-------------- ৫ম পর্ব --------
এদিকে আবার আরেক সমস্যা হল কেউ মাজহাবের সীমাবদ্ধতা ও ভুল বুঝতে পেরে লা মাজহাবী হয়ে যায় আবার লা মাজহাবীদের ভুল বুঝতে পেরেও অনেকে মাঝহাবী হয়েছে। অনেকটা এক গর্ত হতে উঠে আরেক গর্তে লাফ দেয়ার মত অবস্থা। এত যাবৎকাল এরকমটাই হয়ে এসেছে অর্থাৎ সত্যিকারের পরিপূর্ন সঠিক পথে বা সিরাতুল মুসতাক্বিমের পথে খুব কমই আসতে পেরেছে কারন আবার যারা পরিপূর্ন সঠিক পথে আছে অনেক পূর্ব হতে তারাও বড় কোন জামাত তৈরী করতে পারেনি এবং বেশিরভাগই সমাজ হতে বিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য হওয়ায় মানুষের মাঝে হাইলাইটও কম হয়েছে কেননা এদের সংখ্যা বর্তমানে হাজারে একটিও হবে কিনা সন্দেহ তবে ইমাম মাহদি ও ঈসা আঃ আবির্ভাবের পর আবারও হক্বের জামাত সামাজিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাহ আল্লাহ। কিন্তু এর পূর্বেই কিভাবে আমরা সঠিক পথে থাকতে পারি সেটাই আলোচ্য বিষয়। আমরা হাদিস হতে জানতে পারি যে কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত মুসলিমদের মাঝে হক্বপন্থি দল অল্প হলেও থাকবে এমনকি উম্মতের মাঝে মোট ৭৩ ভাগ হবে তার মাঝে ১দল শুধু হবে হক্বপন্থি আর বাকী ৭২ভাগ হবে ভ্রান্ত। এখন দেখতে হবে যারা ঐ ১দলভুক্ত হবে, মাজহাব মানা বা না মানার ক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপ আসলে কেমন হওয়া উচিত? ঐ ১দলভুক্তরা তো আর ফিক্সড মাজহাব মানতে গিয়ে ৪ দলে বিভক্ত হতে পারে না আবার লা মাজহাবীদের মতন কুরান হাদিসের মর্মবানীকে উপেক্ষা করে শুধুই শাব্দিক অর্থ মানতে গিয়ে ৫ম মাজহাব তৈরী করতে পারে না তাছারা ৫ম মাজহাবী বা লা মাজহাবীরাও পূর্ব হতেই মৌলিকভাবেও কয়েক দলে বিভক্ত। তাই যেহেতু নবী সাঃ বিদায় হজ্বে সকলের উদ্দেশ্যে বলে গেছেন যে যারা এই কুরান এবং হাদিসকে(সুন্নাহকে) আকঁরে ধরবে তারা পথভ্রষ্ট হবে না তাই হক্বপন্থীরা অবশ্যই কুরান হাদিসকে আকঁরে ধরবে আর মাসলা মাসায়েলের ব্যাপারে প্রথমত কুরান হাদিস হতে যা সরাসরি ফতোয়া আসে তাই মানবে দ্বিতীয়ত যুগের ইমাম, সাহাবী, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, মুজাদ্দিদ এবং মুজতিহাদগন(ফিহকের ইমামগন) যা যা মতবাদ ব্যাক্ত করেছেন তাকে কুরান সুন্নাহর কষ্টি পাথরে যাচাই বাছাই করে তারপর মানবে আর কুরান হাদিসের কষ্টি পাথরে যাচাই করতে হলেও জ্ঞান অর্জন করতে হয় তাই কুরান হাদিসের মৌলিক জ্ঞানার্জন অবশ্যই করবে আর মৌলিক জ্ঞানার্জনের পরে সাহাবী,তাবেয়ী ও তাবে-তাবেঈনদের মত সকলেই ফতোয়া বাহির করতে সমর্থ হবে বা সকলেই মুজতিহাদে পরিনত হবে। তারা কখনই দুনিয়াবী বিষয়কে বেশী প্রাধান্য দিতে গিয়ে দ্বীনের জ্ঞানার্জনে অবহেলা করে অবশেষে বাধ্য হয়ে মুসলিম পুরোহিতদের বা বিজ্ঞজনের অন্ধ তাক্বলিদ করবে না কেননা দুনিয়াবিমুখ না হয়ে দুনিয়াকামী হওয়া কখনই উম্মতে মহাম্মদির স্বভাব নয় আর এজন্য জিব্রাঈল আঃ মেরাজের সময় নবী সাঃ কে বলেছিলেন- আপনার উম্মত দুনিয়াবিমুখ হবে সুতারাং বুঝা গেল দুনিয়াকে বেশী প্রাধান্য দেওয়া দুনিয়াকামীরা উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল- বর্তমান মুসলিম সমাজে যা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে তা অনেকটাই এমন যে, মুসলিমদের মাঝে দুটি শ্রেনী থাকতে হবে যথা- আলেম শ্রেনী এবং আম শ্রেনী বা অল্প জানা সাধারন মুসলিম শ্রেনী। ইজতিহাদ বা ফতোয়া দেয়ার আধিকার শুধু আলেম শ্রেনীর আর আম শ্রেনীর এই অধিকার বা যোগ্যতা নেই, তারা শুধু আলেমদের ফতোয়া মেনে চলবে । আবার লা মাজাহাবীদের ক্ষেত্রে অনেকটা এরকম যে- কুরান হাদিসের কথা আম মুসলিমরা আলেম শ্রেনীর কাছ থেকেই শুনবে অর্থাৎ কখনই আম শ্রেনীর কাছ থেকে ধর্মের কথা অন্যরা শুনবে না আর দু-একটি ফতোয়া বা ইজতিহাদ যা দরকার পরবে তা সৌদী আরব এবং সালাফী বিজ্ঞ আলেমরা যা নির্ধারন করবে তাই মেনে চলবে অর্থাৎ লা মাজহাবী বা মাজহাবী এই দুই দলই এমনকি শীয়ারাও একমত যে আম মুসলিমদের ফতোয়া দেওয়ার কোন অধিকার নেই কারন তাদের যোগ্যতা নেই কেননা তারা কেউই প্রচলিত মাদ্রাসা হতে বছরের পর বছর পড়ালেখা করে উচুস্তরের ডিগ্রী লাভ করে নাই তাই তাদের ইজতিহাদ বা ফতোয়া গ্রহনযোগ্য নয়। মোটকথা উপরের আলোচনা হতে ৩টি বিষয় সামনে চলে আসে- ১) মুসলিমদের মাঝে দুটি শ্রেনী রাখা যেমন- ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কেও অজ্ঞ সংখ্যাগুরু শ্রেনী আর থাকতে হবে বেশি জানা সংখ্যালঘু আলেম শ্রেনী।২) মাদ্রাসাই একমাত্র ইসলাম শিক্ষার মাধ্যম এবং ৩) ইজতিহাদ বা ফতোয়া শুধুমাত্র মাদ্রাসার আলেম-ওলামারই দেওয়ার যোগ্যতা আছে।
এখন দেখতে হবে উপরে উল্লেখিত ১ম বিষয়টা যে মুসলিম সমাজে দুই শ্রেনী থাকার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? বর্তমানে যেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে তা হল- মুসলিমদের মাঝে আলেম শ্রেনীরাই শুধু ধর্মের সমস্ত দায়-দায়িত্ব পালন করবে আর আম শ্রেনীরা তা মেনে চলবে অর্থাৎ আম শ্রেনীরা আলেম শ্রেনীর ধর্মীয় সকল ব্যাপারেই আনুগত্য করতে বাধ্য থাকবে অনেকটা উপমহাদেশের হিন্দু সমাজের ব্রাহ্মণ বা আর্য সমাজের পুরোহিতদের ন্যায় আলেম সমাজের অবস্থান হয়ে আছে অনেক যুগ ধরেই। হিন্দুদের পুরোহিত হতে গেলে জন্ম হতেই ব্রাহ্মণ পরিবারের হতে হয় অর্থাৎ নিচু বা দরিদ্র পরিবারের কেউ পুরোহিত হতে পারে না কেননা হিন্দুরা মনে করে নিচু বা অন্য জাত ধর্মের কথা বললে তারা ১মত ছোট জাতের হওয়ায় বংশীয়ভাবে কম বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে থাকে যা ধর্মীয় পান্ডীত্য এর ব্যাপারে খারাপ ফল বয়ে আনে আর দরিদ্র বা ছোট জাতের হওয়ায় সামান্য অর্থের লোভে ধর্মের ভূল ব্যাখ্যা করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার সম্ভাবনা থাকে তাছারা ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের মত ধর্মীয় অভিজ্ঞতা পূর্ব হতেই অন্য জাতের মাঝে না থাকাও একটা কারণ হিসেবে দেখে যদিও এখানে বংশীয় বা রক্ত সম্পর্কের ব্যাপারটাই বেশি মুখ্য কিন্তু আলেম শ্রেনী বা মুসলিম পুরোহিত হতে গেলে তাকে উঁচু বংশীয় বা নির্দিষ্ট বংশের হওয়া জরুরী নয় বরং যে কেউই একটা নির্দিষ্ট সময় ব্যাপী প্রচলিত মাদ্রাসা হতে পড়ালেখা করে ডিগ্রী নিলেই সে মুসলিম পুরোহিত বা আলেম শ্রেণী বনে যায়। যদিও জাত-বংশকে প্রাধান্য না দিয়ে যে কেউই পুরোহিত আলেম হবার এই প্রক্রিয়াটা হিন্দু ধর্মের চেয়ে অনেক উদারতার প্রকাশ করে কিন্তু তারপরেও অনেকে আপত্তি করে যে বেশির ভাগ মাদ্রাসাই ধনী পাপীদের দান-খয়রাত, সদকার টাকায় পরিচালিত হওয়ায় এসব মাদ্রাসা থেকে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা লাভ করেও ঘুনে ধরা সমাজের সামনে মাথা উঁচু করে হক্ব কথা বলার সাহস হ্রাস পায় এমনকি অনেক গরীব পরিবারের লোক তুলনামূলক কম খরচে মাদ্রাসা পাশ করে রুজি-রোজগারের ব্যাবস্থা থাকায় নিজেদের সন্তানকে মুসলিম পুরোহিত বানায় ফলে তাদের আরও বেশী সম্ভাবনা থাকে- সামান্য অর্থের লোভে ধর্মের ভূল ব্যাখ্যা করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার এমনকি ধর্মের নামে ব্যাবসা করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। যেহেতু সর্বদাই সমাজে আম শ্রেনীর সংখ্যা বেশী থাকে এবং আলেম শ্রেনীর সংখ্যা কম থাকতে বাধ্য আবার আলেম শ্রেনীরা সমাজে ধর্মীয় ব্যখ্যার মাধ্যমে সাধারন মুসলিমকে তাদের উপর এমনভাবে মুখাপেক্ষী করে যে ধর্মীয় ব্যাপার যেন শুধু হুজুরদেরই বাপ দাদার সম্পত্তি অর্থাৎ হিন্দুদের পুরোহিতদের মতই এদের অবস্থান। তাই আম মুসলিমরা বাধ্য হয় আলেমদের উপর নির্ভরশীল হতে। এরফলে আম শ্রেনীরা ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন হয় আর বেশিরভাগ সময় দুনিয়াদারীতে ব্যায় করে অন্যদিকে আলেম শ্রেনীরা ধর্ম নিয়েই বেশি পরে থাকে আর দুনিয়াদারীর ক্ষেত্রে তারা উদাসীন হয় আর এজন্য এরা শ্রমের মাধ্যমে ভাল আয়-রোজগার করতেও ব্যার্থ হয় তাছারা মাদ্রাসা হতে এরা কোন কর্মমুখী শিক্ষা পায় না ফলে এরাও বাধ্য হয় আম শ্রেনীর কাছ থেকে ধর্মের বিনিময় নিতে । আম শ্রেনীরা শ্রমের মাধ্যমে আয়-রোজগার ভালই করে কিন্তু সমাজে চলতে গিয়ে নামাজ পড়া, বিয়ে-শাদী, মৃত্য ব্যাক্তির জানাজা আরও ধর্মীয় ব্যাপারে তারা হুজুর সম্প্রদায়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরে তখন তারা হুজুরদের হাদিয়ার নামে অর্থ দিয়ে ধর্মীয় ব্যাপারগুলো সম্পন্ন করতে বাধ্য হয় আর এভাবেই মুসলিম সমাজেও ধর্মব্যাবসা শুরু হয়। এখন মুসলিমদের মাঝে সবাই যদি মাদ্রাসা পাশ করে আলেম হয়ে যায় তবে তাদের আহার কে যোগাবে? তাই হুজুররা ফতোয়া বের করেছে যে সকলের আলেম হবার দরকার নেই তবে কোন এলাকায় সর্বনিম্ন একজন আলেম হলেও থাকতেই হবে নয়ত সবাই পাপী হবে আর আম মানুষের এত বেশি ধর্মীয় জ্ঞান না থাকলেও চলবে তবে হুজুররা যা হালাল আর হারাম ফতোয়া দিবে সেসব হালাল-হারাম সম্পর্কে জানা সকলের জন্যই ফরজ। এভাবেই মাদ্রাসার আলেমরাই হুজুর বনাম অজ্ঞ মুসলিম সমাজ গড়ে তুলেছে যার সাথে নবী সাঃ এর তরীকার কোন মিল নেই। নবী সাঃ এর তরীকা বা ইসলামের নিয়ম কেমন তা নবী সাঃ এবং সাহাবী তাবেঈনদের রীতি দেখলেই বুঝা যায়। ইসলাম অনুযায়ি যে কেউই ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারে আর মৌলিক জ্ঞানার্জন সকল মুসলিমের জন্যই ফরজ এরপরও যে যত বেশি জ্ঞানার্জন করবে ততোই উত্তম তবে বেশি জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে বেশি বেশি আমল করা আরও বেশি উত্তম, দুনিয়াদারী যত কম করা যায় ততোই ভাল তবে নিজের পরিবারসহ মোটামুটি খেয়ে পড়ে বাঁচা যায় এমন আয়-রোজগার নিজের শ্রমের মাধ্যমে করাও ফরজ এমনকি ফযরের নামাজের পর পরই রিজিকের উদ্দেশ্যে বের হবার তাগিত দিয়েছেন আল্লাহ সুবঃ আর ধর্মের বিনিময় নেয়া কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এমনকি কুরানে তাদের কথা শুনতেও নিষেধ করেছেন যারা বিনিময় নিয়ে থাকে। তাহলে ইসলাম অনুযায়ি এমন অজ্ঞ মুসলিম থাকা যেভাবে হারাম ঠিক একইভাবে আম মানুষের কাছ থেকে হাদিয়া নাম দিয়ে আলেমদের কায়িক শ্রমহীন এমন ধর্মব্যাবসার ইনকাম আরও বেশি হারাম। সুতারাং মুসলিম সমাজকে এমনভাবে দুইভাগ করা ইসলামে জায়েজ নেই।
