পর্ব-২
পূর্বে নাস্তিক হবার কিছু প্রধান শর্ত সমূহ তুলে ধরা হয়েছিল যার মাধ্যমে একজন সাধারন ব্যাক্তিও খুব সহজে ছুপা নাস্তিকদের চিনতে পারবে। এবারে আলোচনা করা হবে আসলে কি কি কারনে একজন ব্যাক্তি নাস্তিকে রুপান্তরিত হয়। মোটামুটিভাবে নাস্তিক হবার কারণ সমূহকে বর্ননার ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যেমনঃ- ১) সংক্ষিপ্তভাবে এবং ২) বিস্তারিত বা বিশদভাবে । এখানে ১মেই সংক্ষিপ্তভাবে কারণগুলো আনা হবে। এর পরবর্তীতে ইনশাহ আল্লাহ বিস্তারিত বা ডিটেইল কারনগুলোও বর্ননা করা হবে।
১) কারও মস্তিস্কে ধর্মীয় শিক্ষার তুলনায় সেকুলার শিক্ষার আধিক্য যদি তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে ।
২) সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার এর সংগে ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা।
৩) ধর্মীয় মুখোস পরা কুলাংগার কিছু ব্যাক্তিদের কর্মকান্ডকে ধর্মীয় নীতি ভেবে ধর্মের প্রতিই প্রচন্ড ঘৃনার জন্ম নেয়া।
৪) কাঠমোল্লাদের বানীকেই ধর্মীয় চুরান্ত বানী মনে করা।
৫) নিজের পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবদের ধর্মীয় ব্যাকগ্রাউন্ড দূর্বল হলে অথবা তারা নাস্তিক বা ধর্মবিরোধী হলে ।
৬) নিজের কাছে প্রচন্ড ভাল লাগার বিষয়বস্তু যদি দেখা যায় ধর্মে চরমভাবে নিষেধ থাকে।
৭) বিভিন্ন ধার্মিক ব্যাক্তিত্ব যেমনঃ- নবী-রাসুল বা অবতারগনের স্বভাব চরিত্র নিজেদের স্বভাব চরিত্রের মতই হবে ভেবে সেই দৃষ্টিভংগিতেই ধর্মকে দেখে থাকলে অর্থাৎ- উনাদের চালাক, লোভী ইত্যাদি ভাবা।
৮) ধর্ম এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে সত্যিকারের স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাবে ধর্ম ও বিজ্ঞান এ দুয়ের মাঝে সমন্বয়ে ব্যার্থ হলে ।
৯) পূর্ব থেকে ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান অর্জন না করে বিভিন্ন ধর্মবিরোধী বই বা নাস্তিকদের লেখা বই পড়া এবং যা লিখা আছে তাই অন্ধভাবে বিশ্বাস করা আর পরবর্তীতেও এগুলো নিয়ে কোনরকম বাছ বিচার করার চেষ্টা একেবারেই না করা।
১০) জীবন-মরণ ইত্যাদি মৌলিক বিষয় নিয়ে সবচেয়ে কম ভাবা আর সত্যিকারের সৎ ও নিরাপেক্ষিক চিন্তাধারার না হওয়া ।
১১) পূর্বে আস্তিক থাকাবস্থা হতেই পরজনমের লোভ সুখ ইত্যাদির চাইতে বর্তমান দুনিয়ার সুখ, ভোগ বিলাসকেই বড় করে দেখা অর্থাৎ নগদে বিশ্বাসি হওয়া বা দুনিয়া লোভী হওয়া ।
১২) না বুঝে ঈশ্বরের কাছে আজগুবি অনেক কিছু চেয়েও না পাওয়া এবং বিভিন্ন ভাবে ঈশ্বরকে পরীক্ষা করা অর্থাৎ ঈশ্বরই তার কাছে আগে ধরা দিক এমন মনোভাবে থাকা।
১৩) সৃষ্টির নিজেদের ভুলের কারনে স্রষ্টাকে দোষারব করা। মনে মনে বা প্রকাশ্যে ঈশ্বরকে গালি দেবার পর পরবর্তিতে এজন্য ক্ষমা না চাওয়া।
১৪) সরাসরি বা গোপনেও কোন কারনে ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।
১৫) পশ্চিমা কালচারের প্রতি মন থেকে আকৃষ্ট হলে বা ধর্মকে সেকেলে মনে হয় কিন্তু বর্তমান এই ইহুদী খ্রীষ্টানদের সভ্যতাকে আধুনিক মনে হয় এবং এটাই মানব মুক্তির একমাত্র উপায় ভাবলে।
১৬) নিজেই নিজেকে ভালভাবে বুঝতে না পারা এবং সত্যিকারের নিরপেক্ষতার অভাব যেমন- কারও অর্জিত নিজস্ব জ্ঞানের ভান্ডারে যদি ধর্মীয় জ্ঞান এর তুলনায় সেকুল্যার জ্ঞান অনেক বেশী হয়ে থাকে তবে সে নাস্তিকতাকে পছন্দ করবে আর ধর্মকে অপছন্দ করা শিখবে কিন্তু এমনটি সে করবে কারন তার নাস্তিকতার জ্ঞানের পাল্লা বেশি ভারি কিন্তু পাশাপাশি সে যদি ধর্মীয় জ্ঞানের পাল্লাটাও সমান রাখত বা কাছাকাছি মাপেও রাখত তবে সে সত্যিকারের নিরপেক্ষতার সাথে যাচাই বাছাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারত কিন্তু সে এই অন্তর্মুখি নিজস্ব জ্ঞানের ব্যাপারে নিরপেক্ষতার অভাবে নাস্তিক হয়ে থাকে অথচ সে নিজেও জানে না।
