রিন্ট মিডিয়ার লেখালেখির পাশাপাশি তারা সকল মিডিয়াই ব্যাবহার করে। উদাহরণস্বরুপ- তারা কোনকিছু মানুষের মাঝে চালু করতে চাইলে তা ১মে আমেরিকাতে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া এবং বিশেষ করে হলিউডের মাধ্যমে তা বিভিন্ন ভাবে প্রচার করে এরপরই প্রতিটা দেশেরই মিডিয়া সেগুলোকে অনুকরন করে দেশের প্রতিটা প্রান্তে তা পৌছে দেয় তখন ১মেই সমাজের উচ্চ ও শিক্ষিত শ্রেনীরা শুধু সেগুলো রপ্ত করে চলতে থাকে, অতঃপর তাদের অনুকরন করে দেশের যুব সমাজ, তার ঠিক কিছুদিন পরই বাদবাকী নিম্ন ও নিরক্ষর শ্রেনীরাও সেভাবে না চলাকে বোকামী ভেবে অনুকরন করা শুরু করলেই যেকোন সমাজের বেশিরভাগই এতে অভ্যস্থ হয়ে পরে আর তখনই মানুষের পরিবেশও সম্পূর্ন পরিবর্তন হয়ে যায়। সমাজ ও দেশের মানুষকে পরিবর্তন করতে তারা ধীরে ধীরে সুন্দর করে ক্রমান্বয়ে কাজগুলো করে থাকে অর্থাৎ তারা এক ধরনের সিরিয়াল মেইনটেইনে করে এক্ষেত্রে তারা ভুল করতে চায় না। তারা কোন দেশকে ১মে সেকুলার ধর্মনিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক বানিয়ে তারপরই সেদেশে যেসব ধর্ম থাকে সেসব ধর্মের মধ্যে যেগুলো অবশ্যপালনীয় বিধান থাকে তা মানা না মানাকে ঐচ্ছিক বানিয়ে ফেলে আর এই ব্যাপার বেশিরভাগ আম জনতার কাছে ন্যায়সঙ্গতই মনে হয় উদাহরণস্বরুপ- ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সামাজিক বা সামগ্রিক ক্ষেত্রের সকল আইন ও বিধান মানার ক্ষেত্রে কোন ১টি নির্দিষ্ট ধর্মকে রাখা হয় না ফলে রাষ্ট্র এর মত বড় ক্ষেত্রেই ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে পশ্চিমাদের মানব রচিত আইন মানা শুরু হয় আর এতে করে দেশের বিশাল একটা অংশ ধর্মের আবশ্যিক বিষয় হতে দূরে থাকায় ধীরে ধীরে ধর্মহীন হতে শুরু করে আর ঠিক তখনই তাদের ভবিষ্যৎ এজেন্ডা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব ধর্মীয় আইন সাংঘর্ষিক হতে যাচ্ছে সেসব বিধানকে একের পর এক সুকৌশলে বাতিল করতে থাকে যেমন- ১মেই তারা মুসলিমদের ফরজ নামাজ না পড়লে যে সাস্তি তাকে মানব রচিত আইন অনুযায়ি অপরাধ হিসেবে সমাজে অভ্যস্ত করে আর এভাবে অন্য সকল ধর্মকেই শুধুমাত্র মসজিদ-মন্দির ও চার্চের মাঝেই সীমাবদ্ধ করে অর্থাৎ সকল ধর্মকেই শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত জীবনে নির্বাসিত করে পাশাপাশি সমাজে অশ্লিলতার বিস্তার ঘটিয়ে সকলকেই ভিতরে ভিতরে বহুকামী স্বভাবের বানিয়ে ফেলে এরপর ধর্মানুযায়ি এধরনের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি বহুবিবাহকে সরাসরি নিষিদ্ধ না করে, সংবিধানে আইন করে ১ম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া ২য় বিয়ে দন্ডনীয় অপরাধ, পাশাপাশি নারীদেরও তালাকের ক্ষেত্রে সম অধিকারের আইন পাশ করবে আর এতে করে সমাজে বিবাহিত পুরুষদেরও চরিত্র স্খলনের পাশাপাশি স্ত্রীরাও ১বিয়ে ওয়ালা স্বামীকে পাওয়ার পরও অসুখী থাকতে বাধ্য হয় (যা নিচে বিস্তারিত আলোচনা হবে) ফলে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নেচারাল বিষয়ে সুখ না পেয়ে অন্যকিছু বা বস্তুবাদী জিনিসের মাঝে সুখ খুজতে বাধ্য হয় যা কিনা পশ্চিমা পুজিবাদীদের প্রধান টার্গেট কেননা এতে করে তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রডাক্ট বেশি সেল হয়
ইনশাহ আল্লাহ(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৪৪