এরপরে দেখতে হবে উপরে উল্লেখিত ২য় বিষয় যে আসলেই মাদ্রাসাই একমাত্র ইসলাম শিক্ষার মাধ্যম কিনা ? আশ্চর্য্য হলেও এটাই সত্য যে নবী সাঃ ও সাহাবীদের জামানার প্রায় ৪০০ বছর পরে মাদ্রাসা ব্যাবস্থা চালু হয় অর্থাৎ ইসলামের শুরু হতে আব্বাসী আমলের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোন মাদ্রাসা ব্যাবস্থাই চালু হয়নি, অর্থাৎ ইসলামের স্বর্ণযুগে কোন মাদ্রাসাই ছিল না অথচ তখনই ছিল সাহাবা, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনদের মত উঁচুস্তরের মুসলিমদের যুগ। নবী সাঃ এর একটি সহী সনদের হাদিস হতে জানা যায় তাবে-তাবেঈনগনের যুগের পর হতেই মিথ্যার প্রাদূর্ভাব ঘটবে আর সত্যিই আশ্চর্য্যজনকভাবে লক্ষ্য করা যায় যে ঠিক তাবে-তাবেঈনগনের যুগের পরে এসেই এই মাদ্রাসা ব্যাবস্থা চালু হয়েছে। কিভাবে এবং কাদের মাধ্যমে মাদ্রাসার উদ্ভব হল তার সত্য ইতিহাসও জানতে হবে। সাধারনত আরবী মাদ্রাসা শব্দের অর্থ হল যেখানে দারস দেয়া হয় বা যে স্থানে পাঠ দেয়া হয়। নবী সাঃ সময় হতে ৪০০ বছর পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা দেয়ার প্রধান স্থান ছিল মসজিদেই ২য়ত বাড়িতে কিন্তু হযরত আলী রাঃ ও মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে মতবিরোধের পর হতে আলী রাঃ ভক্তদেরকে মসজিদে বেশী প্রাধান্য ছিল না, মসজিদে তাদেরই প্রাধান্য ছিল যারা উমাইয়া খলিফার একান্ত অনুগত থাকত। ইরাকের কুফার দিকে আলী রাঃ ভক্তের সংখ্যা ছিল বেশি এদের মাঝে আবার দুই ভাগ ছিল একদল ছিল অন্ধ ভক্ত যাদেরকে বর্তমানে শীয়া বলা হয় আর শীয়াদের মূলত নিয়ন্ত্রন করত মুসলিম সেজে থাকা ইহুদিরা। যাইহোক এরা সর্বদাই মুসলিম উম্মাহর মাঝে ফেতনা লাগানোর চেষ্টা করলেও হোসেন রাঃ বংশের আহলে বায়াতের ইমামগনের জন্য পরিপূর্ন সফল হতে পারত না ফলে ইসলামের শত্রুরা খলিফার কান ভারী করে অনেক ইমামকেই মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত দিতে বাধ্য করত। এসব আহলে বায়াতের ইমামগনের প্রায় পুরোটা জীবনই কাটত মুসলিমদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা দিতে, যেমন ইমাম জাফর আস সাদিক রহঃ ছিলেন প্রখ্যাত মুজতিহাদ ইমাম আবু হানিফা এবং ইমাম মালিকের শিক্ষক। সবচেয়ে বড় কথা হল যুগে যুগে যারা হক্বপন্থি তারা অবশ্যই বিভিন্ন বাধা বিপত্তির স্বিকার হবে এটাই স্বাভাবিক আর এনাদের বেলাতেও তাই হয়েছিল যার কারনে উনারা মসজিদের মত প্রধান স্থান হতে মানুষদেরকে খুব বেশি দারস দিতে পারতেন না কেননা উমাইয়া এমনকি পরবর্তীতে আব্বাসীদের সংগেও উনাদের সম্পর্ক তেমন ভাল ছিল না তাই উনারা নিজের বাড়িতেই কুরান-হাদিস, ফিকহের দারস দিতেন এবং জ্ঞান-অন্বেষী মুসলিমগুলো তাদের কাছে ভিড় করত । তাছারা আহলে বায়তের ইমামগন ছারাও উনাদের শিষ্য ইমাম আবু হানিফা ইমাম মালিক ছারাও আরও অনেকের কাছেই মানুষ ধর্মীয় জ্ঞান আরোহণ করতে যেত যার কারনে তারা একই বাড়ির আলাদা কক্ষেও মানুষদেরকে পাঠ দিতেন, আর এসব স্থানে সর্বদাই মানুষের সমাগম হত বলে একে সবাই খানকা বলত। এসব খানকাতে বসেই উনারা ধর্মীয় শিক্ষা এবং বিভিন্ন আলোচনা করতেন। অনেকেই আবার এসব খানকাকেই প্রাচীন মাদ্রাসা বলে থাকে কিন্তু মাদ্রাসা আর খানকা কেন এক নয় তা পরের আলোচনা হতে বুঝা যাবে তবে এই ধরনের খানকা শুধুমাত্র ইরাকের কুফার দিকে বেশি থাকলেও নবী সাঃ এর মক্কি জীবনেও কিন্তু এই ধরনের ছোট খাট ব্যাক্তিকেন্দ্রীক খানকার অস্তিত্ব পাওয়া যায় তবে নবী সাঃ মদীনায় আসার পর মসজিদই হয়ে উঠে মুসলিমদের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় কেন্দ্রভুমি।
মুসলিমদের মাঝে মাদ্রাসার উদ্ভব কিভাবে হল এটার উত্তর খুঁজতে বিভিন্ন ইতিহাস ঘেঁটে যা পাওয়া যায় তা হল- মদীনা হতে বিতারিত হয়ে ক্ষুব্ধ ইহুদিরা সর্বাদাই মুসলিম উম্মাহকে পরিপূর্নভাবে ধ্বংস করার প্লান করতে থাকে এজন্য এদের অনেকেই মুসলিম সেজে মুসলিমদের ভিতরে থেকে বিভিন্ন চক্রান্ত করে পরস্পরের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি করত যাতে এরা নিজেরা নিজেরাই যুদ্ধ বিগ্রহ করে শেষ হয়ে যায়। এজন্য এরা নিজেরাই দুই ভাগ হয়ে কাজ করত আর চেষ্টা করত মুসলিম উম্মাহর ঐক্য নষ্ট করে প্রধানত দুই ভাগ করে পরস্পরের মধ্যে যাতে যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়া যায়, এজন্য এরা হযরত আলী রাঃ কে আদর্শ ব্যাক্তি হিসেবে ধরে, তারা একদলকে আলী রাঃ এর অন্ধ ভক্ত বানায় আর অন্নান্য সাহাবীদেরকে শত্রুরুপে গন্য করায় আবার আরেক দলকে আলী রাঃ বিদ্বেষী করে তৈরী করে। সর্বশেষে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছায় যে পর পর দুইজন খলিফা উমর ও উসমান রাঃ কে শহীদ করার পরও তারা মতবিরোধ এতদূর পর্যন্ত গড়িয়ে নিয়ে যায় যে খিলাফত নিয়ে জনপ্রিয় দুই নেতা আলী ও মুয়াবিয়া রাঃ এর মাঝে চরম বিভেদ সৃষ্টি করে পরস্পরকে মরণঘাতি যুদ্ধে মুখোমুখী করে তুলে, ইতিহাসে যাকে সীফফিনের যুদ্ধ বলা হয়। কিন্তু আলী রাঃ এবং মুয়াবিয়া রাঃ এর মাঝে এক আলোচনা বৈঠকে আলী রাঃ যখন নিজেকে খলিফার আসন হতে সরিয়ে নেন তখন যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায় ফলে ইসলামের শত্রুদের চেষ্টা ব্যার্থ হয়ে যায় তখন আলী রাঃ এর দলে যারা ফিতনার উদ্দেশ্যে ছিল তারা আলী রাঃ এর এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে দল পরিত্যাগ করে এবং তারা আলী রাঃ এবং মুয়াবিয়া রাঃ উভয়কেই কাফের আখ্যা দিয়ে হত্যার প্লান করে । ইহুদিদের সরাসরি নিয়ন্ত্রিত এই দলের প্রধান ঘাঁটি ছিল ফেরাউনের দেশ মিশরে, এদেরকে আলী রাঃ খারিজী বলে আখ্যায়িত করে এই খারিজীরাই পরে আলী রাঃ এবং মুয়াবিয়া রাঃ কে গোপনে আক্রমন করে ফলে আলী রাঃ শহীদ হন, এই খারিজীরাই হোসেন রাঃ কেও হত্যার জন্য দায়ী। খারিজীরা শিয়াদের সাথে সর্বদাই মিশে থাকত আর এদের প্রধান কাজই ছিল আলী রাঃ অন্ধ ভক্ত তৈরী করে তাদের সাথে খলিফার বিরোধ তৈরী করা পাশাপাশি আলী রাঃ ভক্তদের মাঝেও বিভেদ সৃষ্টি করে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা আর সত্যি সত্যি তারা এতে সক্ষমও হয়। এরা আহলে বায়াতের ইমামের অনুসারির মাঝেও কয়েকটি ফেরকার সৃষ্টি করে যারা সবাই নিজেদেরকে শীয়া পরিচয় দিত কিন্তু যারা ইমামদের সত্যিকারের অনুসারি ছিল তারা কেউই নিজেদেরকে শীয়া পরিচয় দিত না। কিন্তু খলিফা কর্তৃক ১১তম ইমাম হাসান আসকারীকে হত্যার পর তার ছেলে মুহাম্মদ ইবনে হাসানকেও জীবন বাঁচানোর তাগিদে গোপনে দেশ ত্যাগ করানো হয়, তখন ইসলামিক রাষ্ট্রে ভক্তদের জন্য সরাসরি নবী সাঃ বংশের আর কোন ইমাম অবশিষ্ট ছিল না । আর এই সুযোগেই খারিজী শীয়ারা এদের সাথে মিশে মুহাম্মদ ইবনে হাসানের নামে আযগুবি সব বানোয়াট গল্প বানিয়ে প্রচার করতে শুরু করে এবং তাকে ১মে ১২তম ইমাম পরে ইমাম মাহদী বলেও প্রচার করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে তারাও বিভ্রান্ত হয়ে পরে এবং কিছুকাল পরে তারাও নিজেদেরকে ১২ ইমামী শিয়া বলে পরিচয় দিতে শুরু করে কেননা ঐদিকে ইসলামের শত্রুরা আরও অনেক ধরনের শিয়া দল তৈরী করেছিল তাই তারা নিজেদেরকে আলাদা পরিচয় তুলে ধরতে ১২ ইমামী শীয়া বলে পরিচয় দিত। ১২ ইমামী শীয়া তৈরী হবার অনেক পূর্বেই মিশরে অবস্থানরত সেই খারিজীরা অনেক পরিকল্পনা করে আহলে বায়াতের ৬ষ্ট ইমাম জাফর আস সাদিকের দুই পুত্র ইসমাইল ইবনে জাফর ও মুসা আল কাজিমের মাঝে দন্দ্ব বিভেদ তৈরী করে শেষ পর্যন্ত বড় ভাই ইসমাইল ইবনে জাফরকে হাত করতে সমর্থ হয় এবং তাকে দিয়ে আলাদা করে নতুন আরেকটি দল তৈরী করে যাকে বলা হয় ইসমায়িলী বা ফাতেমী শিয়া। অতীতের খারিজীরা প্রায় সকলে চলে আসে এই নতুন দলে এবং এরা ধর্মের রুপকভাবে ভুল ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি খারিজীদের আদিস্থান মিশরে আলাদা রাষ্ট্র ফাতেমী খিলাফতও কায়েম করে ফেলে মুসলিমদের মুল খিলাফতের বিপরীতে। ফাতেমী খিলাফতের অভ্যন্তরে মিশরে বসেই ইহুদী ও ইসলামের শত্রুরা নিশ্চিন্তে ইসমায়েলী শীয়াদের ইচ্ছেমত নাচাতে থাকে। তারা অন্নান্য মুসলিমদের ধ্বংস করার পরিকল্পনার পাশাপাশি ইসলাম ধর্মকে বিকৃত করতে ইসমায়েলী শীয়াদের মাঝে বিভিন্ন মতবাদ চালু করে এজন্য বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ বই ইত্যাদি রচনা করতে থাকে। এতেও যখন দেখা গেল অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করছে তখন সকলকেই এক ক্যাটাগরিতে আনতে তারা একটি নতুন ব্যাবস্থা চালুর পরিকল্পনা করে, তারা এমন এক ধরনের আলাদা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উদ্ভবের সিদ্ধান্ত নেয় যেখানে একই সংগে অনেক মানুষকে শুধু তাদের মনোনীত বিষয়গুলোরই দারস দেয়া হবে যাতে সেখানে যারা দারস নিবে তারা সকলেই একই মতবাদী হতে বাধ্য হয় আর সেখান থেকে যারা যারা তাদের ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করবে তাদেরকে সনদপত্র দেয়াসহ সরকারী চাকরী দিয়েও রিজিক লাভের ব্যাবস্থা করা হবে। যদিও এর পূর্বেও একই ধরনের প্রায় কাছাকাছি ক্যাটাগরির এক ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্ভবত পরীক্ষামুলকভাবে মুসলিমদের মাঝে চালু করা হয়েছিল মরক্কোতে, যাকে কিনা বর্তমানে বিশ্বের বুকে সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অবিহিত করা হয় । ইহুদী-খ্রীষ্টানসহ বিভিন্ন জাতির মিলনমেলা খ্যাত