১৭) ভুল সোর্স হতে জ্ঞানার্জন । যেমন- নাস্তিকরা সাধারনত সেকুল্যার শিক্ষা গ্রহন করে সেকুল্যারদের কাছ থেকে আবার ধর্মের জ্ঞানও অর্জন করে সেকুল্যার নাস্তিকদের কাছ থেকেই যা চরম একটি বোকামী অথচ একই ব্যাক্তিকে দেখা যাবে যে সে কখনও সাহিত্য শিক্ষার জন্য বিজ্ঞানের শিক্ষকের কাছে সরানপন্ন হয় না আবার গনিতের জটিল সমাধান জানতে বাংলা প্রভাষকের দরজাও নক করে না। তাই ধর্মের ব্যাপারে ধার্মিক ব্যাক্তি ভাল জানবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তারা ধর্মের ব্যাপারে আজগুবি সব তথ্য বিভিন্ন ধর্মবিরোধীদের ভুল সোর্স হতেই জানে আর দু একটি জটিল প্রশ্ন এমন সব কাঠমোল্লাদের কাছে করে নিজেদের জয়ী ভাবে, যাদের বেশির ভাগই কিছু মাত্র ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেছে নিজেদের পেট চালাবার জন্য ।
১৮) যদি কেউ এক চোখ দিয়ে দেখে যে, সেকুল্যার-নাস্তিক লোকেরাই মানব প্রেম এবং সততার বুলি আওরাচ্ছে আর মানব সেবামূলক কাজ করছে এমনকি জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, আর্থ-সামাজিক, সামরিক-রাজনৈতিক সর্বদিক দিয়ে তারাই বেশী এগিয়ে পক্ষান্তরে ধর্মীয় লেবাসধারীরা শুধুই ধর্মের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে জীবন ধারন করছে কিন্তু সমাজে তাদের সরাসরি কোন কর্মমূখী প্রভাব নেই।
১৯) কারও পরিবারের প্রধান কর্তা কর্তৃ যদি নাস্তিক হয় অথবা প্রচন্ড কঁড়া ধর্মীয় গোঁড়ামীপূর্ণ হয়ে ছেলে মেয়েদের প্রতি জোড় জবরদস্তিমূলক ধর্মীয় কার্যাবলি চাপিয়ে দেয় কিন্তু ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না দেয়া হয় আবার আশপাশেই যদি চলে অধর্মীয় কৃষ্টি কালচার এর স্রোত।
২০) লোক সমাজের কাছে কি পছন্দনীয় তার উপর নির্ভর করে যারা জীবন পরিচালনা করে তারা যদি দেখে বেশিরভাগ মানুষই ধর্মকে গোঁড়া, ক্ষ্যাত, আনস্মার্ট, কুসংস্কারপূর্ন, বর্বর ইত্যাদি খারাপ কিছু ভাবে তবে তারাও ধর্মহীন হবার চেষ্টা করবে যদি তাদের ধর্মজ্ঞান ভাল না থাকে, এমনকি ধর্মজ্ঞান ভাল থাকলেও বাহ্যিকভাবে নিজেকে সেকুল্যার দেখানোর চেষ্টা করবে অনেক ক্ষেত্রে ধর্মীয় বড় বড় নিয়ম নীতিকেও বিষর্জন দিতে দ্বিধা করবে না।
২১) জেনেটিক্যালী বুদ্ধির পরিমান কম থাকলে বা বুদ্ধি যদি শুধুই নেগেটিভ দিকেই ধাবিত হয়। তাছারা ষ্টিফেন হকিংসের মত শিক্ষিত প্রতিবন্ধী হলেও নাস্তিক হতে পারে।
২২) পূর্বের বিভিন্ন ধর্মের মাঝে হিন্দু, বৌদ্ধ, অগ্নিপূজক , প্যাগান(মূর্তি পুজারী) এদের তুলনামূলক নাস্তিক হবার সম্ভাবনা বেশি ইহুদী খ্রীষ্টানদের চাইতে কারন এগুলোর অনেক অংশই মানুষ বিকৃত করে ফেলেছে। অথচ সেকুল্যার শিক্ষিত মুসলিমদেরও কিন্তু আস্তিক থাকার পরিমান সবচেয়ে বেশি কারণ ইসলাম ধর্ম হল সর্বশেষ অবিকৃত ধর্ম।
২৩) আরবী ভাষা না শিখে সরাসরি অনুবাদের মাধ্যমে কুরান-হাদিস অধ্যয়ন করলে অথবা তা না হলেও ব্যাকরণ সম্পর্কে ভাল ধারনা না রেখে শুধুই অনুবাদ নির্ভর হলে। এমনকি কেউ আল-কুরানে ভূল বের করার উদ্দেশ্যে অধ্যয়ন করলেও।
২৪) মুসলিমদের ক্ষেত্রে ১মে ঈমান-আক্বিদা শিক্ষা না করে মুত্তাকী(আল্লাহভীরু) নয় এমন কেউ ১মেই কুরান শিক্ষা করতে গেলেও নাস্তিক হবার সম্ভাবনা থাকে।
২৫) মুসলমান প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পরও দীর্ঘদিন বেনামাজী থাকা এবং ধর্ম এবং ধার্মীক লোকদের হতে দূরত্বে থাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:১৩