মরক্কোর ফেজ শহরে ফাতিমা আল-ফিহরি নামে এক মুসলিম নারী ৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে কারাউইন মসজিদের পাশে এই ধরনের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে যার নাম কারাউইন ইউনিভার্সিটি, এই প্রতিষ্ঠান হতেই সর্ব প্রথম ডিগ্রী প্রদানের সিষ্টেম চালু হয়েছিল কিন্তু এটি সেই সময়ের মুসলিম বিশ্বে তেমন পরিচিতি পায়নি কিন্তু ১০০ বছর পরে মিশরে আরও উন্নত পরিকল্পনায় যে প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয় তা ভালই পরিচিতি পায়। যাইহোক ইত্যাদি বিভিন্ন পরিকল্পনায় আদি খারিজী তথা ফাতেমী শীয়াদের হাত ধরে বিশ্বের বুকে সর্বপ্রথম মসজিদ হতে সম্পুর্ন পৃথক আলাদা এক ধরনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয় মিশরেই যার নাম হল মাদ্রাসা। বিশ্বের ১ম এই মাদ্রাসাটি ফাতেমী শীয়াদের তত্ত্বাবধায়নে ৯৭০ বা ৯৭২ সালে মিশরের কায়রোতে প্রতিষ্ঠিত হয় নাম রাখা হয় জামিয়াতুল আজহার বা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। আরবী আল-আজহার শব্দের বাংলা অর্থ আলোকিত এবং ইংরেজি অর্থ ইলুমিনেটেড। এত পূর্বে ইলুমিনিতির শয়তানী সংঘের উৎপত্তি হয়েছিল কিনা বা হয়ে থাকলেও মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তার সরাসরি কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা জানা যায় না তবে বর্তমানে শয়তানী সংঘ ইলুমিনিতিরা যখনই কোন নতুন প্রজেক্ট চালু করে তাকেও সেই আলোকিত তথা ইলুমিনেটেড নাম দিয়েই কাজ শুরু করে, যার আবার আরবী অর্থ দাঁড়ায় আল-আজহার। তবে এমন হতে পারে তখনকার সময় যেসকল ইসলাম বিরোধী চক্র মিশরে ব্রেইন ওয়াশ করতে আল আজহার মাদ্রাসা তৈরী করেছিল তারা আর বর্তমানের ইলুমিনিতির নেতারা একই দলের অর্থাৎ হতে পারে তখনকার সময় ফ্রি-মেশনারীরাই এটি তৈরী করেছিল কেননা বর্তমান বিশ্বে সিলেবাস ভিত্তিক এই লেখাপড়ার এই সিস্টেমটাও কিন্তু সরকারি চার্চভিত্তিক খ্রিষ্টানদের সাথে ফ্রি-মেশনারীরাই সৃষ্টি করেছে।
যাইহোক ঐ মাদ্রাসা তৈরীর পর ইসলাম বিরোধীরা মিশরের শীয়া মুসলিমদের মাঝে ব্যাপক সফলতা দেখতে পায় যারফলে তারা এবার সূন্নীদের মাঝেও এমন ব্যাবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। বলে রাখা ভাল যে ইসলাম বিরোধীদের দুটি প্রধান ঘাঁটি ছিল যার একটি হল মিশর আরেকটি হল ইরান, এই দুই অঞ্চল হতেই ইহুদী ও ইসলাম বিরোধীরা বেশিরভাগ পরিকল্পনা করত। শীয়াদের মাঝে মাদ্রাসার সফলতা দেখার পর এবার তারা সুন্নীদের মাঝেও এই ব্যাবস্থা চালু করতে তাদের প্রধান ঘাঁটি ইরানে পরীক্ষামূলকভাবে ছোট-খাট একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে নিশাপুরে যার নাম দেয়া হয় মাদ্রাসাই-বায়হাকিয়া, শুরুতে তেমন একটা সারা না পাওয়া গেলে এরপর নিশাপুরেই সুলতান মাহমুদের ভাই আমির নাছের ইবনে সবুক্তগীনের পৃষ্ঠপোষকাতায় মাদ্রাসাই সাইয়্যেদিয়া নামে দ্বিতীয় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তৃতীয় বৃহত্তর মাদ্রাসাটিও নিশাপুরেই ছিল। উস্তাদ আবু বকর ফাওয়ারেককে জনসাধারণ সমারোহের সাথে আমন্ত্রণ করে আনে। তার দরস শোনার জন্যই এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এবার কিছুটা সারা পাওয়া গেলে ইসলাম বিরোধীরা এবার মুসলিমদের রাজধানী বাগদাদে আল-আজহারের ন্যায় বড় ধরনের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে সুন্নীদেরকেও গনহাড়ে ব্রেইন ওয়াশ করার পরিকল্পনা করে, এজন্য বিষয়টাকে গুরুত্বপূর্ন করে তুলতে তখনকার সময়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিত্ব ইবনে সিনাকে ব্যাবহার করে । ইবনে সিনা তার এক বইয়ে মকতবসমূহে কর্মরত শিক্ষকদের নির্দেশনা হিসাবে মকতব সম্পর্কে "শিশুদের প্রশিক্ষণ ও লালনপালনের ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা" নামে একটি অধ্যায় লিখেন। তিনি লিখেন যে শিশুদেরকে ব্যক্তিগত শিক্ষক দিয়ে আলাদা আলাদা শিক্ষা দেয়ার পরিবর্তে শ্রেণীভিত্তিক শিক্ষা দিলে তারা তুলনামূলক ভাল শিক্ষালাভ করবে। এরপর এই ব্যাপারটি আব্বাসী খলিফাসহ সুন্নী মুসলিমদের মাঝে আলোচিত হতে থাকে। এরপরই ৪৫৯ হিজরি মুতাবিক ১০৬৭ সালের ১৩ যিলকদ শনিবার সেলজুক সুলতান তুঘরিলের ভ্রাতুষ্পুত্র আলফে আরসালানের প্রধানমন্ত্রী নিজামুল মুলক তুসি কর্তৃক বাগদাদে মাদ্রাসায়ে নিজামিয়া দারুল উলূম প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি সর্বপ্রথম ছাত্রদের জন্য বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ঐ মাদ্রাসায় বিভিন্ন বিভাগ ছিল এবং শ্রেণী অনুসারে প্রতি বিভাগে ছয় হাজার ছাত্র ছিল। উক্ত মাদ্রাসার সিলেবাস কিন্তু পেছন থেকে ইহুদী ও ইসলাম বিরোধীদের দ্বারাই গঠিত হয়। এভাবেই শীয়াদের সাথে সাথে সুন্নীদের মাঝেও শুরু হল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান তথা মুসলিম পুরোহিত তৈরীর এক ধরনের ফ্যাক্টরী। এতকিছুর পরও মসজিদ, বাড়ি এবং খানকাভিত্তিক সহী ধর্ম শিক্ষার সুন্নতী ব্যাবস্থাকে তারা বিলুপ্ত করতে পারছিল না। পরবর্তীতে অনেক পরিকল্পনা আর চেষ্টার ফলে তারা এতটুকু করতে সমর্থ হয় যে, মসজিদ ভিত্তিক মকতব ব্যাবস্থাতে তারা শুধুমাত্র কুরান রিডিং পড়া ও লেখা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ করে দেয় ফলে যারা আরও ভালভাবে ধর্ম শিখতে চায় তারা মাদ্রাসায় আসতে বাধ্য হয় আর বাড়ি ও খানকা ভিত্তিক যে ব্যাবস্থা ছিল তাকে নিতান্তই ব্যাক্তি পর্যায়ে নির্বাসন দেয় ফলে ধীরে ধীরে এই ব্যাবস্থা রুপান্তরিত হয় পীর-মুরিদী তরিকায়। শুধু তাই না অনেক হক্কানী পীরের মুরিদরা সঠিকভাবে ইসলাম শিক্ষা পেত বলে তারা নিজেরাই বিভিন্ন ভন্ড পীর সেজে মুসলিমদেরকে ভুল পথে নেবার পাশাপাশি অনেক দুনিয়ালোভী পীরদেরকেও হাত করা শুরু করে। যাইহোক মুসলিমরা যাতে সত্যিকারের কুরান-হাদিস এর শিক্ষা না পেয়ে ভুলভাবে ধর্ম শিখে বিভ্রান্ত হয়ে পরস্পর দলাদলি মতবিভেদে লিপ্ত হয় এজন্য ইসলাম বিরোধীরা তাদের সর্বস্ব নিয়োগেও দ্বিধা করত না উদাহরণস্বরুপ- সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম পুনঃউদ্ধারের পর মুসলিমদের মাঝে জনপ্রিয় ৩০০০ আলেমকে হত্যা করেন যারা কিনা সকলেই ইহুদি ছিল কিন্তু মাদ্রাসা থেকে উঁচু ডিগ্রি নিয়ে আলেম সেজে মুসলিমদের মাঝে ধর্ম সম্পর্কে ফিতনা ছরাতো। এতো গেল ইসলামিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মুসলিমদের শাষন ব্যাবস্থা থাকাবস্থায় ইসলাম বিরোধীদের এমন সাফল্য কিন্তু উপমহাদেশের মুসলিম শাষকদের হটিয়ে বৃটিশরা যখন রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়ে নেয় তখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের কি ধরনের সফলতা অর্জিত হতে পারে তা খুব সহজেই আঁচ করা যায়, এদিকে আবার ইন্ডিয়ার মুসলিমরা ছিল অনারব এবং ধর্ম সম্পর্কে অনেকটাই অজ্ঞ । ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীন শাষক নবাব সিরাজ উদ-দৌলাকে পরাজিত করার মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইন্ডিয়ার শাষন ব্যাবস্থা ইসলাম বিরোধী বৃটিশদের হাতে চলে যায় এরপর অনেক হক্কানী আলেম-ওলামা বৃটিশ খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে মুসলিমদেরকে যুদ্ধে উদ্ভুদ্ধ করতে থাকে ফলে ইসলামবিরোধীরা তাদের সেই অতীত পরিকল্পনা মাফিক এবার উপমহাদেশেও সাধারন মুসলিমদেরকে ভুল ধর্ম শিক্ষা দিতে এবং জীহাদবিরোধী সরকারি আলেম বানাতে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলার গভর্নর লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। এই মাদ্রাসাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারের জন্য কিছুসংখ্যক মুসলিম আইন অফিসার তৈরি করা। এই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সরাসরি সকলেই খ্রীষ্টান বৃটিশ হওয়ায় অনেকেই এর বিরোধিতা করে তখন আবারও পরিকল্পনা করে বাহ্যিকভাবে বেসরকারি বা খারিজি কিন্তু তলে তলে তাদেরই পুর্ন নিয়ন্ত্রনে থাকবে এমন আরেকটি মাদ্রাসা নির্মানের পরিকল্পনা করে যেখানকার প্রধান পরিচালক সকলেই মুসলিমই হবে কিন্তু তারা সকলেই বৃটিশদের এজেন্ট হবে। এরপর মুসলিমদের মাঝে জনপ্রিয় মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি নামে এক বৃটিশদের গুপ্ত এজেন্টের সাথে আরও পাঁচজনকে নিয়ে ১৫ই মুহরাম ১২৮৩ হিজরী বা ৩০শে মে ১৮৬৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে সাহারনপুর জেলায় দেওবন্দ নামক গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় “দারুল উলুম দেওবন্দ” নামক কওমী মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার ক্ষেত্রে অনেক সচেতনতা অবলম্বন করে বৃটিশরা, ১মত এর অর্থায়নের ব্যাবস্থা এবার তারা সরাসরি না করে মুসলিমদের চাঁদার মাধ্যমে এর পরিচালনা করা হয় যাতে কেউ সন্দেহ না করে আর সরাসরি ইংরেজরা এই মাদ্রাসায় যাতায়াত করত না কিন্তু তাদের এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত করত আর সিলেবাসও ইংরেজরাই নির্ধারন করে দিত। আলিয়া মাদ্রাসার মাধ্যমে সরকারি আলেম বানালেও এইধরনের কওমী মাদ্রাসা হতে যারা ধর্ম শিক্ষা গ্রহন করবে তারা সরাসরি কোন সরকারি চাকরি করবে না তবে মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন এবং অন্নান্য বেসরকারি ধর্মীয় কাজের নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে নিজেদের রুজির ব্যাবস্থা করবে। এরা কওমী মাদ্রাসা হতে যে ইলম শিখবে তাতে কখনই বৃটিশদের বিরুদ্ধে জীহাদের কল্পনাও করবে না এভাবেই সিলেবাস সাজানো হয় কারন ইতিপূর্বে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবসহ আরও অনেক জীহাদ পরিচালনার পিছনে ছিল হক্কানী আলেম ওলামার হাত, উনারা সকলেই বিভিন্ন খানকাভিত্তিক ও ব্যাক্তিকেন্দ্রিক দারসের মাধ্যমে আলেম হয়েছিলেন, এজন্য হাজার হাজার হক্কানী মুজাহিদ আলেম-ওলামাকে হত্যা করা হয় ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে কখনও তোপের মুখে রেখে কিন্তু এভাবে তাদের তো নির্মূল করা যাচ্ছিলই না বরং বিদ্রোহ আরও দানাবেধে উঠছিল তাই নতুন ধরনের মাদ্রাসা তৈরী করা হয় যেখানে অধ্যয়ন করে মুসলিমরা ইংরেজ এবং ইংরেজী শিক্ষাকে ঘৃণা করবে ঠিকই কিন্তু সরাসরি জিহাদ করবে না, মনের জিহাদকেই বড় জিহাদ ভাবতে বাধ্য হবে আর এরা হবে এমন আধা সুফিটাইপ মুসলিম যে দুনিয়া সম্পর্কে অনেকটাই বেখবর থাকবে আর ইংরেজসহ সকলের সাথেই নরম নীতি প্রদর্শন করবে। এই কওমী মাদ্রাসা ভালই জনপ্রিয়তা পায় উপমহাদেশে এরপর ধীরে ধীরে বৃটিশদেরই ছত্রছায়ায় গড়ে উঠে বেরলবীসহ আরও অনেক মাদ্রাসা তবে ডাইরেক্ট বৃটিশ এজেন্ট তথা সরকারি কর্মচারি তৈরীর উদ্দেশ্যে বেশি গড়ে তোলা হয় জেনারেল সেক্যুলার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানগুলোও যে ইসলাম বিরোধীদেরই পরিকল্পনার ফসল তা কিন্তু মাদ্রাসা পাশ আলেম এবং অনেক সাধারন মুসলিমরাও তা জানে না তবে বর্তমানের এই তথ্য সন্ত্রাসের যুগে এসে কেউ যদি কোন ভাল জ্ঞানী আলেমকেও জিজ্ঞাসা করে যে মাদ্রাসা ব্যাবস্থা কবে থেকে শুরু হয় তবে তারা কাল্পনিক কিছু তথ্য এমন দিবে যে- সর্বপ্রথম নবী সাঃ ই নাকি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন মক্কায় এরপর মদীনায় আসহাবে সুফফাতে যেসব দরিদ্র-অসহায় কিছু মুসলিমদের থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছিল সেটাও নাকি দারুল সুফফা মাদ্রাসা এরপরে সাহাবী ও তাবেয়ীদের জামানায় বিভিন্ন ব্যাক্তিকেন্দ্রিক খানকাকেও তারা মাদ্রাসা নামে প্রচার করে প্রমান করার চেষ্টা করবে যে মাদ্রাসাগুলো ইসলাম বিরোধীদের ফসল নয় বরং ইসলামের শুরু হতেই ছিল। কিন্তু এসব ভুয়া তথ্যের কোন দলীল নেই শুধুমাত্র বর্তমান হুজুরদের লিখিত কিতাব ছাড়া এমনকি আগের কোন ইতিহাস গ্রন্থেও এমন আজগুবি তথ্য নেই, এমনকি কোন অনইসলামিক গ্রন্থ বা ইসলাম বিরোধীরাও এমন আজব তথ্য দেয়নি, শুধু তাই না প্রায় ৫০ থেকে ১০০ বছর আগের কোন কিতাব হতেও এমন দলীল কেউ দিতে পারবে না। মোটকথা মাদ্রাসা ব্যাবস্থা ইসলাম বিরোধীদেরই পরিকল্পনার ফসল যা দলীল প্রমান দ্বারাই স্বীকৃত। কিন্তু তাদের এত পরিকল্পনার পরেও কিছু মুসলিম ঠিকই এসবের মধ্য হতেও আল্লাহর বিশেষ সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে সঠিক ইসলাম ধারন করে তা অন্যদের মাঝেও প্রচার করত যদিও তাদের সংখ্যা দিনকে দিন কমে আসতে শুরু করেছিল তার উপর ইসলাম বিরোধীরা এদের সাথে সাধারন মুসলিমদের মাঝে দূরুত্ব সৃষ্টি করত বিভিন্ন কুৎসা রটাত এমনকি চক্রান্ত করে হত্যাও করত।
যাইহোক অনেকেই খানকা আর মাদ্রাসার মাঝে মৌলিক পার্থক্য করতে পারে না এবং একে অপরের সাথে গুলিয়ে ফেলে। মাদ্রাসা আর খানকার মাঝে রয়েছে অনেক পার্থক্য যেমন- ১) মাদ্রাসার উদ্ভব ইসলাম বিরোধীদের দ্বারা আর খানকার উদ্ভব মুসলিমদের হাতে ২) মাদ্রাসার শুরু হয় আব্বাসী আমলে আর খানকার শুরু নবী সাঃ এর যুগ হতেই ৩) সাধারনত খানকা হত কারও ব্যাক্তিগত বাড়ি কেন্দ্রিক বা মসজিদ কেন্দ্রিক কিন্তু মাদ্রাসা হয় আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ৪) খানকায় দারস হত কুরান, হাদিস, ফিকহ, আরবী ভাষা ইত্যাদির আর মাদ্রাসায় দারস হয় পূর্ব নির্ধারিত ফিক্সড সিলেবাস ভিত্তিক আর কুরান-হাদিস বহির্ভুত অনেক বিষয়সহ ফারসি, উর্দু ইত্যাদি ভাষার পাশাপাশি অনেক সাহিত্য ও কবিতা ৫) খানকায় সাধারনত এক ব্যাক্তিই দারস দিত অথবা একক ব্যাক্তির তত্তাবধায়নে দারস হত কিন্তু মাদ্রাসায় একের অধিক ব্যাক্তির মাধ্যমে দারস দেয়া হয় ৬) মাদ্রাসায় সনদ বা ডিগ্রি দেওয়া হয় কিন্তু খানকায় কোন লিখিত সনদ বা ডিগ্রি দেওয়া হত না ৭) খানকায় যার কাছে দারস নিতে হত তার কাছে বায়াতও নিতে হত কিন্তু মাদ্রাসায় কোন বায়াত নিতে হয় না ৮) খানকায় যারা দারস নিত তাদের কাছ থেকে সাধারনত কোন অর্থ নেওয়া হত না এবং যে দারস দিত সেও বিনামূল্যে ধর্মশিক্ষা দিত কিন্তু মাদ্রাসায় শিক্ষকরা বেতনভুক্ত পাশাপাশি বেশিরভাগ মাদ্রাসায় ছাত্রদেরও অর্থ দিয়ে ধর্ম শিক্ষা নিতে হয় ৯) বেশিরভাগ খানকাই সর্বদাই অনাবাসিক ছিল অর্থাৎ থাকা খাওয়া ছিল না ১মদিকে কিন্তু বেশিরভাগ মাদ্রাসাই আবাসিক বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসাগুলো ১০) খানকাভিত্তিক ধর্মশিক্ষা বিলুপ্ত করা হয়েছে আর বর্তমানে মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষাকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। মোটকথা ইসলামের মূল সোর্স হল কুরান আর হাদিস নবী সাঃ বিদায় হজ্বের ভাষনে বলে গেছেন যারা এই দুটিকে আঁকরে ধরবে তারা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না তাই কুরান-হাদিসই ইসলাম শিক্ষার একমাত্র সোর্স যেটা যেকোন মুসলিমই নিজ ঘরে বসেই শিখতে পারে প্রয়োজনে শিক্ষকও রাখতে পারে, তাছারা অনেকেই আছেন যারা বিনামূল্যেই কুরান-হাদিস শিক্ষা দেন তাদের কাছে গিয়েও শিখা যায় তবে আরব দেশের লোকদের শুধুমাত্র পড়তে ও লিখতে পারা পর্যন্ত আরবী শিখলেও অনারবদের আরেকটু বেশি পরিশ্রম করে আরবী ভাষাটাও শিখতে হবে, এভাবে যে শিখবে সে তার ছেলে-মেয়েসহ পুরো ফ্যামিলীকেও নিজ দায়িত্বে শিখাবে এভাবেই সঠিক ইসলাম শেখা সম্ভব নয়ত ইসলাম বিরোধীদের মাদ্রাসার গ্যাঁড়াকলে পরে ধর্ম শিখতে গেলে ভুল ধর্ম শিখতে বাধ্য হবে যা জাহান্নামী হবার কারন সুতারাং নবী সাঃ এর যুগ হতে বর্তমান পর্যন্ত কখনই মাদ্রাসাই একমাত্র ধর্ম শিক্ষার স্থান নয় বরং মাদ্রাসা হল ধর্মীয় পুরোহিত তৈরীর এক ধরনের ফ্যাক্টরী মাত্র। নবী সাঃ এদের সম্পর্কে বলে গেছেন- এরা হবে আসমান জমিনের মাঝে সর্ব নিকৃষ্ট জীব। তাই মাদ্রাসায় পড়ুয়া আলেমরাই শুধু বলবে মাদ্রাসা ছাড়া ধর্ম শিক্ষা সম্ভব না এবং মাদ্রাসা হতে উচু ডিগ্রি না নিয়ে ফতোয়া বা ইজতিহাদ করাও সম্ভব না। আল্লাহ সুবঃ এসব ফিতনা হতে আমাদের হিফাজত করুন-আমিন।
এখন দেখতে হবে উপরে উল্লেখিত ৩য় বিষয় যে, ইজতিহাদ বা ফতোয়া শুধুমাত্র মাদ্রাসার আলেম-ওলামা ছাড়া আর কারও দেওয়ার যোগ্যতা নেই এটা কতটুকু ঠিক? উপরের দীর্ঘ আলোচনা হতে যেটি পরিস্কার হয়েছে তা হল মাদ্রাসা হতে পাশকৃত আলেম-ওলামারাই বরং মানুষকে আরও পথভ্রষ্ট করবে তাই তাদের ইজতিহাদ এবং ফতোয়া আরও বেশি ভুল হবে কারন তারা বেশি জানলেও ভুল সিলেবাসের মাধ্যমে ইসলাম শিখেছে তাই মাদ্রাসা পাশকৃত আলেম-ওলামাদেরই বরং বলা যেতে পারে যে তাদেরই ফতোয়া দেয়া উচিৎ নয় অর্থাৎ তাদের নিজেদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার ছাড়া সার্বিক বৃহত্তর পরিসরে তাদের ইজতিহাদ ইসলামের ক্ষতিই বেশি করেছে এবং করবে। কিন্তু আসল ব্যাপার হল মাদ্রাসা পাশ ছারাই কেউ যদি সঠিকভাবে ইসলাম শিখে আলেম হয় তথা বেশি জানা মুসলিম হয় তবে কি বেশি জানা মুসলিম ব্যাতীত কম জানা মুসলিমরা ইজতিহাদ করতে পারবে না ? অর্থাৎ ইজতিহাদ বা ফতোয়া কি শুধুই বেশি জানার উপর নির্ভর করে? এই ব্যাপারটি ভালভাবে বুঝতে হলে প্রথমেই দেখতে হবে ফতোয়া বা ইজতিহাদ আসলে কি ? যদিও ইজতিহাদ বা ফতোয়া সম্পর্কে পূর্বেও কিছু ধারনা দেওয়া হয়েছিল তারপরেও পরিপূর্নভাবে এখন উল্লেখ করা হচ্ছে – সাধারনত ইজতিহাদ দুই প্রকারের যথা- দ্বীনি ইজতিহাদ এবং দুনিয়াবী ইজতিহাদ, প্রথমত দ্বীনি ইজতিহাদ বলতে বুঝায় যদি কোন মুসলিম সম্পূর্ন নতুন এমন কোন কর্ম করতে গিয়ে যদি মনে করে উক্ত কর্ম হালাল হবে না হারাম হবে? অথবা সেটি হালাল হলেও তা বেশী উত্তম নাকি কম উত্তম? অথবা সেটি যদি হারামও হয় তবু তা বেশী নিকৃষ্ট নাকি কম নিকৃষ্ট? অর্থাৎ সেটি করা কবিরা গুনাহ নাকি ছগিরা গুনাহ? এই ধরনের সমাধান যখন দ্বীন ইসলামের মুল ২টি সোর্স(কুরান ও হাদিস) হতে সাধারন প্রচেষ্টায় সরাসরি শাব্দিক অর্থে বুঝা তো যায়ই না বরং দিধা-দন্দ্ব কাজ করে। আর তখন যদি কেউ তার মাথা খাঁটিয়ে বা অতিরিক্ত প্রচেষ্টায় কুরান হাদিসের মর্মার্থ হতে সূত্র বের করে নিশ্চিত সমাধান এমনভাবে বের করে যে মনে হতে থাকে “আসলে এখানে এটাই বুঝানো হয়েছে বা সরাসরি না হলেও এমনটাই করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে / এমনটাই করা উচিৎ /এমনটাই করা উত্তম ” তখন উক্ত সমাধানকে বলে ইজতিহাদ বা ইজতিহাদকৃত মাসালা। আর ইজতিহাদকৃত কোন মাসলা-মাসায়েল যদি কেউ অন্যদের কাছে প্রকাশ করে অথবা প্রচার করে তখন তাকে বলে ফতোয়া বা মতামত অর্থাৎ ইজতিহাদ আর ফতোয়া প্রায় একইরকম জিনিস । আর এই দ্বীনি ইজিতিহাদের ক্ষেত্রেও বেশি জানা বা কম জানা যে মোটেও নির্ভর করে না তা নিচের আলোচনা হতে আরও ভালভাবে বুঝা যাবে।
দ্বিতীয়ত দুনিয়াবী ইজতিহাদের উদাহরণ হল- কোন পিতামাতা যদি তাদের অল্প বয়স্ক ছেলেকে টাকা দিয়ে বলে যে “বাজারে গিয়ে রুই মাছ কিনে আনবে” এখন ঐ ছেলে বাজারে গিয়ে দেখল মাছ বাজারে আজকে কোন রুই মাছ নেই তখন ছেলেটি পিতামাতার ঐ আদেশ “বাজারে গিয়ে রুই মাছ কিনে আনবে” এটার শাব্দিক অর্থে কোন সমাধান না পেয়ে নিজের মাথা খাঁটিয়ে যদি বুঝে যে রুই মাছ নেই তাই যদি মাছই না কিনে বাড়ি ফিরি তবে সবাই খাব কি? তাই সে একটা সিদ্ধান্ত নিল যে একই টাকায় কাতল মাছ কিনে বাড়ি ফিরবে এবং সে তাই করল আর বাড়ি ফেরার পর বাবা-মা আরও খুশি হল ছেলের বুদ্ধি দেখে । এখানে ঐ ছেলেটি আসলে ইজতিহাদ করে রুই মাছ না পেয়ে কাতল মাছ কিনেছে এবং তার ইজতিহাদ সঠিকই হয়েছে। এই ছেলেটি কিন্তু বাবার মত জ্ঞানী আর অভিজ্ঞতা সম্পন্নও ছিল না বাজারের ক্ষেত্রে অথচ আল্লাহর দেয়া বুদ্ধি অনুযায়ি সে ঠিকই পিতার মতই বাজার করে এনেছে অর্থাৎ তার বাবা বাজারে গেলেও কাতল মাছই আনত রুই মাছের পরিবর্তে। এভাবেই প্রতিটা মানুষই দুনিয়াদারীর ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ইজতিহাদ করেই জীবন যাপন করে চলেছে কিন্তু দ্বীনি ক্ষেত্রে এসে তারাই আবার সম্পূর্নভাবে হুজুর নির্ভর হয়ে যায়, কিছুতেই নিজেদের মাথা ব্যাবহার করতে চায় না আর তারা এমন করে কারন হুজুরদের এমনটাই নির্দেশ। মাদ্রাসার আলেমদের আবির্ভাবের আগে কিন্তু এমন ছিল না অর্থাৎ সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনগনদের যুগে তারা সকলেই দ্বীন এবং দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলেই ইজতিহাদ করে চলত। একটা নির্দিষ্ট গোষ্টি ধর্মের ক্ষেত্রে যা ইচ্ছা তাই ফতোয়া দিয়ে যাবে আর অন্য সবাই অন্ধের মত শুধুমাত্র জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর বলে মানতে থাকবে এমন সিস্টেম অনেক পরে সৃষ্টি হয়েছে।
সাধারনত দেখা যায় দুনিয়াবী ক্ষেত্রে অল্প জানা ১০ বছরের বালকও ইজতিহাদ করে চলতে পারে এখন দেখতে হবে দ্বীন-ধর্মের ক্ষেত্রেও অল্প জানা বালক ইজতিহাদ করতে পারে কিনা ? উদাহরনস্বরুপঃ-১)নামাজের ক্ষেত্রে একজন কিশোর ছেলের যহোরের নামাজ পড়ার অনেক পরে মনে পরল যে নামাজে তার ভুল হয়েছিল(ফরজ ছুটে গিয়েছিল) কিন্তু সে সময় সাহু সিজদা দিতে ভুলে যায় তাই সে ইজতিহাদ করে মাসলা বের করল যে উক্ত নামাজ এখনি আবারও পড়ে নিলে আর গুনাহ হবে না অথবা তার নামাজের ভূলের কথা পরের ওয়াক্ত আছরের নামাজ পড়াবাস্থায় মনে পড়ল তাই যদি বেশি হাদিস জানা না থাকায় সে এবার ইজতিহাদ করে যে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে আছরের নামাজ শেষে এবং দুয়া করতে হবে যেন যহোরের নামাজ তিনি কবুল করে নেন কেননা সে জানে যে আছরের পরে নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ পড়া হারাম তাই নামাজ আবার পড়াও সম্ভব না এমনকি আছরের পরে আর কোন নামাজও নেই মাগরীবের পূর্ব পর্যন্ত কিন্তু এই মুহুর্তের মধ্যে সে যদি মারা যায় তাহলে যহোরের নামাজ না হওয়ায় তার জবাবদিহীতা হতে রক্ষা পাওয়া যাবে না তাছারা এত অল্প সময়ে সে কোন আলেমের কাছে গিয়ে এই ব্যাপারে হাদিসও জানতে পারছে না তাই সে আপাদত প্রাথমিকভাবে সমাধান পেতে ইজতিহাদের মাধ্যমে দুয়া করে মাফ চাওয়ার মাসয়ালা বের করল এবং মাগরীবের ওয়াক্তে যহোর ক্বাজা পড়ে নেওয়ার নিয়ত করল, এখন ঐ অল্প জানা কিশোরের এই ধরনের ইজতিহাদ যে ভুল হয়েছে তা দুনিয়ার কোন আলেম মুফতীই বলতে পারবে না।
২) ধর্ম সম্পর্কে অল্প জানা ১০-১২ বছরের কিশোর যদি কোন আলেমের মাধ্যমে বা অন্য কোন মাধ্যম হতে জানতে পারল যে কুরান হাদিসে কোথাও ধুমপান সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়নি কিন্তু তারপরও সে বন্ধুদের মাঝে ধুমপানকে হারাম ফতোয়া দিয়ে নিজেসহ আরও কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব ধুমপান হতে দূরে থাকল। এখন তার এমন ইজতিহাদ করার কারন হল- সে ভালভাবেই জানে মহান আল্লাহ সুবঃ মানুষের জন্য সেসব জিনিসকেই হারাম করেছেন যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর এবং হালাল করেছেন যা মানুষের জন্য উপকারী কিন্তু ধুমপানে কোন উপকার তো নেইই বরং ডাক্তারদের নিষেধ সহ সিগারেটের খাপেও স্পষ্ট লেখা আছে যে ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই এটি কখনই হালাল হতে পারে না যদিও অনেক বড় বড় মুফতী ধুমপানকে মাকরুহ ফতোয়া দিয়ে হালকা করে রেখেছে । এখন বড় বড় জান্নেওয়ালা মুফতীর বিপরীতে ঐ অল্প জানা কিশোরের এমন ইজতিহাদ যে সত্যিই নির্ভুল ইজতিহাদ তা কিন্তু অনেক আলেম মুফতীই একমত হতে বাধ্য হবেন আবার যারা একমত হবে না তারসহ সকলেই অন্তত্ব এটা স্বিকার করবে যে উক্ত ইজতিহাদ যদি কিশোরের ভুলও হয় তবু সে একগুন সোওয়াব পাবে পাশাপাশি সে ধূমপানকে হারাম জেনে দূরে থাকায় বেশি সুস্থ ও নিষ্পাপ থাকতে পারবে।
সুতারাং বুঝা গেল যে সাধারন ক্ষেত্রে একজন অল্প জানা কিশোরও দ্বীনি ইজতিহাদ করে চলতে পারে কিন্তু আরও বিস্তারিত ক্ষেত্রে ইজতিহাদ করতে হলে একজন সাধারন মুসলিমের মাদ্রাসায় পড়া না লাগলেও কয়েকটি বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে যেমনঃ- আল-কুরান শানে নুযুলসহ পড়ার পাশাপাশি হাদিস গুলোরও শানে নুযুল জানার চেষ্টা করা। এটি খুব কঠিন কাজ নয় কারন বাংলা বড় কুরান শরীফগুলোতে সাধারনত শানে নুযুল দেওয়াই থাকে তারপরও ভাল হয় যদি কোন বিস্তারিত তাফছির ওয়ালা কুরান পড়া হয় এখানে শানে নুযুলের পাশাপাশি বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেওয়া থাকে। আর প্রত্যেক মুসলিমেরই উচিৎ ভাল কোন সিরাত গ্রন্থ(নবী সঃ এর জীবনী) অবশ্যই পাঠ করা এতে করে কুরানের আয়াতের বক্তব্যের ধরন দেখেই পাঠক সহজেই বুঝতে পারবে যে এই আয়াত নবী সাঃ এর জীবনে কখন আর কি উদ্দেশ্যে নাজিল হয়েছিল। সাধারনত সকল হাদিসের শানে-নুযুল জানা না গেলেও সহী হাদিসগুলোকে কুরানের পর পরই ব্যাখ্যা হিসেবে রাখতে হবে আর কোনটি সহী হাদিস আর কোনটি সহী নয় এটা নির্ধারনের পদ্ধতি স্বয়ং নবী সাঃ ই বলে গেছেন যেমন- উক্ত হাদিসের মুল বক্তব্যটা এমন, নবী সাঃ বলেন- “যদি তোমরা আমার নামে কোন কথা শুন তবে তা কুরানের সাথে মিলাও, যদি কুরানের সাথে না মিলে তবে সেটা আমার কথা নয়”। তাই কুরানকে আগে স্থান দিতে হবে আর কুরান জানা থাকতে হবে তারপর দেখতে হবে কুরানের সাথে হাদিসের বক্তব্যের কোন সাংঘর্ষিকতা আছে কিনা। এছারাও যুগ যুগ ধরে অনেক হাদিস বিশারদগন বিভিন্ন ভিত্তিতে হাদিসকে সহী,যয়ীফ,জাল ইত্যাদিতে ভাগ করেছেন এগুলো প্রায় সকল হাদিস গ্রন্থেই উল্লেখ থাকে বলে সঠিক হাদিস চিনা আরও সহজ হয়। সুতারাং মোটামুটি এতটুকু জ্ঞান অর্জন করলে সে আরও বিস্তারিত ইজতিহাদ করতে পারবে তবে ইজতিহাদ বেশিরভাগই শুদ্ধ ও সঠিক হবার জন্য কুরানের কোন আয়াত পরে রহিত বা মানসুখ হয়ে তার পরিবর্তে অন্য আয়াত নাজিল করা হয়েছে বা নাসখ হয়েছে এগুলো সম্পর্কে একটু ভালভাবে লক্ষ্য রাখতে হয় যদিও এটি তেমন জটিল বিষয় নয় কারন এই নাসিক-মানসুখের আয়াত সম্পর্কে তাফসির গ্রন্থে ভালভাবেই আলোচনা করা হয়েছে।
এরপরে আরও উচুস্তরের ইজতিহাদ করতে হলে অর্থাৎ মুফাসসিরদের(কুরানের ব্যাখাকারী) ন্যায় ইজতিহাদ করতে হলে আরবী ভাষা শিখতে হবে। আর আরবী ভাষা শিক্ষা মোটেও কোন কঠিন কাজ নয় বরং অন্নান্য ভাষার চাইতে আরবী ভাষাই সবচেয়ে সহয। ইংরেজিসহ পৃথিবীর যেকোন ভাষাই শিখতে কয়েক মাস বা বছর সময় লাগলেও শুধুমাত্র আরবী ভাষা শিক্ষাকে মাদ্রাসার হুজুররা অনেক জটিল করে তুলেছে, তাদের মতে ভালভাবে আরবী শিখতে নাকি ১০ বছর লাগে। আসলে আমাদের উপমহাদেশের মাদ্রাসার ছাত্ররা যে সিলেবাসের মাধ্যমে আরবী শিখে তা সত্যিই কঠিন কারন তারা এই আরবী ভাষা শিখতে গিয়ে আগে উর্দু-ফারসি ভাষা শিখে কারন ভাল ভাল আরবী ব্যাকরণ বই নাকি সব উর্দু আর ফারসিতে তাই এক ভাষা শিখতে আরও নতুন দুটি ভাষা তাদের শিখতে হয় যা সত্যি হাস্যকর। তাছারা তারা সরাসরি বাংলা হতে আরবী ভাষা যেসব ব্যাকরণ বইয়ের মাধ্যমে শিখে সেগুলোও অনেক জটিল এবং অহেতুক সময়ের অপচয় তাই কেউ আরবী ভাষা শিখতে চাইলে কখনই মাদ্রাসার সিলেবাস ফলো করা যাবে না বরং তাকে মুক্তভাবে আরবী শিখতে হবে অর্থাৎ ফ্রী ভাবে আরবী স্পোকেন কোর্স করতে হবে। ভালভাবে আরবী বলতে পারা এবং লিখতে পারার পাশাপাশি কুরান-হাদিসের সকল আরবীই ভালভাবে বুঝতে চাইলে ব্যাক্তিভেদে এবং শিক্ষক ও বই এর উপর নির্ভর করে সর্বচ্চ এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে তবে আমরা ইনশাহ আল্লাহ অনেক গবেষণা করে সেই যোগ্যতা মাত্র ৪০ দিনেই করার ব্যাবস্থা করেছি তবুও সম্পূর্ন ফ্রীতে। অথচ এই পরিমান আরবী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে মাদ্রাসার ছাত্রদের সর্বচ্চ ১০ বছর সময় লাগে আর মাদ্রাসার বাইরে উন্মুক্তভাবে শিখলেও বছরের বেশি সময় লাগবে।
অনারব মুসলিমদের মাঝে একটি বড় ধরনের ভূল ধারনা প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে হুজুর সম্প্রদায়গন যে, আরবী ভাষা শুধুমাত্র হুজুর সম্প্রদায়গনই ভালভাবে জানবে আর আম মুসলিমরা হিন্দু ধর্মের লোকদের মত না বুঝে মন্ত্র পাঠের ন্যায় কিছু দুয়া-কালাম শিখবে অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের পুরোহিতরা মুসলিম হুজুরদের ন্যায় তাদের ধর্মীয় সংস্কৃত ভাষা ভালই জানে কিন্তু সাধারন হিন্দুরা সংস্কৃত ভাষার কিছুই বুঝে না, তারা অর্থ না বুঝেই মন্ত্র পাঠ করে থাকে অথচ হিন্দু ধর্মের সব মন্ত্রই সংস্কৃত ভাষায়। সুতারাং হিন্দু পুরোহিতদের প্রভাবে সাধারন হিন্দুদের মাঝে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে- মন্ত্র মানেই না বুঝে পড়ার জিনিস ঠিক একই ভাবে মুসলিম হুজুরদের প্রভাবে আম মুসলিমদের মাঝেও অর্থ না বুঝে মন্ত্র পাঠের ন্যায় আরবী না বুঝেই দুয়া-কালাম বা কুরান পাঠ প্রচলিত হয়েছে। তাই আলেম সম্প্রদায়ের নির্দেশে সাধারন মুসলমান অর্থ না বুঝে শুধুমাত্র সহী উচ্চারনে নামাজে ব্যাবহৃত কিছু সুরা ও দুয়া মুখস্ত করে থাকে যার ফলে তারা আল্লাহর কাছে কি প্রার্থনা করছে এবং আল্লাহ মানুষদের কি নির্দেশনা দিচ্ছে তার কিছুই বুঝতে পারে না আর এ কারনেই অনারব মুসলিম আর আরব দেশের মুসলিম এদের ব্যাবহার আর চাল-চলনের মাঝে বিশাল ফারাক লক্ষ্য করা যায়। এমনকি তাবেঈন এবং তাবে-তাবেঈনগনের যুগ পর্যন্ত মুসলিমদের খলিফাগন অনারব মুসলিমদের থেকে কাফেরদের মত করে জিজিয়া কর নিতেন আর অনারব মুসলিমদেরকে মাওলী বলে আখ্যা দেয়া হত কেননা মুসলিমদের ধর্ম গ্রন্থ কুরান আরবী ভাষায় আর নামাজে প্রত্যহ ৫ বার প্রতিটা মুসলিমেরই অসংখ্য আরবী বলতে ও শুনতে হয় এরপরও যারা আরবী ভাষা না শিখে নিশ্চয় তারা মন থেকে পরিপূর্ন মুসলিম হতে পারেনি বিধায় এই নিয়ম অনেকদিন পর্যন্ত জারী ছিল পরপর্তীতে অনারব ইরানের প্রভবে আব্বাসী আমলে এই নিয়ম উঠে যায়। একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় মুসলিম মাত্রই আরবী ভাষা জানতে বাধ্য কারন নামাজে পুরো কুরানই পাঠ করা হয়, এখন হাফিজ ইমাম যদি কুরানের মধ্য হতে প্রায়ই যেকোন অজানা দীর্ঘ সুরা পাঠ করতে থাকে তবে সমস্ত আরব মুসলিমই কিন্তু সেসব সুরা ঠিকই বুঝতে সক্ষম হবে পূর্ব হতে মুখস্ত না থাকলেও যে আল্লাহ সুবঃ তাদের কি নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নামাজ শেষে তারা সেসব নির্দেশনা ঠিকই মেনে চলতে পারবে কিন্তু যারা অনারব আম মুসলিম তারা যদি অনেক সুরা অর্থসহও মুখস্ত করে থাকে তবু কুরানের মাঝে হতে নতুন সুরা পাঠ করায় তারা কিচ্ছু বুঝবে না, শুধুমাত্র শিশুদের মত তেলায়তের সুর শুনতে হবে, কিচ্ছুই বুঝবে না বোকার মত আর তাই নামাজ শেষে তারা আল্লাহর নির্দেশনা বুঝতে না পারায় মেনে চলতে তো পারবেই না বরং আরও আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করতে বাধ্য হবে। তাছারা ইচ্ছে করে নামাজে অমনযোগী হওয়াও জায়েজ নেই কিন্তু অপরিচিত সুরা নামাজে ইমাম সাহেব পাঠ করলে অনারাব আম মুসলিমরা অমনযোগী হতে বাধ্য তাই ইত্যাদি আরও অনেক কারনে মুসলিম মাত্রই আরবী ভাষা শিখতেই হবে তাছারা আল-কুরান ঈশ্বরের বানী এবং কাব্যিক হওয়ায় এটাকে ভাষান্তর করাও সম্ভব নয় তাই আরবী ভাষা শিখতেই হবে। আম মুসলিমদের আরবী ভাষা না শিখলেও চলবে এমন কোন দলীল কুরান-হাদিস হতে কেউ দেখাতে পারবে না আর আরবী ভাষা শিক্ষা সকলের জন্যই আবশ্যিক এমন দলীল যদি কুরান-হাদিসে যদি নাও থাকত তবু শুধুমাত্র নিজের বিবেক দ্বারাই এটা বুঝার কথা যে কুরান-হাদিস আরবী ভাষায় নাজিল হয়েছে আর নামাজসহ আরও অনেক ফরজ ইবাদত আরবী ছাড়া নিজেদের মাতৃভাষায় পড়া যেহেতু জায়েজ নেই তাই সকল মুসলিমেরই আরবী ভাষা শিক্ষা আবশ্যিক কর্তব্য । তবে আরবী ভাষা শিক্ষা সকলের জন্যই জরুরী নয় সমাজে এমন ভুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একমাত্র ধর্মব্যাবসায়ী হুজুরদের ধারনার কারনেই কখনও কুরান-হাদিসে এমন নির্দেশ ছিল না। আরবী ভাষা শিখলে মুফাসসিরদের ন্যায় তাফসির করা যাবে বা উঁচু লেভেলের মুসলিম হওয়া যাবে শুধু এই উদ্দেশ্যেই আরবী ভাষা শিখতে হবে এমন নয় বরং সকল মুসলিমের শুধুমাত্র সাধারন ভাবে ইসলাম ধর্ম মানার তাগিদেই আরবী ভাষা শিখতে বাধ্য। সাহাবীদের জামানা হতে তাবে-তাবেঈনদের জামানা পর্যন্ত ইসলামের স্বর্নযুগ ছিল সে যুগে সকল মুসলিমগনই তাফসির করার যোগ্যতা রাখতেন কিন্তু কেউই তাফসির গ্রন্থ রচনা করেননি কারন তারা কাদের উদ্দেশ্যে তাফসির রচনা করবেন ? সেই যুগের সকল মুসলিমই তো ছিল একেকটা মুফাসসিরে কুরান সুতারাং শুধুমাত্র সমাজে অনেক অজ্ঞ মুসলিম থাকলেই না তাফসির রচনা করতে হয় তাছারা ইসলাম ধর্মে ইচ্ছে করে অজ্ঞ থাকাও জায়েজ নেই। সুতারাং কোন অনারব মুসলিম আরবী ভাষা রপ্ত করলেই সেও হতে পারে মুফাসসির ও মুজতিহাদ আর প্রতিটা মুসলিমই মুজতিহাদ হতে বাধ্য উঁচু পর্যায়ের না হলে নিচু পর্যায়ের হলেও, এ ব্যাপারে পরে আরও আলোচনা করা হবে ইনশাহ আল্লাহ।
এখন আলোচনা করা হবে কিভাবে খুব সহযেই ইজতিহাদ ও ফতোয়া দেয়া যায় বা ইজতিহাদের কিছু মৌলিক নিয়ামাবলী। ফরজ ইজতিহাদ কোন নিয়ম না শিখেই যেকোন মুসলিমই দিতে পারবে এবং এতে ভুল হলেও ক্ষমা করা হয় কিন্তু নফল ইজতিহাদ বা বেশি বেশি ইজতিহাদ করার পূর্বে কিছু জিনিস জানতেই হবে। ফরজ ইজতিহাদগুলো এমনি জরূরী হয় এবং প্রাত্যহিক জীবনে এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় মুসলিমদের যে তারা নিজের অজান্তেই প্রায়ই ফরজ ইজতিহাদ করেই ধর্ম মেনে চলে যদিও তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না যে সে ইজতিহাদ করে চলছে। যখন কোন কিতাব খুলে দেখার বা কোন আলেমের কাছে যাবার সময় পর্যন্ত পাওয়া যায় না অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় তখন সকল মুসলিমই প্রাথমিক একটা ধর্মীয় সমাধানে পৌছে আপাদত কাজ চালিয়ে নেয়, আর এক্ষেত্রে বেশিরভাগ ইজতিহাদই সঠিকও হয় এর কারন আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ সাহায্য উদাহরনস্বরুপ- প্রতিটা মানুষের সাথেই একটি করে শয়তানের পাশাপাশি একজন করে ফেরেশতা নিয়োগ করা থাকে তাদের কাজ হল সর্বদাই মানুষকে ভাল কাজে উদ্ভুদ্ধ করা আর সে ফেরেশতাই মানুষের মনে সেই কর্মটি সঠিক হলে মনের মাঝে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে দেয় ফলে মানুষ কাজটি করতে প্রলুব্ধ হয়। এখন অতিরিক্ত বা নফল ইজতিহাদের জন্য কিছু জিনিস জানতে হবে তার মধ্যে উপরে দুটি বিষয় পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে ১) কুরান-হাদিস শানে নুযুলসহ জানা এজন্য ভাল কোন তাফসির গ্রন্থের মাধ্যমে কুরান পড়তে হবে কেননা নাসিক-মানসুখের আয়াত সম্পর্কেও তাফসির গ্রন্থে আলোচনা করা হয় ফলে অতিরিক্ত ইজতিহাদে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ২) আরবী ভাষা মুক্তভাবে শিখতে হবে। আরবী ভাষা ভালভাবে শিখার পূর্বেও অনেকে মধ্যম পর্যায়ের ইজতিহাদ করতে সক্ষম হবে বিশেষ করে যারা কিনা জেনারেল লাইনে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক অথবা এ/ও লেভেল পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছে । এর কারন হল এই পর্যায় পর্যন্ত যারা শিক্ষা অর্জন করে তাদের আরবী ভাষা জানা না থাকলেও নিজের মাতৃভাষাসহ ইংরেজি ভাষা গ্রামারসহ ভালই জানা থাকে আর পৃথিবীর সকল ভাষারই বেসিক গ্রামার একই ধরনের তাই এরা যেমন খুব সহজেই আরবী ভাষা রপ্ত করতে পারে ঠিক একইভাবে আরবী ভাষা না জেনেও আরবী ভাষার ব্যাকরণ, বাগধারা, ধাতুগত শাব্দিক ও পারিভাষিক শব্দ এমনকি অলংকার শাস্ত্রের ব্যাবহারও ভালভাবে বুঝে বিধায় তারাও আরবী ভাষা না শিখেই শুধুমাত্র অর্থসহ কুরান-হাদিস দেখেই মধ্যম পর্যায়ের ইজতিহাদে সমর্থ রাখে কিন্তু সমাজে হুজুরদের প্রভাবের কারনে পাপের ভয়ে তাদের অনেকেই নিজেরা ফতোয়া দেয় না তবে হুজুররা কোন ভুল ফতোয়া দিলে তারা ঠিকই খুব সহজেই তা ধরতে পারে। ইদানিং আবার ইন্টারনেটের কল্যানে এবং গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে আরবী ভাষা সম্পর্কে এরা আরও অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। যদিও মুসলিম হিসেবে এদেরও আরবী ভাষা শিখা বাধ্যতামূলক।
৩) ইসলাম ধর্মের ফরজ/প্রাথমিক/বেসিক জ্ঞান অর্জন করা উদাহরনস্বরুপ- সুন্নীরা কুরানের শেষের দিকের অংশ ৩০ পারা সহ অর্থাৎ মাক্কী সুরা সবগুলোই জানার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ন মাদানী সুরাও জানা এবং ৬টি সহী হাদীসের মধ্যে ১মে বুখারী শরীফ পুরোটাই পড়া। শীয়ারা কুরানের ক্ষেত্রে একই নিয়ম কিন্তু তাদের ৪টি সহী হাদিসের মধ্যে কিতাব আল-কাফী পুরোটাই পড়লে ইসলামের বেসিক জ্ঞান মোটামোটি হবে। ইসলামের ফরজ জ্ঞান অর্জন সম্পন্ন হলেই দেখা যাবে সে অতিরিক্ত ইজতিহাদ গুলোও করতে পারছে। এভাবে কুরান-হাদিসের বেসিক জ্ঞান সম্পন্ন হওয়ার পরে সেও বুঝতে পারবে যে কিভাবে শুধুমাত্র কুরানের মাত্র কয়েক হাজার আয়াতের নির্দেশনা আর কয়েক লক্ষ হাদিসের নির্দেশনার দ্বারাই কিয়ামত পর্যন্ত যাবতীয় সকল সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব। সে এটাও ভালভাবে বুঝবে যে কুরানের নির্দেশনা হল বেশিরভাগই সার-সংক্ষেপ বা বীজ গণিতের সুত্রের মত আর বেশিরভাগ হাদিস গুলো হল নবী সাঃ যুগের ব্যাবহারিক প্রয়োগ বা গণিত বইয়ের উদাহরণ এর অংকের মত যার সরাসরি বাস্তব প্রয়োগ নবীর যুগেই সরাসরি দেখিয়ে দেয়া হয়েছে এরপরের যুগে এসে সম্পূর্ন নতুন কোন পরিস্থিতিতে পরলেও কুরান- হাদিস হতেই সমাধান সম্ভব কারন পরিবেশ পরিস্থিতি নতুন হলেও মূল সুত্রের মাধ্যমে সমাধানের সিস্টেম সর্বদা একই, শুধুমাত্র একটু হিসেব নিকেশ করতে হবে বা অংক কসতে হবে একেই বলে ইজতিহাদ করা আর এই ইজতিহাদ করার বা অংক কসার নিয়ম গণিত বইয়ের উদাহরণের অংকের মাধ্যমে যেভাবে অনুশীলনীর অংক কসা শিখানো হয় ঠিক একইভাবে বেশিরভাগ হাদিস গুলোর দ্বারাও মুসলিমদের নতুন পরিবেশে নতুন পরিস্থিতিতে ইসলামি নিয়ম কি হবে তার সমাধান খুব ভালভাবেই শেখানো হয় আর এটাই মূলত ইজতিহাদ করা বা অনুশীলনীর সম্পূর্ন নতুন অংক কসা। হাদিস এখানে বড় ধরনের সহায়তা করে তাই হাদিস ছাড়া শুধুই কুরান পড়ে ইসলামের বেসিক অনেক কিছু জানলেও কেউ হাদিস সমূহকে বাদ দিয়ে শুধু কুরান দিয়ে ইসলাম চর্চা করলে অনেক ভুল ভ্রান্তির স্বিকার হবে এটা স্বয়ং নবী সাঃ ই বিদায় হজ্বের সময় বলে গেছেন। তাছারা সঠিক অংকের ফলাফল যেমন সর্বদাই একই হয়ে থাকে ঠিক একইভাবে সকল মুসলিমের ইজতিহাদও যদি একই রকম হয় তবে বলা যায় ইজতিহাদটি সঠিক হয়েছে কিন্তু যাদের ইজতিহাদ ভুল হয় তাদের সমাধান গুলোও হয় বিভিন্ন রকম বা একে অপরের পরিপন্থি যেমন বর্তমানে আলেম –ওলামাদের ইজতিহাদে এরকম পরস্পর বিরোধী ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করা যায় । তবে অংকে ভুল হলে পরীক্ষায় শুন্য পেলেও ইজতিহাদ এ ভুল হলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন ব্যাক্তির সমর্থ ও সোর্স এর উপর নির্ভর করে, তাই ভুল হতে পারে ভেবে নিজে নিজে ইজতিহাদ করা হতে দূরে থাকা যাবে না। আবার অনেক কুরানের আয়াত ও হাদিস এমন আছে যে এসব ক্ষেত্রে কোনভাবেই ইজতিহাদ চলবে না, সর্ব যুগেই একই নিয়ম শাব্দিক অর্থে যেমন আছে হুবহু একই থাকবে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না। তাছারাও এমন আয়াত, হাদিসও অনেক আছে যেগুলো শুধুমাত্র ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে রুপকভাবে এমনকি আরও আছে মুতাশাবিহাত যা সাধারনত মানুষের বোধের বাইরে এগুলোর উপর শুধুই বিশ্বাস রাখতে হবে এবং পরকালে আল্লাহ সুবঃ এগুলো জানিয়ে দিবেন। এখন কোন কোন আয়াত এমন বা কোন কোন হাদিস এই পর্যায়ের এগুলো জানতে মোটেও পন্ডিত হবার দরকার নেই কারন এইসব আয়াত ও হাদিস পড়া মাত্রই খুব ভালভাবেই বুঝা যায় যে আসলে এগুলো কোন পর্যায়ের বা এগুলোর মর্মার্থ কি?
৪) এখন বেসিক কুরান-হাদিসের জ্ঞান অর্জন হবার পরে একজন মুসলিম যদি নিচে উল্লেখিত কিছু বিষয় জেনে রাখে তবে তার ইজতিহাদ করা খুবই সহজ হবে ইনশাহ আল্লাহ। আর তা হল- জাহেলিয়াতে যুগে নবুয়াতের ১ম ভাগে আল্লাহ সুবঃ নাজিল করলেন যে- মদ খাওয়া মন্দ কাজ এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি, নবী সাঃ নিজে পূর্ব হতেই মদ হতে দূরে থাকলেও সাহাবীরা জাহেলিয়াতে প্রভাবে প্রায় সকলেই তখন কালচারালী মদে অভ্যস্ত ছিল তাই নবী সাঃ হাদিসের মাধ্যমে তাদেরকে সরাসরি মদ থেকে বিরত না থাকতে বলে শুধু শিরক হতে বিরত থাকতে উপদেশ দেন এবং এতেই বেশি তাগিদ দেন আর কুরানের প্রাথমিক নির্দেশনা দ্বারা সাহাবীরা শুধু এতটুকু জানতে পারে যে মদ খাওয়া খারাপ, শারীরিক দিক দিয়েও লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি এবং আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ, অথচ এর পূর্বে মক্কাসহ পুরো আরব জাতির মাঝে প্রচলিত ছিল যে মদ হল শরীরের জন্য উপকার এবং অনেক শক্তি পাওয়া যায়। এরপর মদীনায় হিজরত করার পরে ইসলামী সমাজ গঠন করার পরে সাহাবীদের মদ হতে দূরে থেকেও যে শান্তি পাওয়া যায় তার অভ্যাস করাতে আল্লাহ সুবঃ নাজিল করলেন যেন কেউ মাতাল হয়ে যেন মসজিদে না আসে, এমনকি নবী সাঃ ও নির্দেশ দিলেন এখন থেকে আর মসজিদের মাঝে মদ ক্রয়-বিক্রয়ের অর্থের হিসাব নিকাশ নিয়ে আলোচনাও চলবে না, অতএব মদে অভ্যস্থ মুসলিমদের মাঝে প্রত্যহ ৫ বার মদ ছারাই নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি পাবার সু-অভ্যাস গড়ে উঠতে লাগল। এরপরে একদম শেষের পর্যায়ে যখন মুসলিমরা পুরো মদীনাসহ আশ-পাশ এলাকা নিয়ে বড় ধরনের ইসলামিক রাষ্ট্র গড়ে তুলল এবং হাট-বাজার ও অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলো পুরোই নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হল এমনকি মুসলিমদের ঈমানী শক্তিও এমন পর্যায়ে পৌছুল যে যেকোন সময় জিহাদের ডাক আসলেই তারা জীবন দিতে প্রস্তুত, এমন ঈমানী শক্তি আসারও অনেক পরে আল্লাহ সুবঃ মদকে সম্পূর্নভাবে হারাম করে দিলেন এবং মদীনার সকলেই তখন জমানো সমস্ত ডিব্বা ও পাত্রগুলোর মদও মাটিতে ফেলে দিল, এমনকি পর্দা ফরয, চুরি করলে হাত কাটা, বিবাহীতারা জিনা করলে মৃত্যুদন্ড ইত্যাদির বিধান মদীনার পরিবেশ আগে সুন্দর করার পরেই নাজিল হয়েছে। মদের ব্যাপারে কুরানে ধাপে ধাপে আল্লাহ সুবঃ এর ৩ পর্যায়ের নির্দেশ এবং নবী সাঃ এর হাদিসের নির্দেশনা হতে যে সুত্র পাওয়া যায় তা হল- মানুষের উপরে আল্লাহ কখনও জুলুম করেন না তাই পরিবেশ যখন আল্লাহ নিজেই বেশী পাপের হতে দিয়েছেন ঠিক তেমনি ভাবে তিনি অতিরিক্ত দয়াও প্রদর্শন করবেন আর এই দয়াস্বরুপ তিনি উক্ত জাহেলিয়াতে পাপের পরিবেশ হতে মানুষকে একদিনেই জোর করে ফেরেশতা বানানোর মত জুলুম না করে ধীরে ধীরে নিস্পাপ হবার সহজ ও কার্যকরী পন্থা দিয়েছেন যা শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদির জন্যই খাছ কেননা এরপূর্বে আল্লাহ সুবঃ কিতাব নাজিল করেছিলেন একই সাথে একই দিনে কিন্তু আমাদের নবী সাঃ এর উপর কিতাব নাজিল করেন ধীরে ধীরে মানুষের পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। কিন্তু ইহুদী-খ্রীষ্টানরা তখন মুসলিমদেরকে উপহাস করে বলত যে –আল্লাহ আমাদের নবীদের উপর একই সাথে পুরো কিতাবই নাজিল করেছিলেন আর তোমাদের নবীর উপর খন্ড খন্ড করে বিচ্ছিন্নভাবে কিতাব নাজিল হয় এটি আবার কেমন ব্যাপার, তখন আল্লাহ সুবঃ সূরা বনী ইসরাইলে নাজিল করেন যে- আমি এই কিতাব নাজিল করেছি ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে যাতে করে তুমি মানুষকে উত্তমরুপে হেদায়েত করতে পার।
যাইহোক এখন মদ, চুরি, পর্দা, জিনা-ব্যাভিচারের ক্ষেত্রে ইজতিহাদি মাসলা হবে মাক্কী জীবনের ন্যায় কেননা নবী সাঃ সমাজ সুন্দর করার মাধ্যমে মদীনায় যে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা পরিপূর্নভাবে তিনি ইন্তিকালের পরও আরও ৩০ বছর হুবহু বলবৎ ছিল কিন্তু এরপরে একটু কম বেশি করে হলেও উমাইয়া,আব্বাসী এবং সর্বশেষ উসমানীয় খিলাফতের মাধ্যমে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত কোনমতে টিকে ছিল এরপরে মুসলিমদের ইসলামি রাষ্ট্র নাম মাত্র হলেও কোথাও নেই। আর ইসলামি রাষ্ট্র আল্লাহ সুবঃ তখনই তুলে নেন যখন মুসলিমরা ইসলামের ফরয বিধানগুলোও ত্যাগ করে পাপে ডুবে থাকে আর তখন তো যারা অমুসলিম তাদের অবস্থা আরও মারাত্বক হয় সুতারাং সমস্ত মানব জাতি আবারও নব্য জাহিলিয়াতের যুগে প্রবেশ করে যা কিনা মাক্কী জীবনের ন্যায়, হাদিসে আছে এই নব্য জাহিলিয়াত হতে আবারও নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠা হবে নবীর মতই কাউকে প্রেরনের মাধ্যমে যেমন- মাহদী ও ঈসা আঃ এর আগমনের মাধ্যমে। নতুন করে আবারও ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত মানব সমাজ মাত্রারিক্ত পাপী সমাজে ডুবে থাকবে যা কিনা জাহালিয়াতের যুগের মক্কার সমাজের সাথে সামজস্যপূর্ন তাই মাক্কী জীবনে কুরানের যেসব আয়াত নাজিল হয়েছিল এই নব্য জাহিলিয়াত দূর না হওয়া পর্যন্ত সেসব আয়াতের উপরই বেশি আমল করতে হবে যদিও মদীনার জীবনের অধিকাংশ আয়াতগুলোও কুরানে ঠিকই লিপিবদ্ধ রয়েছে, এগুলো এখন শুধু তিলায়ত করে জ্ঞানার্জন ছাড়া আমল করাও ইসলামি রীতির পরিপন্থী হবে অর্থাৎ মদীনার জীবনে যেমন অনেক মক্কী কুরানের আয়াত রহিত হলেও শুধুমাত্র তেলায়ত করা হত ঠিক এখনও তেমনি মাদানী আয়াতগুলোর বেশিরভাগই শুধুই তেলায়তেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে তবে অনেক আয়াত আবার পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে আমলও করা যাবে আবার কিছু কিছু আয়াতের নির্দেশনা মানতে গেলে নেকীর চেয়ে পাপ হবারই সম্ভাবনা বেশী। উদাহরণস্বরুপ- আলেম ওলামাগন বর্তমানে পরিস্থিতিতে এতদিন জীহাদ করা করা ঠিক নয় ফতোয়া দিতেন কারন মক্কার জীবনে কোন জীহাদের আয়াত নাজিল হয় নাই এমনকি নবী সাঃ একবারও জীহাদ করেন নাই শুধুমাত্র দাওয়াত দিয়েছেন আর দুয়া করেছেন এমনকি অত্যাচার সহ্য করে ধৈর্য্য ধরে থেকেছেন কিন্তু মদীনায় ইসলামিক রাষ্ট্র কায়েমের পরই জীহাদের আয়াত নাজিল হয় তাই তাদের মতে এখনকার পরিস্থিতি মক্কি জীবনের ন্যায় সুতারাং অস্ত্র নিয়ে এখন জীহাদ ভুল হবে, যখন মুসলিমদের আমির নির্দেশ দিবে ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের পর তখনই জীহাদে যেতে হবে এর পূর্বে ধৈর্য্য ধরে থাকতে হবে। আলেম-ওলামারা এই ফতোয়ার মূল সুত্র নিয়েছেন “রাষ্ট্র ইসলামী বানানোর প্রক্রিয়া” থেকে যা কিনা কুরান-হাদিসের শানে নুযুল হতে নবী সাঃ সিরাত নির্ভর। আর এইভাবেই ইজতিহাদ করতে হয়। তাদের এই ইজতিহাদ সঠিক হলেও জীহাদ এখন শুরু না করার পেছনে ইসলামি মূল কারন হল, পরিবেশ-পরিস্থিতি এখন নব্য জাহিলিয়াতের তাই জাহিলিয়াত আগে দূর করতে হবে এরপর ইসলামের শত্রুরা সেসব খাঁটি মুসলিমদের বিনাশের সিদ্ধান্ত নিলে হিজরতের স্থান, পরিবেশ না পেলে জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যেও জীহাদ শুরু করা যাবে কারন মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের পরপরই কিন্তু নবী সাঃ জীহাদ করেননি বরং মক্কার কাফেররা মুসলিমদের মদীনা হতেও বিনাশ করার সিদ্ধান্ত নিলেই জীহাদের আয়াত নাজিল হয় সুতারাং এখানে আত্মরক্ষা ও দ্বীন ইসলাম রক্ষাই মুল উদ্দেশ্য যদিও ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে মুসলিমদের সামরিক শক্তি নাও থাকে কেননা সামরিক শক্তির চেয়ে আল্লাহ সুবঃ এর বিশেষ সাহায্যই সবচেয়ে মূখ্য ব্যাপার, সামরিক শক্তি এখানে সম্পুর্নভাবে গৌন একটি ব্যাপার কেননা কুরানের বর্ননা অনুসারে প্রবল সামরিক শক্তিধর ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আঃ কোন ধরনের সামরিক বাহিনী ছাড়া শুধুমাত্র এক লাঠি দিয়েই জীহাদ করেন এবং ফেরাউনের সম্রাজ্য ধ্বংস করেন।
উপরের আলোচনায় ১মত জীহাদের ক্ষেত্রে ইজতিহাদের উদাহরন দেখানো হয়েছে এখন মদ, চুরি, পর্দা, জিনা-ব্যাভিচার এবং হত্যার ক্ষেত্রে ইজতিহাদ কিভাবে করতে হবে তার নিয়ম যেমন- এইসব কবিরা গোনাহের ক্ষেত্রে ইসলামে যেসব শাস্তি এসব ক্ষেত্রে দেবার নিয়ম ছিল তা দেওয়া যাবে না বরং মক্কী জীবনের ন্যায় শুধু মাফ চাইতে হবে এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে প্রচলিত দেশের মানব রচিত আইনের হাতেও তুলে দেওয়া যাবে না যদি দেখা যায় দেশের আইনে এসবের সাস্তি ইসলামী আইনের চাইতে কঠোর বা সমপর্যায়ের হলেও কারন বর্তমান প্রায় সকল দেশই এসব পাপের পরিবেশ কৃত্তিমভাবে তৈরীর জন্য সরাসরি দায়ী এমনকি সত্যিকারের অপরাধীকে মুক্ত করারও সিস্টেম আছে। তবে সব দেশেই এই ফতোয়া চলবে না কেননা মক্কা-মদীনার দেশে এসব করলে ঠিকই ইসলামী আইনেই বিচার হবে কেননা সেখানে এত বেশী পাপের পরিবেশ নাই এমনকি আফগানিস্তানের মত দেশেও তবে যেসব ধার্মীক দেশে বিয়ে-শাদী কঠিন করা হয়েছে কিন্তু জিনা-ব্যাভিচার এত সস্তা নয়, সেখানে জিনা-ব্যাভিচারের সাস্তি যদি সরাসরি নবী সঃ এর মদীনার ইসলামিক রাষ্ট্রের ন্যায় দেওয়া হয় তবে কিন্তু সেদেশের সরকার জুলুম করার অপরাধে ঠিকই আল্লাহর কাছে দোষী হবে, তাই এসব দেশের সাধারন মুসলিমদের উচিৎ সেসব দেশেও অবিবাহিতদের জিনা-ব্যাভিচারগুলো প্রকাশ না করা বিশেষ করে অপরাধীদের যথাসম্ভব সেদেশের আইন হতেও দূরে রাখার চেষ্টা করা কেননা বর্তমানে কোথাও কোন ইসলামি রাষ্ট্র নেই দু-একটি যা দেখা যায় তা শুধুমাত্র ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। পরিবেশ আর ব্যাক্তির সমর্থের উপরে নির্ভর করে জিনার সাস্তি কম বেশি করার ইজতিহাদী সূত্র প্রধানত দুটি সহী হাদিস হতে পাওয়া যায় ১) বিবাহিতদের জিনার কারনে রজমের দ্বারা হত্যার নিয়ম থাকলেও অবিবাহিতদের শুধুই বেত্রাঘাত কারন তাদের হালাল শয্যা সংগী না থাকায় জিনার পাপ হতে দূরে থাকার সমর্থ কম। ২) দাসীরা এই অপকর্মে লিপ্ত হলে তাদের সাস্তি অর্ধেক কারন স্বাধীন না হলে বা মালিকের অনুমতি ছাড়া তারা তো বিয়েই করতে পারে না সুতারাং তাদের জৈবিক চাহিদা মালিকের দ্বারা সবসময়ই পরিপূর্ন নাও মিটতে পারে বলে তাদের সমর্থ আরও কম। এটা গেল জিনা-ব্যাভিচারের ক্ষেত্রে ইজতিহাদ এর উদাহরণ আর মদ,চুরি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও পরিবেশ পরিস্থিতি নির্ভর করবে তাই মদ পান করলে বেত্রাঘাত সবদেশেই প্রয়োগ করা যাবে না যেমন- বাংলাদেশের মত জায়গায় মদ পান করলে যে গুনাহ হবে তার চাইতে কম গুনাহ হবে আমেরিকায় বসে মদ পান করলে আর সবচাইতে বেশি গুনাহ মক্কা-মদীনায় হলেও নবী সাঃ এর যুগের ন্যায় গুনাহ এখন হবে না, ঠিক একইভাবে গনতান্ত্রিক দেশে কেউ চুরি করলে তার হাত কাটা অন্যায় হবে কারন এসব দেশে সরকার হতে দেশের জনগন সকলেই চোর, তাই চোরের রাজত্বে চুরির এত বেশি সাস্তি ইসলামে নেই তবে হালকা উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশে সর্পদ করা যেতে পারে তবে হত্যাকারীকে আবার আইনের হাতে দেয়া যাবে না যদি দেখা যায় হত্যার সাস্তি সেদেশে মৃত্যুদন্ড বা যাবৎ জীবন জেল, কিন্তু নিরীহ মানুষকে হত্যা করলে বিশেষ করে নিরীহ মুসলিম হত্যা করলে অথবা শুধু অর্থের লোভে ডাকাতি করলে বা সেই অবস্থায় কাউকে আহত/নিহত করলে আবার ঠিকই দেশীয় আইনে সাজা দেয়ার চেষ্টা করতে হবে তবে সেক্ষেত্রেও দেখতে হবে দেশের আইনে উক্ত অপরাধের সাজা মাত্রারিক্ত কিনা যেমন- বাংলাদেশে সবচাইতে বর্বর আইন হল এসিড ছুরলেই মৃত্যুদন্ড অথচ ইসলামি আইনে এর সর্বচ্চ সাস্তি ছিল তাকেও এসিড দিয়ে একই পরিমান পুড়িয়ে দেওয়া অথবা অর্থদন্ড তাই এক্ষেত্রে দ্বীনি ইজতিহাদ হল- নিজের বোনকে এসিড মারলেও তাকে সরকারের হাতে তুলে না দিয়ে নিজে নিজেই কৌশলগতভাবে কিছু সাস্তি দেওয়া যেতে পারে যথাসম্ভব আইনকে ফাঁকি দিয়ে। একইভাবে ইসলামী জঙ্গীদের ধরিয়ে দিতেও সরকারকে কোনভাবেই সাহায্য করা যাবে না আবার জংগীদের সহযোগীতাও করা যাবে না কেননা এরা আমেরিকার চ্যালা যা তারা নিজেরাও জানে না তারা মনে করে ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য জীহাদ করছি তবে কোন জঙ্গী দলের মূল আদর্শ যদি এমন হয় যে অমুসলিম, নাস্তিক হলেই তাদের হত্যা করতে হবে বা পাপী পরিবেশ সিনেমা হল, গানের মঞ্চ, মাজার-শরীফে বোম্বিং এর মাধ্যমে কিছু জনগনকে হত্যা করে অন্নান্যদের ভয়-ভীতি দেখানোর মাধ্যমে পাপ হতে দূরে রাখা যেমন- পাকিস্তানের লস্করই তায়েবার জংগীদল, তবে এদেরকে ধরিয়ে দেয়া যেতে পারে কিন্তু যারা শুধুই ইসলামি রাষ্ট্রের জন্য সরকারের সাথে যুদ্ধ করে এদেরকে কিছুতেই ধরিয়ে দেয়া যাবে না যতই না এরা পশ্চীমাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হোক না কেন।
যাইহোক উপরে মোটামোটিভাবে দেখানো হল যে কিভাবে পরিবেশের সাপেক্ষে নবী সাঃ এর নবুয়তের জীবন ম্যাচ করে করে ইজতিহাদ করতে হয় কুরান-হাদিসের দলীলের উপর ভিত্তি করে বিশেষ করে শানে নুযুল অনুসারে। আসলে নবী সাঃ এর জীবন হতেই কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানব জাতির সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যদিও মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের ছোট একটি এলাকার একজন মানুষের মাত্র ২৩ বছরের জীবনের ঘটনাবলী হতেই কিভাবে ভবিষ্যতের সকল অঞ্চলের সকল প্রকার মানুষের সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব? এর অনেক কারন থাকলেও সাধারনত কয়েকটি প্রধান কারনে তা সত্যিই সম্ভব ১মত) সকল রক্ত-মাংসের মানুষেরই জৈবিক ও মানুষিক ব্যাপারগুলো প্রায় একই ধরনেরই তাই সকল মানুষের জন্য আলাদা আলাদা করে সমাধান নাজিল না করে কোন একজন আদর্শ মানুষের সব সমাধান দিতে পারলে দেখা যাবে সারাবিশ্বের সকল মানুষেরই বেসিক সমস্যার সমাধান হয়ে যায় এরপরও কিছু ব্যাতিক্রম থাকে যেমন- মহিলা মানুষ, দাস শ্রেনীর খুব গরীব মানুষ বা ধনী মানুষ, খুবই খারাপ মানুষ এবং অস্বাভাবিক মানুষ এদের সম্পর্কে আলাদা করে অতিরিক্ত নির্দেশনা নাজিল করলেই দেখা যায় সকলেরই সমাধান দেয়া হয়ে যায়। ২য়ত) সকল নবী আঃ দেরই পুরুষ করে প্রেরন করা হয়েছে নারীদের সমাধানসহ কিন্তু কোন নারীকে নবী করা হয় নাই কারন নারীরা শুধুমাত্র এক্স ক্রোমোজোমই বহন করে কিন্তু পুরুষরা এক্স ক্রোমোজোম এবং ওয়াই ক্রোমোজোম দুটোই বহন করে ফলে একজন পুরুষ নিজেদের ব্যাপারে ভালভাবে বুঝার পাশাপাশি নারীদের ব্যাপারেও ভালভাবেই বুঝে কিন্তু নারীরা নিজেদের ব্যাপারে বুঝলেও পুরুষের ব্যাপারগুলো ইচ্ছে থাকলেও বুঝতে পারবে না। এভাবে মানষিক ব্যাপার ছারাও শারীরিক আরও অনেক ব্যাপার আছে যার কারনে সর্বদাই নবী, কর্তা, শাষক, যোদ্ধা ইত্যাদি পুরুষদেরই হতে হয় আর নারী-পুরুষ দৈহিকভাবে আলাদা হলেও দু-জনেই মানুষ হওয়ায় বেশিরভাগ ব্যাপারগুলো উভয়েরই কমন হয় তাই পুরুষ নবীর সকল সমস্যার সমাধান করলে দেখা যায় এর মাধ্যমে নারীদেরও অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যায় আর বাদবাকী যেগুলোর সমাধান বাকী থাকে সেগুলো সম্পর্কে আলাদাভাবে সমাধান নাজিল করা হয় আর এভাবেই সকলেরই সমাধান হয়। ৩য়ত) সারবিশ্বের মানুষকে ভালভাবে খুব দ্রুত হেদায়েত করতে হলে যাকে প্রেরন করা হবে তাকে অবশ্যই পৃথিবীর মধ্যভাগে প্রেরন করলে দ্রুত সকলের কাছে সংবাদ পৌছানো সম্ভব আর আল্লাহ সুবঃ নবী সাঃ কে মধ্যপ্রাচ্যেই প্রেরন করেছেন এমনকি ক্বাবা শরীফের মত এমন আন্তর্জাতিক স্থানে জন্ম গ্রহন করিয়েছেন যে সেখানে ধর্মীয় কারন ছারাও সারাবিশ্বের বিভিন্ন জাতির যাতায়াত ছিল এমনকি কুরাইশদের নেতা বনু হাশিম বংশে জন্ম গ্রহনের মাধ্যমে নবী সাঃ এর প্রচার প্ররোচনা ও মানুষের মাঝে আলোচিত বেশি হত। মোট কথা পুরো বিশ্বকে এক জায়গা হতে আলোকিত করতে হলে অবশ্যই কেন্দ্র হতেই আলোকিত করতে হয় উদাহরণস্বরুপ- কেউ যদি চায় মাত্র একটি বাতি দিয়েই পুরো ঘরকে সমানভাবে আলোকিত করবে তবে তাকে অবশ্যই সেই বাতিটিকে ঘরের একদম মাঝখান কেন্দ্র বরাবর রাখতে হবে। ৪র্থত) সারাবিশ্বের সকল জাতিকে হেদায়েত করতে হলে সকল জাতির জন্য আলাদা আলাদা নবী প্রেরন না করে কোন একটি নির্দিষ্ট ঘুনে ধরা জাতির মাঝে রিভুলিউশন আনতে পারলে তা সকল জাতির জন্য আদর্শ হয়ে যায়। আর তাই দেখা যায় যে নবী সাঃ দ্বারা ১মে আরব জাতির সংস্কার হয়ে পরবর্তীতে অন্নান্য জাতিরও সংস্কার হয় যেমন ২য় খলিফা উমর রাঃ এর দ্বারা পারস্য জাতির। আর নবী সাঃ মক্কার নিপীড়িত মানুষদের নিয়ে প্রথমে মদিনায় ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করে তা ধীরে ধীরে সারাবিশ্বব্যাপী প্রসারিত করতে থাকেন যা কিনা সর্বযুগের সকল ধরনের মানুষের জন্য এক আদর্শ। ৫মত) আল্লাহ সুবঃ বিশ্ব নবীকে শুধুমাত্র আরব দেশে প্রেরন এবং সর্বশেষ ধর্মীয় জ্ঞান আরবী ভাষায় নাজিল করার মাধ্যমে আরও বেশী বিশ্বায়ন এবং আন্তর্জাতিকীকরণ সহজ করেছেন কারন বিশ্বের মাঝে একমাত্র আরবি ভাষাই হল একমাত্র শুদ্ধ এবং সবচেয়ে আদি ভাষা এমনকি দুনিয়ার বুকে মানব জাতির ১ম ভাষাও এটিই। শুধু তাই নয় এই ভাষা ১ম এবং পরিপূর্ন শুদ্ধ হওয়ায় পরকালেও ইন্টারন্যাশনাল ল্যাংগুয়েজ হিসেবে সকলেই ব্যাবহার করবে তাছারা মানব জন্মের পূর্বেও সবাই এই ভাষাই ব্যাবহার করেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল একমাত্র আরবি ভাষাই হল পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে সহজ ভাষা তাই অন্য যেকোন ভাষাভাষির মানুষ খুব সহজেই এই ভাষায় প্রত্যাবর্তন করতে পারে। এসব ব্যাপার ভাল বুঝবে যারা ভাষাবিদ তারাই তাছারাও যাদের একসংগে আরবী ভাষাসহ আরও কয়েকটি ভাষা জানা আছে তারাও বুঝতে পারবে যে ইহুদী-খ্রীষ্টানরা ইন্টারন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ ইংলিশ না করে যদি আরবী ভাষা করত তবে সাধারন মানুষের কষ্ট অনেক কম হত কেননা আরবী ভাষার গ্রামাটিক্যাল নিয়ামাবালী একদম ম্যাথমেটিকসের মত সুশৃংখল এবং খুব সহজেই আয়ত্বে আসে ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে আরবী ভাষায় যে কেউই ছন্দে ছন্দে কবিতা তৈরী করতে পারে কিন্তু অন্নান্য ভাষার গ্রামাটিক্যাল নিয়ামাবালী বিশৃংখলায় ভরপুর তাই সর্বসাধারন সহজে কবি-সাহিত্যিক হতে পারে না হলেও উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ভাষায় গোজামিল দিয়ে কবিতা সহিত্য রচনা করতে হয়, আর একমাত্র আরবি ভাষাতেই বড় বড় মনের ভাব খুব অল্প শব্দে প্রকাশ সম্ভব হয় বলে সময়ের অপচয় কম হয় এজন্য মনে মনে এই ভাষায় চিন্তা-গবেষনাও অনেক দ্রুত করা যায় আর বানান করে উচ্চারণের ক্ষেত্রেও ভুল হবার সম্ভাবনা একদমই কম কিন্তু অন্নান্য ভাষার ক্ষেত্রে অনেক শব্দেরই বানান সহ মুখস্ত রাখতে হয় আর আরবি ভাষাতে মানুষের সকল ধরনের মৌলিক স্বরতন্ত্রই ব্যাবহার হয় বলে কন্ঠের অনুশীলন এমনিতেই হতে থাকে তাই কন্ঠও সুন্দর হয় তাছারা এমনিতেই আরবি ভাষা সকল ভাষার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর ও শ্রুতিমধুর। তবে হুজুর সম্প্রদায় এখানে আলাদা মত দিতে পারে কারন তারা ধর্ম অবলম্বন করে আয় উপার্জন করে খায় এবং নিজেরাও জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেক সময় ব্যাপী আরবী ভাষা শিখে বিধায় একমাত্র তাদের কাছেই আরবি ভাষা হল দুনিয়ার মাঝে সবচেয়ে জটিল ভাষা যা শিখতে হুজুরদের অনেক বেশি অর্থ দেওয়া উচিৎ।
উপরের আলোচনা হতে খুব সহজেই বোধগম্য হয় যে কেন আল্লাহ সুবঃ নবী সাঃ কে মাত্র ৬৩ বছর শুধু আরব দেশে রেখে একমাত্র তাঁর জীবনের আদর্শ হতেই কেয়ামত পর্যন্ত সকল প্রকার সমস্যার সমাধান করতে বলেছেন। আর এ থেকে এটাও পরিস্কার যে নিত্য-নতুন পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে যতই জটিল সব সমস্যার উদ্ভব হোক না কেন, সেটিকে যদি নবী সাঃ এর ২৩ বছরের নবুয়াতী জীবনের সাথে তুলনা করা হয় বা কুরান-হাদিসকে মুল স্কেল হিসেবে ধরে সেই সাপেক্ষে যাচাই বাছাই করা যায় তবেই তার সঠিক সমাধান সম্ভব ইনশাহ আল্লাহ।
যাইহোক যেকোন সাধারন মুসলিমকেও মধ্যম স্তরের মুজতিহাদে পরিনত করতে উপরে মোট ৪টি নিয়ম উল্লেখিত করা হয়েছে আর এই ৪টি নিয়ম শিখে যে কোন মুসলিমেরই সর্বচ্চ ১বছর বা এর বেশি সময় লাগতে পারে মুজতিহাদ হতে অথচ মাদ্রাসা হতে এরচেয়েও নিম্ন শ্রেনীর মুজতিহাদ বা মুফতী হতে ১৫ বছরেরও অধিক সময় লাগে কারন এসব মাদ্রাসার সিলেবাসে ইবলিস আর ইহুদী-খ্রীষ্টানদের হাত লেগেছে যারফলে মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সময়ের অপচয়ের সাথে সাথে হুজুরসম্প্রদায়গন ভুল ইসলাম শিখছে এবং সমাজে সেটাই প্রতিষ্ঠিত করছে। উদাহরনস্বরুপ- এখানে প্রমান করা হয়েছে যে সাহাবী, তাবেঈন এবং তাবে-তাবেঈনগন সহ যুগে যুগে সকল এক কাতার বন্দি(ফিরকায়ে নাজিয়া) মুসলিমই ছিল অঘোষিত সার্টিফিকেট বিহীন মুজতিহাদ কিন্তু মাদ্রাসা পাশ হুজুররা বলবে ভিন্ন কথা, তারা বলবে- সকল মুসলিমেরই মুজতিহাদ হওয়া জায়েজ নেই, কোন এলাকায় সর্বচ্চ একজন আলেম থাকলেই চলবে, সাধারন মুসলিমরা শুধুমাত্র আলেম ও মুজতিহাদের ফতোয়া শুনে শুনে অন্ধের মত আমল করবে হিন্দুদের মত এবং অবশ্যই ধর্মীয় কর্মের বিনিময়ে তাদের অর্থ দিতে হবে আর হুজুররা কোন কর্ম না করে বসে বসে শুধুমাত্র ধর্ম ব্যাবসা করে খাবে। আর এগুলো কিন্তু একমাত্র তাদেরই ভুল ফতোয়া মাত্র যার কোন জাল দলীলও তারা কুরান-হাদিস হতে দেখাতে পারবে না। মোটকথা সকল মুসলিমেরই হতে হবে মুজতিহাদ নিম্ন বা মধ্যম পর্যায়ের হলেও আর খলিফা, আমীর, গভর্নর এবং আঞ্চলিক ইমামদের নিজ নিজ ক্ষেত্রানুযায়ি উচু পর্যায়ের মুজতিহাদ হওয়া ওয়াজিব। এইভাবে যদি চলতে থাকত তবে কখনই মুসলিমদের মাঝে পুরোহিত প্রথার ন্যায় হুজুর প্রথার জন্ম হত না ফলে মুসলিম উম্মাহর মাঝে ফিক্সড করে যেকোন ১টি মাজহাব মানার মত এমন চরম বেদ্বাতী বিষয়টাও মাথা চারা দিয়ে উঠত না । আসলে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আম মুসলিমদের বেশী বেশী দুনিয়ামুখী হওয়ার প্রবণতার ফলে তারা দ্বীন নিয়ে বেশি মাথা ঘামাত না তাই ধীরে ধীরে তারা ধর্মীয় ব্যাপারে মূর্খ মুসলিমে পরিনত হয় আর তাদের এই মূর্খতার সুযোগ নিয়ে ধর্মব্যাবসায়ী হুজুররা আম মুসলিমদের জনপ্রিয় কিছু মুজতিহাদ যেমন- ইমাম আবু হানিফা , ইমাম মালেক রহঃ উনাদের অন্ধভক্ত বানাতে শুরু করে আর এভাবেই মাজহাবী ফিতনার উদ্ভব হয় আর এতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে আলেম সমাজেরই কেননা আলেম সমাজের পদস্খলনেই এমন ফিতনার সৃষ্টি হয়েছে আর হাদিসেও উল্লেখ আছে যে- নবী সাঃ দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অধিক ভয় পেতেন যা তা হল আলেম-ওলামাদের পদস্খলন।
ইনশাহ আল্লাহ (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৩